নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার দেশকে ভালোবাসি

আমি নিজের সম্পর্কে উদাসীন হলেও আমার দেশ সম্পর্কে সচেতন

বেলাল তামজীদ

আমার প্রবাস জীবনের প্রতিটিদিন আমি আমার সোনার বাংলাকে মিস করছি

বেলাল তামজীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চায়নাতে ঃবৃদ্ধাশ্রমে একবেলা

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১২

চায়নাতে আছি অনেক দিন।আমাদের ভার্সিটিতে বিদেশী ছাত্রদের একটা সংগঠন আছে।এর সাথে অনেক চাইনিজরা ও যুক্ত।কিছুদিন আগে সবাই মিলে ঠিক করলাম কোথাও ঘুরতে যাইয়া যাক।



তাই আজকে সবাই মিলে "বৃদ্ধাশ্রমে" গিয়েছিলাম, জীবনে প্রথম বারের মতো।তাও আবার চাইনিজ বৃদ্ধাশ্রম।আমরা বিদেশী ছাত্র ছিলাম ১০ জন আর সাথে ১০-১২ জনের মতো চাইনিজ বন্ধু।চায়নিজরা প্রায় সব কাজই সকাল সকাল করতে অভ্যস্ত তাই ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ও সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। সকাল ৮.৩০ এ রওনা দিলাম গন্ত্যব্যের উদ্দেশ্যে, আর প্রায় ১ ঘন্টার মধ্যেই পৌছে গেলাম।জায়গাটি শহর থেকে একটু দূরে।এই দিনটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু অনেক কাছ থেকে বৃদ্ধাশ্রমের এই জীবনটা দেখে অবাক হলাম।



আমাদের বয়সে এরাও হয়ত সারা পৃথিবী বেড়িয়েছে।কিন্তু এই বয়সে এসে নিঃসঙ্গতা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।রোগের ভারে আক্রান্ত মানুষগুলো স্বজনদের কাছ থেকে রয়েছে অনেক দূরে।যে সন্তানদের জন্য সারাজীবন কষ্ট করেছে তারা হয়ত সপ্তাহে বা মাসে একবার দেখতে আসে, অনেকে আবার আসেই না। আমাদের ততাকথিত সভ্য সমাজ থেকে অনেক দূরে সরে আসা এই মানুষগুলো হয়ত প্রতিনিয়ত আমাদের ধিক্কার জানাচ্ছে।



আমাদের প্রথম দেখাতে অনেকে অবাক হলেও,বন্ধুসুলভ আচরণের কারণে তারা আমাদের বেশ দ্রুতই আপন করে নিয়েছিলো।আমরা যতক্ষন ছিলাম তাদের মুখে হাসি ফোটানোর সর্বচ্চো চেষ্টা করেছি।কেউ কেউ বে-সুরা গলায় গান গেয়েছে আর অন্যরা তার সাথে সামিল।আমাদের গান গাইতে দেখে একজন বৃদ্ধা ও গেয়ে উঠল "wen wo ai ni......"।তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আবার ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সাজিয়ে নিয়েছে তাদের আপন রাজ্য।এরা নাকি খাবার সময় ছাড়া রুম থেকে বের হয় না।আমরা নিজেদের বিদেশী ছাত্র বলে পরিচয় দেয়াতে একজন শেষমেশ দরজা খুলে বের হলো, তাও আবার একপলকের জন্য।তবে বাকি সবাই ছিলো বেশ আনন্দমুখর।দোতালা বিল্ডিংটার উপরের তলায় গিয়ে একটু অবাক হলাম।ডাইনিংরুমে বিশাল বড় পিয়ানো দেখে।চাইনিজদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটা কেউ বাজাতে পারে না।আমি নিজেও পারি না।জীবনে কোনদিন পিয়ানোর কিবোর্ড এ হাত না দিলেও আজকে চেষ্টা করে দেখেছি।বে-সুরা ভাবে বাজিয়েছি, শুধুমাত্র তাদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য।সবচেয়ে ভালো লেগেছে একটা দৃশ্য দেখে, তাদের মধ্যে একজন লোক (বয়স প্রায় ৮৫) চেয়ারে বসে একমনে বই পড়তেছে।তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছে।কিন্তু কোন জবাব পেলাম না।একটু পর ম্যানেজার এসে জানালো উনি কানে শুনতে পান না।চোখেও খুব একটা দেখেন না।কিন্তু তার দু-চোখ আটকে আছে বইয়ের পাতায়।এইবয়সে জীবনের সন্ধিক্ষণে এসেও জানার ইচ্ছা অথবা বইয়ের চোখে বাইরের পৃথিবীকে দেখার ইচ্ছা।



