![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
প্রাচীন বাংলার মানুষের কাছে দার্শনিক চিন্তাভাবনা প্রচার করার জন্য বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ প্রাচীন বাংলায় এসেছিলেন। সময়টা যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও পাঁচশ বছর আগে। বুদ্ধ মূলত ছিলেন প্রাচীন ভারতের গভীর চিন্তার অধিকারী একজন নরম হৃদয়ের মানুষ। জীবন-জিজ্ঞাসায় অস্থির হয়ে শেষাবধি তিনি একটি দার্শনিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিলেন - পরবর্তীকালে যা 'বৌদ্ধদর্শন' নামে পরিচিত হয়েছে । আরও পরে যা পরিচিত হয়েছে বৌদ্ধধর্ম নামে।
বুদ্ধ জানতেন যে সংসারের বিষয়ী মানুষ দার্শনিক আলোচনায় আকর্ষন বোধ করে না। তাই তিনি সমমনা দলছুট ভাবকুদের নিয়ে একটি আলাদা ‘গ্রুপ’ গঠন করেছিলেন। এই ‘গ্রুপ’ কে পালি ভাষায় বলা হয় ‘সংঘ’ । তো সংঘ বলতে আমরা মঠ বুঝতে পারি। মঠ বলতে আমরা আবার বড় একটি বাড়ি বুঝতে পারি। তো, বুদ্ধ মঠে বসে সমমনা ভাবুকদের নিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা করতেন । (যিনি বলেছিলেন ' জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক'-কাজেই বোঝা যায় বুদ্ধ মঠে বসে সমমনা ভাবুকদের নিয়ে কী আলোচনা করতেন ) ... তো সেই মঠবাসীদের বলা হত ভিক্ষু। স্বভাবতই ভিক্ষুরা ছিলেন নরম হৃদয়ের অধিকারী সৎ, এবং সংযমী। তাদের জীবনযাপন ছিল খুবই সাধারণ।
তবে বুদ্ধ মঠে বাস করলেও করলেও মোটেও সমাজবিচ্ছিন্ন ছিলেন না। তিনি লোকালয়েও যেতেন। মঠটি কখনও লোকালয়েই তৈরি হত। বুদ্ধ মূলত প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যে বাস করতেন। বুদ্ধ মগধ রাজ্যের অধিবাসীদের কাছে তার চিন্তাভাবনা ভাবনা প্রচার করতেন।
কেন?
কারণ বৌদ্ধের ভাবনায় দয়াশীলতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বুদ্ধ মনে করতেন এমন কী সংসারের বিষয়ী মানুষেরও দয়াশীল হওয়া দরকার-যারা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলা তৈরি করে।
তাছাড়া সমাজসচেতন বুদ্ধ ছিলেন যুদ্ধবিরোধী এবং তিনি প্রাণিহত্যারও বিরোধীতা করেছিলেন। মগধের সম্রাট অজাতশক্র ছিলেন মগধের রাজা বিম্বিসারের পুত্র। ( রাজা বিম্বিসারের কথা জীবনানন্দের বনলতা সেন কবিতায় রয়েছে।) ... তো মগধের রাজা অজাতশক্র গঙ্গা নদীর উত্তরে গণরাজ্য আক্রমন করতে উদ্যত হয়েছিলেন। বুদ্ধ তখন সেই সামরিক অভিযানের তুমুল বিরোধীতা করেছিলেন। শুধু তাই নয়-বুদ্ধ বৈদিক যজ্ঞে অযাথা পশুহত্যারও প্রবল বিরোধীতা করেছিলেন। বুদ্ধ এমন কী যজ্ঞপশুর সামনে দাঁড়িয়ে দুহাত ছড়িয়ে ঋত্বিককে (যিনি যজ্ঞ পরিচালনা করেন ) বলতেন, তার চে বরং আমাকে হত্যা করো, এই ষাঁড়টিকে নয় ...
মগধের ইতিহাসের বইয়ে এসব মানবিক কথা লেখা রয়েছে।
তো, বুদ্ধ যখন প্রাচীন বাংলায় এসেছিলেন সে সময়টায় প্রাচীন বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষ কেমন ছিল?
অনুমান করি প্রাচীন বাংলার বাঙালি সে সময়টায় প্রধানত ফসলের মাঠে চাষবাসই করত; উৎপাদিত ফসল মূলত ধান ও আখ। অবশ্য অন্যান্য ফসলও ফলাত তারা। তারা নৌকা বাইত, মাছ ধরত। বাঙালি তো চিরকালই মাছে-ভাতে বাঙালিই ছিল। অনুমান করি:... ছবির মতন সবুজ-সুন্দর গ্রামের পাশে দিগন্ত অবধি ধানের ক্ষেত। আর নদী-নালা- খাল-বিল।আর বিলের কি সৌন্দর্য! সে সৌন্দর্য দেখে বাঙালি হয়ে উঠেছিল ভাবুক। মাথা নত করেছিল দৃশ্যের ওপারের পরম সত্তাকে। বাঙালি যখন অরণ্যবাসী ছিল, তখন তারা ছিল নিষাদ,(আদিবাঙালির এই নাম দিয়েছিল বৈদিক আর্যরা) নিষাদ মানে বৈদিক আর্যরা বুঝত- শিকারী। সেই প্রাগৈতিহাসিক বাংলার নিষাদজাতি কথা বলত অস্ট্রিক ভাষায়। আমরা যেমন আজ কথা বলি বাংলা ভাষায়। নিষাদেরা তীরধনুক দিয়ে অরণ্যে শিকার করত, বনের ফলমূল কুড়োত। তো, হয় কী- মানুষের হাতিয়ারের উন্নতি হয়।
কেন?
মানুষ চিন্তাশীল বলেই। মানে মানুষ বিমূর্ত চিন্তা করতে পারে বলেই।
যে কারণে প্রাচীন বাংলায় লোহার আবিস্কারের পর সে লোহা দিয়ে নিষাদজাতি দা-কুড়োল-বঁটি তৈরি করতে শিখল । সেসব দিয়ে তারা বনের গাছ কাটল। কালক্রমে তারা তৈরি করল লাঙ্গল। চাষ করল নতুন জমিনে । গড়ে তুলল নতুন বসতি ।
সে বসতির নাম তারা দিল: গ্রাম।
অরন্যচারী নিষাদ হয়ে উঠল আদি/বাঙালি।
গ্রামের পাশে খাল। প্রাকৃতিক খাল সম্ভবত। তখনও কি বাঙালি খাল কেটে নদী থেকে পানি আনার কথা ভেবেছিল? আমি ২৫০০ বছর আগের কথা বলছি। তো খালের পাড়ে হাট। হাটে চলত কেনাকাটা । কেনাকাটা বাদেও চলত আড্ডা। বাঙালি আড্ডাপ্রবণ বলেই।
হয়তো বুদ্ধ প্রাচীন বাংলার কোনও গ্রাম্য হাটে এসে বসতেন।
সবার কথা মন দিয়ে শুনতেন। তারপর নিজের কথা বলতেন ...
বুদ্ধের জন্মের দুশো বছর আগে ভারতবর্ষে লোহার আবিস্কার হয়েছিল। ফলে বনজঙ্গল কেটে সাফ করে বৈদিক আর্যদের পূর্বমুখি অভিপ্রয়াণ (মাইগ্রেশন) সহজ হয়েছিল। আর্যরা প্রাচীন বাংলায় এসেছিল। বসতি স্থাপন করেছিল। প্রাচীন বাংলার মানুষ আর্যদের গ্রহন করেছিল। প্রাচীন বাংলার মানুষ উদার বলেই গ্রহন করেছিল।
পরবর্তীকালে - প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে বাংলার উদার মানুষ আরও অনেক ভিনদেশি জাতি গোষ্ঠীকে বাংলার মাটিতে ঠাঁই দিয়েছিল। কী কারণে বাঙালি এখন আর ভিনদেশি জাতি গোষ্ঠীকে ঠাঁই দিতে চাচ্ছে না ...ইতিহাসে একথা লেখা থাকবে। এই কলঙ্কের কথা ...
প্রাচীন বাংলার বাঙালি হাটে কি ফসলের মাঠের পাশে বসে বুদ্ধের কথা শুনতো।
কিন্তু, কি বলতেন বুদ্ধ?
বলতেন-১/ জীবনে দুঃখ আছে।২/ কাজেই আমাদের দয়াশীল হওয়া উচিত। এবং ৩/ জীবনকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই।
বুদ্ধের বাণী গ্রহন বা বর্জন করার কিছু ছিল না; ছিল শুধু সে বাণীকে কনর্ফাম করা। কারণ বুদ্ধের কথার মধ্যে মন্দ কিছু তো ছিল না। বাংলার চাষি, কামার-কুমোর তাইই করেছিল- তারা তাদের অনুসৃত ধর্ম বজায় রেখেই বুদ্ধের চিন্তাকে কনর্ফাম করেছিল।
কিন্তু বুদ্ধ কোথায় বসে তাঁর বাণী প্রচার করতেন?
