নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিবেকিন্দ্রিয়লোচন

বিবেকিন্দ্রীয়লোচন

বিবেক নামক ইন্দ্রিয়ের চোখ (বিবেকিন্দ্রিয়লোচন) দিয়ে চারিদিক দেখার চেষ্টা করছি

বিবেকিন্দ্রীয়লোচন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চার বর্ণের ‘Like’। পাঁচ বর্ণের ‘Share’। মানুষ হচ্ছে কাবাব। একটু ভাববেন কি?

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬

“আমি তোমাকে ভালোবাসি”………একটা সময় ছিল যখন এই বাক্যগুলি ছিল একান্তই ব্যক্তিগত। একটা সময় এই পৃথিবীর বুকে নিশ্চয়ই ছিল যখন ‘নিজের’ বলতে যদি কিছু বুঝায় তা নিজেরই ছিল। কে যেন একবার বলে ছিল “বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ”। বিজ্ঞানের বদৌলতে আজ আমাদের চারপাশ, আমাদের দেখা-অদেখা, ভাললাগা, অনুভূতি, স্নেহ, মমতা সর্বপরি ভালোবাসা যেন চার বর্ণের ‘Like’ আর পাঁচ বর্ণের ‘Share’ নামক দুটি গর্তে এসে পড়েছে।

ফেবুর এই বাটনগুলো আমাদের উপলব্দিকে, আমাদের সমাজ জীবনকে নীরবে নিভৃতে যে পরিবর্তিত করে দিচ্ছে সেটা মনে হয় একবার হলেও ভেবে দেখা দরকার। রঙ্গিন আলোর রুপালী পর্দার সাথে এর একটা মিল আছে। একবার জনাব আবুল হায়াতের অভিনীত একটা নাটকে কোন এক দৃশ্যে পুরুষকে যথাক্রমে গাধা, বানর আর কুকুরের সাথে তুলনা দৃশ্যের প্রেক্ষাপট চোখে পানি এনে দিয়েছিল। ভাবলাম আমি কাঁদলাম কেন? ওটা তো অভিনয় ছিল! আমি জানি তা নিখাদ অভিনয়; সত্য নয়। তা ছিল একান্তই ব্যক্তিগত কান্না। তারপরও মানুষ জেনে বুঝে কাদেঁ; না বুঝেও কাদেঁ। অতি শোকে মানুষ যেমন পাথর হয়ে যায়; চোখে তখন আর অশ্রু থাকেনা, ঠিক তেমনি শোক পেতে পেতে মানুষ হয়ে উঠে দুঃখ-বিলাসী……..দুঃখটাই তখন মানুষের ভাল লাগতে শুরু করে। এটাকে ভাল কিছু বলছি না। কিন্তু অবস্থাটা মনে হয় আজ আর আগের মত নেই! মানুষ এখন আর বেশী ব্যথিত হয় না কিংবা বেশীক্ষণ ব্যথিত থাকতে চায় না অথবা পারে না। এখন দাদীর জানাজা পড়তে গিয়ে, “praying Janaja of grandmom” লিখে হাস্যবদনে একটা সেলফি না তুললে যেন মান সম্মান আর থাকেনা!

কিছু দিন আগে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য গেলাম গুলশানের এক রেস্টুরেন্টে। আমি খাব খিচুড়ী। অর্ডার দিয়ে বসে আছি। সামনের টেবিলের এক ভদ্রলোক অর্ডার দিয়েছিলেন চমিন। খাবার তার সামনে আসার সাথে সাথে তার হাত চলে গেল চামচের দিকে। ভাবলাম এখন উনি খাওয়া শুরু করবেন। না। অনেকক্ষণ ধরে যত্ন আত্তি করে চামচ সাজালেন। লেটুস পাতাকে গোছালেন। সালাদের আইটেমগুলোকে চমিনের চারপাশে সাজিয়ে গুজিয়ে টমেটো সস খুব যত্ন করে তাতে মেশালেন। তারপর হঠাৎ তার হাত চলে গেল পেন্টের পকেটে। খাট খাট করে কয়েকটা ছবি তুলে ফেবু অন করলেন…………………..আর পারলাম না। আমার গরম খিচুড়ী চলে এল।

ফেবুর কল্যাণে ‘শেয়ার’ নামক এই শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি। এবং এর বহুবিধ মাত্রার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দেখেছি এবং প্রতিনিয়ত দেখছি। কোন একসময় একান্ত ব্যক্তিগত কথা, ভাবনা, চিন্তা, আবেগ ব্যক্তিগত-ই ছিল। ‘শেয়ার’ অধিক মানুষের সাথে ছিল না। দুজনের ভিতরের ‘শেয়ার’ করার বিষয় যদি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির হাতে পড়ে আবেদন কি বাড়ে? একান্ত বিষয়গুলো যখন প্রকাশিত হতে থাকে তার সাথে সাথে কমতে থাকে এর অর্ন্তনিহিত আবেদন। সবকিছু ‘শেয়ারে’ আর ‘লাইকে’ এসে থামার কারনে আজ আমরা অনুভূতিহীন। কোন কিছুতেই আমাদের ভাবোদ্রেগ হয় না। আমরা যেচে অন্যের প্রশংসার চাই। ‘লাইক’ নিয়ে নাকি আজকাল কেনা বেচাও হয়! আমরা একটা ছবি দেখে এই কাদিঁ আবার দুই সেকেন্ড পরেই বন্ধুর সাথে হাসাহাসি করি। কোন কিছুই এই ভারচুয়াল জগতের মত আমাদের ভিতরে স্থায়ী হচ্ছে না। না ভাল লাগা। না মন্দ লাগা। কিছুই না। আর তাই সব যেন ক্লিব-শ্রেণীর পদার্থে পরিণত হয়েছি।

হয় গেইমস। অথবা ফেবু। অথবা চ্যাট। কিংবা ইউটিউব। ব্যাস্ত। লাইক। শেয়ার।…………..রুগী দেখতে গিয়ে মৃতপ্রায় মানুষটির পাশে বসে সেলফি তোলা ঠিক হবে কিনা তাও ভাবার সময় আমাদের হাতে নেই! এর অনেকগুলো দিক আছে। নৈতিক ভিত্তি থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের কল্যাণে (!) আমাদের মানসিক এবং পারিপার্শ্বিকতার যে পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে তার ভারসাম্য কোথায় হবে তা কিন্তু মাননীয় জুকারবার্গ কিংবা তার ফেবু বলে দেন না। মীরপুর ক্যান্টমেন্টের কোন এক জায়গায় একবার একটা লেখা দেখেছিলামঃ শৃঙ্খলাই শৃঙ্খল মুক্তির উপায়। আর মানুষের এই অস্থির সময়ে সমাজিক সামগ্রিক শৃঙ্খলা আনতে পারে শুধুমাত্র নৈতিক জ্ঞান যার প্রধান এবং একমাত্র আধার হল ইসলাম। আর তা না হলে কিছু দিন পর জীবন্ত মানুষ পোড়া নিজের সামনে দেখলেও আমাদের মনে হবে…………এরকম যেন কোন মুভিতে দেখেছিলাম!!?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০০

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
হা। বিবেকিন্দ্রীয়লোচন সুন্দর কথা বলেছে-
অস্থির সময়ে সামাজিক সামগ্রিক শৃঙ্খলা আনতে পারে শুধুমাত্র নৈতিক জ্ঞান

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৯

লালিত্য বাবু বলেছেন: কিছু অব্যক্ত সত্য কথা অকপটে বলে গেলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.