নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিরোজিও: প্রথাবিরোধী এক অনন্য দ্রোহী।

০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৩৬

ডিরোজিও। পুরো নাম হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। ডিরোজিওর জন্ম কোলকাতার এক মিশ্র পর্তুগিজ পরিবারে হলেও নিজেকে আপাদমস্তক খাঁটি বাঙালিই ভাবতেন। সে কথা তাঁর লেখা একটি ইংরেজী কবিতায় ফুটে উঠেছে।



My Country! In the days of Glory Past

A beauteous halo circled round thy brow

And worshipped as deity thou wast,

Where is that Glory, where is that reverence now?



আপনাদের মধ্যে যারা কোলকাতায় গিয়েছেন, তারা জানেন যে কোলকাতায় এনটালি নামে একটা জায়গা আছে। ডিরোজিওর জন্ম সেখানেই হয়েছিল ১০ এপ্রিল ১৮০৯ সালে। বাবার নাম ফ্রান্সিস ডিরোজিও। সে সময়টায় কোলকাতায় বাস করত ড্রুমন্ড নামে একজন স্কটিশ। তিনি ছিলেন দারুন প্রগতিশীল এক মানুষ। তাঁর সম্বন্ধে লোকে বলত, "a dour Scotsman, an exile and a 'notrious free thinker'" তিনি কোলকাতার ধর্মতলায় একটি স্কুল দিয়েছিলেন। স্কুলের নাম ছিল ধর্মতলা আকাদেমি স্কুল। সেখানেই ভর্তি হয়েছিল বালক ডিরোজিও। ড্রুমন্ড মুক্তচিন্তা ডিরোজিওর ভিতর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। যাতে করে বালকের মন কুসংস্কারমুক্ত হয়ে ওঠে। ড্রুমন্ড বালককে পাঠ দিতেন ইতিহাস দর্শন ও ইংরেজী সাহিত্যে।

ড্রুমন্ড-এর উৎসাহে বালক ডিরোজিও পড়ত ফরাসী বিপ্লব নিয়ে: The causes of the French Revolution are a subject of significant historical debate. France in 1789, although facing some economic ( especially taxation) difficulties and simplicities, was one of the richest and most powerful nations in Europe; further, the masses of most other European powers had less freedom and a higher chance of arbitrary punishment.

পড়ত কবি রবার্ট বার্নসের কবিতা।



I see amid the fields of Ayr

A ploughman, who, in foul and fair,

Sings at his task

So clear, we know not if it is

The laverock's song we hear, or his,

Nor care to ask.



ডিরোজিওর তখন চৌদ্দ বছর বয়েস। বাবার ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য স্কুলের পড়া ছাড়তে হল। ডিরোজিও ভাগলপুর চলে যান। জায়গাটি বিহারে। সেখানে গঙ্গার রুপ দেখে বিস্মিত। কবিতা লিখতে শুরু করলেন। পরে সেসব কবিতা কিছু প্রকাশিত হয়েছিল।

নানা বিষয়ে পড়াশোনা চলছিল। ইম্মানুয়েল কান্ট ছিলেন জার্মান দার্শনিক। তাঁর কড়া সমালোচনা করে নিবন্ধ লিখলেন। তখন ডিরোজিওর বয়স মাত্র ১৭। বছরের তরুণের লেখায় কোলকাতায় বুদ্ধিজীবি মহলে আলোরন উঠল।

১৮২৮। কবিতা ছাপতে কোলকাতায় এলেন ডিরোজিও।

সেই সময় কোলকাতায় বাস করতেন ডেভিড হেয়ার নামে এক ঘড়ি ব্যবসায়ী। (বিস্তারিত দেখুন Click This Link) ঘড়ির ব্যবসা করে প্রভূত ধন অর্জন করেছিলেন হেয়ার। হেয়ারের বাড়ি ছিল স্কটল্যান্ডে। সেখানেই ফিরে যাওয়ার কথা। গেলেন না। কেননা, ততদিনে কোলকাতার মানুষের দুঃখদুর্দশা (যার অন্যতম কারণ ঔপনিবেশিক শাসন) দেখে মর্মাহত হয়েছিলেন হেয়ার। ঔপনিবেশিক শাসনে নিষ্পেষিত মানুষের জন্য কী করা যায় ভাবছিলেন। হেয়ার সম্ভবত ভেবেছিলেন, কোলকাতার মানুষ শিক্ষিত হলে কর্ম সংস্থান হবে। কাজেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা ভাবলেন হেয়ার। তখন ১৮১৭ সাল। হেয়ারের বয়স ৪২ বছর। তখন কোলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাইড ইষ্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের কথাটা হেয়ার তাঁকে বোঝালেন। ফল হল। অতপর হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা। যার পিছনে হেয়ারের অবদান অসামান্য।