ওই যে বললাম, ফসলের মাঠের পাশে কিংবা গ্রাম্য হাটে।
বুদ্ধ, কপিলবস্তু নগরের সেই গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী; এসে বসতেন, ধরা যাক-কোনও ফসলের মাঠের পাশে। পাশে শিষ্য আনন্দ কিংবা উপালি। বুদ্ধ নিরবে বসে থাকতেন। তাঁর পরনে গেরুয়া বসন। (যে বসন উনিশ শতকের বাঙালি যোগী স্বামী বিবেকানন্দকে অবধি প্রভাবিত করেছিল ...) সোনার বরণ তাঁর শরীর । সোনার বরণ হবে না কেন? বুদ্ধ যে রাজপুত্র ! অবশ্য রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করার পর বুদ্ধের গায়ের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মাথাটি মসৃণভাবে কামানো। চোখ দুটি অর্ধ-মুদিত; ডিম্বাকৃতির মুখমন্ডলে গভীর প্রসন্ন ভাব।
ফসলের মাঠে নিরানি দিয়ে আগাছা সাফ করছে একজন কৃষক। কৃষকের নাম তিলক।( কৃষকের নাম তিলক ... কেননা ২০০ বছর ধরে বাংলায় বৈদিক আর্যরা বসবাস করছে। নিষাদ/বাঙালি বৈদিক আর্যদের ধর্ম/সংস্কৃতি গ্রহন করেছে ... )
তিলক কৃষক। বাংলার বিখ্যাত কৃষক। সেকালেও কৃষকের সংগ্রাম ছিল, একালেও আছে; আমরা জানি। এ কালের কৃষক বোরো ধানের সত্যিকারের দাম পায় না। আর সেকালের রাজা ছিল কৃষকের প্রতি উদাসীন; রাজার সময়মতো খাজনা চাই-নাইলে পরিবারসমেত ধরে নিয়ে যায়। টর্চার করে। একালের রাজাগণ অবশ্য ওপরে-ওপরে কৃষকবন্ধু, কৃষিকাজে ভর্তুকি দেয়, তারপরও কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না ...
ফসলের মাঠ পুড়ছে জ্যৈষ্ঠের খরতাপে। বুদ্ধ ঘামছেন। কিন্ত তাঁর নিজেকে নিয়ে অত ভাবনা নেই। কৃষকের কালো পিঠটা ঘামছে। ওই দৃশ্যে বুদ্ধ যন্ত্রণাকাতর হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রকাশ করেন না।
বেলা দ্বিপ্রহর।
কৃষকের অস্টাদশী কন্যাটি (অঞ্জনা) ভাত নিয়ে আসে। বুদ্ধকে দেখে অঞ্জনা অবাক। পুরুষমানুষ এত সুন্দর হয়! নারী বলেই অঞ্জনা পুরুষ মানুষকে মন দিয়ে দেখে। অঞ্জনা অভিভূত। এই মানুষকেই তো অঞ্জনা এতকাল স্বপ্নে দেখে এসেছে।
তিলক নিকটবর্তী জলা থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসেছে। এখন খেতে বসবে। অঞ্জনা তার বাবার সামনে বসে গামছার গিঁট খুলতে থাকে । গামছায় ভাত/ডাল/তরকারি।
চিরদিন বাঙালি অতিথিপরায়ণ। তিলক বুদ্ধকে আহার করতে অনুরোধ করে। বুদ্ধ সায় দেয়। কেননা, তিনি মানুষের ভিতরের সহৃদয়তা খোঁজেন্। তার দেখা পেলে কৃতজ্ঞতা বোধ করেন। বুদ্ধ আহার সামান্যই করেন, বেঁচে থাকতে যতটুকু প্রয়োজন ।খাবারের আয়োজনও সামান্য। ভাত, ডালের বড়া, অরহর ডাল । ব্যাস।
অঞ্জনা মমতাভরে বুদ্ধের পাতে একটি ডালের বড়া তুলে দেয়।
সময়টা সময়টা যিশু খ্রিস্টের জন্মের পাঁচশ বছর আগে।
খাওয়ার পর তিলক বললেন, ধর্মাবতার, এবার আমাদের উপদেশ দিন।
বুদ্ধ বলেন: কেবল তিনটি কথা মনে রেখ।
বলুন।
(১) জীবনে দুঃখ আছে। (২) কাজেই আমাদের দয়াশীল হওয়া উচিত (৩) জীবনকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই।
এই আর কিছু না? অঞ্জনা জানতে চায়।
না। আর কিছু না। বুদ্ধ জলদ গম্ভীর কন্ঠে বলেন।
অঞ্জনা: তাহলে আপনার দেবতা কে?
বুদ্ধ: তুমি।
অঞ্জনা: আমি? (চমকে উঠে)
বুদ্ধ: হ্যাঁ, তুমি। তুমিই আমার দেবতা।
অঞ্জনা অবাক।
এই ঘটনার আড়াই হাজার বছর পর লালন নামে বাংলারই এক সাধক গেয়ে উঠবেন:
মানুষগুরু নিষ্টা যার ভবে মানুষগুরু নিষ্টা যার/
সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার ...
কি আশ্চর্য!
একেই কি আবহমান বাংলা বলে?
অঞ্জনা তারপর অঞ্জনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এঁটো বাসনকোসন নিয়ে চলে যায়। অষ্টাদশী বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবল, আহা, মানুষটার কি রূপ, আর কি ভাষা, কি গভীর চিন্তা!
অঞ্জনা বৈষ্ণব। কেননা, বাংলায় ততদিনে উত্তর ভারত থেকে বৈদিক আর্যরা এসেছিল বলে অঞ্জনা তাদের বৈদিক ধর্মটির অনুসারী হয়ে উঠেছে। অঞ্জনা বিশ্বজগতের পালক বিষ্ণুর পূজারী। অঞ্জনার পূর্বপুরুষ নিষাদেরা ছিল প্রকৃতিপূজারী। তারা কথা বলত অস্ট্রিক ভাষায়। ‘পূজা’ শব্দটি অস্ট্রিক ভাষারই একটি শব্দ। যেজন্য অঞ্জনারা বৈদিক নিয়মে বলি-টলি দেয় না। বিষ্ণুমূর্তি পূজা করে।
অবশ্য আর্যদের ধর্মদর্শনটিও চমকপ্রদ। যেমন: ঈশ্বর সর্ব শক্তিমান বলেই ঈশ্বরের সাকার ও নিরাকার দুটি রূপই রয়েছে। ঈশ্বরের নিরাকার রূপ হলেন ব্রহ্মা। আর সাকার রূপ হলেন বিষ্ণু। (যারা শিবের কথা বলবেন তাদের আমি বলি: শিব অনার্য দেবতা। আর আমি লিখছি আজ থেকে ২৫০০ বছর আগের কথা। আমার মনে হয় তখনও ভারতবর্ষের বৈদিকসমাজ শিবকে গ্রহন করেনি) ...বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা কেউ নন। মহাবিশ্বে যা হয় তা হল পরিবর্তন। তবে ঈশ্বরের সাকার রূপের আরাধনা করা বিধেয়। এই জন্য বলি দিয়ে ঈশ্বরকে তুষ্ঠ করতে হয়।
অঞ্জনা বিষ্ণুর উপাসক বলেই বৈষ্ণব। কিন্তু, তাতে কি হয়েছে। বুদ্ধের কথা মেনে চললে আমি ধর্মচ্যূত হব না। তাছাড়া বুদ্ধ কত ভালো ভালো কথা বললেন আজ , বললেন, জলের ফোঁটার প্রতিও আমার দয়া হয়।
এ কেমন মানুষ!
অঞ্জনা কেঁপে ওঠে।
বুদ্ধের বাণী মনে মনে গ্রহন করে অষ্টাদশী কিশোরী। তবে ও বৈষ্ণবই রয়ে গেল। কারও, সে যে ধর্মেরই হোক-তার নীতিকথা গ্রহন করলে কি ধর্মসংস্কৃতি বদলে যায়?
অপরাহ্নে বুদ্ধ আরেক গ্রামে দিকে চললেন। দুএক দিনের মধ্যেই বঙ্গের আরও পুবে যাওয়া ইচ্ছে। যে জায়গাটি পরবর্তীকালে চিহ্নিত হবে আরাকান নামে।
বিকেল হয়ে এসেছে।
তিলক ফসলের মাঠ থেকে ধীরেসুস্থে ঘরে ফিরে এল। তার মনে নতুন চিন্তার আলোরণ। চিন্তা মানে বুদ্ধের ওই তিনটি কথার অনুরনন। তবে সে চিন্তা একেবারে নতুন কিছু নয়। কেননা, বুদ্ধের জন্মের ১০০ কি ১৫০ বছর আগে প্রাচীন বাংলায় একজন মেধাবী চিন্তাবিদ জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তাঁর নাম কপিল। কপিল বলেছিলেন: জগতে প্রত্যেক প্রাণি দুঃখভোগ করে। আর বুদ্ধ বললেন, জীবনে দুঃখ আছে। কপিল অবশ্য বলেননি যে- আমাদের দয়াশীল হওয়া উচিত কিংবা জীবনকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নেই।
যা কপিল বলেন নি, তাই বুদ্ধ বললেন।
এভাবে মানবচিন্তা এগিয়ে যায় ...
তো, কৃষক তিলকও বিষ্ণুর পূজারী। দেবতা বিষ্ণুকে ঘিরেই তাঁর ধর্মীয় জীবন আর ধর্মীয় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। সে প্রত্যহ বিষ্ণুর আরাধনা করে। লক্ষীপূজাও করে। লক্ষ্মী হলেন বিষ্ণুর স্ত্রী-ধন/সম্পদের দেবী। তবে বুদ্ধের তিনটি কথা যেন তিলকের মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। তিলক বিষ্ণুর কাছে কেবলই নিরাপত্তা চায়, সুখ চায়, শান্তি চায়। কিন্তু, এটা কেমন যেন স্বার্থপরের মতো দেখায় না?
