নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাথাসপ্তশতী: সতের ’শ বছর আগেকার প্রেম ও অপ্রেম

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:১৫

প্রাচীন ভারতে একটি উল্লেখযোগ্য রাজবংশ ছিল সাতবাহন । সময়কাল: খ্রিস্টীয় প্রথম শতক থেকে তৃতীয় শতক। উত্তর ভারতে নয়- সাতবাহন রাজ্য গড়ে উঠেছিল দক্ষিণভারতে। রাজ্যটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন: সিমুক। সাতবাহন বংশের রাজধানী ছিল দক্ষিণ ভারতের প্রতিষ্ঠানপুর । হাল ছিলেন সংস্কৃতমনা একজন সাতবাহন রাজা। ইনি কেবল রাজ্যই শাসন করেননি- প্রাকৃতভাষায় লেখা কবিতার একটি সঙ্কলন গ্রন্থনা করেছিলেন। প্রাকৃতভাষা মানে প্রাচীন ভারতের সাধারণ জনগনের ভাষা- অর্থাৎ উচ্চকোটির সংস্কৃত ভাষা নয়। রাজা হাল কর্তৃক সঙ্কলিত কবিতার সঙ্কলনটির নাম: ‘গাথাসপ্তশতী।’ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবির লেখা প্রায় সাতশ স্তবক রয়েছে গাথাসপ্তশতীতে-বিস্ময়করভাবে যা ধর্মনিরেপেক্ষ-শুধু ধর্মনিরেপেক্ষই নয়- গাথাসপ্তশতীর স্তবকগুলো রীতিমতো যৌনতায় আচ্ছন্ন। যেমন:



ভেজানো দরজার কাছে দাঁড়ানো ও মেয়ে।

কাকে খুঁজছ তুমি?

উষ্ণ চোখ, বাদামি বৃন্ত-

রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছে।



এই চরণগুলোয় ভারতবর্ষের বৈদিক ধর্ম কোথায়? মেয়েটির দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে, তার কাতরতায় কিশোরীর চিরকালীন ছবিটি মূর্ত হয়ে আছে কি না? ছবিটি দেখে কে বলবে ভারতবর্ষ কেবলি ধর্মের দেশ! যজ্ঞপার্বণের দেশ! গাথাসপ্তশতীর কবিতার চরণে চরণে প্রেমকাতর মানবমানবীর মনোদৈহিক ক্ষুধা এমনই তীব্র ভাবে ফুটে উঠেছে যে- মনে হয়- এই যেন ভারতবর্ষের প্রকৃত মানুষে প্রতিচ্ছবি। গাথাসপ্তশতীর কবিতাগুলি পড়ে কে বলবে যে কবিতাগুলি সঙ্কলনের পর প্রায় সতের শ বছর কেটে গিয়েছে!



গাথাসপ্তশতী থেকে ক’টি নির্বাচিত স্তবকের অনুবাদ;







ও (মেয়েটি) খুবই দ্রুত ভাবতে পারে।

কিন্তু, আজ ও নিজেকে নিল সামলে।

বলল,‘সে তোমাকে দেখতে এসেছে।’

বলে প্রেমিককে দিল স্বামীর দিকে ঠেলে!







সে দিনভর কাজ করে ।

লাঙ্গল চষে জলাভুমির কাছে।

সেই রাতে তার বউ শুয়েছিল। ভারি অস্থির।

চোখ খোলা। বৃষ্টির ফোঁটা গুনছে।







মেয়েটির দরজায় সে দাঁড়িয়ে।

সে কেবলি তরমুজ বিক্রি করতে চায় না।

কিন্তু, সে তো আর ছল জানে না।

যে নারকেল নিয়ে এসেছে সে যে বেশি চতুর!







নারী যখন উর্ধ্বে -তখন তার চুল

পর্দার মতো মনে হয়। দুলছে।

কানের দুলের রিনরিন গলার হারের ঝঙ্কার।

পদ্মের ওপর মৌমাছির মতো ও ব্যস্ত।







তারা যখন থামে

মেয়েটি গলার হার দেখে লজ্জ্বা পায়।

কিন্তু যেহেতু মেয়েটি কাপড়ের কাছে পৌঁছতে পারে না-

পুরুষটিকে আবার তুলে নেয়।







ভেজানো দরজার কাছে দাঁড়ানো ও মেয়ে

কাকে খুঁজছ তুমি?

