নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য প্রকাশে আপোসহীন

সত্যের চেয়ে অপ্রিয় আর কিছু নেই

বিগ ব্রাদার

সাংবাদিকতা ভালো লাগা লেখা ব্লগে প্রকাশ করবো সকলের জন্য।

বিগ ব্রাদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সদর্পে ফিরছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা, রাজধানীতে সক্রিয় ২০ কিলার গ্রুপ, বিস্তারিত কাহিনী

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০০

রাজধানী এবং এর আশপাশের এলাকায় সদর্পে ফিরে আসছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।

একসময় গা-ঢাকা দেওয়া এই সন্ত্রাসীরা আবারও নিজ নিজ এলাকায় ফিরে কায়েম করছে ত্রাসের রাজত্ব। অনেকেই রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের ইশারার অপেক্ষায়। দেশে ফেরা কিংবা জামিনে মুক্ত এসব অপরাধীর মধ্যে অর্ধশতাধিক রয়েছে পুলিশের শীর্ষ তালিকায়। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীরা দেশে ফিরে যোগাযোগ শুরু করেছে বিভিন্ন কারাগারে বন্দী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেছে তাদের সহযোগীরা। গোয়েন্দা তথ্যানুসারে, ঢাকাসহ সারা দেশে হাজারখানেক সন্ত্রাসী এখন জামিনের অপেক্ষায়। অথচ সন্ত্রাসীদের পুরোনো তালিকা নিয়ে পুলিশের অভিযানে নেই বিশেষ কোনো সফলতা। কারাবন্দী কিংবা পলাতকেরা অনায়াসেই বিদেশে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে এই আন্ডারওয়ার্ল্ড। তাদেরই পাঠানো টাকায় গজিয়ে উঠছে কিশোর অপরাধী চক্র। বিস্ময়করভাবে বেড়ে যাচ্ছে ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার।



রাজধানীতে সক্রিয় ২০ কিলার গ্রুপ

রাজধানী ঢাকায় ২০টি কিলার গ্রুপ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। এর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় পাঁচটি গ্রুপ হচ্ছে মিরপুরের খোরশেদ-শাহাদাত গ্রুপ, পুরান ঢাকার ডাকাত শহীদ, ফার্মগেট-তেজগাঁও এলাকার আশিক-আনোয়ার, রমনা-বাড্ডার জিসান, ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে ক্রসফায়ারে নিহত রোজেন গ্রুপের চুই উজ্জ্বল, দুলাল ও ব্লাক মাসুদ। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের মধ্যে বর্তমানে খোরশেদ-শাহাদাত ও আশিক নগরবাসীর কাছে রীতিমতো মূর্তিমান আতঙ্ক। এরা প্রশাসনকেও হুমকি দিতে দ্বিধা করে না।



শাহাদাত বাহিনী

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের পরিচয় লেখা রয়েছে শাহাদাত হোসেন (৩১)। বাবার নাম নুরুজ্জামান। স্থায়ী ঠিকানা ১/বি, ৭৯/৮০ শাইনপুকুর রোড, শাহআলী ঢাকা। ২০০১-২০০৪ সাল পর্যন্ত মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল শাহাদত। বর্তমানে ভারতে পলাতক শাহাদাতের বন্ধু খোরশেদের বাড়ি কলাবাগান এলাকায়। খোরশেদ ভাসমান সন্ত্রাসী। বিভিন্ন অপরাধে যৌথ নেতৃত্ব দেওয়ায় এই গ্রুপটির নাম হয়ে যায় খোরশেদ-শাহাদাত বাহিনী। জানা যায়, শাহাদাতের বোনের সঙ্গে প্রেম করত মিরপুর গুদারাঘাটের টিপু। টিপু ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের সহযোগী। তখন ’৯৭ সাল। শাহাদাত তখনো সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেনি। টিপুকে বোনের সঙ্গে প্রেমে বাধা দেওয়ায় শাহাদাতকে কুপিয়েছিল টিপু। মিরপুর-১ নম্বর এলাকার ডিশ রেজার ছোট ভাই শাহীন ছিল শাহাদাতের বন্ধু। সে সময় মিরপুরে ডিশ রেজার ছিল একক আধিপত্য। প্রতিশোধ নিতে শাহীন ও ডিশ রেজার সহায়তায় ’৯৮ সালে টিপুকে গুদারাঘাট এলাকায় খুন করে শাহাদাত। এভাবেই অপরাধ জগতে পা রাখে রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত। এর পর থেকে মিরপুর-পল্লবীকে পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আনে শাহাদাত। বর্তমানে তার কিলিং মিশনের রয়েছে দেড় শ সদস্য। তার সহযোগী হিসেবে আছে মুরগি হোসেন, ডিশ শাহীন, আলমগীর ও আওলাদ হোসেন লাক্কু।