কিন্তু বুদ্ধ আজ বললেন: জীবনে দুঃখ আছে। কাজেই আমাদের দয়াশীল হওয়া উচিত । আর জীবনকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই। তিলক ভাবতে থাকে। বুদ্ধ কি যেন বলতে চেয়েছেন, কেবল দেবতার কাছে চাওয়া নয়, মাথা নত করা নয়: গ্রামের মানুষের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য আছে তার।
তিলক দাওয়ায় বসে গায়ে সর্ষের তেল ঘঁষছে। এখনই স্নান করতে যাবে সে। তিলকের স্ত্রী চন্দনবালা। সে এসে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, দুপুর থেকে আমার রূপার নোলক খুঁজে পাচ্ছি না গো।
উদাস স্বরে তিলক বলল্, না পেলে, না পেলে। তাতে কী?
তাতে কী মানে! নারী বলেই ফোঁস করে উঠল চন্দনবালা।
তিলক বলল, জীবনকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই। বলে গামছা আর ধূতি কাঁধে ফেলে পুকুরের দিকে যেতে লাগল। স্বামীর এহেন আচরণে দুঃখ পেল চন্দনবালা। সে কাঁদতে বসল।
অঞ্জনা এসে বলল, জীবনে দুঃখ আছে মা। তুমি যত ইচ্ছে কাঁদ। সমস্যা নেই।
চন্দনবালা অবাক। মেয়ে ও মেয়ের বাবার হল কী আজ!
তখন সন্ধ্যা নামছিল।
চন্দনবালা দুপধাপ পা ফেলে ঘরে গিয়ে ঘর অন্ধকার করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মাটির ঘর। ঘরের কোণে বড় একটা মাটির ধামা। তাতে ধান। মৃদু টকটক গন্ধ ছড়িয়ে আছে বাতাসে।
অঞ্জনা দাওয়ায় বসে বুদ্ধের মুখটা স্মরণ করছিল। দেখল উঠান পেরিয়ে হরিবালা আসছে। হরিবালা গ্রামের হতদরিদ্র বিধবা। স্বামী কে সাপে কেটেছিল বছর দুয়েক আগে। একমুঠো ধান চাইতে এসেছে বিধবা। ছেলেমেয়ে নিয়ে উপোস করছে নাকি।
অঞ্জনা উঠে ঘরে আসে। বলে, মা হরিবালা এসেছে। একমুঠো ধান চায়।
চন্দনবালা বিরক্ত হয়ে বলল, বলে দে, আজ হবে না। রোজ রোজ ধান চাইছে। আমি নোঙ্গরখানা খুলে বসেছি আর কী!
আজ বুদ্ধের সঙ্গে দেখা না-হলে অঞ্জনা হরিবালাকে তাই বলত। কিন্তু অঞ্জনা বলল, জীবনে দুঃখ আছে মা। কাজেই আমাদের দয়াশীল হওয়া উচিত।
চন্দনবালার প্রতিক্রিয়া আর নাই-বা লিখলাম।
এই হল বুদ্ধের শিক্ষা।
ওই তিনটি কথার জন্যই বাংলার মানবতাবাদের উৎস বুদ্ধ।
বাংলায় ধর্মচিন্তার ধাপগুলো এরকম।
(১) অষ্ট্রিকভাষী নিষাদরা প্রকৃতির আরাধনা করত। ওদের সূর্য দেবতা ছিলেন ‘বোঙ্গা’। অনেকের মতে এই বোঙ্গা শব্দ থেকেই বাংলা নামের উদ্ভব। আমার এমনই ভাবতে ভালো লাগে।
(২) তারপর বৈদিক আর্যরা এল বাংলায়। সময়টা ৮০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে। তাদের ছিল মহাগ্রন্থ বেদ। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক একটি ধর্ম। যে ধর্ম নির্দেশ দেয়: যজ্ঞ করে দেবতাকে খুশি করো। তবে প্রাচীন বাঙালি যজ্ঞের ধারেকাছেও ঘেঁষেনি। তারা ভালোবাসত পূজা করতে আর তীর্থভ্রমন করতে।
(৩) এরপর এলেন বুদ্ধ। ইনি যাগযজ্ঞ-ভিত্তিক বৈদিক শিক্ষা একেবারে অস্বীকার করেছিলেন। বলেছিলেন...
আজও বাংলার মরমী বাউলগানে বুদ্ধের মানবতাবাদী বাণী উঁকি দেয়। যে কারণে এক সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট লেখক আহমদ ছফা বলেছেন: ‘গৌতম বুদ্ধের যে চিন্তা, তা কবীরের কাছ থেকে বাহিত হয়ে লালন তা ধারণ করেছেন। লালনের গানগুলোর মধ্যে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ও চিন্তা এখনও বেঁচে আছে।’ (আহমদ ছফার সাক্ষাৎকারসমগ্র; সম্পাদনা নূরুল আনোয়ার। পৃষ্ঠা,১৩২ )
বৌদ্ধদর্শন কিংবা ধর্ম যাই বলুন বাংলার সঙ্গে তার নাড়ির সর্ম্পক ।
এর কারণ তিনটে।
(১) প্রাচীন বাংলার মানুষ বুদ্ধের বক্তব্যকে কনর্ফাম করেছিল।পরে এক বিশাল জনগোষ্ঠী বুদ্ধের ধর্ম/দর্শনকে গ্রহন করেছিল।
(২) ছয়শো খ্রিস্টাব্দের দিকে যখন বৌদ্ধবিরোধী তুমুল আন্দোলনে উত্তর ভারতে বৌদ্ধদের অবস্থা নিদারুন হয়ে উঠেছিল বাংলা তখন বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছিল ।
(৩) বাংলার চিন্তাবিদেরা বৌদ্ধদর্শনকে বদলে দিয়ে তাকে নারীবাদী তান্ত্রিক করে তুলেছিল।
কিন্তু, তারপর কি হল?
বৌদ্ধ পাল রাজারা চারশ বছর (৬০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ) ধরে বাংলা শাসন করেছিলেন। এই সময়ে বৌদ্ধধর্মটি নারীবাদী তান্ত্রিক হয়ে উঠেছিল। তবে নানা বিতর্কিত এবং গোপন আচারপ্রথার কারণে বৌদ্ধধর্ম অনেকটা অধঃপতিত হয়ে পড়েছিল। কাজেই পরবর্তীকালে (খ্রিস্টীয় দশম শতকে) যখন নীতিবাগীশ সেনরা বাংলা শাসন করতে এলো-এবং যখন তারা যৌননির্ভর বজ্রযানী বৌদ্ধধর্মের মূলতত্ত্ব শুনল- ঘৃনায় তাদের গা রি রি করতে লাগল। তারা বৌদ্ধদের ওপরে হয়ে উঠেছিল খড়গহস্ত। তারা বাংলা থেকে বৌদ্ধধর্ম উচ্ছেদ করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। এতে বৌদ্ধরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
এরপর আরও দুশো বছল কাটল।
ত্রয়োদশ শতকে (১২০০ খিস্টাব্দ) বাংলায় এল মুসলিম রাজশক্তি। তার আগে থেকেই অর্থাৎ দশম শতাব্দী থেকেই পারসিক সুফিসাধকগণ বাংলায় সুফিবাদের প্রচার শুরু করেছিলেন। সেনশাসনের ওপর বিতৃষ্ণ এবং বিপর্যস্ত বৌদ্ধরা সেই সুফিদের জিজ্ঞেস করল, আমাদের বৌদ্ধধর্মে নারীর অনেক সম্মান। তা আপনার ধর্মের নারীর অবস্থান কি?
সুফিরা হেসে বললেন, আমাদের ধর্মে মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেস্ত।
জন্ম হল বাঙালি মুসলমানের।
তবে অঞ্জনার মতো্ই তাদের হৃদয়ে রয়ে গেল বুদ্ধের শিক্ষা।
এভাবে বাংলার মানবতাবাদী ধারাটি অব্যাহত রইল ...
২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৪৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:২৬
রমিত বলেছেন: এখন আমার সময় কম। সময় হলে, আপনার লেখাটি আমি মনযোগ দিয়ে পড়ব। লেখাটি সময়পোযোগী, এরকম একটি লেখা আমি নিজেও দিতে চাচ্ছিলাম, সময়ের অভাবে দিতে পারিনি। সময় সুযোগ করে লেখা দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৫৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ । আপনার লেখার অপেক্ষাই রইলাম।
৩| ২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৪৪
গাজী সালাহউদ্দিন বলেছেন: আল্লাহর ওলী আর সূফী এক বিষয় নয় । হযরত শাহজাহান (রহঃ), খান জাহান আলী (রহঃ) , খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) উনারা সূফী ছিলেন না । উনারা আল্লাহর ওলী ছিলেন ।
আর ধর্ম প্রচার এত সহজ না যে আপনার কথা পছন্দ হয়ে গেল আর আমি আপনার ধর্ম গ্রহণ করলাম । মানুষ আল্লাহর ওলীদের কারামত দেখেই ধর্মান্তরিত হয়েছিলো ।
আপনারা মনে করেন ...সব কিছুই খুব সহজ । ব্লগে ব্লগে ..এসব লিখে বুদ্ধ ধর্মের বা নতুন কোন ধর্মের এখন প্রচার হবে না ।
ধন্যবাদ ..কষ্ট করে বুদ্ধকে নিয়ে লেখার জন্য । আপনার এই লেখাটা বেশীর ভাগই হলো কাল্পনিক ।
বর্তমানে কোন ধর্মের লোকই আর দয়া দেখায় না ...কারণ কোন ধর্মই সত্যিকার রূপে নাই -ইসলাম ছাড়া ।
আর বুদ্ধ নাস্তিক ছিলেন না...কিছূটা নীরব ছিলেন । উনার বাণী পড়লেই বুঝতে পারবেন যে তিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী ছিলেন না । যেমন বলেছেন...
