নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ ।। কুশাঃপ্রারম্ভ

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৩



বইয়ের নাম- কুশাঃপ্রারম্ভ
লেখকঃ মিসবা
প্রকাশনীঃ টেরাকোটা ক্রিয়েটিভস
মুদ্রিত মূল্যঃ ৬০০ টাকা মাত্র
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩১৬ পৃষ্ঠা
জানরাঃ মিক্সড; (অন্যভাবে বলা যায় কনস্পিরেসি, মিষ্ট্রি, অ্যাডভেঞ্চার, ফিলসফি আর ফ্যান্টাসির মিশেলে সাই-ফাই।)

-
সায়েন্স ফিকশন টাইপের বই পড়া শুরু হয়েছিল কৈশোরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই পড়ার মাধ্যমে, পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ এর কয়েকটা পড়েছি। আর কিছু ছোটগল্প পড়েছিলাম। আমার সাই-ফাই পড়ার দৌড় এ পর্যন্তই কারণ এছাড়া বাংলা সাহিত্যের আর কারো সাই-ফাই পড়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়নি। পরবর্তীতে বই পড়ার রুচিতেও এসেছে নানান পরিবর্তন। নন-ফিকশন, ক্লাসিক, ধর্মীয় আর রাজনৈতিক ইতিহাসের বই-ই এখন বেশি পড়া হয়। কুশা বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ বইমেলাতে কিন্তু আমার হাতে আসলো ২০১৮ সালে। এর পেছনে দুটো কারণ, এক- সায়েন্স ফিকশন পড়ার আগ্রহ তেমন ছিল না, দুই- নবীন লেখকদের অনেক লেখাই আমাকে হতাশ করেছে। তাই এখন নবীনদের বই কেনার জন্য সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তারপর কিনি। তো, দীর্ঘ সময় পর আবার সায়েন্স ফিকশন হাতে নিলাম মিসবা'র প্রথম বই 'কুশাঃপ্রারম্ভ'। লেখিকার ব্যাক্তিত্ব, সৃজনশীলতা, চিন্তাধারাই বইটি আমাকে হাতে নিতে বাধ্য করেছে। মনে হয়েছে, না, আমি বইটা পড়ে ঠকবো না।

আসলেই ঠকিনি! লেখিকার নিজের হাতে করা প্রচ্ছদ, বইয়ের জ্যাকেট, উন্নতমানের ক্রিম কালারের পেজ সবকিছুই সন্তোষজনক ছিল। তবে ফন্ট সাইজ কিছুটা ছোট হয়ে গেছে, কিছু টাইপিং মিস্টেক ছিল। তবে লেখার মানের সাথে তুলনা করলে এ ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখা যায়।

রিভিউ লেখার একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাহিনী সংক্ষেপ তুলে ধরা। তবে এ বইয়ের বিশাল প্লটের কাহিনী সংক্ষেপ তুলে ধরা আমার মত আনাড়ি পাঠকের জন্য সত্যিই খুব দুরূহ কাজ। তাই এ রিভিউতে এটা করতে পারলাম না। হয়তো, এ কারণে এটাকে ঠিক রিভিউ বলাও উচিত হবে না।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় সবকিছু। গ্রাম কিংবা খোলা জায়গায় থাকা সৌভাগ্যবান কিছু মানুষ বেঁচে যায় ভাগ্যক্রমে। ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া এ মানুষগুলোর টিকে থাকার সংগ্রামে তাদের মাঝে ঘটে যায় অদ্ভূত বিবর্তন। নিজেদের ভেতরের সত্ত্বাটাকে চিনতে শেখে তারা, খুঁজে পায় অসীম শক্তির এক আধার। ডিএনএ লেভেল পর্যন্ত দেহের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয় এই বিবর্তিত মানুষগুলো। অমরত্ব অর্জন করতে না পারলেও দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত দেহকে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখার কৌশল শিখে যায় তারা।

বিবর্তিত মানুষগুলোর মাঝে অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন ও ক্ষমতাধর দুজন মানুষ- য়্যুয়ান ও রুয়েম। দু'জনে বাল্য বন্ধু থাকলেও আজ তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়েও দু'জন ভিন্নধর্মী। রুয়েম এক্সট্রিম ও স্যাডিস্ট একটা চরিত্র। অপরদিকে য়্যুয়ান শান্তিকামী ও দায়িত্বশীল একটা চরিত্র।

বইটার নাম যেহেতু কুশা, তাই এ চরিত্রের সাথেও পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। কুশা নামের মেয়েটির মাঝে বিবর্তন না ঘটলেও তার মেধা ও ইন্টিউশন ক্ষমতার জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা প্লে করেছে বইটিতে। যদিও য়্যুয়ান ও রুয়েমের পদচারণাই বেশি লক্ষ করা গিয়েছে। তবে, বইটার পরবর্তী সিরিজ গুলোতে যে কুশা'ই প্রধান চরিত্র হয়ে উঠবে তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

য়্যুয়ান আর রুয়েমের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল গল্প। তবে মাঝপথে এসে পাঁচজন ওয়ার্ল্ড লিডার আর এক রহস্যময় চরিত্র 'আলোর দিশারী'র কথোপকথন পুরো গল্পেই ভিন্ন একটা মাত্রা এনে দেয়। রুয়েমকে এতক্ষণ ভিলেন মনে হলেও গল্পের মোড় পরিবর্তন করে দেয় 'আলোর দিশারী' চরিত্রটি প্রকাশিত হবার পর থেকে। এর কথোপকথন ও আভির্ভাব সংক্রান্ত আলোচনায় আপাত দৃষ্টিতে আমার কাছে এটি 'দাজ্জাল' চরিত্র মনে হয়েছে। একই সাথে ওয়ার্ল্ড কনস্পিরেসির একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায় এখান থেকে।

তবে আমার কাছে বইটার যে দিকটা সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হলো এর ফিলসফিক্যাল ম্যাটারগুলো। এই ফিলসফিক বিষয়গুলো আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে ভাবতে সহায়তা করবে, চিন্তার উদ্রেক করবে। আরও একটা বিষয়ে অনেক বেশি অবাক হয়েছি পুরো বইটাতে খন্ডাকারে লেখিকার রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় দেখে। প্রচলিত সমাজ ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে এ যেন কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদ। লেখিকা তার সামাজিক দায়বোধ ও প্রতিবাদের জায়গা থেকেই এটি করেছেন বলে মনে হয়েছে, যাতে করে পাঠকের হৃদয়ে তার প্রভাব ফেলে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সৃষ্টি রহস্য, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, দর্শন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখিকার চিন্তাভাবনা সচেতন পাঠক হৃদয়ে অবশ্যই ছাপ ফেলবে।

শেষ কথা হচ্ছে, এ বইটার সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করাটা ছোট্ট একটা রিভিউয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। যেহেতু এ বইয়ে কুশা চরিত্রটি পূর্ন বিকশিত হয় নি, এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেনি, সেহেতু ধারণা করা যায় কুশা চরিত্র নিয়ে সামনে আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে লেখিকার।

কুশা'র পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। একই সাথে এমন প্রতিভাশীল লেখিকা ও কুশা সিরিজের জন্য শুভ কামনা রইলো।

ভিন্নতার স্বাদ পেতে বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো সবাইকে। হ্যাপি রিডিং!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: গঠনমূলক রিভিউ। লেখকের প্রতি শুভ কামনা রইল।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৩০

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৩০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর রিভিউ। লিখিকার জন্য শুভকামনা রইল।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৩০

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.