![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আলাউদ্দিন সাহেব কিছু দিন আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। বয়স ৬৫ বছরের উপরে হবে। কয়েক বছর আগে থেকেই কোন বস্তুর দিকে তাকালে কিনারার দিকটা পরিস্কার দেখা যেতো না। সে ভেবেছিল এটা তেমন কোনও জটিল সমস্যা না। কিন্তু যতই দিন যায় তার দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কিছুদিন পর তার কাছের মানুষদেরকেও চিনতে কষ্ট হয়। সে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলেন, তার চোখের যে রোগ হয়েছে সেই রোগের কোন প্রতিকার এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। আর এ রোগের নাম হচ্ছে, মাকূলার degeneration। এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষ তার দৃষ্টি শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলতে থাকে। এই রোগে মানুষের চোখে রেটিনা নামক আলোক সংবেদনশীল কোষের যে আবরন থাকে তা নষ্ট হয়ে যায় এবং কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই রোগটি সাধারনত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের হয়ে থাকে। ২০২০ সাল নাগাত আমেরিকার প্রায় ৩ মিলিয়ন লোক এই রোগে আক্রান্ত হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এরকম আরও কিছু রোগ আছে যেমন Stargardt's macular dystrophy, অল্পবয়স্ক মানুষও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগে চোখের রেটিনার আবরনের নিচে চর্বির আবরন জমা হয়, যার ফলে রেটিনার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়, একইসাথে চোখ তার দৃষ্টি শক্তি হারায়। একবার চিন্তা করেন যদি এই মৃত কোষগুলোকে ঠিক করা যেতো অথবা জীবিত কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যেতো। বিজ্ঞানিরা এখন চেষ্টা করছে Macular degeneration এবং Stargardt's macular dystrophy উভয় ক্ষেত্রেই কোনভাবে এই মৃত কোষগুলোকে জীবিত কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা। Advanced Cell Technology নামক একটি কোম্পানি এই কাজটি করছে, তারা রেটিনা এই কোষ তৈরির জন্য ব্যবহার করেছে, মানুষের ভ্রূনীয় স্টেম সেল (embryonic stem cell )।
স্টেম সেল হচ্ছে এমন কোষ যা মানব দেহের ২২০ ধরনের কোষের যেকোনো একটিতে নিজেকে পরিবর্তিত করতে পারে। আবার তারা নিজেকে কোন পরিবর্তন না করে শুধু কোষ বিভাজনের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন স্টেম সেল তৈরি করতে পারে। স্টেম সেলের এই বৈশিষ্ট্য দুটো জন্য এদেরকে গবেষণাগারে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাছাড়াও এই কোষ রোগ চিকিৎসার বৈপ্লবিক ভুমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ কিভাবে তৈরি হয়েছে তা যেমন জানা যায়, তেমনই একটি নির্দিষ্ট ঔষধের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও স্টেম সেল ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে (যেমন- রেটিনা, পেশী, spinal cord) প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু কীভাবে আমারা স্টেম সেল এর সঠিক ব্যবহার করতে পারি? কীভাবে আমারা স্টেম সেলকে যখন, যেখানে যেভাবে ইচ্ছা উৎপাদন করতে পারি? অথবা কীভাবে এদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ অথবা রোগাক্রান্ত কোষকে প্রতিস্থাপন করার জন্য ব্যবহার করতে পারি? এতক্ষণে এই প্রশ্নগুলো সবার মনেই জাগ্রত হয়ার কথা। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদেরকে স্টেম সেল এর জীববিজ্ঞানকে ভালভাবে জানতে হবে। সূক্ষ্ম কীট থেকে ইদূর এবং মানুষ সব প্রাণীর দেহেই স্টেম সেল থাকে। সাধারণত তিন ধরনের স্টেম সেল থাকে, যেমন- embryonic স্টেম সেল, adult স্টেম সেল, and induced pluripotent স্টেম সেল (iPS)। প্রতি ধরনের স্টেম সেলেরেই তাদের নিজস্ব সামর্থ্য এবং সীমাবদ্ধতা আছে। embryonic স্টেম সেল, সাধারণত কোন প্রাণীর বর্ধনের খুবই প্রাথমিক অবস্থা থেকে পাওয়া যায়। যখন শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলনের ফলে, জাইগোট তৈরি হয় এবং তা বিভাজিত হতে থাকে। আর এই সময়ের কোষগুলোর যেকোনো ধরনের কোষে পরিণত হয়ার ক্ষমতা থাকে, এই ক্ষমতাকেই বলা হয় pluripotency। কয়েক বার বিভাজনের আগ পর্যন্ত তাদের এই pluripotency. বজায় থাকে, কিন্তু ভ্রুন যখন একটি পুরনাঙ্গ প্রানীতে পরিণত হয় তখন অধিকাংশ কোষই বিভক্তিকরনের (Differentiation) মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কোষে পরিণত হয়। কিন্তু এদের মধ্যে কিছু বিশেষ ধরনের কোষ আছে যারা তখনও বিভক্তিকরনের মাধ্যমে অন্য ধরনের কোষে পরিনত হওয়ার ক্ষমতা ধরে রাখে। এই স্টেম সেল গুলোকে বলা হয় adult স্টেম সেল, আর এই কোষগুলো দেহের মধ্যে একটি বিশেষ পরিবেশে অবস্থান করতে থাকে এবং অপেক্ষা করতে থাকে দেহের কাছ থেকে পুরাতন কোষকে প্রতিস্থাপন এবং মেরামত করার উপযুক্ত বার্তার জন্য। এই বিশেষ স্টেম সেল গুলো সাধারনত থাকে সেইসব কলাতে, যেখানে প্রতিনিয়ত পুরাতন কোষগুলোকে নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হয়, যেমন- রক্ত, ত্বক এবং পরিপাক নালী। এই adult স্টেম সেল গুলোকে pluripotent এর পরিবর্তে multipotent বলা হয়। Pluripotent কোষগুলো যেমন মানব দেহের ২২০ ধরনের কোষের যেকোনো কোষে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে কিন্তু multipotent কোষগুলো তা পারে না। উদাহরন স্বরূপ Nueral স্টেম সেল মস্তিস্কের বিভিন্ন স্নায়ু কোষে পরিণত হতে পারলেও, তারা কখনই যকৃতের কোষে পরিণত হতে পারবে না।
গত দশকে বিজ্ঞানীরা কীভাবে কোন নির্দিষ্ট জাতের কোষ থেকে স্টেম সেল তৈরি করতে হয় তা শিখেছে। ক্রিত্তিম ভাবে তৈরি করা এই কোষগুলোকে বলা হয় induced স্টেম সেল, কারন বিজ্ঞানীরা এই কোষগুলোকে জোর করে Pluripotent বানাচ্ছে, যদিও তারা বিভক্তিকরনের ফলে দেহের একটি নির্দিষ্ট জাতের কোষ ছিল। শুধুমাত্র কিছু জীনকে সক্রিয় করার মাধ্যমে, কোষের বিভক্তিকরনের এই ধারাকে বিপরীত দিকে পরিচালিত করে ত্বকের কোষকে pluripotent অবস্থাই নিয়ে যাওয়া যায়।
কোষের বিভক্তিকরনের পক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে স্টেম সেল আমাদের জন্য অনেক সম্ভাবরনার দ্বার খুলে দিবে। স্টেম সেল সম্পর্কে এখনও আমাদের অনেক কিছু জানার বাকি আছে, যেমন- যে তিন জাতের স্টেম সেল এর কথা বলা হয়েছে তাদের কি কি বৈশিষ্টে ভিন্নতা রয়েছে? কি কি বৈশিষ্টে মিল রয়েছে? তাদের থেকে কি কি অঙ্গ তৈরি করা সম্ভব?
চলবে--
অনুবাদ- Nirupama Shevde (2012) Stem Cells: Flexible friends Nature, 483, S22–S26, doi:10.1038/483S22a
২| ০২ রা জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৪৪
বিপ্লব বিটি বলেছেন: আমার লেখায় আপনিই প্রথম মন্তব্যকারী... ধন্যবাদ.।
৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:৫৯
হাসিবুল আলম বলেছেন: Besh valo
২৩ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:৫২
বিপ্লব বিটি বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪৯
বোরহান বলেছেন: চমৎকার
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৫০
ইসাকুল বলেছেন: চমৎকার , পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম