![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কবি,আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী।
আমার উপর অভিযোগ, আমি
রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ
রাজকারাগারে বন্দী এবং
রাজদ্বারে অভিযুক্ত। এক ধারে
রাজার মুকুট; আর ধারে ধূমকেতুর
শিখা। একজন রাজা, হাতে
রাজদণ্ড; আর জন সত্য, হাতে
ন্যায়দণ্ড। রাজার পক্ষে_ নিযুক্ত
রাজবেতনভোগী রাজকর্মচারী।
আমার পক্ষে_ সকল রাজার রাজা,
সকল বিচারকের বিচারক, আদি
অন্তকাল ধরে সত্য_ জাগ্রত ভগবান।
আমার বিচারককে কেহ নিযুক্ত করে
নাই। এ মহাবিচারকের দৃষ্টিতে
রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধন, সুখী-
দুঃখী সকলে সমান। এর সিংহাসনে
রাজার মুকুট আর ভিখারির একতারা
পাশাপাশি স্থান পায়। এঁর আইন_
ন্যায়, ধর্ম। সে-আইন কোনো
বিজেতা মানব কোনো বিজিত
বিশিষ্ট জাতির জন্য তৈরি করে
নাই। সে-আইন বিশ্ব-মানবের সত্য
উপলব্ধি হতে সৃষ্ট; সে-আইন
সার্বজনীন সত্যের, সে-আইন
সার্বভৌমিক ভগবানের। রাজার
পক্ষে_ পরমাণু পরিমাণ খণ্ড-সৃষ্টি;
আমার পক্ষে_ আদি অন্তহীন অখণ্ড
স্রষ্টা।
রাজার পেছনে_ ক্ষুদ্র, আমার
পেছনে_ রুদ্র। রাজার পক্ষে যিনি,
তাঁর লক্ষ্য স্বার্থ, লাভ অর্থ; আমার
পক্ষে যিনি তাঁর লক্ষ্য সত্য, লাভ
পরমানন্দ। রাজার বাণী বুদ্বুদ, আমার
বাণী সীমাহারা সমুদ্র। আমি কবি,
অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করবার জন্য,
অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তি দানের জন্য
ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে
ভগবান সাড়া দেন। আমার বাণী
সত্যের প্রকাশিকা, ভগবানের
বাণী। সে-বাণী রাজবিচারে
রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু
ন্যায়বিচারে সে-বাণী ন্যায়-
দ্রোহী নয়, সত্য-দ্রোহী নয়। সে-
বাণী রাজদ্বারে দণ্ডিত হতে
পারে, কিন্তু ধর্মের আলোকে,
ন্যায়ের দুয়ারে তাহা নিরপরাধ,
নিষ্কলুষ, অম্লান, অনির্বাণ সত্য-স্বরূপ।
সত্য স্বয়ংপ্রকাশ। তাহাকে কোনো
রক্ত-আঁখি রাজ-দণ্ড নিরোধ করতে
পারে না। আমি সেই চিরন্তন স্বয়ম-
প্রকাশের বাণী, যে বীণায় চির-
সত্যের বাণী ধ্বনিত হয়েছিল। আমি
ভগবানের হাতের বীণা। বীণা
ভাঙলেও ভাঙতে পারে, কিন্তু
ভগবানকে ভাঙবে কে? একথা ধ্রুব
সত্য যে, সত্য আছে, ভগবান আছেন_
চিরকাল ধরে আছে এবং চিরকাল
ধরে থাকবে। যে আজ সত্যের বাণী
রুদ্ধ করছে, সত্যের বাণীকে মূক করতে
চাচ্ছে, সেও তাঁরই এক ক্ষুদ্রাদপি
ক্ষুদ্র সৃষ্টি অণু। তারই ইঙ্গিত-
আভাসে, ইচ্ছায় সে আজ আছে, কাল
হয়ত থাকবে না। নির্বোধ মানুষের
অহঙ্কারের আর অন্ত নাই; সে যাহার
সৃষ্টি, তাহাকেই সে বন্দী করতে
চায়, শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু
অহঙ্কার একদিন চোখের জলে
ডুব্বেই ডুব্বে!
