নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ : আলতাফ পারভেজ এর লেখা \'কাশ্মীর ও আজাদির লড়াই\'

২১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৯



কাশ্মীর। কেউ বলে ভূস্বর্গ, আবার কেউ বলে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।

কাশ্মীরের প্রকৃতি নিয়ে কত কবি কবিতা লিখেছেন। কত গল্পকার লিখেছেন শত শত পৃষ্ঠার রচনা। সাজিয়ে তুলেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের লেখাগুলো পড়ে পড়ে কাশ্মীরের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে বারবার উঁকি দেয়। উদ্বেলিত হয় প্রাণ।

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে একটু দৃষ্টি সরালেই মনটা খারাপ হয়ে আসে। ঝিলমের তীরে, ডাল লেকের শিকারায় কাশ্মীরের প্রিয় বাদ্যযন্ত্র সন্তুরের আওয়াজ থেমে গেছে অনেকদিনই, তার বদলে এখন মর্টার-গ্রেনেড বা পেলেট গানের আওয়াজটাই সেখানে দস্তুর।

কারণ, কাশ্মির এখন বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়নকৃত ও সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা। ভারতের মোট সেনা শক্তির বড় একটা অংশ মোতায়েন জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায়। কাশ্মীরীরা আজ নিজ দেশে পরবাসী। বলা যায়, বৃহৎ এক কারাগারের বাসিন্দা তারা।

গত প্রায় সত্তর বছর ধরে এই অনিন্দ্য সুন্দর ভূখন্ডটিকে ঘিরে ভারত আর পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে কাশ্মীরের বর্তমান প্রজন্ম ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। কাশ্মীরের এই প্রজন্মের যুবকরা তাদের জন্মভূমির মুক্তির লড়াইতে কেউ হাতে তুলে নিয়েছে একে-ফর্টি সেভেন, কেউ পাথরের টুকরো - আবার কেউ বা গিটার।

কিন্তু কাশ্মীরের এই সংকটের মূলে কী, কেন আজাদীর দাবিতে তাদের এই সংগ্রাম, আত্মত্যাগ?

ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাবার আগে থেকেই কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।

'ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স এ্যাক্ট' নামে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির যে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, কাশ্মীর তার ইচ্ছে অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান - যে কোন রাষ্ট্রেই যোগ দিতে পারবে।

কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং চাইছিলেন স্বাধীন থাকতে অথবা ভারতের সাথে যোগ দিতে। অন্যদিকে পশ্চিম জম্মু এবং গিলগিট-বালতিস্তানের মুসলিমরা চাইছিলেন পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে হরি সিং ভারতে যোগ দেবার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ - যা চলেছিল প্রায় দু'বছর ধরে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৯৪৮ সালে ভারত কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে।

জাতিসংঘের ৪৭ নম্বর প্রস্তাবে কাশ্মীরে গণভোট, পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার, এবং ভারতের সামরিক উপস্থিতি ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনতে আহ্বান জানানো হয়।

কিন্তু জাতিসংঘের সেই প্রস্তাব আজও বাস্তবায়িত হয় নি। নেহেরুর প্রতিশ্রুত গণভোটও আর হলো না, কাশ্মীরী জনগণও নিজেদের ভাগ্য গড়ে নেয়ার সুযোগ পেল না। ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। আশি'র দশক থেকে অস্ত্র হাতে নেওয়া শুরু করেছে কাশ্মীরি জনগণ।

কাশ্মীরের রাজা হরি সিং এর বিরুদ্ধে 'কাশ্মীরকো ছোড় দো' আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল, তা আজ আরও বিস্তৃতি লাভ করেছে। কাশ্মীরের বিক্ষোভ সমাবেশগুলো আজ মুখরিত হয় আজাদীর দাবিতে। স্লোগান উঠে- "হাম ক্যায়া চাহতে হ্যায়?" বিক্ষোভরত জনগণ জবাব দেয়- "আজাদী, আজাদী"।

গবেষক আলতাফ পারভেজ এর 'এথনো-পলিটিক্স ইন সাউথ এশিয়া' সিরিজের দ্বিতীয় বই এটি। এখানে ছোট পরিসরে কাশ্মীরীদের রাজনৈতিক ইতিহাস ও আজাদির আন্দোলন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

মূলত কাশ্মীরের ইতিহাসের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর চুম্বক দৃশ্যগুলো ৪২ টি ভুক্তির আকারে তুলে ধরা হয়েছে ন্যূনতম এক পরিসরে। এসব ভুক্তির বিষয়বস্তু আগ্রহী পাঠককে কাশ্মীরের সামাজিক চিত্র ও রাজনৈতিক ইতিহাসের আরও গভীর পাঠের আগ্রহ তৈরি করবে বলে বিশ্বাস করি।

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকালে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের।

-
বইয়ের নামঃ কাশ্মীর ও আজাদির লড়াই
লেখকঃ আলতাফ পারভেজ
প্রকাশনায়ঃ ঐতিহ্য
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৭০ টাকা মাত্র।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।
সহজ করে একটা রিভিউ সামনে আনার জন্যে।

শুভ কামনা রইল।

২১ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৭

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: আপনাকে স্বাগতম।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ একটা বইয়ের তথ্য দেওয়ার জন্য।

২১ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৮

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: স্বাগতম আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.