নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা শুনি- যা দেখি - যা ভাবি - তা লিখতে ইচ্ছে করে ।

কিবরিয়া জাহিদ মামুন

শহুরে ফোকলোর

কিবরিয়া জাহিদ মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহুরে ফোকলোর

১৩ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:০৬

এখানে কয়েকটা পৃথিবী বিখ্যাত বার্গার কোম্পানীর প্যাকেটে লেখা থাকে ক্যানাডিয়ান গরুর মাংস বা ক্যানাডিয়ান মুরগীর মাংস দিয়ে বানানো । মানে বিষয়টা এমন যে ক্যানাডিয়ান গরুর মাংস হতেই হবে । বা ক্যানাডিয়ান মুরগীর মাংসই হতে হবে । এটাই নিয়ম । পাশে থেকে কমদামে আমেরিকান বিফ বা চিকেন এনে কোম্পানীরা চালিয়ে দিতে পারে । তুলনামুলক আমেরিকাতে ক্যানাডার চেয়ে অনেক কিছুর দাম কম । অথবা গ্লোবালইজেশনের যুক্তি এনে ইনডিয়া বা চায়না থেকে বিফ, চিকেন কম দামে এনে বেশি লাভে বিক্রী করতে পারে । কিন্তু সেই জায়গাটাকে এদের সরকার বাহাদুর আটকে দিয়েছে । নিজেদের কৃষক কে খামারীকে বাচাতে হবে । তারা এভাবেই নিজেদের প্রমোট করে ।

কিন্তু বোঝার পর থেকে বাংলাদেশে দেখলাম ইনডিয়ান পিয়াজ, ইনডিয়ান চিনির দাম কম । প্রয়াত সাইফুর রহমান, জীবিত মাল মুহিত সাহেব দুজনই শোনাতেন গ্লোবালাইজেশনের গল্প । আমরা তো গ্লোবাইলাইজেশন কে ঠেকাতে পারবোনা । তাহলে ২০১৯ সালে এরা পারছে কি করে । কেন আমাদের বছরের পর বছর চিনি শিল্পর মত দেশীয় শিল্প গুলো লোকশান দিচ্ছে ?

তারমানে কি ভয়ংকর মিথ্যার মাঝে আমাদের বসবাস । ক্লাস সেভেন বা এইটে ক্লাস টিচার বললেন তোর জন্ম তারিখ এক এক উনিশত আশি, পচাশি বা একত্রিশ বার উনিশত আশি । ওটাই আমার অফিসিয়াল জন্মতারিখ হয়ে গেল । একটা নির্জলা মিথ্যা । সেবার মেয়ের জন্ম সনদ আনতে হবে ঢাকা সিটি কর্পরেশন থেকে । সরকারী অফিসে যেতে হবে শুনলেই মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ে । সরকারী অফিস আর সমুদ্র সমান । কোন কিনারা নাই ।

শেষে কিনারা পাওয়া গেল । উদ্ধার করলেন মিলন ভাইয়া । ওনি তখন জয়েন্ড সেক্রেটারী । ফোনে বললেন তুমি চলে যাও ওরা রেডি করে রেখেছে । হ্যা, গুলিস্তানের পাশের সিটি কর্পরেশন অফিসের নিদিষ্ট ফ্লরে যাওয়া মাত্র হাতে ধরিয়ে দিল । বিনা পরিশ্রমে সুচাগ্র মোদিনী হাতে পেয়ে খুশিতে গদ গদ হয়ে অফিসে এলাম । অফিসে দেখি বন্ধু ওয়েট করছে । তাকে বল্লাম জন্ম সনদ আনতে গেছিলাম ।
বন্ধু বল্ল লোক যেহেতু আছে তাহলে দুটো নে ।
বল্লাম মানে ?
বন্ধু বল্ল এখন সিটি কর্পরেশন দুটো । দুই সিটি কর্পরেশনের দুটো নে ? একটা অরিজিনাল বার্থডের আর একটা বার্থ ডে ঠিক থাকবে বয়স কমিয়ে নিবি ।
উওরে বল্লাম দুটো দিয়ে কি করবো ? আর সফটওয়ার তো বুঝে যাবে । বাপ, মার নাম এক ।
বন্ধু উওরে বল্ল দুই সিটি কর্পরেশনের আলাদ সিসটেম কোনটা কোনটার সাথে মিল নাই ।
হা হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম এটা কি করে সম্ভব ।
বন্ধু উওরে বল্ল এটাই বাংলাদেশ । সব সম্ভব এখানে । চাইলে নিতে পারিস । সফটওয়ার ময়ার কিছুনা ।
বল্লাম - মাফ দোয়া দুটাই চাই ।