নিজের জানা চাইনিজ আর সাথে নেপালী বড় আপু একের পর বৃদ্ধার সাথে কথা বলেই গেছি।আর আপুর canon এর ক্যামরায় স্মৃতি গুলো ফ্রেম বন্দি করেছে বন্ধু " মোকারম"।



এইখানে একটা বিষয় আমাকে বেশ মর্মাহত করেছে।আমাদের সমাজে সাধারন বাস্তবতার মতো এইখানে ও ধনী-গরিব পার্থক্য।যাদের ছেলেমেয়ে ধনী এবং মাসে মাসে বেশ ভালো অংকের টাকা দিতে পারে তারা আছে অন্যদের তুলনায় আলাদা রুমে।তাদের জন্য আলাদা খাতির।তবে আপাত দৃষ্টিতে তাদের আলাদা মনে হলেও এরা আলাদা নয়।সকালে নাস্তার পর সবাই মাঠে এসে হাজির।শীতের সকালে রোদ পোহানো আর পেছনের জীবনে ফেলে আসা গল্প করতে করতে কাটছে সময়।কাটছে একটি একটি দিন।অপেক্ষায় আছে কবে লাশের গাড়িতে করে এই জেলখানা থেকে বের হবে!!!!



দুপুর ১২ টার দিকে চলে আসার সময় অনেককেই দেখলাম হাত দিয়ে চোখ মুছতে।হয়ত আমরা ক্ষণিকের অতিথিরা তাদের কিছু ভালো সময় উপহার দিয়েছি।



বৃদ্ধাশ্রম থেকে বের হতে হতে চোখের সামনে ভেসে উঠল "৭০ বছর বয়সী আমি"!!!!!!!!তবে কি......???না এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: বৃদ্ধাশ্রম থেকে বের হতে হতে চোখের সামনে বেশে উঠল "৭০ বছর বয়সী আমি"! এই প্রশ্ন উত্তর ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।


--------------খুবই তাৎপর্য পূর্ণ কথা।

ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

বেলাল তামজীদ বলেছেন: আপনাকে ও ধন্যবাদ। দোয়া করবেন।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

বেলা শেষে বলেছেন: good writing, good selection, sensibel.....write please more

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

বেলাল তামজীদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭

ডিজিটাল প্লানেট ট্রাকার বলেছেন: ভাবনার খোরাক!

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

বেলাল তামজীদ বলেছেন: হ্যাঁ। চিন্তার বিষয়।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: শিরোনামটা চায়না হবে মনে হয়।

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২

বেলাল তামজীদ বলেছেন: সরি।আমি ঠিক করে দিচ্ছি। আপনাকে ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: আমাদের দেশেও এরকম কিছু সন্তান আছে যারা মা বাবাদের ডাস্টবিন এ ফেলে দিয়ে আসে।

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬

বেলাল তামজীদ বলেছেন: ধিক্কার জানায় সেইসব অমানুষদের।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: +++

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬

বেলাল তামজীদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৩

খাটাস বলেছেন: অভিজ্ঞতা টা ভিন্ন দেশের হলে ও আবহ এক। কিছু বলার নেই। তবে চীনের মত উন্নত রাষ্ট্রে বৃদ্ধাশ্রম যদি ও অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবু ও কেমন যেন লাগল। তারা নিষ্ঠুর নাকি যন্ত্র বুঝতে পারছি না।

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১৫

বেলাল তামজীদ বলেছেন: "তারা" বলতে আপনি কাকে বুঝিয়েছেন?এই "তারা" হলো আপনি , আমি, আমরা!!! আমরাই করি এইসব কাজ। ভদ্রতার লেভাজ পরে আধুনিক সমাজ গড়ার কথা বলি।ভুলে যাচ্ছি আমাদের শিকড়।

৮| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২২

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: স্থান এবং টপিক - দুটোই ছুঁয়ে যাবার মত। ভালো থাকুন বৃদ্ধ পিতামাতারা, সন্তানের মমতাতেই হোক তাঁদের আশ্রম, দূরে নয়।

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৮

বেলাল তামজীদ বলেছেন: ভালো থাকুক আপনার , আমার, সবার পিতা-মাতা। ভালো থাকুক তাদের শেষ জীবনের অল্প কিছু দিন।

৯| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২২

সুমন কর বলেছেন: গুড পোস্ট।
বৃদ্ধাশ্রম শব্দটাই আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য।

০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৬

বেলাল তামজীদ বলেছেন: পারলে এইশব্দটা ডিকশনারী থেকে উঠিয়ে দেওয়া উচিত।আপনার সাথে আমি ও একমত।এই শব্দটা আসলেই অগ্রহনযোগ্য।

১০| ১০ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:৩৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার লিখাটা হৃদয় স্পর্শ করলো ভাই।

১০ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

বেলাল তামজীদ বলেছেন: ++++

১১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫০

বেলাল তামজীদ বলেছেন: :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.