'মানুষ আমার বাড়ী, আমার পুত্র করে ..যেখানে সে নিজেই নিজের না সেখানে এগুলো কিভাবে তার '
'পূণ্যবান লোক এই কালে ও পরলোকে সুখে থাকে আর পাপী দুই কালেই অশান্তিতে থাকে '
আর আপনি বুদ্ধে এই উদ্ভট কথা কোথায় পেলেন যে..তিনি বলেছেন জীবনটাকে সিরিয়াস ভাবে নেওয়ার দরকার নাই ?
আপনার লেখার সোর্স কোথায় ??
২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ১. আপনি লিখেছেন ...আল্লাহর ওলী আর সূফী এক বিষয় নয় । হযরত শাহজাহান (রহঃ), খান জাহান আলী (রহঃ) , খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) উনারা সূফী ছিলেন না । উনারা আল্লাহর ওলী ছিলেন ।
আমার জবাব। আল্লাহর ওলী আর সূফী এক বিষয় নয় । এই তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনি কীভাবে ধরে নিলেন যে আমি এ বিষয়ে অজ্ঞ? আর আমি দশম থেকে ত্রয়োদশশতকের বাংলার কথা লিখেছি। আপনি হযরত শাহজাহান (রহঃ), খান জাহান আলী (রহঃ) , খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) এনাদের দশম শতকে কই পেলেন? বাংলায় দশম থেকে দশকে সুফিরা ইসলাম প্রচার করেছিলেন। এঁদের মধ্যে কেউ যে ওলী ছিলেন না তা আমি অস্বীকার করি নি।
আপনি লিখেছেন ...আর ধর্ম প্রচার এত সহজ না যে আপনার কথা পছন্দ হয়ে গেল আর আমি আপনার ধর্ম গ্রহণ করলাম । মানুষ আল্লাহর ওলীদের কারামত দেখেই ধর্মান্তরিত হয়েছিলো ।
আমার জবাব। স্বীকার করলাম। মানুষ আল্লাহর ওলীদের কারামত দেখেই ধর্মান্তরিত হয়েছিলো কিন্তু আমার লেখার বিষয় কি এটা? নাকি প্রসঙ্গক্রমে সুফিদের কথা এসেছে?
আপনি লিখেছেন:আপনারা মনে করেন ...সব কিছুই খুব সহজ । ব্লগে ব্লগে ..এসব লিখে বুদ্ধ ধর্মের বা নতুন কোন ধর্মের এখন প্রচার হবে না ।ধন্যবাদ ..কষ্ট করে বুদ্ধকে নিয়ে লেখার জন্য । আপনার এই লেখাটা বেশীর ভাগই হলো কাল্পনিক ।
আমার জবাব। ব্লগে আমি বুদ্ধের ধর্ম বা নতুন ধর্ম প্রচার করছি তা আপনাকে কে বলল?এই লেখার বাংলার ইতিহাসের একটা পর্যায়ের কিছুটা কল্পনাশ্রয়ী উপস্থাপনা। বুদ্ধকে নিয়ে লেখার জন্য আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বলে আপনাকেও ধন্যবাদ।
আপনি লিখেছেন:বর্তমানে কোন ধর্মের লোকই আর দয়া দেখায় না ...কারণ কোন ধর্মই সত্যিকার রূপে নাই -ইসলাম ছাড়া ।
আমার জবাব: আমি এই পোষ্টে কোথায় বলেছি যে ইসলাম তার সত্যিকার রূপে নেই?
আপনি লিখেছেন: আর বুদ্ধ নাস্তিক ছিলেন না...কিছূটা নীরব ছিলেন । উনার বাণী পড়লেই বুঝতে পারবেন যে তিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী ছিলেন না । যেমন বলেছেন... 'মানুষ আমার বাড়ী, আমার পুত্র করে ..যেখানে সে নিজেই নিজের না সেখানে এগুলো কিভাবে তার ''পূণ্যবান লোক এই কালে ও পরলোকে সুখে থাকে আর পাপী দুই কালেই অশান্তিতে থাকে '
আমার জবাব:
বুদ্ধকে আমি এ পোস্টে নাস্তিক বললাম কোথায়? ''পূণ্যবান লোক এই কালে ও পরলোকে সুখে থাকে আর পাপী দুই কালেই অশান্তিতে থাকে ' আপনার এই লেখা সোর্স কি?
আপনি লিখেছেন: আর আপনি বুদ্ধে এই উদ্ভট কথা কোথায় পেলেন যে..তিনি বলেছেন জীবনটাকে সিরিয়াস ভাবে নেওয়ার দরকার নাই ? আপনার লেখার সোর্স কোথায় ?
আমার জবাব।
নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তাঁর ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট বইতে লিখেছেন: "বৌদ্ধশ্রাস্ত্রে নির্বানের কোনও সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। যে ৫টি উপাদান কোনও সত্তাকে গঠন করে সে গুলি হল রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার এবং বিজ্ঞান। এগুলি আত্মাবিহীন, অকাম্য এবং অচিরস্থায়ী। যিনি উপাদানসমূহের মধ্যে আত্মা অনুপস্থিতি উপলব্দি করেন তিনি জানেন যে ব্যক্তি হিসেবে তার কোনও প্রকৃত অস্থিত্ব নেই। (পৃষ্ঠা ৯৭)
কি বুঝলেন।
কঠিন লাগতেছে?
৪| ২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৪৯
পারভেজ আলম বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট। এইরকম একটা কিছু পড়ার ইচ্ছা ছিল অনেকদিন। প্রিয়তে নিলাম।
২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৫৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১০
রঙ্গভরা বঙ্গদেশী বলেছেন:
কপিল (এর ব্যাপারে তথ্য সোর্সটা জানাবেন) আপনি কি সাংখ্য দর্শনের জনক কপিলার কথা বলছেন? তাহলে তার জন্ম তো বঙ্গদেশে নয়।
তিলক
অঞ্জনা
চন্দনবালা
হরিবালা
(এই চরিত্র গুলোর নামের ব্যাপারে তথ্য সোর্সটা একটু জানাবেন)
বুদ্ধের সময়ের বঙ্গদেশে নাম তো এরকম হওয়ার কথা নয়। দিঘানিকায় আর মজঝিম নিকায়ের চরিত্রগুলো নাম অন্তত তাই বলে।
২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ। সাংখ্য দর্শনের কপিলের কথা বলছি। তার জন্ম প্রাচীন বাংলায় হতেও পারে। কেননা তপোব্রত সান্যাল তাঁর গঙ্গা: তত্ত্ব ও তথ্য বইতে লিখেছেন, “প্রাচীনকালের লেখকরা বঙ্গকে উপেক্ষা করলেও মহামুনি কপিলের সঙ্গে গঙ্গার সম্পর্কে কে মান্য করেছেন। সাংখ্য-দর্শনের প্রবর্তক কপিল যে বঙ্গবাসী ছিলেন, তার প্রমান আছে। সাংখ্যই ভারতের প্রাচীনতম দর্শন। বৌদ্ধধর্মের মূলতত্ত্বের উৎসও এই সাংখ্যদর্শন। বস্তুত, বুদ্ধের দু’জন গুরুই ছিলেন সাংখ্যমতাবলম্বী। সনাতন ধর্মাবলম্বী আর্যশাস্ত্রীরা কপিলের লোকায়ত সাংখ্যশাস্ত্রকে কখনোই মেনে নেন নি, কারণ কপিল বেদকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেননি। মনে হয় এই কারণেই বৌদ্ধ-অধ্যুষিত বঙ্গ আর্যদের দ্বারা অবহেলিত হয়েছে।” ( পৃষ্ঠা ১৬)।
বইটি কলকাতা থেকে আনাতে পারেন।
আর ব্লগার আর্শীষ চট্টপাধ্যায় আমাকে জানিয়েছেন যশোরে কপতাক্ষর নদের তীরে কপিলমুনি নামে একটি গ্রাম এখনও আছে।
আমি লিখেছি ...বুদ্ধের জন্মের দুশো বছর আগে ভারতবর্ষে লোহার আবিস্কার হয়েছিল। ফলে বনজঙ্গল কেটে সাফ করে বৈদিক আর্যদের পূর্বমুখি অভিপ্রয়াণ (মাইগ্রেশন) সহজ হয়েছিল। আর্যরা প্রাচীন বাংলায় এসেছিল। বসতি স্থাপন করেছিল। প্রাচীন বাংলার মানুষ আর্যদের গ্রহন করেছিল। প্রাচীন বাংলার মানুষ উদার বলেই গ্রহন করেছিল।