কিন্তু মনের খচখচ ভাবটা যাচ্ছিল না । সফটওয়ার তো আর চোর না সেটাকে আলাদা কি করে করা যায় । পরে একদিন এক ক্লায়েন্টস এল সে বল্ল সে সরকারী এক দপ্তরে এপ্লাই করেছে । সিরিয়ালে তার নাম ছিল অনেক পরে । কমপিউটারাইজড সিরিয়াল । লটারীর মাধ্যমে । নো ভগি চগি । কিন্তু ক্লায়েন্টস জানালেন ওনি দু লাখ টাকা দিয়েছেন সিরিয়াল ধাই করে উপরে চলে এসছে । বাংলাদেশের সত্য গুলো এমন । বাংলাদেশের সত্য অন্ধকারে হাতরানোর মত । জানালা খোলা এসি বাসের মত ।

তো এমন জানালা খোলা এসি বাসে জানালা বন্ধ করে এসি অন করতে হবে সেটার তাগিদ দিয়েছিলেন ঢাকা ভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক জনাব ফারুক । অধ্যাপক ফারুক সাহেব স্রোতের বিপরীতে হেটেছেন । কি চড়া মুল্য তিনি দেবেন কে জানে । ওনি একজন সাধারন মানুষ । এমন মানুষের ভাল কাজের জন্য সারা দেশবাসী থাকলেও সেটাতে কাজ হয়না । মাঝে মাঝে সেটা কখনো সিনহা বাবুর মত হয়ে যায় । এমন জনগনের পিছনে থাকতে হয় বিরোধী দল । কিন্তু ঠুটো জগন্নাথ বিরোধী দল মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখে সরকারী দল তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বার জন্য আগেই সমস্ত সামনের কাতার দখল করে রেখেছে । ফজর শেষ করে বের হবে । ফজরের ওয়াক্ত চলে এল । মুয়াজ্জিন সাহেব আজান দিলেন । আজান শেষ হওয়া মাত্র বিরোধী দলের নেতা জুলিয়ান এসান্জ রিজভী দলবল সহ মসজিদের ভিতরে ঢুকে দেখেন সামনের কাতার পরিপুর্ন । যেন তিল ঠাই ধারনের জায়গা নেই । এসান্জ রিজভির বুকের ভেতরে ছ্যাথ করে উঠল । গরম লোহা কামার যেমন পানিতে দিলে যেমন ছ্যাত করে আওয়াজ হয় তেমন ।

ঈমাম সাহেব নামাজ পড়ানো শুরু করলেন ।

ঈমাম সাহেব সূরা ফাতিহার পর সূরা হাশরের প্রথম আয়াত তেলওয়াত শুরু করলেন
হুয়াল লাহুল লাজি লা ইলাহা ইল্লাললাহু
আল মালিকুল .............।

