নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিবেক নামক ইন্দ্রিয়ের চোখ (বিবেকিন্দ্রিয়লোচন) দিয়ে চারিদিক দেখার চেষ্টা করছি
আমার এলাকায় বন্ধুরা মিলে মাঝে মাঝে জুরি বোর্ড বসাই। এই জুরি বোর্ডের সম্মানিত সকল সদস্যগণ (বন্ধুরা সব) এক এক জন দেশের নামকরা বিসিএস ক্যাডার এবং একই সাথে সংসদ সদস্য। জুরি বোর্ড চলাকালীন সময়ে কোন নেতিবাচক কথা বলা যায় না। নেতিবাচক কথাও অস্তিবাচক বা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বলতে হয়। আর তা যদি কেউ না করে তবে সবাই মিলে তাকে আমরা ‘ভালোবাসা’ দেই (মানে উত্তমমধ্যম আর কি)। জুরি বোর্ডে আমার একটা আলাদা পদবী আছেঃ বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক (ব্যাঙ্গার্থে)। যদিও মনে পড়ে এসএসসিতে টেনেটুনে বাংলায় পাশ করেছিলাম! যাই হোক বাংলা নিয়ে কথা বলার কারন হচ্ছে হঠাৎ একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেল তাই। ‘অমর’। সেই বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক আজ কনফিউসড। ‘অমর’ মানে কি ‘মরে গিয়েও বেঁচে থাকে যেঃ অমর’-এটা নাকি ‘মারা যায় না যেঃ অমর’-এটা? প্রথমটা যদি ঠিক হয় তবে এর এক কথায় প্রকাশ কি হবেঃ ‘মরে গিয়েও বার বার মরে যেঃ_____??’।
মানুষ অনেক কারনেই মারা যায়। জরা, খরা, ব্যাধি, রোগ, শোক, অসুখ। লজ্জায় আর অপমানেও মানুষ মারা যায়। কোনো একসময় শুনেছিলাম ‘Death is preferable to dishonor’......অপমানের চেয়ে মৃত্যু ভাল। আচ্ছা যদি প্রশ্ন করিঃ ‘এই পৃথিবীতে মরে গিয়েও সবচেয়ে বেশী অপমানিত হয়েছেন কোন জন?’ ‘কোন জন মরে গিয়েও বার বার মরেছেন?’ উত্তর কি কারও অজানা? আমাদের বড় বেশী অবাক হতে হয় যখন দেখি ‘গনতন্ত্রের’ পতাকাবাহী পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের মানব রচিত আদর্শ দেশে দেশে ফেরি করে বেড়ায়; আমাদের আহ্বান করে তাদের আর্দশের দিকে আর তা দিয়ে আমাদের শেখানো হয় ‘মতামতের স্বাধীনতা’ কাকে বলে! অসংখ্য বার এই ‘মতামতের স্বাধীনতার’ নগ্ন রূপ উন্মুক্ত হয়েছে সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের কাছে।
ইরাকের ‘আবু গারিব’ এ পবিত্র কোরআনের অপমান। ভারতে কোরআনকে পদদলিত করা। ডেনমার্কে রসুলুল্লাহ্ (সঃ) এর কার্টুন প্রকাশ। এই ‘ফেইসবুকে’ তাঁকে নিয়ে কার্টুন আঁকার প্রতিযোগীতার আয়োজন। আর ফ্রান্স ছাড়িয়ে গেছে সবাইকে সব দিক দিয়ে। আবার তারা ধৃষ্টতা দেখাল ‘মতামতের স্বাধীনতার’ কল্যাণে। আর কি আশা করা যেতে পারে তাদের কাছ থেকে? আল্লাহ সুবনাহু ওয়াতায়ালা পবিত্র কোরআনে বহু পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যঃ
“তারা মুখের ফুৎকারে আল্লাহ্র আলো নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর আলো পূর্ণরুপে বিকশিত করবেন যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে” (৬১:৮)।
এদের কাজ কর্ম দেখে আজ আমাদের যতটা না অবাক হতে হয়, তার চেয়ে বেশী অবাক হতে হয় ‘মুসলমান’ ভাই বোনদের অবস্থা দেখে। যেই মুসলিমরা এক সময় গোটা পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত ছিল, তাদের অবস্থা আজ এতটাই করুণ হয়েছে যে তাদের প্রিয় নেতাকে যখন অপমান করা হয়, তখন তারা কোলে শিশুর মত গুটিশুটি দিয়ে বসে থাকে। তারা আজ ভুলতে বসেছে কিভাবে এক মুসলমান বোনের শুধু ওড়না টান দেওয়াতে খলিফা মুহতাসিম বিল্লাহ্ চিৎকার দিয়ে বলে উঠেছিলেন.....খোদার কসম! আমি এমন এক সৈন্য বাহিনী পাঠাবো যার সামনের অংশ থাকবে ঐ দেশে আর শেষ অংশ থাকবে আমার প্রাসাদে! আজ রসুলুল্লাহ্ (সঃ) কে নিয়ে এই সব দানবেরা উপহাসের আসর পেতে বসেছে। ভাবতে খারাপই লাগে যে তখনও আমরা নিজেদের মুসমান বলে দাবী করি যখন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ
“তোমাদের কেউ-ই পরিপূর্ণ বিশ্বসী হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের সন্তান, পিতা-মাতা ও অন্যসব মানুষের চেয়ে আমাকে বেশী ভালোবাস”। (বুখারী, মুসলীম)
নিজেকে একবার প্রশ্ন করিঃ আমাদের মা বোন কে কেউ অপমান করলে যতটুকু তাড়না অনুভব করি, সারা পৃথিবীর জন্য যিনি রহমত স্বরুপ এসেছেন, যাঁকে সৃষ্টি করা না হলে কিছুই সৃষ্টি করা হত না, যাঁর উপর আল্লাহ্ নিজে দুরুদ পাঠ করেন; তাঁকে আজ অপমান করা হচ্ছে, আর আমাদের কাছ থেকে কি প্রতিক্রিয়া এসেছে? কিছু করতে না-ই বা পারলাম, একবার তো চিৎকার করে এই জঘন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি! করেছি কি? ঈমানের সর্বনিন্মের পরিচয়ও কি কখনো দিয়েছি?
‘মতামতের স্বাধীনতার’ এই রঙ্গমঞ্চে একের পর এক ‘নাটক’ সাজানো হবে; আর আমরা যদি চুপ করে বসে থাকি, তবে আল্লাহ্ আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেনঃ
“হে ঈমানদার গণ তোমরা যদি আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খৃষ্ঠান) কোন দলের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর আবার কাফিরে পরিণত করবে”। (সূরা আল ইমরান)
মুসলমানের জন্ম চুপ করে বসে বসে ললিপপ খাওয়ার জন্য হয়নি। “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে” (৩:১১০)। অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন যদি আপনি মুসলমান হন। আর যিনি সবকিছু দেখেন, শুনেন; তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি সেই খিলাফত ব্যবস্থার জন্য যা আমাদের এই চরম অসভ্যতা থেকে মুক্তি দিবে। আমীন।
©somewhere in net ltd.