উষ্ণ চোখ, বাদামি বৃন্ত

রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছে।







ও চন্দ্রমূখী নারী,

তোমার আয়ত চোখের কারণে-

রাতও গিয়েছে বেড়ে-

আর আমিও সদ্ব্যবহার করি প্রহরের!







আঙুলের ফাঁকে গলে যাচ্ছে প্রেম।

হায়, হারিয়ে যাচ্ছে সবই।

মুঠো করো হাত।

মুখে মধুর স্তন।

একটি ফোঁটাও যেন মাটিতে না পড়ে।







ঈশ্বর ওকে গড়েছে।

ওর সৌন্দর্য আমার মন কেড়েছে।

ওর কথা আমার কানে, ওর হৃদয়ে

আমার হৃদয়; ওর অঙ্গে অঙ্গ

আমার।



১০



আমার মনে আছে-

ও আমার পায়ের কাছে বসে।

নিশ্চুপ।

ওর চুল নিয়ে খেলছিল আমার পায়ের পাতা।



১১



যে নারী জানে- কী করে ভালোবাসতে হয় নিজেকে-

জানে কী করে প্রশমিত করতে হয় ক্রোধ

যখন সে একই সঙ্গে শূন্য ও পূর্ন।



১২



আমি দেখছি নর্তকীদের

কী যে ভালো লাগছে।

চুলের সুগন্ধী

তুমি আমায় পা দিয়েছিলে।



১৩



মেয়েটি বলেছিল আমায় কী করতে হবে।

অথচ সকালে ও কাপড় পড়ল

বাঁশের বেড়ার ওপাশে!



১৪



ছোট ঘটনা। তবু মনে আছে।

মা রান্না করছিল। বাবা কী বলল।

মা হাসল। তারপর ছুঁলো নিজের ফ্যাকাশে মুখ।

চাঁদের কলঙ্কের মতন মায়ের চাঁদমুখ।



১৫



এইসব নীতিবাগীশরা কেন প্রাকৃত কবিতা এড়িয়ে চলে?

এড়িয়ে চলে আমাদের গান, আমাদের প্রেম ও অপ্রেম।

ওরাও তো আমাদের গান ও কবিতার নির্যাস চায় জানি

তবে কেন তারা আমাদের প্রেমকে বলে ছাই?



সূত্র:



১) সুনীল চট্টোপাধ্যায়: প্রাচীন ভারতের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)

২) Willis Barnstone এবং Tony Barnstone সম্পাদিত Literatures of Asia, Africa, and Latin America. (From Antiquity to the Present)







মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +১১/-১

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:১৮

হমপগ্র বলেছেন: মারাত্মক! +++++

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:২৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৩০

সাদা কাগজ বলেছেন: লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): গাথাসপ্তশতী ;




৩| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৩২

সাদা কাগজ বলেছেন: প্রিয়তে

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:০২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৪০

বিপ্লব কান্তি বলেছেন: লিখতে থাকুন । +


কেউ মাইনাস দিলে বা থামতে বললে দ্বিগুন উৎসাহে লিখবেন ।

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:০৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ। লিখব।
মাইনাস দেওয়ার কারণটা জানালে ভালো হত।

৫| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৪৫

কালপুরুষ বলেছেন: চমৎকার।

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:০৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৪৫

শূন্য আরণ্যক বলেছেন: বরাবরই ++

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:০৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:৪৬

গাজী সালাহউদ্দিন বলেছেন:

[ছবি- বিডি নিউজ]




আপনার পোষ্টের ছবিটা বেশী নোংরা না আমার পোষ্টের এই ছবিগুলো বেশী নোংরা ? কেন আমার পোষ্টটা মুছে দেয়া হল ?

মেয়েদের এভাবে দাড় করিয়ে রাখার মানে কি ?

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:০৫

ইমন জুবায়ের বলেছেন: কে আপনার পোষ্টের ছবি মুছল?

৮| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:১৩

সব্যসাচী প্রসূন বলেছেন: অপূর্ব... :)

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:০৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৩

তনুজা বলেছেন: এইসব নীতিবাগীশরা কেন প্রাকৃত কবিতা এড়িয়ে চলে......