যাক, আমি বলছিলাম, আমি সত্য
প্রকাশের যন্ত্র। সে-যন্ত্রকে অপর
কোনো নির্মম শক্তি অবরুদ্ধ করলেও
করতে পারে, ধ্বংস করলেও করতে
পারে; কিন্তু সে-যন্ত্রে যিনি
বাজান, সে-বীণায় যিনি রুদ্র-
বাণী ফোটান, তাঁকে অবরুদ্ধ করবে
কে? সে বিধাতাকে বিনাশ করবে
কে? আমি মর, কিন্তু আমার বিধাতা
অমর। আমি মরব, রাজাও মরবে,
কেননা আমার মতন অনেক
রাজবিদ্রোহী মরেছে, আবার
এমনি অভিযোগ আনয়নকারী বহু
রাজাও মরেছে, কিন্তু কোনো
কালে কোনো কারণেই সত্যের
প্রকাশ নিরুদ্ধ হয়নি_ তার বাণী
মরেনি। সে আজও তেমনি ক'রে
নিজেকে প্রকাশ করছে এবং
চিরকাল ধরে করবে। আমার এই শাসন-
নিরুদ্ধ বাণী আবার অন্যের কণ্ঠে
ফুটে উঠবে। আমার হাতের বাঁশি
কেড়ে নিলেই সে বাঁশির সুরের
মৃত্যু হবে না; কেননা আমি আর এক
বাঁশি নিয়ে বা তৈরি করে
তাতে সুর ফোটাতে পারি। সুর
আমার বাঁশির নয়, সুর আমার মনে এবং
আমার বাঁশি সৃষ্টির কৌশলে।
অতএব দোষ বাঁশিরও নয় সুরেরও নয়;
দোষ আমার, যে বাজায়; তেমনি
যে বাণী আমার কণ্ঠ দিয়ে নির্গত
হয়েছে, তার জন্য দায়ী আমি নই।
দোষ আমারও নয়, আমার বীণারও নয়;
দোষ তাঁর যিনি আমার কণ্ঠে তাঁর
বীণা বাজান। সুতরাং
রাজবিদ্রোহী আমি নই; প্রধান
রাজবিদ্রোহী সেই বীণা-বাদক
ভগবান। তাঁকে শাস্তি দিবার মতো
রাজ-শক্তি বা দ্বিতীয় ভগবান নাই।
তাঁহাকে বন্দী করবার মতো পুলিশ
বা কারাগার আজও সৃষ্টি হয় নাই।
রাজার নিযুক্ত রাজ-অনুবাদক
রাজভাষায় সে-বাণীর শুধু
ভাষাকে অনুবাদ করেছে, তাঁর
প্রাণকে অনুবাদ করেনি। তাঁর
অনুবাদে রাজ-বিদ্রোহ ফুটে
উঠেছে, কেননা তার উদ্দেশ্য
রাজাকে সন্তুষ্ট করা, আর আমার
লেখায় ফুটে উঠেছে সত্য, তেজ আর
প্রাণ। কেননা আমার উদ্দেশ্য
ভগবানকে পূজা করা; উৎপীড়িত
আর্ত বিশ্ববাসীর পক্ষে আমি সত্য
তরবারি, ভগবানের আঁখিজল। আমি
রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি নাই,
অন্যায়ের বিরুদ্ধ বিদ্রোহ করেছি।
আমি জানি এবং দেখেছি_ আজ এই
আদালতে আসামীর কাঠগড়ায় একা
আমি দাঁড়িয়ে নেই, আমার
পশ্চাতে স্বয়ং সত্যসুন্দর ভগবানও
দাঁড়িয়ে। যুগে যুগে তিনি এমনি
নীরবে তাঁর রাজবন্দী সত্য-
সৈনিকের পশ্চাতে এসে
দণ্ডায়মান হন। রাজনিযুক্ত বিচারক
সত্য বিচারক হতে পারে না। এমনি
বিচার-প্রহসন করে যেদিন
খ্রিস্টকে ত্রুক্রশে বিদ্ধ করা হল,
গান্ধীকে কারাগারে নিক্ষেপ