শাহাদাতের সহযোগীরা

লাক্কু বর্তমানে মিরপুর ৬, ৭, ১১ নম্বর ও পল্লবী এলাকায় শাহাদাতের হয়ে কাজ করছে। পল্লবী থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুবলীগ নগর উত্তরের সদস্য এই লাক্কু ইপিলিয়ন শাহজাহান হত্যাসহ এক ডজন মামলার আসামি। বিভিন্ন মিশনে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে গালকাটা বাবু, রইস সুমন, ঝুট মন্টুর ছেলে বাপ্পি ও রুবেল। শাহাদাত বাহিনীর এই সদস্যদের সবার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।



পল্লবীর সেকশন ৭ ও ১১ নম্বর এলাকায় আরেকটি গ্রুপ শাহাদাতের সহযোগী হিসেবে সক্রিয়। এর নাম ফারুক আহমেদ হেলাল। লিটন, আসাদ, জহির, আসলামের হত্যাসহ প্রায় ২০টি মামলার আসামি ওই হেলাল পুলিশের খাতায় পলাতক। চুক্তিতে খুন করাই তার কাজ। হেলালের সহযোগী দুলু, নান্ন- বর্তমানে চাঁদাবাজি করে মিল্ক ভিটা, দুয়ারীপাড়া এলাকায়। তার অপর সহযোগী নাজুর আশ্রয়ে বিভিন্ন খুনখারাবিতে জড়িত টুটুল, চুন্ন-, বুক্কো সুমন। বর্তমানে দুলু, নান্ন-, স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লার চাচা আমির হোসেন মোল্লা ও মনির হোসেন মোল্লার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাদের চেনেন না বলে জানান। তবে অন্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এরা ৯২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী।



মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় চাঁদাবাজিতে সক্রিয় আশিক, আমান গ্রুপ। কালাপানি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছে পল্লবীর আরেক সন্ত্রাসী বর্তমানে কারাগারে আটক মামুনের ভাই জামিল। সেকশন ১২, কালাপানি, ধ-ব্লক এলাকায় জামিলের ভয়ে তটস্থ স্থানীয়রা।

মিরপুর-১ নম্বর, গুদারাঘাট এলাকায় সন্ত্রাসী আতঙ্কের নাম শাহাদাতের সহযোগী ডিশ শাহীন, বল্টু রাসেল, টিটু। এ ছাড়া ১ নম্বর এলাকায় সক্রিয় রয়েছে পিয়াল গ্রুপ। মিরপুর কলেজের সাবেক এজিএস পিয়াল দীর্ঘদিন পলাতক থাকলেও বর্তমানে এলাকায় ফিরে এসেছে। একসময়ের মিরপুরের গডফাদার আগা খান মিন্টুর ভাগ্নে এই পিয়ালের সহযোগী হচ্ছে গাজী সুমন, লিটু।



আশিক বাহিনী

ঢাকা মহানগরের আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আশিক। শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের মতো সেও ভারতে পলাতক। র‌্যাবের খাতায় তার ঠিকানা হচ্ছে নরোত্তম সাহা ওরফে আশিক ওরফে রবিন (২৮), তার বাবার নাম নিত্যানন্দ সাহা। স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম: গৌরগলা, ডাকঘর: কদমতলা, থানা ও জেলা: পিরোজপুর। অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে লেখা রয়েছে তেজগাঁও।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল আশিক। পশ্চিম রাজাবাজারের তালেব ও তছলিম চৌধুরীর হাত ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করে আশিক। তার গুরু তালেব ’৯৮ সালে প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন। যুবলীগ মহানগর সহসভাপতি তছলিম চৌধুরী, বিএনপির নেতা নবী সোলায়মান, এল রহমান, পিচ্চি ফারুক; থানা ছাত্রলীগ নেতা সায়েম, কামরুল, মিজান, কাইল্যা লিটন, কালা মোস্তফা, সুন্দর বাদশাহ, লাম্বু সেলিম; তেজতুরী বাজারের বাবলু; রাজাবাজারের ভুট্টা, হিরু ও পাকিস্তানি সোহেলের সঙ্গে আশিকের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। গত বছরের ২৬ জুন কারওয়ান বাজারে ট্রিপল মার্ডারের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতা আশিককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ট্রিপল মার্ডার শুধু নয়, আশিক বাহিনী কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজতুরী বাজার, তেজগাঁও, পান্থপথ ও রাজাবাজার এলাকায় এক ডজন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের অন্যতম আশিকের বাহিনীতে দেড় শতাধিক সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। তারা খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দখল, টেন্ডারবাজিসহ সব কাজেই সিদ্ধহস্ত। বিশাল অঙ্কের চাঁদা আদায়, জমি, দোকান, আড়ত কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করতে এই বাহিনীর সদস্যরা খুন করে আতঙ্ক ছড়ায়। ’৯৮ সালে আশিকের বস তালেব খুন হওয়ার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর ও তেজগাঁও থানা এলাকায় দুই নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে তোলে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। প্রথমে সে ফার্মগেট এলাকায় হকার, টং দোকান, টেম্পোস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করে। একসময় পরিচয় হয় পিচ্চি হান্নানের শ্যালক বাবুর সঙ্গে। কারওয়ান বাজারে ওই সময়কার চাঁদাবাজির সম্রাট পিচ্চি হান্নানের কাছে আশিককে নিয়ে আসে বাবু। পিচ্চি হান্নান তাকে দলে ভিড়িয়ে নেয়। পিচ্চি হান্নানের শ্যালক বাবু ও হান্নানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড সাহেব আলীর সঙ্গে মিলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করে। ২০০৪ সালে র‌্যাবের অভিযানে পিচ্চি হান্নান ও লিটন মারা যায়। হান্নানের মৃত্যুর পর বাবু ও সাহেব আলীর সঙ্গে জোট বেঁধে কারওয়ান বাজারে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে আশিক। পরে তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেস এলাকায় ক্রসফয়ারে সাহেব আলীর মৃত্যু হলে কারওয়ান বাজার এলাকা আশিক নিজের একক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর আশিক ও পিচ্চি হান্নানের শ্যালক বাবু ভারতে আÍগোপন করে। সূত্র জানায়, আশিক বাহিনীর অস্ত্রের জোগানদাতা বদর, পুরান ঢাকায় নিহত এক বিতর্কিত শিল্পপতির ছেলে লাবু ও দুবাই বাবু। চাঁদাবাজির বখরা আদায়ে আশিকের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করে তার দুলাভাই-ফার্মগেটের একটি রেস্টুরেন্টের মালিক শেখর বাবু। এই শেখরই চাঁদাবাজির টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাঠায়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আশিকের নামে পুরো কারওয়ান বাজারে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলে। কারওয়ান বাজারে আসা ট্রাকগুলোর কাছ থেকেও চাঁদা তোলে এই বাহিনী। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ট্রাক থেকে এই গ্র“পের নামে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।



ফার্মগেটের খবরদারি

ফার্মগেট, রাজাবাজার এলাকায় চাঁদাবাজিতে সক্রিয় রয়েছে আরও একটি গ্রুপ। এই গ্রুপে রয়েছে জেলে আটক সুইডেন আসলামের সহযোগী মামা টুটুল, নজরুল, চাঁদপুইর‌্যা বাবু। আসলামের স্ত্রী আয়শা রয়েছে এদের নেতৃত্বে।

এ ছাড়া আনোয়ার কমিশনারের সহযোগী গান্ডু শাহীন, লিটু, শাহ আলম, বাদশাহ, মকবুল, জসিম, ঝুট আলম, টোকাই মাসুম ফার্মগেট এলাকায় চাঁদাবাজি ও খুনখারাবি করছে। পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় স্বপন, কালাম, ভুয়া সাংবাদিক সেলিম, ঢালী বাড়ির মাসুদ এবং পান্থপথ এলাকায় তরকারি রফিক, ফারুক, ইলেকট্রিক মাসুদ চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত।



পুরান ঢাকার ডাকাত শহীদ

পুরান ঢাকার আতঙ্ক ডাকাত শহীদ। এই বাহিনীর সদস্য শ-খানেক। পুরান ঢাকা, রায়সাহেব বাজার, গুলিস্তান, সূত্রাপুর এলাকায় অপরাধ চলছে এই বাহিনীর নামে। ডাকাত শহীদের আন্ডারওয়ার্ল্ড গুরু শহীদ কমিশনার। গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুর কারাগারে থেকে মুক্তি পেয়ে এখন আত্মগোপনে রয়েছে শহীদ কমিশনার। ক্রাইম কিং সাঈদুর রহমান ওরফে শহীদ কমিশনার ২০ বছর ধরে পুরান ঢাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন। পুরান ঢাকার অ্যাডভোকেট হাবিব মণ্ডল, মাইকেল, সেন্টু, আনু, শাহাদাত কমিশনার, বোন্দা, আলমগীর; ঢালকানগরের সেলিম, আলী হাসান, ওয়াসিম, স্বপন; জুরাইনের টুলু, জাকির, শাহাদাত কমিশনারের ভাই সুমন সিকদার; গোঁসাইবাড়ির বাদল; নেসারিয়া মাদ্রাসার আসলাম, সালাম এবং স্থানীয় যুবদল নেতা মিজানুর রহমান, সুজিত দাস টুনুসহ প্রায় দুই ডজন লোককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে শহীদ কমিশনারের বিরুদ্ধে। শহীদ কমিশনার জেলে থাকাকালীন শাহাদাত কমিশনার, সুজিত দাস টুনুসহ বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল শহীদের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। দুই যুগ ধরে পুরান ঢাকার বাড়ি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। গেন্ডারিয়া এলাকায় সরকারি ও কবরস্থানের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শহীদনগর’। শহীদ কমিশনারের অবর্তমানে তার স্ত্রী বুলবুলি এই বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে। এই বাহিনীর সদস্য হচ্ছে আইজি গেটের কচি, ডিআইটি প্লটের জাহাঙ্গীর, হাফিজুর, রবু, কালা, বশির, সোহেল, ছাপু, টিটু, ইমরান, মিজান, রিংকু ইয়ার মোহাম্মদ, শ্যালক আরিফ, রাজু, জুয়েল, আলম টিটো ও মুরগি বাবু। তাদের কাছে রয়েছে বিশাল অস্ত্রভান্ডার। আশির দশকে উত্থান ঘটে শহীদ কমিশনারের। তখন তিনি জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এ সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিহত শাহাদাত কমিশনার। শহীদ কমিশনার আট বছর কারাগারে থাকাকালে শুরু হয় ডাকাত শহীদের একক আধিপত্য। গত বছর কলকাতায় ডাকাত শহীদ গ্রেপ্তার হলে তাকে মুক্ত করার জন্য শহীদ কমিশনারের স্ত্রী বুলবুলি ২০ লাখ টাকা পাঠিয়েছে বলে সম্প্রতি জানা গেছে।



ঢাকা জুড়েই অপরাধীরা :

রমনা-বাড্ডা জিসান গ্রুপের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ডানো বাবু সম্প্রতি গ্রেপ্তার হলেও পেট কাটা তাজু, গালকাটা জামাল সক্রিয় রয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখান, উত্তরখান এবং তুরাগ থানা এলাকার আশকোনা, হাজী ক্যাম্প, মেডিকেল রোড, রসুলবাগ এলাকায় সক্রিয় মোশারফ, চঞ্চল, নোয়াখাইল্যা মনির, কানা ফারুক গ্রুপ। এদের নাম ডিবি-র‌্যাবের কাছে থাকলেও কখনো ধরা পড়েনি। এদিকে মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, ফকিরাপুল এলাকায় সক্রিয় মুরাদ, আঙুল কাটা দিদার, দেলোয়ার খালেক গ্রুপ।

কাফরুলে শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের বাহিনী তিনটি ভাগে বিভক্ত। কালা জাহাঙ্গীরের কোনো খোঁজ না থাকলেও তার নামে চাঁদাবাজি করতে করতে আলাদা বাহিনী গড়ে তোলে শাহীন শিকদার ও মনির গ্রুপ। এদিকে কিলার আব্বাস জেলে আটক থাকলেও তার নামে অপরাধ করছে রনি গ্রুপ। একই কায়দায় খুনখারাবি করছে তাজ বাহিনী। তাজ কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আটক। তার স্ত্রী জ্যোস্না বর্তমানে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। গত ২১ জানুয়ারি তাজ বাহিনীর ১২ কিলার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪। তাজ বাহিনীর কিলার গ্রুপের অন্যতম সদস্য হচ্ছে পিচ্চি ফারুক, সেলিম, রফিক, রাজু, জুয়েল, ইয়াসিন। গাবতলীর পর্বতা সিনেমা হল থেকে মিরপুর ১ নম্বর এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে জনি-রিয়াদ বাহিনী। দক্ষিণ বিসিলের আলিফ, স্টাফ কোয়ার্টারের নাজির, সফিক, ইব্রাহিম, আনসার ক্যাম্পে ভাঙারি বাবুল ও আবুল এই বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী পরিচয়ে এ গ্রুপের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ বাহিনীর সদস্যরা কারাবন্দী বিকাশ, পিচ্চি হেলালের সহযোগী হিসেবে অপরাধী কার্যকলাপ চালায়।



দুই শতাধিক অপরাধপ্রবণ এলাকা :

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় দুই শতাধিক অপরাধপ্রবণ এলাকা রয়েছে। ডিএমপির ৪১ থানার এই অপরাধ কেন্দ্রগুলোতে সর্বাধিক অপরাধ হয়। গোয়েন্দা রিপোর্টে মিরপুর, কাফরুল, পল্লবী, শাহআলী, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও, সবুজবাগ, যাত্রাবাড়ী, কোতোয়ালি, লালবাগ, ডেমরা থানা এলাকা অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে চিহ্নিত। মিরপুর এলাকায় মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর সেকশন পর্যন্ত চাঁদাবাজি ও খুনখারাবি বেশি ঘটছে। মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, কাঁটাসুর, বিহারিপট্টি এলাকায় অপরাধের মাত্রা এখন বেড়ে যাচ্ছে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে ভাসানটেক, মানিকদী, কচুক্ষেত সন্ত্রাসীদের আখড়া। পল্লবী থানার বাউনিয়া বাঁধ, বিহারি কলোনি এলাকায়ও অপরাধ কার্যক্রম বাড়ছে। সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানা এলাকার মান্ডা, ঝিল প্রজেক্ট এলাকা, নন্দীপাড়া, মানিকনগর, ত্রিমোহনী, নাসিরাবাদ এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ক্রমশ বাড়ছে। এ ছাড়া মতিঝিল থানা এলাকায় এজিবি কলোনি, শাহজাহানপুর, ফকিরাপুল, রেলওয়ে কলোনি, গোপীবাগ, টিটিপাড়া, রামপুরা থানার বনশ্রী, বাড্ডা থানা এলাকার নূরের চালা, বেরাইদ, ছোলমাইদ, শাহজাদপুর, খিলক্ষেত থানার বড়-ড়া, নামাপাড়া, কুড়িল, নিকুঞ্জ এলাকা, উত্তরা থানার উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানা এলাকার মৈনারটেক, আটিপাড়া এলাকায় অপরাধ বেশি সংঘটিত হচ্ছে। এ ছাড়া শহীদ কমিশনার ও ডাকাত শহীদের এলাকা হিসেবে পরিচিত ডেমরা, সানারপাড়, বড়বাড়ি, ভবনবাগিচা, মুরাদপুর, সারুলিয়া, টেংবা, কোনাপাড়া, শহীদনগর, শ্যামপুর ওয়াসা পুকুরপাড়, মিরহাজিরবাগ, ফরিদাবাদ, কুতুবপুর এলাকা ক্রাইম জোন হিসেবে চিহ্নিত।



জানুয়ারি মাসের অপরাধ পরিসংখ্যান

ঢাকা মহানগর পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি মাসে ঢাকা মহানগরে মোট মামলা হয়েছে ১৮৪৪টি। এর মধ্যে খুন ১৯টি, ডাকাতি ৩টি, চোরাচালান ১০টি, অস্ত্র আইন ৪১টি, অপহরণ ২৬টি, দস্যুতা ১৫টি ও মাদকদ্রব্যে ৭৫৪টি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ হাজার ১৫৪ জনকে। পুলিশি অভিযানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১৯টি। ডিসেম্বর মাসের চেয়ে ৩২টি মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে জানুয়ারি মাসে। তবে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ দিনেই ১২টি খুনের মামলা হয়েছে।



ফিরে আসা ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা :

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদেশে পলাতক এবং দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী সন্ত্রাসীরা জামিনে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে এসেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও দেশে ফিরে আসে অনেক সন্ত্রাসী। আরও অনেকেই রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে যেসব শীর্ষ অপরাধী দেশে ফিরে এসেছে, তাদের মধ্যে হাইপ্রোফাইলের হচ্ছে শ্যামপুরের রুবেল; পোস্তগোলার মহিত, জহিরুল হক; আইজি গেটের পিচ্চি জুয়েল, আসাদ; হাজারীবাগের লেদার লিটন, মিন্টু, মুকু; তাঁতীবাজারের ভুট্টো, আরমান; লালবাগের টুন্ডা কাশেম, টুপি মিন্টু, ফ্রিডম মফিজ, কালা সেন্টু, শাহজাদা, রিন্টু, পাগলা জাহিদ; মিরপুরের সিজার, শহরআলীসহ অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা। এদের মধ্যে মিরপুর-১০ নম্বরের শহর আলী সম্প্রতি র‌্যাবের ক্রসফয়ারে নিহত হয়েছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা এসব সন্ত্রাসী এলাকায় ফিরেই সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে ব্যস্ত। এদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী সন্ত্রাসীদের। এদের মুক্ত করতে সহযোগীরা ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি করছে। অনেকেই ইতিমধ্যে জামিন পেয়েছে। এর মধ্যে মিরপুরের ডিশ শাহীন, কাইয়ুম, ঘটিবাবু, পল্টন, জসিম, রুবেল, রেজু জামিনে বের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়। গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী শহীদ কমিশনার। এর আগে জামিনে মুক্ত হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের সহযোগী কম্পিউটার সোহেল। তার বিরুদ্ধে ৩৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। সম্প্রতি কাশিমপুর কারাগার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ জামিনে বের হলেও ৫৪ ধারায় পুলিশ তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে। গত এক মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগার থেকে শতাধিক সন্ত্রাসী জামিন পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অন্য মামলা না থাকায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো যায়নি। কিছু ওয়ার্ড কমিশনার ও দুটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কিছু নেতা সন্ত্রাসীদের বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গোয়েন্দারা জানান। কাশিমপুর কারাগারে আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান হাইকোর্টে আপিল করে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে। একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। সন্ত্রাসী তনাই মোল্লা অ্যাডভোকেট মণ্ডল হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। হাইকোর্টের আদেশে এ মামলা থেকে খালাস পেয়েছে তনাই পোল্লা। কমিশনার নিউটন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কিলার আব্বাস খালাস পাওয়ার জন্য হাইকোর্টে আপিল করেছেন। তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই বলে জানা যায়। তিনটি মামলায় যাবজ্জীবন ও দুটি মামলায় ১৭ বছর করে সাজা হয় সুইডেন আসলামের। তিনি জামিনের জন্য হাইকোর্টে আপিল করেছেন। তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মানিক জানান, হাইকোর্ট থেকে আসলাম জামিন পেয়ে যাবে বলে আশা করছি। স্ত্রী আয়েশা আসলাম স্বামীকে বের করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল যেকোনো সময় জামিনে বের হয়ে যেতে পারে। হেলালের নামে তার ছোট ভাই দিপু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে।



গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকাসহ সারা দেশে ৯৮৮ সন্ত্রাসী জামিনের অপেক্ষায়। কিছু সন্ত্রাসী জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে অপরাধ কার্যক্রম শুরু করেছে। তাই কারাগার থেকে বের হওয়া সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দারা। যেসব সন্ত্রাসী জামিনে বের হওয়ার চেষ্টা করছে তাদের একটি তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।



পুরোনো তালিকা নিয়ে ব্যর্থ প্রশাসন :

রাজধানীর সন্ত্রাসীদের সর্বশেষ তালিকাটি ডিএমপি তৈরি করেছিল ২০০৩ সালে। ওই তালিকার সন্ত্রাসীদের কেউ ক্রসফায়ারে আবার অনেকে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছে। বাকিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে, কেউ রয়েছে পলাতক। পুলিশের কাছে সন্ত্রাসীদের পুরোনো তালিকা থাকায় প্রশাসনের অভিযানে নেই তেমন কোনো সফলতা। থানায় এখনো ঝুলছে অনেক আগেই নিহত হওয়া সন্ত্রাসীদের নাম ও ছবি। ওই তালিকার বাইরে গজিয়েছে অনেক সন্ত্রাসী। তবে গত ডিসেম্বরে ডিএমপি থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় উঠতি সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির একটি আদেশ পাঠানো হয়। ওই আদেশের পর থানা কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এই তালিকায় বিভিন্ন এলাকার কিশোর অপরাধীদের নামও উঠে আসবে।



সংঘবদ্ধ কিশোর অপরাধী চক্র:

র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজধানীতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র টাকার বিনিময়ে কিশোরদের অপরাধ জগতে ব্যবহার করছে। তাদের টার্গেট স্কুলের ছাত্র ও নিম্ন আয়ের কিশোররা। অনেককে মাসিক বেতনও দিচ্ছে গডফাদাররা। জামিনে বেরিয়ে আসা সন্ত্রাসীরা এসব কিশোরকে দলে টানছে। অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাবন্দী থেকে কিশোর অপরাধের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। কিশোর অপরাধীদের গডফাদারদের তালিকায় আছে শাহীন শিকদার, ওবায়দুল, হিরা, রিপন। একই সারির সন্ত্রাসী বেয়াই পারভেজ র‌্যাবের গুলিতে নিহত হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি। শীর্ষ সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজ কারাগারে বসেই কিশোর অপরাধীদের নিয়মিত দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে। র‌্যাব-৪-এর উপপরিচালক মেজর মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানান, অনেক কিশোর অল্প সময়ে ধনী হওয়ার স্বপ্নে সন্ত্রাসী পথে পা বাড়াচ্ছে। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে এসব কিশোর পরিবারের অজান্তেই ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে।



বিদেশে বসে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ:

২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চারদলীয় জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে তাদের ধরিয়ে দিতে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। এদের ১২ জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আজও হদিস করতে পারেনি, যে আটজনকে তারা ধরেছিলেন তাদের মধ্যে দুজন জামিন পেয়ে উধাও। গ্রেপ্তারকৃত আটজন হলো: খোরশেদ আলম রাসু, নাঈম আহমেদ টিটন, ফ্রিডম সোহেল, কিলার আব্বাস, লিয়াকত হোসেন, আরমান, কামাল পাশা, মশিউর রহমান কচি। এর মধ্যে লিয়াকত ও কচি জামিন পেয়ে উধাও। গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা হলো আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, জাফর আহমেদ মানিক, কামরুল ইসলাম হানানা, ত্রিমতি সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, জব্বার মুন্না, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, ইমাম হোসেন, হারিস আহমেদ ওরফে হারেস, খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয়, আগা শামীম ও কালা জাহাঙ্গীর। কালা জাহাঙ্গীরের পরিবারের দাবি, সে মারা গেছে। যদিও তার নামে এখনো চাঁদাবাজি চলছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, টোকাই সাগর আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থান করছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম প্রকাশের পরই সে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশে চলে যায়। মোল্লা মাসুদ ২০০৩ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে বিয়ে করেছে। সেখানে এখনো তার ব্যবসা রয়েছে। সুব্রত বাইনকে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নেপাল থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রকাশ কলকাতার প্রায় স্থায়ী বাসিন্দা। বাংলাদেশে থেকে যাওয়া সন্ত্রাসীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে সে। এ ছাড়া ইমাম হোসেন এবং হারিসও ভারতে। হারিসের এক ভাই জোসেফ গ্রেপ্তার হয়েছে, এবং অপর ভাই টিপু নিহত হওয়ায় পর হারিস দেশ ছেড়ে পালায়। তবে মোহাম্মদপুরের কিছু এলাকা এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। জয় ভারতে থাকলেও মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠক করে আবার চলে যায়। আগা শামীম ও জব্বার মুন্নার অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।

সূত্র জানায়, তালিকার সন্ত্রাসীদের মধ্যে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, হারিস, জয় ও প্রকাশ একাধিকবার কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। লিয়াকত, আরমানও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় এদের প্রত্যেকেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়।



ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি হতে পারে এমন গুঞ্জনে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাওয়ার আগে বিষয়টি জোরেশোরে আলোচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী যথারীতি ভারতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার নিয়ে ফিরে এলেন কিন্তু বন্দিবিনিময় চুক্তির কী হলো জানা যায়নি। তবে এই আওয়াজে সন্ত্রাসীরা ঘন ঘন স্থান বদলাচ্ছে। বিপদ আঁচ করতে পেরে ভারত ছেড়ে নেপাল গিয়ে আটকা পড়ল সুব্রত বাইন। ভারত থেকে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশেও আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী ঢুকে পড়তে চেষ্টা করছে বলে তথ্য রয়েছে।



গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতে পলাতক বাংলাদেশের সাড়ে তিন শ সন্ত্রাসীর নাম, ঠিকানা ও ছবি ভারতীয় পুলিশকে দিয়েছে সিআইডি। সেই সূত্র ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। এই ১৬ সন্ত্রাসীর মধ্যে গত দুই বছরে সাত সন্ত্রাসীকে ফেরত পাঠালেও নয়জনকে ফেরত পাঠানো হয়নি। এর বাইরেও দুই জঙ্গিসহ বেশ কিছু চরমপন্থীও গ্রেপ্তার হয়ে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পর কলকাতা সিআইডি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক চুরির দায়ে অভিযুক্ত জীবন সিংসহ কয়েকজন উলফা নেতা বাংলাদেশে পলাতক বলে তথ্য দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানায়। ফলে পলাতক সন্ত্রাসীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।

সিআইডি সূত্র জানায়, মোল্লা মাসুদ, হারিস, ডাকাত শহীদ, ইমন, ইসহাক, তাজ, ইব্রাহিম, লম্বু সেলিম, রফিক, বাবুল, কালা মামুনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। এ ছাড়া জঙ্গি মোরসালিন ও মুস্তাকিনকেও গ্রেপ্তার করে তারা। পুলিশ জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, ইসহাক, তাজ, লম্বু সেলিম, রফিক, বাবুল ও কালা মামুনকে কলকাতা সিআইডি বাংলাদেশ সিআইডির কাছে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে হস্তান্তর করে। সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শাহাদাত এবং ডাকাত শহীদকে ফেরত আনা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকায় শহীদ এবং শাহাদাত বাহিনীর সন্ত্রাসীরাই এখন আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত করে রেখেছে। তাদের নামেই ঘটছে বড় বড় চাঁদাবাজির ঘটনা।

গোয়েন্দারা জানান, ভারতে অবস্থানকারী পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও নেপালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি করেছে বলে তথ্য রয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ছাড়াও শাহাদাত, ডাকাত শহিদ ও আশিক বাহিনীর উঠতি বয়সী কয়েকজন সদস্য নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করছে।



বাড়ছে ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার

সম্প্রতি খুনের ঘটনায় কিলাররা ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে বেশি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা প্রতিনিয়ত যত অস্ত্র উদ্ধার করছে তার অধিকাংশই স্মল আর্মস। জানা যায়, পাঁচ শ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই-তিন লাখ টাকা মূল্যের স্মল আর্মস রয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। পাঁচ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইপগান। হাজার-বারো শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ওয়ান শুটারগান। ওয়ান টাইম হাউস করার মতো রিভলবার ও পিস্তল পাওয়া যাচ্ছে কম মূল্যে। আর মোটামুটি নির্ভরযোগ্য ছোট অস্ত্রের দাম ২০-২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই-তিন লাখ টাকা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত এক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে এমন কিছু অস্ত্র দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান খোদ উদ্ধারকারীরাই। এক সন্ত্রাসীর কাছে সর্বাধুনিক ও সবচেয়ে ছোট স্মিথ ওয়েলসন রিভলবার পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কারণ, ওই অস্ত্র ব্যবহারকারীদের তালিকায় রয়েছে আমেরিকার অত্যাধুনিক গোয়েন্দারা।



আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রচলিত নাম ও তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, জার্মানির ওয়ালআর পিপিকে, ইতালির পেট্টো বেরেটা, আমেরিকার তাউরাস, আর্মেনিয়ার সিজি ৮৩ ও স্মিথ ওয়েলসন ব্র্যান্ডের অসংখ্য রিভলবার ও পিস্তল রয়েছে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সন্ত্রাসীদের হাতে। এসব অস্ত্রের মডেল পয়েন্ট টুটু বোর থেকে শুরু করে নাইন এমএম। অরিজিনাল রিভলবার বা পিস্তলের মূল্য এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার থেকেও অসংখ্য রিভলবার ও পিস্তল আসছে দেশের অপরাধ জগতে। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মূল্য ২০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা।

আন্ডারগ্রাউন্ডের পেশাদার কিলার বা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সংগ্রহে দুই ধরনের অস্ত্র মজুদ করে রাখে। খুনের মিশন বা হামলায় দু-তিনটি কম দামের অস্ত্রের সঙ্গে একটি ব্র্যান্ডের অস্ত্র পাঠানো হয়। লক্ষ্যবস্তুতে নিশ্চিত হামলার কাজে ব্যবহার করা হয় ওই অস্ত্রটি, আর মহড়া বা ফাঁকা গুলি ফুটাতে ব্যবহার হয় কম দামি অস্ত্র। বিপদে পড়লে এসব কম দামি অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে নির্দেশদাতার নির্ভরশীল সদস্যরাই হাতে পায় ব্রান্ডেড আর্মস।



সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের লাইসেন্স

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দফায় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর ছিল অস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবাই অস্ত্র জমা না দেওয়ায় ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এক লাখ ২৩ হাজার ৫৯২টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়ে। দেশে লাইসেন্স করা অস্ত্রের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৮০টি। জমা না পড়া অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৮৮টি। তখন সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল, ৫২ হাজার লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা পড়েনি। ২০০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ডিএমপির পুলিশ কমিশনার নাঈম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জমা না পড়া এসব অস্ত্র এখন অবৈধ। পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদও তখন একই কথা বলেছিলেন। এসব অস্ত্র উদ্ধার ও মালিকদের গ্রেপ্তারে ব্যাপকভাবে অভিযান চালানোর কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। এ পর্যন্ত কোনো অস্ত্র উদ্ধার অথবা মালিক গ্রেপ্তার হয়েছে এমন প্রমাণ নেই। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এসব অবৈধ হওয়া লাইসেন্সের মালিকদের কোনো তালিকা হয়নি তখন। যেসব মালিক অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন, নির্বাচনের পর তারা সেসব অস্ত্র ফেরত নেন। জমা না দেওয়া এসব অস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের কাছে। বরাবরের মতো এবারও বাজেয়াপ্ত লাইসেন্স করা ওই সব অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগেও ২০০১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তখনো অনেকে জমা দেননি। পরে তাদের তালিকা করে সেই অস্ত্র উদ্ধার ও মালিকদের গ্রেপ্তারের কথা থাকলেও তা হয়নি।



পুলিশ কমিশনারের মন্তব্য

মাসিক অপরাধবিষয়ক মতবিনিময় সভায় ১১ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগ টেলিকম অডিটোরিয়ামে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, পিলখানা হত্যাকান্ডের পর দেশে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবহার বেড়েছে। প্রচুর অবৈধ অস্ত্র সীমান্ত দিয়ে ঢুকে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সন্ত্রাসীরা সীমান্ত থেকে অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় ঢুকছে মালবাহী পরিবহনের মাধ্যমে; বিশেষ করে ক্ষুদ্রাস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায়ই খুনের ঘটনা ঘটছে। এর পরও গত বছরের তুলনায় বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ ব্যর্থ হচ্ছে কি না- প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার জানান, শতভাগ অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব নয়। একদিকে উদ্ধার হচ্ছে, অন্যদিকে ঢুকছে। প্রকাশ্যে এসব অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। মালবাহী পরিবহনে সবজি, চালসহ অন্যান্য মালামালের ভেতর লুকিয়ে অস্ত্র আনা হচ্ছে। ওই পরিবহনগুলোতে ঠিকমতো তল্লাশি চালানোও সব সময় সম্ভব হয় না।

সুত্র: সাপ্তাহিক ক

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৬

সরল মানুষ বলেছেন: এদের সবাইকে প্রয়োজন পরবে আওয়ামী নেত্রীর। শুধু গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায়। কিন্তু শিবির নিধনে পুলিশের ভুমিকা প্রসংশনীয় B-) B-)

ধন্যবাদ আপনাকে এরকম একটা তথ্য বহুল পোষ্টের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.