কাজেই আমার আর্যনাম গ্রহন করতে হয়েছিল ওই কাল্পনিক অংশটুকু জন্য। নামগুলি নিয়েছি পূর্বা সেনগুপ্তের জৈন তীর্থঙ্কর ও সাধুসন্ত বইতে থেকে।
আপনি লিখেছেন: বুদ্ধের সময়ের বঙ্গদেশে নাম তো এরকম হওয়ার কথা নয়। দিঘানিকায় আর মজঝিম নিকায়ের চরিত্রগুলো নাম অন্তত তাই বলে।
দিঘানিকায় আর মজঝিম নিকায়ের তো পালিভাষায় লেখা। কাজেই অন্যরকম হওয়ারই কথা। আমি আর্যনাম লিখেছি। কেন লিখেছি, তা ব্যাখ্যা করেছি।
ধন্যবাদ।
৬| ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৪
মানুষ নই বলেছেন: আপনার গল্পচ্ছলে বলার ধরনটি চমৎকার। বিষয়বস্তু আরও চমৎকার। ধন্যবাদ।
২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪১
রঙ্গভরা বঙ্গদেশী বলেছেন:
কপিলা মুণির জন্মস্থানের ব্যাপারে এক্স্যাক্ট কোন ধারণা কারো নেই বলে জানতাম। তিলক, অঞ্জনা, চন্দনবালা, হরিবালা নামগুলো কাল্পনিক হলে তো ভিন্ন কথা। তাহলে গল্পচ্ছলে ইতিহাস বলা।
সেই নিষাদ, মুন্ডা আর সাঁওতালদের সময়ে বৈদিকরা বঙ্গদেশের বাসিন্দাদের কখনো রাক্ষসের সাথে কখনো পাখির ভাষা য় কথা বলা মনুষ্যের সাথে তুলনা করতো। ঋগ্বেদের ঐতরেয় আরন্যকে বঙ্গবাসীদের পাখি আর সর্পের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
প্রজা হ তিস্রো অত্যায়মীয়ুরিতি য়া বৈ তা ইমাঃ প্রজাস্তিস্রো
অত্যায়মায়ং স্তানীমানি বয়াংসি বঙ্গাবগধাশ্চেরপাদা।।
ঐতরেয় আরন্যকঃ (২য় আরন্যক/ ১ম অধ্যায়/ ১ম খণ্ড)
বঙ্গবাসীরা অষ্টাদশ পুরাণ ও রামায়ণ বাংলায় শোনেনা তাই তারা বঙ্গবাসীদের যে রৌরব নরকে যেতে হবে তাও বলে দিয়েছিলেন।
যা হোক। বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের হাতেই বঙ্গভাষার প্রাচীন চিহ্ন গুলো লিখিত হয়েছিলো। যেগুলোকে আমরা চর্য্যাপদ বলি।
২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
ইমন জুবায়ের বলেছেন: জ্বী। কপিলা মুণির জন্মস্থানের ব্যাপারে এক্স্যাক্ট কোন ধারণা কারো নেই বলে জানতাম।
তবে আজ আমরা ভাবতে চাই তিনি ছিলেন প্রাচীন বঙ্গবাসী। কোনও এক সময় সাংখ্যদর্শন প্রচার করতে তিনি উত্তর ভারতে গিয়েছিলেন। যারা একথা শুনে চমকে উঠবেন তাদের বলব রবীন্দ্রনাথের জন্ম বাংলায়। এবং বাংলার অনেক মনীষি ভারতীয় সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছেন। এদের মধ্যে প্রনব , মুখার্জী থেকে ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, উদয়শঙ্ক, রবীশঙ্কর। আপনি জানেন যে এই তালিকা দীর্ঘ।
যা হোক। কপিলের সাংখ্যদর্শনে প্রকৃতি ও পুরুষতত্ত্ব একটি প্রধান ধারণা। মধ্যযুগের বাংলায় তান্ত্রিক বৌদ্ধ সহজযানী দর্শনে প্রকৃতিপুরুষের উল্লেখ রয়েছে। সহজযানীরা বিশ্বাস করতেন জপ কি প্রার্থণা করে মুক্তি অর্জন সম্ভব না। পরমজ্ঞান সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা-স্বয়ং গৌতম বুদ্ধও জানতেন না। তাঁদের মতে সবার পক্ষেই বুদ্ধত্ব লাভ সম্ভব। এবং এই বুদ্ধত্বের অধিষ্ঠান দেহের মধ্যে। তাঁদের মতে দেহবাদ বা কায়সাধনই একমাত্র সত্য। সহজযানীদের মতে শূন্যতা প্রকৃতি। এবং করুণা পুরুষ। এই ধারণাও, আমার মনে হয়, কপিল প্রবর্তিত সাংখ্যদর্শনের প্রভাব। সে যাই হোক। এই শূন্যতা ও করুণার মিলনে অর্থাৎ নারী ও পুরুষের মিলনে বোধিচিত্তের যে পরমানন্দ অবস্থা হয় তাই মহাসুখ। এই মহাসুখই একমাত্র সত্য। সহজযানের লক্ষ ছিল মহাসুখ।
তাছাড়া বাউল দর্শনেও লালনের
কবি আল মাহমুদ লিখেছেন: আমার তো কপিলে বিশ্বাস / প্রেম কবে নিয়েছিল ধর্ম কিংবা সংঘের শরণ ... ( সোনলি কাবিন) ... (অর্থাৎ, দার্শনিক কপিলের মতো স্বাধীন মতবাদে আমি বিশ্বাসী ... আমার প্রেমকে টিকিয়ে রাখতে ধর্ম কিংবা ধর্মীয় মঠের (বা সংঘের) প্রয়োজন নেই।) কিন্তু, সত্যিই কি কপিলের জন্ম প্রাচীন বাংলায় হয়েছিল? আমাদের সেরকমই বিশ্বাস। কেননা, প্রাচীন বাংলার মানুষ সাংখ্যদর্শন গ্রহন করেছিল বলে প্রাচীন বাংলার প্রতি উত্তর ভারতের আর্যসমাজের ক্ষোভ ছিল। তারা বলত প্রাচীন বাংলার লোকেরা পাখির ভাষায় (কাক-চেটকসদৃশ) কথা বলে। আর্য শাস্ত্রকার বৌধায়ন তাঁর ‘ধর্মশাস্ত্রে’ উল্লেখ করেছেন, বাংলায় গেলে প্রায়শ্চিত করতে হবে!
প্রাচীন বাংলার দ্বিতীয় শিক্ষাগুরু গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধ অবশ্য প্রথম জীবনে সাংখ্যমত গ্রহন করেছিলেন। বুদ্ধের অনেক আগেই কপিল বলেছিলেন: মানুষ যেসব দুঃখ ভোগ করে, সেইসব দুঃখকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: ক. আধ্যাত্বিক। খ. আদিভৌতিক। এবং গ. আধিদৈবিক। কপিলের মতে, দুঃখকে এড়ানোর পথ হল দর্শনের চর্চা। বুদ্ধও বললেন, জগৎ দুঃখময়। কতগুলি নীতি (ধম্ম?) মেনে চললে দুঃখের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কপিল অহিংসমত মত প্রচার না করলেও বুদ্ধ অহিংস মত প্রচার করেছেন। বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর অহিংস মত গ্রহন করে প্রাচীন বাংলা। এ কারণেই প্রাচীন বাংলার দ্বিতীয় শিক্ষাগুরু গৌতম বুদ্ধ। একাদশ শতকে সেন রাজাদের শাসন অবধি বৌদ্ধধর্ম বাংলায় অব্যাহত ছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বৌদ্ধধর্মকে ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। (কপিলের প্রতিও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেছিল তারা)। বাংলা বৌদ্ধধর্মকে আশ্রয় দিয়েছিল। দীর্ঘ চার শতাব্দী ধরে বাংলায় পাল রাজাদের শাসন অব্যাহত ছিল। এ সময়ে বাংলায় বৌদ্ধধর্মের পরিপূর্ণ বিকাশলাভ করেছিল। তান্ত্রিক বৌদ্ধ কবিদের লেখা চর্যাপদের কথা আমরা জানি। চর্যার সে রকম একটি পদ এ রকম: তো বিনু তরুনি নিরন্তর ণেহে/ বোধি কি লভ ভই প্রণ বি দেঁহে। অর্থাৎ, হে তরুণি তোমার নিরন্তর স্নেহ ছাড়া কি ভাবে এই দেহে বোধিলাভ হয়? জ্ঞানের জন্য নারীর সান্নিধ্যলাভ-এ যেন তন্ত্রের পথ খুলে যাচ্ছে।