ডিরোজিও শুনলেন-হিন্দু কলেজে পদ খালি আছে-আবেদন করলেন। তাঁকে নেওয়া হল।

ঔপনিবেশিক বাংলার বাতাসে তখন পরিবর্তনের সুর।

ডিরোজিও সে বাতাসের বিদ্রোহ আরও উশকে দিলেন।

১৮২৬। মে মাস। ১৭ বছর বয়েসে

ডিরোজিও ইতিহাস ও ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে হিন্দু কলেজে যোগ দিলেন। ব্যতিক্রমধর্মী পাঠদানের কারণে ছাত্ররা তাঁর প্রতি আকর্ষন বোধ করল। ছাত্রদের সঙ্গে খোলাখুলি মিশতেন ডিরোজিও। শ্রেণি কক্ষের বাইরেও যোগাযোগ রাখতেন। অনেকে ছাত্রই তাঁর বাড়ি যেতেন। সেখানে আড্ডা চলত। তখন বলছিলাম ডিরোজিও নিজেকে বাঙালি ভাবতেন। বাঙালিমাত্রেই আড্ড ভালোবাসে। আড্ডায় ডিরোজিও উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করতেন-



Expanding like the petals of young flowers

I watch the gentle opening of your minds…



এভাবে জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তীতে পরিনত হলেন ডিরোজিও।

বিস্তর পড়াশোনা ছিল ডিরোজিওর। ছিলেন আপাদমস্তক যুক্তিবাদী। ছাত্রদের টমান পেইন পড়তে বলতেন; বিশেষ করে, “রাইটস অভ ম্যান।” ডিরোজিও নিজে নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, খ্রিস্টানসুলভ আচরণ পরিত্যাগ করেছিলেন। ধর্মবিশ্বাসীদের প্রশ্ন করে করে বিব্রত করতেন। ছাত্রদেরও হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে তাই করতে বলতেন। চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী অযৌক্তিক ধর্মীয় আচরণকে অবজ্ঞা করতেন। সেই সঙ্গে জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল প্রবল। জ্ঞানের আলোয় যেন সমস্ত অন্ধকার কুসংস্কার ছাড়খার করে ফেলবেন!

হিন্দু কলেজ ঘিরে ডিরোজিওর জ্ঞানচর্র্চা আলোরণ তুলেছিল তৎকালীন কোলকাতাকেন্দ্রীক বঙ্গীয় সমাজে। তাঁর ছাত্রদের বলা হত “ডিরোজিয়ানস”। নানা বিষয়ে ছাত্রদের নিয়ে বির্তক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন ডিরোজিও। ১৮২৮ সালে ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের নিয়ে “অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েসন” গড়ে তোলেন। লক্ষ্য-সাহিত্যচক্র ও বির্তক অনুষ্ঠান আয়োজন। “অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েসন”-এর তরফ থেকে “পার্থেনন” নামে একটি পত্রিকাও বের করে। সে পত্রিকায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে লেখা হয়:



১) নারী স্বাধীনতা। (লক্ষ করুন)

২) ধর্মের অযৌক্তিকতা।

৩)ব্রিটিশ শাসনের কুফল।



ডিরোজিওর ছাত্রদের মধ্যে কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামতনু লাহিড়ী, এবং রসিক কৃষ্ণ মল্লিক ছিলেন অন্যতম। এঁদের মধ্যে ডিরোজিওর উদারনৈতিক প্রভাব ছিল গভীর। রামতনু লাহিড়ী পৈতা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। তাঁর অনেক ছাত্রই যোগ দিয়েছিলেন ব্রাহ্মসমাজে। কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায় খ্রিস্টান হয়ে যান। প্যারি চাঁদ মিত্র নামে তাঁর এক ছাত্র ছিল । বাংলায় প্রথম উপন্যাস লেখার কৃতিত্ব এঁরই।

