নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাংলাদেশের তাঁবেদার

বাংলাদেশের তাবেদার

বেশীরভাগ মানুষ নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করে বলেই পৃথিবীতে বোকার সংখ্যা এতো বেশী

বাংলাদেশের তাবেদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়র্কার নিয়ে কিছু কথা

১২ ই জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৮

ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের অস্ত্র কি? এই প্রশ্ন করা হলে এক এক করে বলা হবে রিভার্স সুইং, আউটসুইংগার, বাউন্সার, ইয়র্কার। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র বোধ হয় ইয়র্কার। এই ইয়র্কার প্রথম কে করলেন, এর উৎসই বা কি অথবা এর নামকরণের পেছনের কারণটা কি তা আজো অজানা এ নিয়ে নানাজনের নানামত। নানা কেতাবে নানা কথা লেখা। কিন্তু কোনটা ঠিক। ইয়র্কশায়ারে কোনো কোনো অঞ্চলে বসবাসকারীদের ইয়র্কার বলা হয়। তার মানে কি এই যে, ইয়র্কশায়ারই ‘ইয়র্কার’-এর জন্মভূমি। এখানকার বোলাররাই কি অবিষ্কার করেন এই বিধ্বংসী বলের? এ নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে তবে কেউ সন্তুষ্ট হননি। অক্সফোর্ড অভিধানে তিন ধরনের ইয়র্কারের বর্না আছে। এর একটি অবশ্যই ক্রিকেট সম্পর্কীয়।



ক্রিকেটীয় ইয়র্কারের কথা সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয় ১৮৬১ সালের আগস্ট মাসে। বেলস লাইফ ইন লন্ডন এন্ড স্পোর্টিং ক্রনিকলস-এ লেখা হয়, বোলারদের সবসময়ই মাথাব্যথার কারণ বুকাননও ইয়র্কারে হিট করতে পারছিলেন না বলে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন। তিনি ভাবছিলেন ইয়র্কার খেলতে না পারলে ব্যাটসম্যানের ইনিংস সেখানেই থেমে যাবে (তিনি হয়তো বল ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন)। এতেই পরিষ্কার যে লেখক ভেবে নিয়েছেন তার পাঠকরা ইয়র্কার সম্পর্কে জানে। এরপর একদশকেরও কম সময়ে ইয়র্কার শব্দটি থেকে ইনভার্টেড কমা ওঠে যায়। কোনো দ্বিধা ছাড়াই ১৮৭০ সালে ‘স্পোর্টিং ম্যাগাজিন’ সাময়িকিতে লেখা হয়, দ্রুতগতির ইয়র্কার যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য মোকাবেলা করা কঠিন। এই বোলিংয়ের জন্মকথা নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে তখন বলা হতে থাকে ইয়র্কশায়ারের খেলোয়াড়রা এ ধরনের বল করতেন বলেই এর নাম ইয়র্কার।



তবে উইজডেন ডিক্সনারি অব ক্রিকেট (২০০৬ সালের তৃতীয় সংস্করণ)-এ মাইকেল রানডেল এটি মানতে রাজী হননি। তার মতে প্রতারণাকে বাজেভাবে ব্যবহার করে গালি দেয়ার জন্য ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে ‘ইয়র্ক’। এ থেকেই ‘ইয়র্কার’ শব্দটি প্রচলিত হয়। রান্ডেল বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জোসেফ রাইট প্রণীত ‘ইংলিশ ডায়ালেক্ট ডিকশনারি’র ব্যাখ্যা উল্লেখ করেন। সেই অভিধানে বলা হয়েছে বৃটিশ শাসিত অঞ্চলের কোনো কোনো স্থানে প্রতারণা বলতেই ‘ইয়র্ক’ শব্দটি ব্যবহৃত হতো। অভিধানে ওয়ারউইকশায়ারের একটি মামলার উদাহরণ দিয়ে লিখেছেন, মামলার বাদী কর্তৃক বিবাদীর বিরূদ্ধে আনীত প্রতারণার অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘হি হ্যাজ ইয়র্কড মি’।



ইয়র্কশায়ারের সিসিসি যাদুঘরের পরিচালক ডেভিড হিলকে এ বিষয়ে আলোকপাত করতে বলা হলে তিনি জানান, তারা ক্লাবটির জন্মের সাল ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত রেকর্ড নিয়ে ঘাটাঘাটি করেও কোনো সদুত্তর পাননি। ক্রিকেট লেক্সিকন অব লেই এন্ড উডহাউস-এর দিকে তাকালে দেখা যায়, ইয়র্কশায়ার থেকেই ইয়র্কারের উৎপত্তি। ইয়র্ক শব্দটি প্রতারণাকে গালি হিসাবে ব্যবহার করতেই ইয়র্ক ব্যবহৃত হতো।



লেই এন্ড উডহাউজ-এর মতে তৃতীয় ব্যখ্যাটি হচ্ছে অনেকটা ঝাঁকি (ইংরেজীতে জার্ক) দিয়ে ইয়র্কার করা হয়। জার্কার (jerker) তাই ইয়র্কার’ বলের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে।