প্রাচীন বাংলার মেধাবী ভাবুকগন কেবল সাংখ্য ও বৌদ্ধধর্ম নিয়ে পড়ে থাকেনি। তাঁদের বিদগ্ধ মননের ফলে প্রাচীন বাংলায় তন্ত্রের উদ্ভব ঘটেছিল। তন্ত্রের একটি প্রধান সিদ্ধান্ত হল: “যা নাই দেহভান্ডে তা নাই ব্রহ্মান্ডে।” অর্থাৎ সবই এই দেহে বিরাজমান। তন্ত্রের এই শরীরবাদী উক্তিটি দেহপ্রধান বাউলদর্শনের প্রতিও ইঙ্গিত করে। কেননা বাউলের বিশ্বাস ‘মনের মানুষ’ বাউলের দেহেই বাস করেন। তন্ত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এর নারীপ্রাধান্য। বাউলধর্মেও নারীপ্রাধান্যের কথা আমরা জানি। স্বয়ং লালন বলেছেন, নারী হও। নারী ভজ। লালন এর একজন গুরু গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের পথিকৃৎ শ্রীচৈতন্যদেব বলেছেন: আমার হৃদয়ে রাধা, বহিরঙ্গে কৃষ্ণ। এই দুই মহাত্মার ওপর কিছুমাত্র হলেও তন্ত্রের প্রভাব পড়েছিল। শুধু তাই নয় তন্ত্রের প্রভাবে বাংলায় হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম দুটিও তান্ত্রিক হয়ে ওঠে।
ফরহাদ মজহার তাঁর ২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘ভাবান্দোলন’ বইতে লিখেছেন,‘... এটাও তাহলে পরিস্কার প্রাকৃতিক পুরুষ তার শারিরীকতার কারণে ‘কর্তা’ নয়, কর্তাসত্তা (সাবজেক্ট) নয়। কর্তা হচ্ছেন প্রকৃতি। (মনে থাকার কথা কপিলের একটি বিখ্যাত উক্তি হল: ‘প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মক, চঞ্চলা। পুরুষ অপ্রধান।’) ... তিনিই একমাত্র কর্তা। এবং তাঁরই বিশেষ মুহূর্তে বা বিশেষ মহাযোগে ‘পুরুষ’ নামক সেই অধরার আবির্ভাব ঘটে। সেই অধরাকে ধরাই ফকির লালন শাহের ‘করণ’। এই পুরুষই সহজ মানুষ। কিন্তু তাকে শুধু তন্ত্রমূল ‘করণ’ দিয়ে ধরলে চলবে না। ধরতে হবে ‘দিব্যজ্ঞানে’। ( পৃষ্ঠা ২৩৩) অধরা পুরুষকে ধরার অনুভূতি লালন প্রকাশ করেছেন তাঁর এক বিখ্যাত গানে:সহজ মানুষ/ ভজে দেখ না রে মন/ দিব্যজ্ঞানে/ পাবি রে অমূল্য নিধি বর্তমানে।
পুরুষ ও প্রকৃতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অন্য একটি গানে লালন বলেছেন:
মায়েরে ভজিলে হয় সে বাপের ঠিকানা। নিগূঢ় বিচারে সত্য গেল তাই জানা। পুরুষ পরওয়ারদিগার অঙ্গে ছিল প্রকৃতি তার প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার সৃষ্টি সবজনা। নিগম খবর নাহি জেনে কে বা সে মায়েরে চেনে। যাহার ভার দীন দুনিয়ার দিলেন রাব্বানা। ডিম্বু মধ্যে কেবা ছিল বের হয়ে কারে দেখিল লালন কয় সে ভেদ যে পেল ঘুচল দিন-কানা।
প্রকৃতি ও পুরুষতত্ত্বের প্রবক্তা ছাড়াও কপিলকে বিবর্তনবাদের জনক মনে করা হয়। তিনিই প্রথম এই বিবর্তনবাদী তত্ত্বের সমর্থনে যৌক্তিক বিশ্লেষন উপস্থাপন করেন। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও পিথাগোরাসেরও পূর্বে কপিল বেঁচেছিলেন । (আবারও উল্লেখ করি যে ...জার্মান অধ্যাপক Richard Garbe তাঁর Die Sāmkhya-Philosophie বইতে কপিলের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক বলে নির্ধারণ করেছেন।) ... কাজেই কোনও কোনও পাশ্চাত্য পন্ডিতের মতে- গ্রিক দর্শন কপিলের (তথা বাংলার) দর্শনের কাছে ঋনি। মানবসমাজে বিবর্তন সম্বন্ধে ধারণাটি যদিও কপিলের পূর্বেই ছিল- তবে কী ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বজগতের রহস্যের কিনারা করা যায় সে পথ কপিলই প্রথম দেখিয়েছেন। কপিল অনেকটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই বস্তুর বিবর্তন লক্ষ করেছেন এবং একই সঙ্গে বিশ্বজগতের উৎপত্তির কারণ বোঝার চেষ্টা করেছেন এমন একটা সময়ে যখন কপিলের পরিমন্ডলে বৈদিক কুসংস্কার ছাড়া অগ্রসর চিন্তার অস্তিত্বই ছিল না। যে সময় বস্তুর অভ্যন্তরে পরমানুর অস্তিত্বের কথা ভাবা ছিল অকল্পনীয়, কপিল সে সময় পরমাণুর কথা অনুমান করেছিলেন।
যাই হোক। এই পোস্টে কপিল, কপিল-প্রবর্তিত সাংখ্য দর্শন, দর্শনটির পরিচয় এবং কপিলের সঙ্গে বাংলার ভাবদর্শনে সম্পর্কটি অনুধাবন করা গেল। কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কপিলের সাংখ্যদর্শনটি বৈরাগ্যপ্রবল এবং দুঃখবাদী। যে কারণে দুঃখবাদী সাংখ্য দর্শনের সঙ্গে বাংলার লোকগানের দুঃখবাদের সম্পর্ক গভীর। এখন দেখা যাক কপিল কেন দুঃখবাদী। কপিল সেই প্রাচীন বাংলায় বেঁচে থেকে অনুভব করেছিলেন যে: Everything exists in the world, produces some kind of suffering and sorrow. কপিলের এই বক্তব্যটি বৌদ্ধধর্মকে প্রবাহিত করেছে। বুদ্ধের দু-জন শিক্ষক অড়ার ও কলাম ছিলেন সাংখ্য দার্শনিক। সাংখ্যদর্শনের প্রভাবেই বুদ্ধ বলেছেন জগৎ দুঃখময়। যা হোক। কপিল বলেছেন: জীবনে বেঁচে থেকে মানুষ ত্রিবিধ দুঃখ ভোগ করে। কি এই ত্রিবিধ দুঃখ? (ক) আধ্যাত্মিক; (খ) আধিভৌতিক; এবং (গ) আধিদৈবিক। নিজের দেহ ও মন থেকে যে দুঃখ আসে, তাই আধ্যাত্মিক দুঃখ। কাম ক্রোধ ও লোভ থেকে উদ্ভূত দুঃখই আধ্যাত্মিক দুঃখ। কেউ যখন অসুখেবিসুখে ভোগে-সেটিও আধ্যাত্মিক দুঃখ। আর, আধিভৌতিক দুঃখ হল বাইর থেকে আসা দুঃখ। মানুষ কিংবা পশু থেকে যে দুঃখ সেসব আধিভৌতিক দুঃখের পর্যায়ভূক্ত। মামলা-মোকদ্দমা বা পশুর আক্রমন (যেমন সর্পাঘাত) কিংবা শক্রর হাতে নিপীড়ন হল আধিভৌতিক দুঃখ । আধিদৈবিক দুঃখও বাইরে থেকে এলেও মূলে দৈব ঘটনা। যেমন বন্যা খরা মহামারী ভূমিকম্প। কপিল এ কারণে বলেছেন: জীবনে বেঁচে থেকে মানুষ ত্রিবিধ দুঃখ ভোগ করে। পুরুষ যখন প্রকৃতিকে স্পর্শ করে তখন এই দুঃখের উদ্ভব হয়।
যেমন আমরা কখনও-কখনও ভাবি যে ... ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি না-করলে মানুষ দুঃখভোগ করত না। পৃথিবী নামক এই ‘শঙ্খনীল কারাগারে’ আমরা বন্দি। কিংবা বেঁচে আছি ‘নন্দিত নরকে’! সভ্যতার যে কোনও যুগের কবি কিংবা লেখককে কপিলের মর্মান্তিক ভাবনাটি ছুঁয়ে যেতেই হয় ...
সে যাই হোক। দুঃখ থেকে আসে বৈরাগ্য। বাঙালির রক্তে বৈরাগ্যপ্রবল। বাঙালি জাত বৈরাগী। (সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী-নইলে এই গানটি দু-বাংলায় এত জনপ্রিয় কেন?) উদাস বাঙালি দুঃখবাদী বাঙালির গানে দুঃখের প্রসঙ্গটি বারবার এসেছে। সেই গানেও রয়েছে কপিলের দুঃখবাদ। আমরা যখন বাংলার মাঝির কন্ঠে ভাটিয়ালি গান শুনি
দুঃখ-সুখের দুইটি ধারায় বইছে নদীর জল/ সুখে বাইব তোমার ডিঙা করিয়া কোন ছল? তাই তো বলি ওরে ও মন এ যে কঠিন ঠাঁই/ কোনখানে পাঠাইয়া দিলেন মওলা মালিক শাঁই রে ....
তখন যেন টের পাই এ গানের আড়ালে রয়েছেন প্রাচীন বাংলার সেই মেধাবী দার্শনিকটি ...