ছাত্রদের সাংবাদিকতায় উৎসাহ দিতেন ডিরোজিও। কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায় ‘দি ইনকোয়ারার’ নামে ইংরেজী সাপ্তাহিক বার করলেন। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও রসিক কৃষ্ণ মল্লিক বার করলেন বাংলা পত্রিকা ‘জ্ঞানান্বেষন।’







ডিরোজিওর হিন্দু ধর্মাচারে কঠোর সমালোচনার ফলাফল তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন বঙ্গীয় সমাজে হয়েছিল দুঃখজনক।

ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজ থেকে বহিস্কার করা হয়।

তারপরও ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর।

যা হোক। কলেরা রোগটি সে সময়টায় ছিল প্রায় অনিরাময়যোগ্য ও প্রাণঘাতি। কলেরায় আক্রান্ত হলেন ডিরোজিও। ২৬ ডিসেম্বর ১৮৩১। মাত্র ২২ বছর বয়েস মারা যান ডিরোজিও। তখন একবার বলেছি ডিরোজিও নিজে নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, খ্রিস্টানসুলভ আচরণ পরিত্যাগ করেছিলেন। কোলকাতায় তখন খ্রিস্টানদের কবরখানা ছিল পার্কস্ট্রিটে। খ্রিস্টান পুরুতরা তাঁকে পার্কস্ট্রিটের কবরখানার ভিতরে সমাহিত করতে অস্বীকার করল। পরে তাঁরে গোর দেওয়া হলো পার্কস্ট্রিটের সিমেট্রির বাইরে রাস্তার ওপর।







আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিরোজিও নামটি আজও তাৎপর্যময়। যেহেতু উনিশ শতকের বাংলার রেঁনেসায় ডিরোজিওর অবদান ছিল গভীর। এবং যেহেতু আমরা একটি রেঁনেসার অপেক্ষায় রয়েছি।

আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, বাংলায় রেঁনেসা হলেও বাংলাদেশে আজও রেনেঁসা হয়নি। এবং সেই মানসিক বিপ্লবটি বাদ দিয়েই আমরা ব্যাপক পরিবর্তনের কথা ভাবছি।

যা হোক। বাংলাদেশে রেঁনেসা হয়নি বলেই যে কারণে আজও স্বাধীন চিন্তার অধিকারী মানুষদের জন্য বাংলাদেশে এক বিপদজনক ও কঠিন স্থান। এখানকার ডিরোজিওদের (হুমায়ূন আজাদ) হত্যা করা হয় কিংবা এখানকার ডিরোজিওদের (আহমেদ ছফা) অবজ্ঞা করা হয়। বাংলাদেশে রেঁনেসা হয়নি বলেই আজও ধর্মীয় কুসংস্কারগ্রস্থ ইসলামিক টিভি এদেশে এত জনপ্রিয়, বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই হাজার হাজার তরুন সহজেই মওদুদীপন্থি হয়ে ওঠে; এবং বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই ছাত্রদলের লক্ষ লক্ষ কর্মীদের চিন্তাচেতনা আদিম ও অপরিচ্ছন্ন এবং বাংলাদেশে আজও রেঁনেসা হয়নি বলেই তসলিমা নাসরিনরা এদেশে জন্মেও নির্বাসনের দুঃখ ভোগ করেন।

অপরদিকে উনিশ শতকে ডিরোজিওদের মুক্তিবুদ্ধির আন্দোলনের ফলে কোলকাতা আজও স্বাধীন চিন্তার পীঠস্থান বলে বিশ্বময় খ্যাত। এবং আমাদের মনে রাখতে হবে কোলকাতা সত্যজিৎ রায়ের শহর। ভালো হোক মন্দ হোক আজও কোলকাতাকেন্দ্রীক পশ্চিমবঙ্গে মার্কবাদীরা অধিষ্ঠিত- যেটি অনিবার্যভাবেই প্রগতিশীলতার চিহ্ণ।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধির চর্চার আন্দোলন শক্তিশালী ভিতের ওপর কখনোই দাঁড়াতে পারেনি। যে কারণে এদেশে ভাস্কর্য শিল্পের ওপর আজও সহজে আঘাত আসে, যে কারণে আজও এদেশে উগ্র ডানপন্থি দলের এত হা হা বিস্তার, তারা ক্ষমতা আসামাত্রই আরম্ভ হয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম পীড়ন, এরাই অবলীলঅয় উচ্চারণ করে 'উপজাতী'-র মতো ঘৃন্য শব্দ। উগ্র ডানপন্থি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল। এদের সদস্যদের চিন্তাচেতনায় এত ব্যাপক অন্ধকার মধ্যযুগ; এরা জানে না যে উগ্র মুসলিম জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলাতে নেই, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করতে নেই-এই সামান্য শিক্ষাটুকুও তাদের নেই। একুশ শতকে বেঁচে থেকেও এরা কেউই ভাবে না যে উনিশ শতকে যে সব প্রশ্ন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছিল সেই একই প্রশ্ন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধেও তোলা যায়!







