নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই কথা- কাজী সাইফুল ইসলাম এর \'নজরুল\'

২৭ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫


‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণতুর্য’

এক কথায় যদি কেউ কবি নজরুলকে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়, তাহলে এই একটা লাইন-ই যথেষ্ট। তিনিই আমাদের জাতীয় কবি। বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি, সাম্যের কবি। মূলত, কবি নজরুল সাহিত্যধারায় দ্রোহের পাশাপাশি প্রেমের অপূর্ব সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। তাইতো তাঁর লেখায় দেখতে পাই, তাঁর শির চির উন্নত-চির দুরন্ত দুর্মদ সেই তারুণ্য বন্ধনহারা ষোড়শী কুমরারীর প্রেমেও উদ্দাম, চঞ্চল মেয়ের ভালবাসায় মুখর। মূলত তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রেমের জয়গান গেয়েছেন কবি। মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত কবি প্রেমের শাশ্বত আবেদনের কাছে হার মেনে স্বস্তি খুঁজে পেতে চেয়েছেন- "হে মোর রাণী! তোমার কাছে হার মানি আজ শেষে/আমার বিজয় কেতন লুটায় তোমার চরণ-তলে এসে।"

দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমে পড়েছিলেন বারবার। এসব প্রেমে ছিল মোহমুগ্ধতা, অনবদ্য সৌন্দর্য, বিরহ-যাতনা। প্রেমিকাদের জন্য লিখেছেন অজস্র গান, কবিতা, ঘটিয়েছেন নানা ঘটনা। তার জীবনে এসব প্রেমের ছোঁয়া বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে অনন্যমাত্রা। তিনি হয়ে উঠেছেন একাধারে প্রেম ও দ্রোহের কবি। কবি নজরুল বাজিয়েছিলেন বাঁশি, লিখেছেন কবিতা-গল্প, লিখেছেন গান এবং সে সময়ে জনশ্রুতি ছিল এই সকল প্রতিভার মুলে ছিল তাঁর প্রেম । তিনি এমন এক অসাধারণ লড়াকু মানুষ ছিলেন যাঁর নিজের ভাগ্যকে নিজেই তৈরী করেছিলেন- সময় তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি তিনি সময়কে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাঁর সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন।

নজরুলের জীবনে নারীর প্রতি প্রেম মূলত তিনবার এসেছিল- প্রথম নার্গিস, দ্বিতীয় তার স্ত্রী প্রমীলা দেবী এবং তৃতীয় ফজিলাতুন্নেসা।

নজরুলের গান, কবিতা, গল্প, বিদ্রোহ প্রভৃতি আমাদের কাছে বিখ্যাত। অথচ নার্গিসের সাথে কবির আলোচনার সূত্রপাত কবির বাঁশি বাজানো নিয়ে। এক রাতে কবি খাঁ বাড়ির দীঘির ঘাটে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, সেই বাঁশি সুরে মুগ্ধ হন নার্গিস। নজরুলের গান আর বাঁশির সুর মাতিয়ে দিল সৈয়দা খাতুনকে আর সৈয়দা খাতুনের রূপ মুগ্ধ করে ফেলল নজরুলকে। কবি প্রেমে পড়ে গেলেন প্রথম দর্শনেই। সৈয়দা খাতুনও সমান আগ্রহে কবির প্রেমে সাড়া দিয়েছিলেন। তারপর তাঁদের সময় কাটতে লাগল গান আর সুর নিয়ে। সৈয়দা খাতুনকে ভালোবেসে কবি তাঁর নামও বদলে দিলেন। তিনি তাঁর নাম দিলেন নার্গিস। একটা সময় নার্গিস কে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন কবি। দিন তারিখও ঠিক হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কাবিননামার শর্ত দেখে বিয়ের আসর ছেঁড়ে উঠে আসেন কবি।

এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর নজরুলের সাথে নার্গিসের আর কোন যোগাযোগও হয় নি। ১৯৩৭ সালে নজরুলকে নার্গিস একটা চিঠি লেখেন। চিঠির উত্তরে কবি লিখেন-

"যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
কেন মনে রাখ তারে
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে।"


কবির জীবনে নার্গিস এর প্রভাব কতটুকু টা বুঝা যায় কবি লেখাতেই- ''তুমি এই আগুনের পরশ মানিক না দিলে আমি 'অগ্নিবীণা' বাজাতে পারতামনা - আমি 'ধূমকেতুর' বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতামনা'' ।