বামে সালাম ফিরিয়ে বিরোধী দলের নেতা এসান্জ রিজভী পকেটে হাত দিয়ে মোবাইলটা বের করার প্রয়োজনয়েতা বোধ করলেন নামাজের মাঝে বার বার সাইলেন্ট মোবাইলটা জানান দিচ্ছিল কেউ একজন লাগাতার কল দিচ্ছে । এসান্জ রিজভী নামাজের মাঝে মন খারাপ করছিলেন । মনে মনে ভাবছিলেন এইসব লোক কে চাবকানো উচিত । নামাজটাও পড়তে দেবেনা । পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখলেন বিশটা মিস কল আর ম্যাসেজ । মেসেজে লেখা মসজিদের বাম পাশ দিয়ে ভাগেন । পুলিশ মসজিদের সামনে ডান পাশে ।

এসান্জ রিজভির মনটা খারাপটা আর থাকল না । এসান্জ রিজভির মোনাজাত ছেড়ে উঠে যাওয়া দেখে বাকী নেতারা তাকে ফলো করলেন । ঈমাম সাহেবের মনটা খারাপ হল । ওনি নামাজ শেষে মুসুল্লীদের মুখো মুখো হয়ে ঘুরে বসেছিলেন । এটা সুন্নতের অংশ । মোনাজাত রেখে চলে যাওয়া এরতেদার বরখেলাপ । জনাব এসান্জ রিজভি তাই করলেন । মোনাজাত শেষ হল ।

ওসি সাহেব জুতা খুলে মসজিদে ঢুকলেন । ওসি সাহেব সরকারী দলের নেতা জনাব আল্লামা বদিউজ্জামান কে দেখা মাত্র পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন । জনাব বদি উজ্জামান ওসি কে বললেন বল শামছু
জনাব বদিউজ্জামান এই ওসিকে তুমি করে বলেন । জনাব বদিউজ্জামান যখন সদ্য ইউপি মেম্বার হয়েছেন ইয়াবা ব্যবসায় পুন্জি খাটিয়ে লাভের মুখ দেখছেন সেসময় জনাব বদির মা মারা যায় । যেদিন জনাব বদির মা মারা যায় সেদিন আজকের এই ওসি শামছু কনষ্টেবল পদে ঢোকার জন্য সে ছাত্রলীগের ত্যাগী লীডার হিসেবে একটা আওয়ামীলীগের প্যাডে চিঠি চাইতে গিয়েছিলেন জনাব বদির কাছে । জনাব বদির মায়ের মৃতু দেখে শামছু হিরো সাইকেল ফেলে দিয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে । সাইকেল টাকে দাড়া করে বা হেলান দিয়ে রাখবার সময়ও সে দেয়নি ।

শামছুর কান্না দেখে সবাই হতবিহবল হয়ে যায় । শেষমেষ জনাব বদি নিজের কান্না থামিয়ে শামছুকে সান্তনা দেন এই বলে - শামছু মা চিরদিন ন বাচি থাকি দে । আর ন কান্দিয়ে । অ্যার বুকত আয় । সেই শুরু । পরে সেই শামছু কনষ্টেবল থেকে আজকের ওসি সাহেব । কনষ্টেবল থেকে এএসআই হবার পর পোস্টিং হয়েছিল বরিশালে । বরিশালের ডিআইজিকে ভাগে পনের লাখ টাকা দিয়ে এসআই তারপর তদন্ত ওসি সেখান থেকে ফুল ওসি । বদি সাহেব বলেছেন এসপি তুমি হবে শামছু । দল যদি পাওয়ারে থাকে । তোমার নাম আমি মিনিস্টৃতে পাঠাব ।