আজকাল আমরা যে বাংলাদেশের সমাজজীবনে ব্যাপক এক পরিবর্তনের কথা বলছি, সেটি প্রবল এক মানসিক বিপ্লব (রেঁনেসা) ব্যতীত সম্ভবপর নয়।

কাজেই-হে ডিরোজিও ...



তথ্যসূত্র:



Click This Link



http://banglapedia.search.com.bd/HT/D_0121.htm

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১৮/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৫০

রাগিব বলেছেন: ডিরোজিওর কথা অনেক শুনেছিলাম, ইংরেজি উইকিতে তার জীবনী পড়তে গিয়ে যেদিন দেখলাম তিনি মাত্র ২২ বছরে মারা গেছেন, অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সত্যিই, অনেক গভীর তাঁর অবদান।

--

তবে ৩ নম্বর পয়েন্টে একটু দ্বিমত। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সমর্থনও কম নয়। ইতিহাস বলে, ১৯৪৬-৪৭ এ কলকাতাতেও দাঙ্গা কম হয়নি।

রেনেসার কথা যদি বলেন, ২য় বঙ্গভঙ্গের ফলে ভূমি সম ভাগ হলেও বুদ্ধিজীবী ভাগ হয়েছে প্রচন্ড বিষমভাবে ... সুনীল, বুদ্ধদেব থেকে শুরু করে পূর্ববঙ্গের বিজ্ঞানী, শিক্ষক, কবি সমাজ রাতারাতি পরবাসী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়। সেই শূণ্যতাকে ৬০ বছরে অনেকটা হলেও বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠেছে। এদেশে ৫০ এর দশকে যে মানসিকতা, সমাজ চেতনার পরিবর্তন ঘটেছে, সেটা ভঙ্গ বঙ্গের সেই অসমতাকে কমিয়ে এনেছে অনেকখানি। সেটা ডিরোজিওর ধারে কাছে না থাকতে পারে, কিন্তু সেই পরিবর্তনটুকুও কম না। গাফফার চৌধুরীর ভাষায় (সম্ভবতঃ) "দেশভাগের পরে পঞ্চাশের দশক হয়েছিলো বাঙালি মুসলমানের বাঙালি হয়ে ওঠার সময়, আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার সূচনার সময়।" সেটাকে রেনেসাই বলা চলে।
--

০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনি লিখেছেন-
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সমর্থনও কম নয়।
ঠিক। মনে রাখতে হবে ডিরোজিওকে বহিস্কার করা হয়েছিল। বিজেপিরা তাদেরই বংশধর। আর প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীলতার দ্বন্দ চলতেই থাকে।

আপনি লিখেছেন-
২য় বঙ্গভঙ্গের ফলে ভূমি সম ভাগ হলেও বুদ্ধিজীবী ভাগ হয়েছে প্রচন্ড বিষমভাবে ..
হ্যাঁ। এটাও এক কারণ। তবে পূর্বপাকিস্থান ইসলাম ধর্মকে লালন করেছে। আর রেঁনেসা ও ধর্ম পরস্পরবিরোধী। যে কারণে মুক্তমনা অধ্যাপক আবুল ফজলরা চেষ্ট করেও তেমন সফল হননি। দেলোয়ার হোসেন সাইদিরাই সম্মানিত হয়েছেন।
ধন্যবাদ।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৫২

প্রণব আচার্য্য বলেছেন:
চমৎকার। ধনবাদ ইমন, এমন একটি লেখার জন্য।
শিরোণাম দেখে মনে করেছিলাম এইট শুধুই ইতিহাস।

