নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোলাগা বইঃ পরিতোষ বাড়ৈ এর "মায়ের চিঠি"

১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:১১



প্রথমেই লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ, এমন একটা বই উপহার দেওয়ার জন্য। লেখকের কাছ থেকে বই পাওয়ার আনন্দটা অন্যরকম!
-
আমি যেদিন এই বইটা পড়ি সেদিন ছিল বাবা দিবস,। ব্যক্তিগতভাবে আমি বাবা দিবস - মা দিবসে বিশ্বাসী না। আমাদের নিম্নবিত্ত সমাজে এর অস্তিত্ব নেই, নিম্ন-মধ্যবিত্ত সমাজে এর অস্তিত্ব কিছুটা বর্তমান হলেও কিছুকাল আগেও তা ছিল না। এদেশে যারা বাবা দিবস, মা দিবস আমদানী করেছে তারা একই সাথে বৃদ্ধাশ্রম কিংবা ওল্ডহোম এর ধারনাও আমদানী করেছে! আমরা ঘটা করে এসব দিবস পালন করি, আবার আমাদের বৃদ্ধাশ্রম গুলোও কখনো ফাকা পড়ে থাকে না

যাই হোক, পশ্চিমাদের সৃষ্ট আজকের এই বাবা দিবসে চলুন এক বাঙালি মায়ের গল্প শুনে আসি! বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এক দুঃখিনীর গল্প

বৃদ্ধাশ্রমের হাসি কান্নার জীবনে সব আছে, তবুও যেন কিছু একটা নেই। এর বাসিন্দাদের তপ্ত নিঃশ্বাসে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বাতাসে কান পাতলে শোনা যায় নীরব কান্নার ধ্বনি।

তেমনি এক বৃদ্ধাশ্রমে উদাস নয়নে সূর্যের পানে চেয়ে আছে লাইলি। দু'চোখ বেয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পড়ছে। স্মৃতির পাতায় ভেসে আসছে অতীতের দিনগুলো। তার অতীতটা খুব বেশি রঙিন ছিল না, বরং বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যখন তার স্বপ্নগুলো রঙ ফিরে পাচ্ছিল তখনই হঠাৎ তার পৃথিবী কালো করে নেমে আসে মহাকালের অন্ধকার!

আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু না বলা কথা থাকে, কিছু অপ্রকাশিত অধ্যায় থাকে। যা কেউ জানে না, যা কখনো কাউকে জানানো হয় নি। তেমনি প্রতিটি মায়েরও কিছু গল্প থাকে যা তার সন্তান জানে না, তবে জানা প্রয়োজন, জানানো প্রয়োজন। তবে বাস্তবতাটা কেমন যেন, আমাদের মা গুলো এমন কেন? বুকের মাঝে হাজারো কষ্ট লুকিয়ে রাখে অথচ আমাদের কখনো জানতে দেয় না, বুঝতে দেয় না!

লাইলির জীবনের অপ্রকাশিত গল্পগুলো সন্তানের কাছে প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করে লাইলি, কাগজ কলম নিয়ে চিঠি লিখতে বসে প্রিয় সন্তানের উদ্দেশ্যে!

লাইলির সন্তান জন্মের একচল্লিশ দিনের মাথায় তার স্বামী মারা যায়। লাইলির বয়স তখন মাত্র একুশ। দিকশূন্য হয়ে পরে লাইলি, তিনদিন পর তাদের আশ্রয় জুটে তার চাচাতো ভাই সবুরের বাড়িতে। কিছুদিন পর সবুরের কামুক দৃষ্টি পড়ে লাইলির দিকে। বুঝতে পেরে রাতের আধারে সন্তানকে মাথায় করে নিয়ে বিল পাড়ি দেয় সে। এছাড়া তার অন্য কোন উপায় ছিল না। দীর্ঘ সময় পানিতে থাকার কারনে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় পা'য়ের। ডাক্তার জানায় সে আর হাটতে পারবে না। সন্তানহীন এক দম্পতির ঘরে আশ্রয় জুটে তার। সে দম্পতি তার প্রিয়তম সন্তানকে দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করে, দত্তক দিতেও কিছুটা রাজি ছিল সে। কিন্তু একদিন তার সন্তানকে ছোট লোকের বাচ্চা বলে গালি দেওয়া আর গায়ে হাত তোলার কারনে সেখান থেকেও পালাতে চায় সে। কিন্তু নিজের পা'য়ের তো সে শক্তি জোগানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির জোরেই সে ক্ষমতা অর্জন করে সে, পালিয়ে যায় নতুন অজানার উদ্দেশ্যে।

শুরু হয় জীবন যুদ্ধের আরেক পর্ব। এ পর্বে তার সাহায্যকারী হিসেবে ভাইয়ের মত এগিয়ে আসে একজন, কিন্তু তার ঘরেও শেষ আশ্রয় জুটেনি তার। এরপর কখনো বুয়ার কাজ, আয়ার কাজ, কখনো বা ইটভাটায় মাটি টানার কাজ করে ছেলের পড়াশুনার খরচ জোগায় সে। নিজে অনাহারে অর্ধাহারে কাটালেও ছেলের মুখে অন্ন ঠিকই তুলে দিত। স্বপ্ন দেখতো একদিন ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার অভাবের দিনের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।

ছেলেও ভালো রেজাল্ট করতে থাকে, ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিন শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হয়, একটা ভালো চাকরীও জুটে যায়। মা'র দুঃখ বোধহয় এবার শেষ হল! ছেলের ঘরে বউ আনে মা। ছেলের সংসার আজ মা'য়ের কাছে স্বর্গসমান, এ যে তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল।

কিন্তু এই স্বর্গটার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন নি মা, তার আশ্রয় জুটে বৃদ্ধাশ্রমে! কিন্তু কেন! আমরা ছেলেরাই কিভাবে আমাদের মা'কে বৃদ্ধাশ্রম নামের জেলখানায় পাঠাই?

অনেকদিন পর কোন একটা বই একটানা পড়ে শেষ করলাম, আমি মনে করি এমন একটা বই কখনো অসমাপ্ত রেখে ওঠা যায় না। আর এমন একটা বই প্রতিটি সন্তানেরই পড়া উচিত।

পড়ার আমন্ত্রন সবাইকে!

সবশেষে পৃথিবীর সব মায়ের জন্য ভালোবাসা, বৃদ্ধাশ্রম যেন কোন মায়ের ঠিকানা না হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.