ছুটিতে বাড়ী গেলে শামছু বাড়ীতে ব্যাগ রেখে ছুটে যান জনাব বদির মায়ের কবরের পাশে । ওসি হয়েছেন । বাড়ী যাওয়া মাত্র লোকাল থানার এসআই, কনষ্টেবলরা ছুটে আসে পেছনে । তাদের নিয়ে জনাব বদির মায়ের কবরের সামনে গিয়ে দোয়া কুনুত পড়েন । সুরা এখলাছ পড়েন । তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে জনাব বদিকে ফোন দেন । স্যার আপনার বেহেস্তবাসী আম্মাজানের কবরের ইট সুরকি গুলোতে ময়লা পড়েছে আমি নুতন করে ঠিকঠাক করতে বল্লাম । আর পাচবার করে দোয়া কুনুত, সুরা ইখলাছ আর দরুদ শরীফ পড়েছি স্যার । জনাব বদির বুকটা ভরে যায় । এই দূর্মূল্যোর বাজারে এমন ভক্তি শ্রদ্ধা কে করে ? এই হল জনাব বদি আর শামছুর সম্পর্ক ।


ওসি শামছু বললেন অভিযোগ দুটো স্যার । প্রথম অভিযোগের আসামী এসান্জ রিজভী এখানে ছিল গোপন সোর্সের সংবাদে জেনেছি । দলবল সহ মোনাজাত না করে ভেগে গেছে । আমার সাথে ফোর্স কম থাকায় আর টর্চ লাইট না থাকায় পিছু ধাওয়া করতে পারিনি । আর দ্বিতীয় অভিযোগ ঈমাম সাহেবের বিরুদ্ধে । যা মসজিদে বলা যাবেনা । জনাব বদির কানের কাছে মুখ দিয়ে ওসি বললেন পোলা কেস স্যার । জনাব বদি সাথে সাথে লা হাওলা ওলা কুয়াতা পড়লেন । জনাব বদি বললেন আমি তো ঈমাম সাহেব কে নিয়ে গাসতে যেতে চেয়েছিলাম । এই অবস্থা ।
ওসি বললেন তাহলে কি করব স্যার এরেষ্ট করবো না !
জনাব বদি বললেন মিডিয়া জেনেছে ?
ওসি সাহেব - জ্বি স্যার ।
জনাব বদি বললেন তাহলে আর গাস্তে যাওয়ার দরকার নাই । নি যান । ঈমাম সাহেব মেহরাবের পাশে রাখা ছোট বোতলে জমজমের পানি পান শেষে হাতে,দাড়িতে আর পান্জাবীতে আর একবার একটু সুগন্ধি আতর মাখছিলেন ।

মুয়াজ্জিন সাহেব কানটা এগিয়ে রেখেছিলেন । একটু মুচকি হাসি দিলেন । আল্লাহ পাক তার দোয়া মন্জুর করেছেন । এখন আগামী সাতদিন মসজিদের সভাপতি প্রাক্তন সচিব মতলুবুর স্যারের মায়েরে নিয়া সেক্রেটারী কর্নেল বাহাউদ্দিন স্যারের মরা বাপরে নিয়া ক্যাশিয়ার আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী তৈয়বের মরা মায়েরে নিয়া ফজরের ওয়াক্তে দোয়া খায়ের করলেই প্রমোশন মুয়াজ্জিন টু খতিব । সবাই ডাকবে খতিব হুযুর । কতদিনের স্বপ্ন ছিল খতিব হুযুর হওয়ার ।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমার কাছে বেইলী রোডের সুইস এর বার্গার টা ভালো লাগে।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪২

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: কোথা থেকে শুরু করে কোথায় শেষ করলেন!

১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৩৫

কিবরিয়া জাহিদ মামুন বলেছেন: জ্বী ।

৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:০৯

মা.হাসান বলেছেন: আপনার ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানিলুলু লেখাটা আমার প্রিয়তে রাখা আছে। আরেকটা ভালো লেখা। নামগুলো আগেরটার মতো বদলে দিলে আরো চমৎকার হতো।
ওসি শামছুর বড় ভাই গাজিপুরে এসপি হিসাবে জনসেবা করার পর পিপিএম (বার ) পদক পেয়ে এখন নারায়নগঞ্জে শামিম ওসমানের সাথি ভাই ও রোকনদের সাথে গাশ্ ত করছেন। গাজিপুরে এখন শোকের রোল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.