নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“গুরু চন্ডালে’র রোজনামচা”

গুরু চন্ডাল

◘নামঃ বেলাল হোসাইন বিদ্যা ◘জন্ম তারিখঃ ২৩ সেপ্টেম্বর ◘জন্মস্থানঃ খুলনা বিভাগের অন্তর্গত বাগেরহাট জেলার বাগেরহাট সদরের দক্ষিন সরুই এর মিঠাপুকুর পাড় সংলগ্ন নানু বাড়িতে। ◘বর্তমান ঠিকানা/স্থায়ী ঠিকানাঃ বাগেরহাটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পশ্চিম-দক্ষিনে অবস্থিত খানজাহান পল্লী। ◘পরিবারঃ বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহিনী। বড় বোন শিক্ষিকা (ইন্সট্রাকটর), ছোট বোন শিক্ষার্থী।

গুরু চন্ডাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন কৃষ্ণ ফার্নিচার

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০৫

জীবন কৃষ্ণের সাথে পরিচয়!
সে অনেক কাল আগের কথা।

ছোট বেলায় যখন অল্প স্বল্প
বানান করতে শিখেছি,
‘ক’য় ‘া’ ‘কা’
‘ক’য় ‘ি’ ‘কি’
তখন খুব ধীরে ধীরে বাক্যটির উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করেছিলাম,
‘জীবন কৃষ্ণ ফার্নিচার’।

কাঠে কাঠ জোড়া লাগিয়ে,
কাঠের উপর নতুন নতুন নকশা আঁকিয়ে,
টেবিল-চেয়ার-পালং-আলমারি বানিয়ে,
জড় কাঠ থেকে যে জীবন্ত আসবাবের জন্ম দেয়া হয়,
তারই নাম-
‘জীবন কৃষ্ণ ফার্ণিচার’।

সেই পাকিস্তান আমল থেকেই,
খুব বড় মাপের না হলেও, মানসম্মত একটি হোটেল চালাতেন আমার নানুভাই।
মুক্তি বাহিনীর খাবারের যোগান যেত এ হোটেল থেকে।
নানুভাইকে রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে,
পায়ের বুট জুতো দিয়ে,
লাথি মারা হয়েছিল বুকের উপর।
শ্বাস কষ্টে মারা গিয়েছিলেন তিনি।
যা হোক, সে কথা অন্য কোন দিন হবে।

হোটেলটিতে যতটানা নানুভাইকে দেখতে যেতাম,
তারথেকেও বেশি যেতাম, দুধ চা আর ডাল পুড়ির লোভে।
আর সেই প্রতিদিনকার যাওয়া-আসার পথেই জীবন কৃষ্ণ ফার্নিচার।

ফার্নিচারের সেই বুড়ো যুবকটি এখনও বেঁচে আছেন।
কাল সূর্যাস্তের সময় দেখা হলো।
আমার ছেলেবেলায় বুড়োটি যুবকই ছিলেন!
তার জীবনী শক্তি বয়সটাকে চিহ্নিত করতে পারেনি,
তেল চকচকে এক বৃদ্ধ,
আমার চোখে যে কিনা বুড়ো যুবক!

তার নামটিই জীবন কৃষ্ণ কিনা,
আজো জানা হয়নি।
হয়তো কোন একদিন জেনেও যেতে পারি।
সেদিন হয়তো বুড়ো যুবকটি বেঁচে থাকবেন না,
হয়তো থাকবেন।

স্থান পরিবর্তণ হয়েছে জীবন কৃষ্ণের।
জল ভরা পুকুর পাড়ে এখন তাদের অবস্থান।
এখনও প্রতিদিনকার আমার চলার পথে দেখতে হয়,
‘জীবন কৃষ্ণ ফার্নিচার’।
দেখতেই হয়,
বড় বড় কাঁচে ঘিরে দেয়া দোকানটি।
নিজের শরীর অবয়ব দেখতেও অন্তত একবার তাকাতে হয় ওদিকে।

নানুভাই’র সেই হোটেল নেই।
নানুভাই-নানুআপু নেই।
নানুভাইদের সে বাড়ি নেই।

স্থান পরিবর্তণ হয়েছে জীবন কৃষ্ণের।
পরিবর্তণ এসেছে কর্মচারীদের মাঝে,
পরিবর্তণ এসেছে, সেই বুড়ো যুবকটির মাঝেও।

আজকাল তার মাঝে সে জীবনী শক্তি দেখতে পাইনা!
যে জীবনী শক্তি দেখে দেখে প্রতিদিনের কর্মস্পৃহা বেড়েছে আমার।

কাঁচে ঘেরা দোকানের সামনের অংশে,
এক স্বর্গীয়া নারীর প্রতিচ্ছবি।
বয়সকালে যিনি কিনা সুচিত্রা সেন’কেও হার মানাতেন!

জীবন কৃষ্ণের জীবনী শক্তি কেড়ে নিতে,
সেই নারীরই হয়তো ভূমিকা রয়েছে।
হই-হুল্লোড়ের সেই দোকান আজ আর নেই,
গানে গানে কর্মচারীদের কর্মতৎপরতা নেই।

বুড়ো যুবকটির চেহারা মলিন হয়ে গেছে!
চিহ্নিত হয়ে আছে সেখানে বয়সের ছাপ;
বিমর্ষ সে রূপ বিষন্নতায় দিন দিন মৃতের প্রহর গুনছে।

স্বর্গীয়া সেই নারী,
দোকানের সামনের অংশে যার প্রতিচ্ছবি।
বয়সকালে যিনি কিনা সুচিত্রা সেনকেও হার মানাতেন।

সেই নারী,
জীবন কৃষ্ণের জীবনী শক্তি কেড়ে নিতে যার ভূমিকা রয়েছে।
আমার চোখের সেই বুড়ো যুবককে যে কিনা তিলে তিলে নিঃশ্বেস করে চলেছে!
এক ফোঁটা রোদের খোঁজে যে কিনা এখন,
রাস্তার এপার থেকে ওপার হেঁটে বেড়ায়!
যদিও সমস্ত রাস্তা জুড়ে তখন, রোদ চিকচিকে দুপুর।

স্থান পরিবর্তণ হয়েছে আমার ছেলেবেলার জীবন কৃষ্ণের।
জল ভরা পুকুর পাড়ে এখন তার বাস।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.