আর প্রাচীন বাংলা সম্বন্ধে আপনি যা যা লিখেছেন তা আমি কাবেদুল ইসলামের প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী বইতে পেয়েছি।
হ্যাঁ। তিলক, অঞ্জনা, চন্দনবালা, হরিবালা নামগুলো কাল্পনিক । আমি ইতিহাসকে গল্পচ্ছলে উপস্থিত করেছি।
ধন্যবাদ।
৮| ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৫
রঙ্গভরা বঙ্গদেশী বলেছেন: এই বিষয়ে আপনার জ্ঞান গভীরে। আমি অনেকটা উদাসী। জানার জগত সামান্যই।আমির খসরু, কবির, রহিম, দাদু দয়াল, লালন, হাসন রাজা পড়েছি। তাই প্রাচীন বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের দেহতাত্ত্বিক অনুভবটা কিভাবে পরবর্তিদের হাতে বিবর্তিত হয়েছে তার কিছু কিছু ধারনা আমার আছে। তবে বৌদ্ধ তান্ত্রিক মতবাদ ইসলামের সুফিবাদের সাথে মিশে যে নির্য্যাশ উদ্ভূত হয়েছে তাই প্রকাশ পেয়েছে আমির খসরু, কবির, রহিম, দাদু দয়াল এবং আরো পরে বঙ্গ ভুখন্ডে এসে লালন, হাসন রাজাদের লেখাতে।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনি লিখেছেন: তবে বৌদ্ধ তান্ত্রিক মতবাদ ইসলামের সুফিবাদের সাথে মিশে যে নির্য্যাশ উদ্ভূত হয়েছে তাই প্রকাশ পেয়েছে আমির খসরু, কবির, রহিম, দাদু দয়াল এবং আরো পরে বঙ্গ ভুখন্ডে এসে লালন, হাসন রাজাদের লেখাতে।
জ্বী।
ধন্যবাদ।
৯| ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৭
শয়তান বলেছেন: এধরনের পোস্টে কিছু কিছু আবালিয় কমেন্টের জবাব দিয়েন্না । ভীষণ বিরক্ত লাগে দেখলে ।
ইগ্নোর করতে থাকেন এদের ।
ইগ্নোর খাইতে খাইতে অফ যাবে এরা আপসেই
২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৯
ইমন জুবায়ের বলেছেন:
১০| ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৪
পারভেজ আলম বলেছেন: মন্তব্য, প্রতিমন্তব্য পড়ে যাচ্ছি আর লেখাটা প্রিয়তে নিয়া যে একটা ভালো কাজ করছি সেটা ভেবে আনন্দ পাচ্ছি। এই বিষয়গুলা নিয়া খুব বেশি সাজায়া গুছায়া আলাপ করার মতো এলেম আমার নাই। তবে বাঙলার সহজিয়া দর্শনের ধারাবাহিকতা, বিবর্তন থেইকা যতটুকু মুক্তা আমরা এখন সেচে বের করতে পারি তার সাথে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন দর্শনের সম্পর্ক এবং তার প্রকৃত বিকাশ সম্ভব হইলে আধুনিক দুনিয়ার নিহিলিজম অথবা ভোগবাদএর মেরুকরণএর বাইরে নতুন দিনের রাস্তা পরিস্কার হওয়ার সম্ভাবনা নিয়া চিন্তা ভাবনা করি। তবে এসব নিয়া এখনো বিস্তারিত লেখার এলেম অর্জন করিনাই। তাই আপনার এসব লেখা পাঠ করে মাথা পরিস্কার করি।
২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার বইটি দেখলাম রকমারি ডটকমে। কিছুদিনের মধ্যেই অর্ডার দেব।
আপনার জন্য এই বইটি সাজেস্ট করলাম। চিন্তাভাবনায় কাজে লাগবে।
বইটি এখানে অর্ডার করতে পারেন।
http://rokomari.com/
ধন্যবাদ।
১১| ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:১১
রাহি বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম। সুন্দর পোষ্ট। প্লাস।
২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:২৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
১২| ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:৩৩
অনিক আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ইমন ভাই আপনার কাছ থেকে এই লেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:০৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
১৩| ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:৪৯
ডাইস বলেছেন: অনেকদিন পর ব্লগে এসে আপনার লেখা পড়লাম কিন্তু ভাল লাগা/প্রিয় কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা
http://prntscr.com/auybj
২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:০৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ।
১৪| ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:১২
সজীব আকিব বলেছেন:
চমৎকার।
২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:১৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
১৫| ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:৪৯
ইমরান হাসান ক বলেছেন: যেন ঠাণ্ডা হাওয়ার একটা পরশ বুলিয়ে গেলেন হৃদয়ে। বুদ্ধ যেন প্রাচীন বাংলার হাওয়া ,মাটি আর জলেরই প্রতিভূ এই বুদ্ধের বানী যেন আজও ধ্বনিত হচ্ছে আমাদের সবার অভ্যন্তরে।
এইজন্যই হয়ত রবিঠাকুর বলেছিলেন যে
বাংলার সাড়ে তিন হাত মাটি খুঁড়লেই বুদ্ধমূর্তি পাওয়া যায়।
২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:৫৯
ইমন জুবায়ের বলেছেন: প্রাচীন বাংলার প্রথম শিক্ষক বুদ্ধ; বাংলার মানবতাবাদের উৎসও তিনি।
ধন্যবাদ।
১৬| ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:১০
নাজনীন১ বলেছেন:
শঙ্খনীল কারাগার, নন্দিত নরকে -- এগুলো দেখে হুমায়ন আহমেদের মেয়ে শীলার একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেল ... ডাক্তার যখন শীলার অপারেশন করা চোখের ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো... শীলা বলছিল, আমি দেখতে পাচ্ছি মা, মা আমি সব দেখতে পাচ্ছি!
২০ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:১৮
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
১৭| ২১ শে জুন, ২০১২ ভোর ৪:০৫
মুনসী১৬১২ বলেছেন: তবু কেন এমন নিঠুর বাংলা....
আমার মনে হয় বাংলায় যত জাতি এসে মিশে গেছে বিশ্বে এটা মনে হয় বিরল,,,,,,তাই আমাদের চিন্তা ও চোহারায় এতো স্বাতন্ত্র,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
২১ শে জুন, ২০১২ ভোর ৬:০৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: সহমত।
ধন্যবাদ।
১৮| ২১ শে জুন, ২০১২ সকাল ৯:৩৭
চনচল বলেছেন: অনেকটা ভলগা থেকে গংঙা বই-এর মতোন। ভাল লাগল । ধারাবাহিক ভাবে চলবে ????????
২১ শে জুন, ২০১২ সকাল ১০:৩৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ। ভলগা থেকে গঙ্গার সঙ্গে মিল রয়েছে। ধারাবাহিক লেখা হয়তো লিখব। ধন্যবাদ।
১৯| ২১ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৪০
রেজওয়ান তানিম বলেছেন: নাইস ওয়ান ইমন ভাই
২১ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:০১
ইমন জুবায়ের বলেছেন:
২০| ২১ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
২১ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:০২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনার পোস্টটি পড়েছি আগেই।
ধন্যবাদ।
২১| ২১ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৫৫
জুন বলেছেন: ভালোলাগলো পোষ্ট
+
২১ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:০২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২২| ২১ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১২
হাসিন ঐশী বলেছেন: প্রিয়তে
২১ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:২৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২৩| ২১ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:০৪
আমি লিখতে চাই না বলেছেন: বুদ্ধং শরনং গোচ্ছামি
ধর্মং শরনং গোচ্ছামি
সংঘম শরনং গোচ্ছামি
এক সময়ে বাংলার ঘরে ঘরে এই শ্লোক উচ্চারিত হতো প্রতি মূহুর্তে।
প্রচুর তথ্য পেলাম পোস্টটিতে।
২১ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:১৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২৪| ২১ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:১৯
রাশমী বলেছেন: (১) জীবনে দুঃখ আছে। (২) কাজেই আমাদের দয়াশীল হওয়া উচিত (৩) জীবনকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই। কথা গুলো কেমন জানি হিপটোনাজ করার মত!! অনেক ভাল লাগলো ..... আবার লিখতে মন চাচ্ছে যে অনেক ভাল লাগলো!! আমার এক বান্ধবি কে এই লেখা দেখিয়েছি ওর ও ভীষণ ভাল লেগেছে!! ভাল থাকবেন!!
২১ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:৪৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২৫| ২২ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৪৩
কুটুশ মিয়া বলেছেন: (৩) জীবনকে অত সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই।
এরকম একজন সিরিয়াস ব্যক্তিত্বের এ ধরনের জীবন দর্শন জেনে রীতিমত ধাক্কা খেলাম!বুঝলাম না ঠিক কোন অর্থে তিনি এই কথা বলেছেন বা তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন।একটা উত্তর অবশ্য পেলাম আপনার লেখা থেকে যাতে বুঝলাম পার্থিব ধনসম্পদের ক্ষেত্রে হয়ত তিনি এই টাইপের কথা বলেছেন(আমি যা বুঝছি) কিন্তু তারপরও এ ধরনের হালকা বৈরাগ্য কখনই কাম্য নয় আর এ ধরনের বৈরাগ্যের উদ্দেশ্যটাই বা কি?এ ধরনের ব্যক্তিত্বের জীবন দর্শন/কথা তো আরো গভীর হওয়া উচিৎ।এটাতো রোমান্টিসিজমে/নাস্তিকতা/মানবতাবাদ/সুবিধাবাদে ভোগা টিনএজ গান্জাখোর পোলাপানদের কথাবার্তা!
