![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিকতা ভালো লাগা লেখা ব্লগে প্রকাশ করবো সকলের জন্য।
শেয়ার বাজারের জুয়াড়ীদের কৌশল এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ : আমিনূল মোহায়মেন
বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গত জানুয়ারি মাসেই এক লক্ষ পনের হাজার নতুন বিও একাউন্ট (শেয়ার লেন-দেনের জন্য একাউন্ট) খোলা হয়েছে। বর্তমানে মোট বিও একাউন্ট এর সংখ্যা ২৮ লক্ষ। রাজধানীর চাকুরীজীবি ও ছাত্র থেকে শুরু করে মফ:স্বল শহরের ব্যবসায়ী, উকিল এমনকি গ্রামের অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরাও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন। ইন্টারনেটের বিস্তৃতি, ব্যাংক সুদের হার কমে যাওয়া বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এই সকল বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগই শেয়ার বাজারে টাকা ঢালছেন এ বিষয়ে কিছু না জেনেই, শুধুমাত্র তাদের পরিচিত কেউ অল্প সময়ে প্রচুর লাভ করেছেন এই ধরণের কথা শুনে। তারা লেনদেনও করছেন কোম্পানীগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর না নিয়ে, শুধুমাত্র পরিচিত কোন ব্যক্তির পরামর্শে। এই ধরণের বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ লাভবান হলেও, অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
কোন কোম্পানীর শেয়ার আপনি কেনার অর্থ হচ্ছে, সেই কোম্পানীর একটি অংশের আপনি মালিক হলেন। এখন উক্ত কোম্পানী যদি ব্যবসায়ে লাভ করে তাহলে তার লভ্যাংশ আপনি পাবেন এবং লোকসান দিলে তার ভাগও আপনাকে নিতে হবে। একটি কোম্পানীর আর্থিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে তার শেয়ারের দাম ওঠা-নামার কথা। শেয়ার মার্কেটে নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের লাভ-ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করে থাকে। তার ভিত্তিতেও শেয়ারের দাম বাড়ে-কমে। আবার কোন কোম্পানী যদি তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করে, তাহলে তার শেয়ারের দাম বাড়তে পারে।
তবে, আমাদের শেয়ার বাজারে শেয়ারের দাম বাড়া-কমার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোম্পানীর আর্থিক অবস্থার সম্পর্ক থাকে না। প্রকৃতপক্ষে শেয়ার বাজারের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় এক ধরণের জুয়াড়ীদের দ্বারা। তাদের কাজের কৌশল অনেকটাই নীচের মত:
১. একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোন কোম্পানীর শেয়ার একসাথে কিনে তার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ধরুন প্রত্যেকে এক কোটি টাকা নিয়ে দশজন জুয়াড়ী একদিন একটা কোম্পানীর শেয়ার নিয়ে খেলতে বসলো। ধরুন উক্ত শেয়ারটির গতদিনের বাজার মূল্য ছিল ১০০ টাকা। একজন দাম হাকলো ১০২ টাকা। অপর ব্যক্তিটি তা ১০২ টাকা দিয়ে কিনে নিলো। অপরজন হাকলো ১০৪ টাকা। এভাবে একদিনেই ১০০ টাকার শেয়ার সহজেই ১১০ টাকা হয়ে যাবে। ততোক্ষণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও জেনে যাবে যে একটি শেয়ারের দাম খুব বাড়ছে। তখন তারাও শেয়ারটি কেনা শুরু করবে। এভাবে ৩-৪ দিন বাড়তে থাকার পর জুয়াড়ীরা সেই শেয়ার বিক্রি করা শুরু করে। তাদের টাকা উঠে আসার পর উক্ত কোম্পানীর শেয়ারের দাম পড়তে থাকে। ফলে পরে যারা বেশী দামে কিনেছে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
২. জুয়াড়ীরা একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। যেহেতু শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগ লেনদেন করে অন্যের পরামর্শে, তাই এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত কয়েক হাজার বিনিয়োগকারীর নিকট খবর পৌছে যায় যে, ওমুক কোম্পানীর শেয়ার কয়েক দিনের মধ্যে বেড়ে যাবে। হাজার খানেক বিনিয়োগকারী যখন কোন শেয়ারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, তখন সেই শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। জুয়াড়ীদের টাকা তুলে নেয়ার পর আবার তার দাম পড়তে থাকে।
৩. অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন কোম্পানীও তার শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য বাজারে গুজব ছড়ায়। বিভিন্ন সময়ে এই ধরণের গুজবের জন্য শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ ধরণের কোম্পানীর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ:
জুয়াড়ীদের খপ্পড় থেকে বেঁচে নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিম্নোক্ত পথ অনুসরণ করতে পারেন।