করা হল, সেদিনও ভগবান এমনি
নীরবে এসে দাঁড়িয়েছিলেন
তাদের পশ্চাতে। বিচারক কিন্তু
তাঁকে দেখতে পায়নি, তার আর
ভগবানের মধ্যে তখন সম্রাট
দাঁড়িয়েছিলেন, সম্রাটের ভয়ে
তার বিবেক, তার দৃষ্টি অন্ধ হয়ে
গেছিল। নইলে সে তার ঐ
বিচারাসনে ভয়ে বিস্ময়ে থরথর
করে কেঁপে উঠত, নীল হয়ে যেত,
তার বিচারাসন সমেত সে পুড়ে ছাই
হয়ে যেত।
বিচারক জানে আমি যা বলেছি,
যা লিখেছি তা ভগবানের চোখে
অন্যায় নয়, ন্যায়ের এজলাসে
মিথ্যা নয়। কিন্তু তবু হয়ত সে শাস্তি
দেবে, কেননা সে সত্যের নয়, সে
রাজার। সে ন্যায়ের নয়, সে
আইনের। সে স্বাধীন নয়, সে
রাজভৃত্য।
তবু জিজ্ঞাসা করছি_ এই যে
বিচারাসন_ এ কার? রাজার, না
ধর্মের? এই যে বিচারক, এর
বিচারের জবাবদিহি করতে হয়
রাজাকে, না তার অন্তরের আসনে
প্রতিষ্ঠিত বিবেককে, সত্যকে,
ভগবানকে? এই বিচারককে কে পুরস্কৃত
করে? রাজা না ভগবান? অর্থ না
আত্মপ্রসাদ?
শুনেছি, আমার বিচারক একজন কবি।
শুনে আনন্দিত হয়েছি। বিদ্রোহী
কবির বিচার বিচারক কবির নিকট।
কিন্তু বেলাশেষের শেষ-খেয়া এ
প্রবীণ বিচারককে হাতছানি
দিচ্ছে, আর রক্ত-ঊষার নব-শঙ্খ আমার
অনাগত বিপুলতাকে অভ্যর্থনা কচ্ছে;
তাকে ডাকছে মরণ, আমায় ডাকছে
জীবন; তাই আমাদের উভয়ের অস্ত-
তারা আর উদয়-তারার মিলন হবে
কি-না বলতে পারি না। না, আবার
বাজে কথা বললাম।
আজ ভারত পরাধীন। তার
অধিবাসীবৃন্দ দাস। এটা নির্জলা
সত্য। কিন্তু দাসকে দাস বললে,
অন্যায়কে অন্যায় বললে এ রাজত্বে
তা হবে রাজদ্রোহ। এ তো ন্যায়ের
শাসন হতে পারে না। এই যে জোর
করে সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে
ন্যায়, দিনকে রাত বলানো_ একি
সত্য সহ্য করতে পারে? এ শাসন কি
চিরস্থায়ী হতে পারে? এতদিন
হয়েছিল, হয়ত সত্য উদাসীন ছিল
বলে। কিন্তু আজ সত্য জেগেছে, তা
চক্ষুষ্মান জাগ্রত-আত্মা মাত্রই
বিশেষরূপে জানতে পেরেছে। এই
অন্যায় শাসন-ক্লিষ্ট বন্দী সত্যের
পীড়িত ক্রন্দন আমার কণ্ঠে ফুটে
উঠেছিল বলেই কি আমি
রাজদ্রোহী? এ ক্রন্দন কি একা
আমার? না_ এ আমার কণ্ঠে ঐ
উৎপীড়িত নিখিল-নীরব ক্রন্দসীর
সম্মিলিত সরব প্রকাশ? আমি জানি,
আমার কণ্ঠের ঐ প্রলয়-হুঙ্কার একা
আমার নয়, সে যে নিখিল আত্মার
যন্ত্রণা-চিৎকার। আমায় ভয়
দেখিয়ে মেরে এ ক্রন্দন থামানো
যাবে না। হঠাৎ কখন আমার কণ্ঠের
এই হারাবাণীই তাদের আরেক
জনের কণ্ঠে গর্জন করে উঠবে। আজ
ভারত পরাধীন না হয়ে যদি
ইংল্যান্ডই ভারতের অধীন হতো
এবং নিরস্ত্রীকৃত উৎপীড়িত
ইংল্যান্ড-অধিবাসীবৃন্দ স্বীয়
জন্মভূমি উদ্ধার করবার জন্য বর্তমান
ভারতবাসীর মতো অধীর হয়ে উঠত,
আর ঠিক সেই সময় আমি হতুম এমনি
বিচারক এবং আমার মতোই
রাজদ্রোহ অপরাধে ধৃত হয়ে এই
বিচারক আমার সম্মুখে বিচারার্থ
নীত হতেন, তাহলে সে সময় এই
বিচারক আসামীর কাঠগড়ায়
দাঁড়িয়ে যা বলতেন, আমিও তাই
এবং তেমনি করেই বলছি।
আমি পরম আত্মবিশ্বাসী। তাই যা
অন্যায় বলে বুঝেছি, তাকে অন্যায়
বলেছি, অত্যাচারকে অত্যাচার
বলেছি, মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছি,
_কাহারো তোষামোদ করি নাই,
প্রশংসার এবং প্রসাদের লোভে
কাহারো পিছনে পোঁ ধরি নাই,
_আমি শুধু রাজার অন্যায়ের
বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করি নাই,
সমাজের, জাতির, দেশের বিরুদ্ধে
আমার সত্য-তরবারির তীব্র আক্রমণ
সমান বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে,
_তার জন্য ঘরে-বাইরের বিদ্রূপ,
অপমান, লাঞ্ছনা, আঘাত আমার উপর
অপর্যাপ্ত পরিমাণে বর্ষিত হয়েছে,
কিন্তু কোনো কিছুর ভয়েই নিজের
সত্যকে, আপন ভগবানকে হীন করি
নাই, লোভের বশবর্তী হয়ে আত্ম-
উপলব্ধিকে বিক্রয় করি নাই,
নিজের সাধনালব্ধ বিপুল
আত্মপ্রসাদকে খাটো করি নাই,
কেননা আমি যে ভগবানের প্রিয়,
সত্যের হাতের বীণা; আমি যে
কবি, আমার আত্মা যে সত্যদ্রষ্টা
ঋষির আত্মা। আমি অজানা অসীম
পূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। এ
আমার অহঙ্কার নয়, আত্ম-উপলব্ধির
আত্ম-বিশ্বাসের চেতনালব্ধ সহজ
সত্যের সরল স্বীকারোক্তি। আমি
অন্ধ-বিশ্বাসে, লাভের লোভে,
রাজভয় বা লোকভয়ে মিথ্যাকে
স্বীকার করতে পারি না।
অত্যাচারকে মেনে নিতে পারি
না। তাহলে যে আমার দেবতা
আমায় ত্যাগ করে যাবে। আমার এই
দেহ-মন্দিরে জাগ্রত দেবতার আসন
বলেই তো লোকে এ-মন্দিরকে পূজা
করে, শ্রদ্ধা দেখায়, কিন্তু দেবতা
বিদায় নিলে এ শূন্য মন্দিরের আর
থাকবে কী? একে শুধাবে কে? তাই
আমার কণ্ঠে কাল-ভৈরবের প্রলয়-তূর্য
বেজে উঠেছিল; আমার হাতের
ধূমকেতুর অগি্ন-নিশান, দুলে
উঠেছিল, সে সর্বনাশা নিশান-
পুচ্ছে মন্দিরের দেবতা নট-নারায়ণ
রূপ ধরে ধ্বংস-নাচন নেচেছিল। এ
ধ্বংস-নৃত্য সব সৃষ্টির পূর্ব-সূচনা। তাই