দুর্দান্ত, না জানি মূলভাষায় কত সুন্দর

কেন যেন মনে হল প্রাকৃত শুধু ব্রাত্যজনের কথ্য ভাষাই ছিল না, প্রতিবাদী সাহিত্যচর্চার ও অবলম্বন ছিল , হয়ত রাজকৃপা বঞ্চিতদের ও একটা ধারা ছিল, সংরক্ষণের অভাবে তা প্রদীপের আলো দেখেনি

ভুল ও ভাবতে পারি

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: মূলভাষা তো প্রাকৃত। তা আর কে বলতে পারে। প্রাকৃতের ওপরই বাংলাসহ আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলি দাঁড়িয়ে গেছে। আর প্রতিবাদ? প্রাকৃতজনের প্রতিবাদ না করে উপায় কী। আজও। ধন্যবাদ, মন দিয়ে পড়ার জন্য।

১০| ১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৯

রাইডার বলেছেন: ++++++

১৯ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১১| ২০ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:০০

প্রণব আচার্য্য বলেছেন: এইসব নীতিবাগীশরা কেন প্রাকৃত কবিতা এড়িয়ে চলে?
+

২০ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১২| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২০

আকাশ_পাগলা বলেছেন: আরে, এই ছবির কাছে ত গ্রীসের গ্যালিকুলা ফেইল।

অতদিন ভাবতাম গ্রীসের পোলাপান কী মজাতেই ছিল, এখন মনে হচ্ছে এইখানেও পোলাপান মজাতেই ছিল।

বাই দ্যা ওয়ে, কবিতার চাইতে ছবিটা অনেক বেশি গভীর। ছেলেটাকে খেয়াল করেন।

ছেলেটার পায়েও নুপূর। ছেলেটার কোমর দেখেন। ছেলেটার পড়া ড্রেস দেখেন। ছেলেটার হাতের বালা দেখেন। ছেলেটার দুটো পা এর অবস্থান দেখেন।


এই ছবিটার ভিতরে অনেক কথা আছে।

(প্রেমকাতর মানবমানবীর মনোদৈহিক ক্ষুধা এমনই তীব্র ভাবে ফুটে উঠেছে যে- মনে হয়- এই যেন ভারতবর্ষের প্রকৃত মানুষে প্রতিচ্ছবি।)


পোস্টটা বেশ সঙ্কখিপ্ত, অন্য কোথায় আরও বিস্তারিত আছে কী না জানি না, তবে ছবিটা দেখে আপনার এই কথাটা মিলল না।


কারণ, ছবিটার পেছনের গাছ দেখেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে, এটা স্বপ্নের ছবি। বাস্তবতা এমন টা হলে, এটা ঘরের ছবি হত বোধহয়। ছেলেটাকে আরও ভাবে খেয়াল করেন। অন্যান্য কোন ছবির সাথে মিল পান??? বুদ্ধের চেহাড়ার সাথে কিছুটা মিলে কী না দেখেন। বুদ্ধ কিন্তু বুদ্ধ হইছে পড়ে, ও কিন্তু রাজা ছিল। ওই সময় অন্যান্য রাজার মত করেই ওর চেহাড়া আঁকা হত।


এত গহনা গাঁটি পরে নরমাল পাবলিক ঘুরত বলে মনে হয় না। জামার কারুকাজ দেখেন। যার কথা মনে করে ছবি আঁকা হইছে, সে রাজা না হলেও জমিদার বা খুব ধনী ছিল। প্রাকৃত ভাষাতে লেখা হলেও কবিতাতে হয়ত ধনীদের কথাই বুঝানো হইছে, বা কবি নিজেই হয়ত সাধারণদের মধ্যে ধনী। কারণ, রাজ্যে রাজা ছাড়াও অনেক ধনী থাকেন। বা হয়ত, সে নিজেকে ধনী কল্পনা করে এঁকেছে।


ছেলেটার ড্রেস দেখেন, ওর পা বের হয়ে আছে। এটা কিন্তু সাধারণ পাবলিকের ড্রেস না। যারা সারাদিন ঘরে থাকে, তাদের ইজি ড্রেস।


সুতরাং, "" রাজা হাল সংকলন করলেও, কবিতার কবিরাও যে, হোমড়া চোমরা টাইপের কিছু একটা ছিল, সেটা পরিষ্কার। ""


সুতরাং আমার মনে হয় না, এটা ভারতবর্ষের আসল রূপ ছিল। আমার ত মনে হয়, দুনিয়ার সব দেশের রাজাদেরই সেইম কাহিনী। আর কোন ধনীই ধর্ম পালন করে না, সব ধনীরা ধর্ম পালন করলে দুনিয়া এমন থাকত না।আর, ধর্ম পালন করলে তারা ধনীও অতে পারত না।


ইমন ভাই, এই ছবির উৎস কী??

এই সময়ে বেশি দিনের জ্বর ভাল না। এখন শরীর কেমন??

৩১ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ছবির উৎস ইন্টারনেট।
শরীর এখন ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.