ক্রিয়াপদ হিসাবে দেখা যায় ইয়ের্কড অথবা ইয়ার্কড শব্দটির অর্থ হচ্ছে কারো দিকে হঠাৎ করে কোনো কিছু ছুঁড়ে দেয়া। অনেক ব্যাটসম্যান এই হঠাৎ আসা বলে পরাস্ত হয়েছেন। কাজেই ইয়ার্কড থেকে ইয়র্কারের ইৎপত্তি হওয়াটাই অনেকটা বাস্তবসম্মত বলে মনে হয়। অবশ্য এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।



উনবিংশ শতাব্দীতে ইয়র্কশায়ার এবং ইংল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটার টম এমটকেও ইয়র্কার-এর প্রথম বোলার হিসাবে দাবী ভিত্তিহীন। তিনি একজন অত্যন্ত কার্যকর বাঁহাতি পেসার ছিলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অ্যান্থনি উডহাউসের মতে, টম এমট ক্রিকেটের মহান চরিত্র। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত তার ইয়র্কশায়ারে অভিষেক হয়নি। এর পাঁচ বছর পর প্রথম ইয়র্কারের কথা জানা যায়। কাজেই এই বলটি আবিষ্কারের দাবীদার তিনি হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে তিনি তার নিজস্ব স্টাইলের স্লোয়ার বল উদ্ভাবন করেছিলেন। এই বলটি ডানহাতি ব্যাটসম্যানের লেগস্ট্যাম্পে পড়ে অফের দিকে বেরিয়ে যায়।



যেভাবেই ইয়র্কারের উৎপত্তি হোক না কেন, সাম্প্রতিক সময়ের কোনো বোলারই সম্ভবত এ বিষয়ে জানে না। শ্রীলংকার জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর লাসিথ মালিংগা বলেছিলেন, ইয়র্কার কিভাবে করতে হয় এ বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই। হালে তিনি এ বিষয়টি আয়ত্ব করেছেন। কেনিয়ার বিপক্ষে ২০১১ সালে মালিংগার ইয়র্কার বলে আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা যখন দাঁড়াতেই পারছিলেন না তখন ওয়াকার ইউনুস বলেছিলেন, আমার ফেলে আসা সময়ের সোনালী দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।



১৮৮২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ‘পাঞ্চ’ ম্যাগাজিনে এ সম্পর্কে একটি কৌতুক প্রকাশিত হয়েছিল। এতে পুরোনো দিনের একজন খেলোয়াড় একজন নবীনকে পেশাদার বোলারকে প্রশ্ন করছেন, তুমি ইয়র্কার ভালো করতে পার বলেই আমি তোমাকে প্রশ্ন করছি না যে, ইয়র্কার কি? তবে বলতো এটিকে ইয়র্কার বলা হয় কেন? সেই পেশাদার জবাব দিচ্ছেন, আমি জানিনা স্যার। এটিকে আপনি অন্য কিছু বলবেন কিনা তাও আমি জানিনা।



ইয়র্কারের জন্ম যার হাতেই হোক না কেন বা যে কোনো স্থান থেকেই হোক না কেন তা যে প্রায় আড়াইশ বছরের বেশি পুরোনো তা বলাই বাহুল্য। এ নিয়ে আরো গবেষণা হতে পারে। হয়তো কোনো দিনই প্রথম ইয়র্কার ডেলিভারিটির কথা জানা যাবে না। তারপরও ইয়র্কার যে অনেককে ইয়র্কড করে তার নিজস্ব গতিতে ব্যাটসম্যানদের প্রাণ সংহার করতে থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি?



পাকিস্তানের ‘টু-ডব্লিউ’ খ্যাত ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইউনুস, পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ইমরান খান, অতটা গতিসম্পন্ন না হলেও মিডিয়াম পেসারদের মধ্যে অন্যতম ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেব নিখঞ্জ, হালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়া শ্রীলংকান ক্রিকেটার লাসিথ মালিংগা, পাকিস্তানের শোয়েব আখতার---এদের নাম উঠলে যে বলটির কথা বিশেষভাবে মনে হয় তার নাম ইয়র্কার। যদি প্রশ্ন করা হয় সবচেয়ে মারাত্মক বল কি? এই প্রশ্নের জবাবে যে কেউ হয়তো এক এক করে বলে দেবেন, দূর্দান্ত গতিতে আসা বাউন্সার, সংহারী দুসরা, দারুণ বল গুগলি।



বলগুলো বোলারদের মারাত্মক অস্ত্র এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে যত মারাত্মকই হোক না কেন, ইয়র্কারের কাছাকাছি কি এগুলোর কোনোটি। একটু ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত হয়তো বিজ্ঞজনেরা বলবেন, না ইয়র্কারের তুলনা শুধু ইয়র্কার।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১০:২১

রুদ্রপ্রতাপ বলেছেন: দারুন লাগলো! চমৎকার লেখা! আপনাকে অনুসরন করে নিলাম! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.