১. স্বল্প মেয়াদে বেশী লাভ করার প্রবণতা বাদ দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে (৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য) বিনিয়োগ করুন। এতে অল্প দিনে কোটিপতি না হতে পারলেও দীর্ঘদিনের সঞ্চয় হারিয়ে পথে বসতে হবে না।
২. সবথেকে বেশী সতর্ক থাকতে হবে শেয়ার কেনার সময়। মনে রাখতে হবে শেয়ার না কেনা অনেক সময় বেশী লাভ জনক। প্রকৃতপক্ষে তারা বেশী লাভবান হতে পারে যারা শিকারীর মত চুপ করে টাকা নিয়ে বসে থাকে এবং যখন কোন কারণে বাজার পড়ে যায়, তখন পছন্দের শেয়ারটি কেনে।
৩. প্রশ্ন হচ্ছে, কোন শেয়ারটি কিনবেন? প্রথমে ভালো আর্থিক অবস্থার কয়েকটি কোম্পানীর তালিকা করতে হবে। এই তালিকাটি করবেন কিভাবে? এর জন্য কয়েকটি কাজ করা যায়:
ক. পরিচিতজনের মধ্যে যারা শেয়ার বাজার বোঝে তাদের সাথে কথা যেতে পারে। তাদেরকে বলতে হবে, এমন কোম্পানীর নাম বলুন যাতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা যায় এবং যারা শেয়ার নিয়ে জুয়া খেলে না।
খ. স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েব সাইটে কোম্পানীগুলোর বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে। বছরের বিভিন্ন সময়ে দামের হ্রাস-বৃদ্ধির গ্রাফ দেখুন, বিগত বছরগুলোতে কোম্পানীটি কত লাভ করেছে এবং কত লভ্যাংশ দিয়েছে ইত্যাদি জেনে নিন। স্থিতিশীল কোম্পানীগুলো শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে না। এসব কোম্পানীর শেয়ারের দাম সাধারণত: বছরে এক-দুইবার (অর্ধবার্ষিক হিসাব প্রকাশ ও বার্ষিক লভ্যাংশ ঘোষণা) বৃদ্ধি পায়।
গ. স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েব সাইটে কোম্পানীগুলোর প্রতিদিনের খবর দেওয়া থাকে, যা শেয়ারের উপর প্রভাব ফেলে। এই খবরগুলো নিয়মিত পড়লে লাভজনক কোম্পানী বাছাই করা সহজ।
৪. বাছাইকৃত কোম্পানীর একটি তালিকা তৈরী করার পর নিয়মিত খোঁজ নিতে থাকুন সেগুলোর শেয়ারের মূল্য সম্পর্কে। ইন্টারনেটে প্রতি ৫ মিনিট পর পর শেয়ারের মূল্য দেখানো হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে কোন কোম্পানীর শেয়ারের মূল্য কমে যেতে পারে। কখনো বা পুরো বাজারের দর পতন হয়। লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারের দাম সাধারণত: পড়ে যায়। আবার ঈদের ছুটির আগে দাম পড়ে যায়। কখনো দেখা যায় বড় কোন কোম্পানীর শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে বা ভিন্ন সেক্টরের কোম্পানীগুলোর দাম বাড়তে থাকলে অন্য কোম্পানীর শেয়ারের দাম কমে। এই রকম সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকা ভালো এবং তখন শেয়ার কিনলে বেশী লাভ করা যায়।
৫. আপনি যে কয়েকটি কোম্পানীর শেয়ার কিনেছেন, সেগুলোর দাম এবং সেগুলো সম্পর্কে কোন খবর প্রকাশিত হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখুন। এ উদ্দেশ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েব সাইট সাহায্য করতে পারে। যেহেতু শেয়ারের দাম ওঠা-নামা করে, তাই নিয়মিত খোঁজ-খবর না রাখলে আপনি লাভের সুযোগ হারাতে পারেন।
৬. আপনার কেনা শেয়ারের দাম যদি হঠাৎ কমে যেতে থাকে, তাহলে ভয় পেয়ে ক্ষতিতে বিক্রি না করে দাম পড়ার কারণ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। অনেক ক্ষেত্রে পুরো শেয়ার বাজারে মন্দাভাব থাকতে পারে, বা অন্য সেক্টরে দাম বাড়ার কারণে আপনার শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে। এ সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধারণ করে অপেক্ষা করুন এবং ভালো দাম পেলে বিক্রি করে দিন।
শেয়ার বাজারে যেহেতু বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঢুকছেন এ বিষয়ে কোন কিছু না জেনেই, তাই সরকারের উচিৎ শেয়ার বাজার সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের আরও বেশী জানার ব্যবস্থা করা এবং এ সম্পর্কিত জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো। তা না হলে এটি পরিণত হবে আরেকটি বড় জুয়ার বাজারে যেখানে দেশের ৩০ লক্ষ বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব হারাবেন।
-----------
লেখাটি সোনারবাংলাদেশ ডট কমে প্রকাশ।
০৮ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১:১০
বিগ ব্রাদার বলেছেন: নিলাম।
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১:২৫
গরম কফি বলেছেন:
+ দিয়ে প্রিয়তে রাখলাম । পরে পড়ে নিবো।
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১:৩০
এইচ, এম, পারভেজ বলেছেন: দরকারী পোস্ট।
৪| ১৫ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৪৩
সাইফুল আলম সারোয়ার বলেছেন: পরামর্শ গুলো ১০০% বুলেট প্রুফ।
কিন্তু যারা শুধু গুজবের পেছনে ছুটে শেয়ার কিনে তাদের কি পরামর্শ গুলো পড়ার সময় হবে ?
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১:২৫
আরেফিন জিটি বলেছেন: দরকারী পোস্ট। প্লাস নেন।