নজরুলের জীবনে দ্বিতীয় নারী হচ্ছেন প্রমীলা । নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর নজরুল গিয়ে উঠেন বীরেন্দ্র কুমারের বাড়িতে এবং সেখানে গিয়ে কবি শারীরিক ও মানসিক ভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে সেনবাড়ির সেবাযত্ন তাঁকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হন । বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে থাকতেন তাঁর এক বিধবা জেঠিমা গিরিবালা দেবী এবং তাঁর কন্যা প্রমীলা সেনগুপ্তা । হতে পারে প্রমীলার সেবা যত্নে মুগ্ধ হয়ে অথবা নার্গিস এর স্মৃতি ভুলে থাকার কারণে নজরুল কিশোরী প্রমীলার প্রেমে পড়ে যান । অনেক ঘটনা অঘটনের পর কলকাতায় নজরুল প্রমীলার বিয়ে হয় ।

নজরুলের প্রেমিক জীবনে তৃতীয় নারী ফজিলতুন্নেসা পর্ব একটু জটিল। কবির এই প্রেমটি ছিল একপেশে - নজরুল নিজেই ভালোবেসে গেছেন কিন্তু ফজিলাতুনেসার কাছ থেকে ভালবাসা পাননি । নজরুল ফজিলাতুনেসাকে বহু চিঠি লিখেছেন যার ছত্রে ছত্রে ছিল ফজিলাতুনেসার প্রতি প্রেমের আকুলতা, সেসব চিঠির উত্তর তিনি কোন দিন পাননি । ১৯২৪ সালে নজরুল ইসলামের প্রমীলা দেবীর সাথে বিয়ে হয় আর ফজিলতুন্নেসার সাথে তার দেখা হয় ১৯২৮ সালে। কাজী মোতাহার হোসেনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাদের যোগাযোগ হয়। ফজিলতুন্নেসার হৃদয় জয় করতে ব্যর্থ নজরুল কলকাতা ফিরে আসেন তার কৃষ্ণনগরের বাসায়, যেখানে তার পরিবার থাকত। পৌছে কবি নজরুল কাজী মোতাহার হোসেনকে মোট ৭টি এবং ফজিলাতুন্নসাকে একটি চিঠি পাঠান। এই ৮ টি চিঠি ১৯২৮ এর ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝে লেখা । চিঠিগুলো কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে দীর্ঘদিন সংরক্ষিত ছিল।

এছাড়াও আরও যে কয়জন নারী কবির জীবনে এসেছিল, তাদের নিয়ে কবিকে জড়িয়ে শোনা যায় নানান কথা। কিন্তু শারীরিক প্রেমের ঊর্ধ্বেও তো কিছু প্রেম হয়। রানু সোম বলেছিলেন- "দেবতার প্রেমে কি পাপ থাকে, বলেন গুরু। মানুষ কেন মিথ্যে বদনাম দিবে"।

'নজরুল', বইটিতে লেখক কাজী সাইফুল ইসলাম কবির জীবনে আসা নানান নারীদের ঘটনাই খুব সুন্দর করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, খুঁজে বেড়িয়েছেন কবিকে। লেখকের সাথে কবিকে খুঁজতে পড়তে পারেন এই বইটি।

হ্যাপি রিডিং!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



নজরুলের প্রথম জীবনসঙ্গিনী হয়েছিলেন কুমারী প্রমীলা সেনগুপ্তা। প্রমীলার ডাকনাম ছিল দুলি। তাঁদের এই বিয়ে প্রেম থেকে নয়, বরং পারিবারিক সম্মতিতে স্থির হয়। তবে জানা যায়, নজরুল কুমিল্লায় থাকাকালে প্রমীলার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। প্রমীলার সঙ্গে তাঁর আলাপ-পরিচয় ছিল। তাঁর এই প্রেমের কথা তাঁর ‘বিজয়িনী’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছিল।

তাঁদের বিয়ে হয় ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে। বিয়েতে বাধা ছিল একটাই, ধর্ম। বিবাহ-আইনের নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে তাঁদের বিয়েটা হয়েছিল স্ব-স্ব ধর্মপরিচয় বহাল রেখেই। তখন প্রমীলার বয়স ছিল ১৪ আর নজরুলের ২৩।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০

জসীম অসীম বলেছেন: কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন কোনোভাবেই প্রেম, বিদ্রোহ এবং নারী বিচ্ছিন্ন নয়। অলংকরণ: জসীম অসীম।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩২