কিন্তু এটিতো ইতিহাস থেকে ঋণ নিয়ে এসে বর্তমানের মুল্যায়ন।

অসাধারন। অসাধারন।



(আচ্ছা, মাইকেলওতো সম্ভবত ডিরোজিওয়র ছাত্র ছিলেন)

০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: বাংলাদেশে বহুতল নির্মানের জন্য বস্তিবাসীদের পুড়িয়ে মারলে কেউ হা হুতাশ করে না। পশ্চিম বঙ্গে তেমনটা সম্ভব নয়। সিঙ্গুর নিয়ে কী ঘটল দেখলেন তো।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৫৪

পাপী বলেছেন: শুভ নববর্ষ!!

০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: শুভ নববর্ষ।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৫৯

প্রণব আচার্য্য বলেছেন:

ধন্যবাদ রাগিব ভাই। আপনার সাথে একমত। কিন্তু আমাদের যথার্থ রেনেসা হয়নি কখনো। পঞ্চাশের দশক বাঙ্গালীর স্বর্ন অধ্যায়। কিন্তু পরবর্তিতে দুঃখজনক ভাবে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সমগ্র ভারতবর্ষেই একই অবস্থা। ধর্মের অন্ধকার গ্রাস থেকে আমার মুক্ত হতে পারলাম না আজ অবধি। কেউই না।

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০৬

রাগিব বলেছেন: @প্রণব
মাইকেলের জন্ম ১৮২৪ সালে, কাজেই তিনি ডিরোজিওর ছাত্র নন।

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:১৬

প্রণব আচার্য্য বলেছেন:

ধন্যবাদ রাগিব ভাই। আমারই ভূল হচ্ছিল।

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:১৯

টিপু বলেছেন: যতটুকু জানি সে সময়ে প্রগতিশীল ইয়ং বেঙ্গল দলের প্রতিষ্ঠার পেছনে "ডিরোজিও"র অবদান ছিল।এ বিষয়ে একটু আলোকপাত করলে ভাল হতো।

৮| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৩২

বিগব্যাং বলেছেন: ডিরোজিওকে শ্রদ্ধা...

হ্যা, ইয়ং বেঙ্গলের ভারকেন্দ্রেই ছিলেন ডিরোজিও...@ টিপু

বিনয় ঘোষ আজস্র প্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন যে, ১৯ শতকের কোল্কাতাকেন্দ্রিক যে নবজাগরণের কথা বলা হয় সেটা আসলে অতিকথন...

৯| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৩৬

জেমসবন্ড বলেছেন:

....একুশ শতকে বেঁচে থেকেও এরা কেউই ভাবে না যে উনিশ শতকে যে সব প্রশ্ন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছিল সেই একই প্রশ্ন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধেও তোলা যায়!

আপনার এ কথাটির সাথে আমার দ্বি-মত ।

জানি আপনি আমার কমেন্টের জবাব দেন না এবং যথারীতি এটারও দিবেন না । তাও... ভাল.. কমেন্টগুলো তো মুছে দেন না !


প্রশ্ন তোলা উচিত জামায়াতের বিরুদ্ধে , ইসলামের বিরুদ্ধে নয় । প্রশ্ন তুলা উচিত উগ্রতার বিরুদ্ধে , সততার বিবুদ্ধে নয় ।

ধন্যবাদ ।

১০| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৫০

আকাশচুরি বলেছেন: ৩ নং প্যারার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ :)

১১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৫৫

স্বাক্ষর শতাব্দ বলেছেন: মাইকেল মধুসূদনের উপর ডিরোজিও আর ইয়ং বেঙলের মারাত্মক প্রভাব ছিল, পরে অবশ্য উনি "একেই কি বলে সভ্যতা?" নামের একটা প্রহসন লিখেছিলেন,

ধন্যবাদ ইমন জুবায়ের

১২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:১৭

মনির হাসান বলেছেন: কিচ্ছু বলার নেই ... হাপিত্তেশ করতে আর ভাল্লাগে না ...

১৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:২৯

দ্বিধান্বিত বলেছেন: চমৎকার ।

১৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:০৩

নাস্তিকের ধর্মকথা বলেছেন:
৩নং নিয়ে আমিও একমত হতে পারলাম না.....