আমি নির্মম নির্ভীক উন্নত শিরে
সে নিশান ধরেছিলাম, তাঁর তূর্য
বাজিয়েছিলাম। অনাগত
অবশ্যম্ভাবী মহারুদ্রের তীব্র আহ্বান
আমি শুনেছিলাম, তাঁর রক্ত-আঁখির
হুকুম আমি ইঙ্গিতে বুঝেছিলাম।
আমি তখনই বুঝেছিলাম, আমি সত্য
রক্ষার, ন্যায় উদ্ধারের বিশ্ব-প্রলয়
বাহিনীর লাল সৈনিক। বাংলার
শ্যাম শ্মশানের মায়া নিদ্রিত ভূমে
আমায় তিনি পাঠিয়েছিলেন
অগ্রদূত তূর্যবাদক করে। আমি সামান্য
সৈনিক, যতটুকু ক্ষমতা ছিল তা দিয়ে
তাঁর আদেশ পালন করেছি। তিনি
জানতেন ... ... প্রথম আঘাত আমার
বুকেই বাজবে, তাই আমি এবারকার
প্রলয় ঘোষণার সর্বপ্রথম আঘাতপ্রাপ্ত
সৈনিক মনে করে নিজেকে
গৌরবান্বিত মনে করেছি।
কারাগার-মুক্ত হয়ে আমি আবার যখন
আঘাত-চিহ্নিত বুকে, লাঞ্ছনা-রক্ত
ললাটে, তাঁর মরণ-বাঁচা-চরণমূলে
গিয়ে লুটিয়ে পড়ব, তখন তাঁর সকরুণ
প্রসাদ চাওয়ার মৃত্যুঞ্জয় সঞ্জীবনী
আমায় শ্রান্ত, আমায় সঞ্জীবিত
অনুপ্রাণিত করে তুলবে। সেদিন নতুন
আদেশ মাথায় করে নতুন প্রেরণা-
উদ্বুদ্ধ আমি, আবার তাঁর তরবারি-
ছায়াতলে গিয়ে দণ্ডায়মান হব।
সেই আজো-না-আসা রক্ত ঊষার
আশা, আনন্দ, আমার কারাবাসকে_
অমৃতের পুত্র আমি, হাসিগানের
কলোচ্ছ্বাসে স্বর্গ ক'রে তুলবে।
চিরশিশু প্রাণের উচ্ছল আনন্দের
পরশমণি দিয়ে নির্যাতন লোহাকে
মণিকাঞ্চনে পরিণত করবার শক্তি
ভগবান আমায় না চাইতেই
দিয়েছেন। আমার ভয় নাই, দুঃখ
নাই; কেননা ভগবান আমার সাথে
আছেন। আমার অসমাপ্ত কর্তব্য অন্যের
দ্বারা সমাপ্ত হবে। সত্যের প্রকাশ-
পীড়া নিরুদ্ধ হবে না। আমার
হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের
হাতের অগি্ন-মশাল হয়ে অন্যায়-
অত্যাচারকে দগ্ধ করবে। আমার
বহ্নি-এরোপ্লেনের সারথি হবেন
এবার স্বয়ং রুদ্র ভগবান। অতএব,
মাভৈঃ, ভয় নাই।
কারাগারে আমার বন্দিনী মায়ের
আঁধার-শান্ত কোল এ অকৃতী পুত্রকে
ডাক দিয়েছে। পরাধীন অনাথিনী
জননীর বুকে এ হতভাগ্যের স্থান হবে
কি না জানি না, যদি হয়
বিচারককে অশ্রু-সিক্ত ধন্যবাদ দিব।
আবার বলছি, আমার ভয় নাই, দুঃখ
নাই। আমি 'অমৃতস্য পুত্রঃ' আমি
জানি_
ঐ অত্যাচারীর সত্য পীড়ন
আছে তার আছে ক্ষয়;
সেই সত্য আমার ভাগ্য-বিধাতা
যার হাতে শুধু রয়।'
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ২:০৫
ঢাকাবাসী বলেছেন: কথাগুলো ভাল লাগল।