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ভালো লাগলো

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০১

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: রিভিউ পড়ে মনে হলো, বইটির নাম "নজরুলের জীবনে নারী ও প্রেম" হলেই নামকরণ সার্থকতা পেতো। বিষয়ের যথার্থতায় শুধু "নজরুল" নামে ঘাটতি রয়ে যায়। সেটা অবশ্য লেখক কাজী সাইফুল ইসলামএর বিবেচনা।
রিভিউটা ভাল লেগেছে, ধন্যবাদ ফাহাদ জুয়েল ভাই।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি, আমিও মনে করি বিষয়ের যথার্থতায় শুধু "নজরুল" নামে ঘাটতি রয়ে গেছে।

৪| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: বইটি নাম আমার নতুন বই কেনার লিস্টে তুলে রাখলাম।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ভালো লাগলো জেনে।

৫| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৬

রাকু হাসান বলেছেন: বাহ !প্রিয় কবিকে নিয়ে লেখা,বাড়তি ভাল লাগে ,বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ । ছোট পরিসরে বেশ ভাল লিখিছেন ।

ঐ লাইনটি অনেক অর্থ বহন করে নজরুলকে জানার বুঝার । একজন অতি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কবি । ফজিলত যদি এমন টা করতো ,কবির কাছ থেকে আরও কালজয়ী লেখা পেতাম । ফজিলত ই ছিল ভাল থাকার শেষ ভরসা ।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন।

৬| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৪

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: "যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
কেন মনে রাখ তারে
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে"


এই গানের প্রথম লাইনটি সর্বৈব মিথ্যা। নার্গিস কখনই নজরুলের সাথে প্রতারনা করেন নি। বিয়ের শর্ত নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় নার্গিসকে নজরুল বিয়ে করার সাথে সাথেই গৃহ ত্যাগ করেন। ব্যক্তি স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে নার্গিসকে বিয়ে করার মত মানসিকতা নজরুলের ছিল না। এখানে নার্গিসের করনীয় কিছুই ছিল না। সে ষোল বছরের গৃহবন্দী একটি বালিকা মাত্র। ভালবাসার জন্য ত্যাগের মানসিকতা না থাকা সত্ত্বেও নজরুল ইনিয়ে বিনিয়ে নার্গিসের কাছে "তোমাকে দূর থেকে আজীবন ভালবাসব" জাতীয় কথাবার্তায় সমৃদ্ধ যেসব চিঠি লিখেছিলেন তাতে নার্গিস কিছুতেই নজরুলকে ভুলতে পারছিলেন না। নজরুলের এই আচরন অত্যন্ত বিরক্তিকর। নজরুলের উচিত ছিল সম্পূর্ন ইগনোর করা এবং সাথে সাথে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়া।

নার্গিসের পরে নজরুল বিয়ে করেন প্রমীলা দেবীকে। অন্যদিকে নার্গিস কিছুতেই নজরুলকে ভুলতে পারছিলেন না যদিও নজরুল ততদিনে প্রমীলার সাথে সুখে সংসার করছেন। উপরের গানের এই অংশটুকু সত্য। বহু বহু বছর পরে নার্গিসের পরিবার নার্গিসকে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজী করাতে সক্ষম হয়। তখনই নজরুল তালাকনামায় সাক্ষর করেন। নার্গিসের দ্বিতীয় স্বামী (নাম ভুলে গিয়েছি) ছিলেন এক অসাধারন মানুষ। তিনিই নজরুল নার্গিসের চিঠিগুলো প্রকাশ করেন।

২৮ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪০

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: নার্গিসের দ্বিতীয় স্বামীর নাম ছিল কবি আজিজুল হাকিম। তিনি ছিলেন বাঙালি কবি এবং প্রাবন্ধিক। কর্মজীবনে তিনি কিছুসময় পাক্ষিক নওরোজ পত্রিকা এবং মাসিক সবুজ বাঙলা পত্রিকার সম্পাদনা কাজে নিযুক্ত ছিলেন।

৭| ২৭ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৫২

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: ১৯২৪ সালে প্রমীলাকে বিয়ে এবং ১৯২৮ সালে ফজিলাতুন্নেসার প্রেমে পড়েন।

কি ভয়ানক। মেয়েদের নিয়ে গলা ফাটিয়ে এত এত সাম্যের কবিতা লেখালেখি করেছেন অথচ স্ত্রীর প্রতি কি নিদারুন অবহেলা। যাক, ফজিলাতুন্নেসা বুদ্ধিমতী ছিলেন বলে নজরুলের এই "প্রেমের আকুলতায়" কোন সাড়া দেন নি। নতুবা তার অবস্থা নার্গিসের মতই হত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.