ডিরোজিও'র প্রতি শ্রদ্ধা- কিন্তু আপনি যে অর্থে রেনেসার কথা বলেছেন বা বলছেন- সে অর্থে রেনেসা বলতে পারছি না। সে সময়ে ইয়ং বেঙ্গল যতই আলোড়ন তুলুক না কেন, জনবিচ্ছিন্ন সেই গ্রুপটি নিয়ে যত পড়ি- যত জানি হতাশাই বাড়ে, হতাশা এ কারণে যে- এই গ্রুপটির আরো অনেক কিছু করার ছিল, এদের পরিণতি খুবই হতাশাজনক এবং তারচেয়েও বড় কথা - প্রকৃত রেনেসা বলতে যা বুঝি এদের কাজ কারবারে তার তেমন কিছুই পাই না। ইংরেজী সাহিত্যের মাধ্যমে পাশ্চাত্য কালচারে অভ্যস্ত হিসাবে অনেক বিষয়ে তারা আধুনিক ছিল বটে- কিন্তু সমাজে তার কতখানি প্রভাব ফেলতে পেরেছে সেটা বড় প্রশ্ন। নিজ দেশের অশিক্ষিত-মুর্খ-গেয়োরা তো কুসংষ্কারগ্রস্ত হবে - এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু যারা নিজেদের অগ্রসর হিসাবে আবিষ্কার করলো- তারাও যদি সেই কুসংষ্কারাচ্ছন্ন জাতির থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে তবে সেটাকে কতখানি রেনেসা বলা যেতে পারে?

তাদের বিদ্রোহের প্রতি শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু ব্রাহ্ম হয়ে নতুবা খৃস্টান হয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের মধ্যে প্রগতির চর্চা করা ও বাকিদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করাকে কাজের কিছু মনে করি না। আর সবচেয়ে বেশী আপত্তি তৈরি হয় যখন দেখি এদের অনেকের সাথেই বৃটিশ প্রভুদের দহরম মহরম।

সতীদাহ ও সহমরণ প্রথা উচ্ছেদে রামমোহনকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি, কিন্তু সাথে তো এটাও ভুলতে পারিনা যে- তিনি ছিলেন একজন বৃটিশ কৃপা ধন্য বনিক এবং বৃটিশ রাজের একজন খাস বান্দা।

বঙ্কিমচন্দ্রও তো তাই।

সবদিক দিয়ে শ্রদ্ধা করার মত একজনকেই পাই- তিনি বিদ্যাসাগর। তার সংগ্রাম অনন্য এ কারণে যে তাঁকে খৃস্টান বা ব্রাহ্ম কিছুই হতে হয়নি; কিন্তু ঠিকই ধরে ধরে হিন্দুত্ববাদিতার মূলে গিয়ে আঘাত করে গিয়েছেন।


----------

আপনি পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের দেশের যে তুলনামূলক আলোচনা করেছেন- তার সাথেও একমত হতে পারিনি। বামেরা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় একথা বলে কি বুঝালেন? সিঙ্গুরের ঘটনার কথা আপনিই এক কমেন্টে উল্লেখ করেছেন- সিঙ্গুর বিষয়ে জানা থাকলে সিপিআইএমকে কি করে বাম বলতে পারেন? নামে লেবার পার্টি হলেই কি সেটা শ্রমিক শ্রেণীর দল হয়ে যায়?- তাহলে তো টনি ব্লেয়ারদেরও আপনি সেরকম বলবেন!

পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় উন্মাদনা কোন অংশে কম মনে হয় না। তাদের মিডিয়া দেখুন, বুঝবেন। পুজাগুলোর দিকে তাকান, বুঝবেন। কর্পোরেট পুজি সেখানে পুজা অনুষ্ঠান গুলোর সাথে কিভাবে যুক্ত- সেখান থেকেই ধারণা পেতে পারেন, ধর্ম সেখানকার আমজনতার জীবনে কতটুকু জুড়ে আছে। পুরো ভারতে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও সাই বাবা-ধর্মীয় গুরুদের কতখানি প্রভাব- সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না।
------------
এই অঞ্চলের সাম্প্রদায়িকতার মূলে যদি দেখি, তবে আমাদের সেই উনিশ শতকের তথাকথিত রেনেসা (হিন্দু পুনর্জ্জীবনবাদী আন্দোলন বলাই শ্রেয়) এর নানাবিধ সংকীর্ণতাকেই দায়ী মনে হয়। আমার মনে হয়, একটা পরাধীন দেশে, ঔপনিবেশিক শাসনে পিষ্ঠ জাতির সবচেয়ে বড় রেনেসা হতে পারে একমাত্র স্বাধীনতার আকাঙ্খা, শোষণ মুক্তির আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে। ইহজাগতিকতার শ্লোগান কি কখনো কোন একটি নির্দিষ্ট ধর্মের কিছু প্রথার সংষ্কার চাওয়ার মধ্য দিয়ে হতে পারে? বঙ্কিম যখন তার রাষ্ট্র চেতনার কথা লিখছেন তখন শত্রুর আসনে তাই আসে যবনরা বা মুসলমানেরা।

একটা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে, কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে শত্রুর স্থানে রেখে এবং শুধুই একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর কিছু কিছু ধর্মীয়াচরণের সংষ্কারের মধ্য দিয়ে যে রেনেসা- তাকে আদৌ কতখানি পরিপূর্ণ বলা যাবে সেটা বিবেচনার বিষয়।
--------------------

এটাও ঠিক যে মুসলমান শাসকরা এদেশে সম্পূর্ণই বহিরাগত, এবং বৃটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয়শ বছর মুসলিম বহিরাগত শাসকেরা এখানে শাসন করে গিয়েছে, যাদের কৃষ্টি-কালচার এখানকার মানুষদের সাথে মেলে না- তারা এখানে রাষ্ট্রীয় ভাষা (দরবারি ভাষা) হিসাবে পুরো সময়টা বিদেশী ভাষাও চাপিয়ে দিয়েছিল- সে হিসাবে বৃটিশ শাসকদের মত মুসলিম সেসব শাসকদের প্রতি বিরাগ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়; তবে সেই সাথে এটাও মানতে হবে যে- উনিশ শতকে এসে এখানে শাসক গোষ্ঠীর বাইরেও সাধারণ আম জনতার একটা বড় অংশ মুসলমান। এবং ইতিহাস থেকে এটাও জানা যায় যে, তাদের মুসলমান হওয়াটা শাসক গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়ার ফল নয়- বরং প্রচলিত হিন্দু ধর্মের (এই ধর্মটির "হিন্দু ধর্ম" হিসাবে নাম নেয়ার ইতিহাসও খুব পেছনের নয়) নানাবিধ বর্বর প্রথা, নিম্নবর্গীয় মানুষের উপর উচ্চ বর্গের মানুষের নির্যাতন-নিপীড়ন প্রভৃতিরই ফল। সবচেয়ে বড় কথা এই মুসলমানেরা কিন্তু এদেশেরই মানুষ- তারা কোনমতেই বহিরাগত নয়। এ সত্যটি সে আমলের রেনেসার সৈনিকেরা অনুধাবন করতে পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছিলেন।

---------------

০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:১১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনার সঙ্গে আমিও একমত। লিখতে লিখতে কথাগুলি আমারও মনে হয়েছে।
বিস্তারিত লেখার জন্য ধন্যবাদ।

১৫| ২২ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪০

""ফয়সল অভি "" বলেছেন: দাদা দ্রোহ এর দ্বিতীয় সংখ্যার জন্য আপনার উক্ত লেখাটি প্রকাশের অনুমতি চাইছি এবং আশা রাখি অনুমতি প্রাপ্ত হবো ।


দ্রোহ এর প্রথম সংখ্যার লিংক>>http://www.chittagongnews.org/droho/



আন্তরিক শুভ কামনা রইল ।

২২ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনাদের পত্রিকায় আমার এ লেখাটি ছাপালে আমি অত্যন্ত খুশি হব।
ধন্যবাদ।

১৬| ২২ শে মে, ২০১০ রাত ১১:৩৯

""ফয়সল অভি "" বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ।

২৩ শে মে, ২০১০ ভোর ৬:৪২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৭| ০৯ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১:৪১

সুন্দরের মন খারাপ,মাধুর্যের জ্বর বলেছেন: ডিরোজিও'র প্রতি শ্রদ্ধা,অনেক ভাল লাগল ++++++++++++++

০৯ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৯:০০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.