যাইহোক আরো কিছু বলি ব্লগিয় পরিভাষায় আমি একজন আস্তিক,শেষ নবির(সঃ) অনুসারি,মৃত্যুর পর সব শেষ নয় বরং আরেক জীবন আখেরাত আছে বিশ্বাস করি আর সেটা অনন্ত অসীম।ধর্মমতে আমার জীবনের উদ্দেশ্য বুঝছি যে স্বত্তা আমাকে অস্তিত্ব দান করলেন,যিনি আমাকে লালন পালন করছেন,মাঝে মাঝে নিজের মাঝে যে সুন্দর বোধ,সুন্দর উপলব্ধির জন্ম হয় (যে বোধগুলো যিনি আরেকজনকে না দিয়ে আমাকেই দিলেন) যার কারনে মানুষের প্রতি আরো বেশি সহমর্মি হই সেই সত্তাকে জানা,তাঁর পরিচয়কে জানা।একই সাথে আখেরাতে বিশ্বাসী হওয়ার কারনে এটাও জানি আমার মৃত্যুর পর যে জীবন আসছে আমার সামনে সেটার ভালো,মন্দ সমস্ত কিছু নির্ভর করবে আমার এই বর্তমান জীবনের কর্মকান্ডের উপর।আমার এ অল্প সময়ের এ পার্থিব জীবন ভয়ংকররকম মুল্যবান।একই সাথে শেষ(সঃ) এর অনুসারি হওয়ার কারনে এই যে সৃস্টিকর্তার পরিচয় জানা বা মৃত্যু পরবর্তি জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া এসব যদি স্রেফ নিজের জন্যই করি তাহলে নিশ্চিত আমাকে জবাবদিহি করতে হবে ক্যানো শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।কেননা শেষ(সঃ)এর অনুসারি বা উম্মতের বৈশিস্টই হলো তাকে শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করা বা কোন দেশ বা কোন সময় বা কোন জনগোষ্ঠির জন্য পাঠানো হয়নি বরং সে সমগ্র পৃথিবি বরং পৃথিবি ধংসের আগ পর্যন্ত যত মানুষ আসবে তাদের জন্য,তাদের মংগলের জন্য সে তার সাধ্য অনুযায়ি চেস্টা করবে ইফোর্ট দেবে।এখন তার এই ইফোর্টের ফলাফল একমাত্র সমগ্র জগতের পালনকর্তার কাছে।আমার কাজ আমার সাধ্য অনুযায়ি ইফোর্ট দেয়া রেজাল্ট তো সেই মহান স্বত্তার কব্জায়!যাইহোক এত কথা বলার উদ্দেশ্য হলো কারো জীবনের উদ্দেশ্য যদি এরকম হয় তাহলে সে জীবনকে সিরিয়াসলি না নিয়ে কিভাবে পারবে?শুধু আস্তিক কেনো কেউ যদি মানবতাবাদি হয় চাই সে আখেরাতে বিশ্বাসী না হয় তারপরও একজন মানবতাবাদি হিসেবে সমগ্র সৃস্টির প্রতি তার যে দায়বদ্ধতা আছে সেই দায়বদ্ধতাইতো তাকে তার জীবনকে সিরিয়াসলি নেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ।
হাদিসের ভাষ্যমতে বনি আদমের প্রতয়েকেই একেকজন খনি সদৃস,তাকে যদি যথাযথ ভাবে ঘষামাজা করা হয় তাহলে এই খনি থেকেই হিরা,সোনা,মুক্তা বের হবে।আর এই ঘষামাজা অন্য কেউ করে দেবে না,বনি আদমকে নিজেদের ঘষামাজা নিজেদেরই করতে হবে।এখন এত বড় খনি বনি আদমের সামনে পড়ে থাকবে আর সে খনির ঘষামাজার ব্যবস্থা করবে না,জীবনকে সিরিয়াসলি নিবে না চুপচাপ বসে বসে সব নস্ট হতে দেখবে এটা কি সম্ভব?
গাজী সালাহউদ্দিন ভাইয়ের সাথে আমি পুরোপুরি একমত নই যে কারামত দেখেই লোকজন মুসলমান হয়েছে।ইসলাম একটা পূর্নাংগ জীবন বিধান,ইসলামের ইতিহাসও তাই বলে পুরাপুরি মুসলিম হওয়া একটা লম্বা প্রসেস।যাইহোক সেই সাহাবিদের(রাঃ) সময় হতে যেভাবে চলছে সেটা হলো মুসলমানদের চলা।ফেরা,উঠা,বসা,আচার,সংস্কৃতি দেখেই মানুষ মুসলিম হয়েছে।সাহাবারা(রাঃ) নতুন নতুন দেশে,নতুন নতুন সমাজে যেয়ে বলতেন 'আসলিমু তাসলিমু' যার মুটামুটি ভাবার্থ ইসলাম কবুল করো বা স্রস্টার কাছে আত্মসমর্পন করো শান্তি পাবা।তখন প্রশ্ন করা হতো ইসলাম কি?উত্তর দিতেন 'কুনু মিসলানা' অর্থাত আমাদের মতো হয়ে যাও,আমাদেরকে অনুসরন করো তখন তাদেরকে সবাই পর্যবেক্ষন করতো,লক্ষ করত তাদেৃ চলাফেরা,উঠাবসা,লেনদেন এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরই সবাই িসলাম গ্রহন করত;হুটহাট বা ধুপধাপ করে কেউ মুসলিম হতো না।মুলত এভাবেই ইসলাম ছড়াইছে।সাহাবাদের(রাঃ) সময় এসব খুবই স্বাভাবিক ছিলো ধীরে ধীরে তার তীব্রতা কমেছে এখন মুসলমানরা তাদের আচার সংস্কৃতি অনুসরনের ক্ষেত্রে খুব একটা ভালো অবস্থায় নাই তবে সেই প্রক্রিয়া কখনই বন্ধ হয়ে যাই নাই এবং বর্তামানে ধীরে ধীরে আবার উন্নতি হচ্ছে।
আপনি বললেন ১০ম শতকে পারস্যের প্রচারকরা ইসলাম প্রচার শুরু করেছে।এখন আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ১০ম শতক থেকেই এদেশে ইসলামের আগমন শুরু হয়েছে?এর আগে ৬ষ্ঠ থেকে শুরু করে ৯ম শতক পর্যন্ত আপনার মতামত কি?আমি যাস্ট জানতে চাচ্ছি।আপনার কথায় আমি বুঝছি ১০ম শতক থেকেই শুরু।
২৬| ২৩ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:১০
কামাল_কক্সবাজার বলেছেন: অসাধারন ইতিহাস
২৩ শে জুন, ২০১২ ভোর ৬:৫২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২৭| ২৩ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৫৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বড় কষ্ট হয়..
সেই বুদ্ধের অনুসারীরা আজ হিংসার পথে রক্তস্নানে নেমেছে!!!!!!!!!!!
এত সুন্দর কল্পইতিহাস!!! একদম যেন সিনেমার মতো এক পলকে যেন আড়াইহাজার বছরের ইতিহাস দেখে নিলাম- !!!!
২৩ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:১৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: বাংলা তো আলাদা তার ইতিহাস আর মানুষের জন্যেই।
ধন্যবাদ।
২৮| ২৩ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৪৬
রঙ্গভরা বঙ্গদেশী বলেছেন: আসল কপিল মুনি আর গৌতম বুদ্ধের আদর্শের মাঝে চরম একটা ফারাক আছে সেটা হলো কপিল আত্মার অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস করত কিন্তু বুদ্ধ আত্মাকে স্বীকার করেনি। ত্রিবিধ দুঃখ (তথা আধ্যাত্মিক; আধিভৌতিক; এবং আধিদৈবিক) ভোগকরার জন্য আত্মাকে প্রয়োজন ছিলো। তাই তিনি প্রতিটা ইন্দ্রিয়ের একেকজন দেবতা কল্পনা করেছিলেন যেমন চক্ষুর দেবতা আদিত্য।
আরেকটা কথা বলি, বাংলার মরমীয়া সাহিত্যে শুধু বুদ্ধের প্রভাব পড়েছে তা নয়, জৈন ধর্মের প্রতিষ্টাতা মহাবীরের ও অনেক প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। নাথ, সহজিয়া মতবাদ গুলোর ভেতর জৈনদের প্রভাব অনেকটাই দৃশ্যমান।
সদগুরুদাস শ্রী নিম্বার্ক সম্প্রদায়ী অনুদিত সাংখ্য দর্শন বইটির একটি সফট কপি আমার পিসিতে আছে। সেটা আবার একবার দেখতে হবে।
২৪ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:১৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
২৯| ২৩ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৫১
রঙ্গভরা বঙ্গদেশী বলেছেন: প্রথম শব্দটি আসলে হবে।
আরেকটি জিনিষ খেয়াল করেছেন? গৌতম বুদ্ধ বেদবিরোধী ধর্ম প্রচার করার পরও বুদ্ধকে হিন্দুদের নবম অবতার বানিয়ে ছাড়েন শংকরাচার্য। তিনি ঘোষণা করেন, গৌতম বুদ্ধ হিন্দুদের অষ্টম অবতার। আসলে সেটা ছিল বৌদ্ধদেরকে দলে বেড়ানোর একটি অপচেষ্টা, যা বৌদ্ধরা মেনে নেয়নি। বুদ্ধ সাকারোপাসনা, মুর্তিপুজা কিংবা চতুঃবর্ণপ্রথার চরম বিরোধী ছিলেন।
২৪ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:১৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩০| ২৫ শে জুন, ২০১২ সকাল ৮:৩২
সোহরাব সুমন বলেছেন: এক কথায় অসাধারন পোস্ট ইমন ভাই !!!!!
২৫ শে জুন, ২০১২ সকাল ৯:১৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩১| ২৫ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০০
নিভা* বলেছেন: ভাবছিলাম বুদ্ধ হলে কেমন হয় ?
এখন জানলাম নীতিজ্ঞান যে কোন ধর্ম থেকেই অনুসরন করা যায়, এটা সবাই মানলে তো আর কোন সমস্যই থাকেনা ........................ শুধু এই কথাটাই ব্যপক ছড়িয়ে পড়লে সমাজ থেকে অনেক অসঙ্গতি দূর হতে পারতো ভাইয়া ...........
২৫ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫০
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আমিও তা্ই বিশ্বাস করি। বৌদ্ধদেরও অন্যান্য ধর্মের নীতিকথা সম্বন্ধে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য, উপলব্দি করার জন্য রইল শুভেচ্ছা।
৩২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ রাত ১:৪২
দীপান্বিতা বলেছেন: জীবনে দুঃখ আছে, মা। কাজেই আমাদের দয়াশীল হওয়া উচিত
০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৩৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হুমম।
৩৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: জীবনে
দুঃখ আছে, মা। কাজেই আমাদের
দয়াশীল হওয়া উচিত
৩৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮
ching বলেছেন: বুদ্ধবাণী by শীলভদ্র
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৫:২৫
মেংগো পিপোল বলেছেন: সুফিরা হেসে বললেন, আমাদের ধর্মে মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেস্ত।
হক কথা।
View this link