![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে। শুধু ঢাকা নয়, পাকী সেনারা এগিয়ে যায় এদেশের অন্যান্য বড় বড় শহরের দিকে। প্রথমেই তারা টার্গেট করে চট্টগ্রামকে। চট্টগ্রাম দখল করে রেখেছিলো বাঙালি সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকী সেনাদের প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার পরবর্তী আক্রমণের জন্যে মর্টার চেয়ে পাঠায়। ২৭ মার্চ কুমিল্লা থেকে মর্টার এসে পৌঁছে।
চট্টগ্রাম বা অন্যান্য শহরের ন্যায় কুষ্টিয়া ও পাবনায় পাকী সেনারা আক্রমণ চালায়। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় পাবনায় আগে থেকে অবস্থানরত সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই হয়। যদিও এ যুদ্ধে পাকী সেনা ও ঘাতকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরেও তাদের হাতে মারা যান অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরীহ শহরবাসী। খুলনার সাবেক বিডিআর সদস্য কবির আহমদ জানান, ২৭ মার্চ খুলনার অবস্থার অবনতি ঘটে। পাকী সেনারা ব্যাপকভাবে শহরে ঘুরতে থাকে, এ সময়ে গ্রামে পলায়নপর নিরীহ লোকজনদের ধরে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ তারপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ঠা-া মাথায় গুলি করে।
পাকী সেনারা এদিন যশোর কোতোয়ালী এলাকায় ঢুকে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর একই সময় আরো ৪০ জনকে মারতে মারতে কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যায়। যশোরের নওয়াপাড়া রোডে এদিন রেল গার্ড রুস্তম আলী ও নওয়াব আলী ছাহেবকে হত্যা করে। ওয়াচম্যান আতর আলীকেও তারা সেদিন নৃশংসভাবে হত্যা করে। পাকী সেনাদের ভয়ে কোনো লোকজনই ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে প্রায় ৪/৫ দিন যশোরের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে মৃত দেহগুলো।
দেশের সর্বত্রই পাকী সেনাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাকী সেনারা বাঙালি পুলিশ ও সৈনিকদের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে নিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করে। ২৭ মার্চ সৈয়দপুর পুলিশলাইন পাকী বাহিনীর দখলে চলে যায়।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মহিলা-পুরুষ, শিশুকে ধরে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। সাতাশের রাতে পাকী সেনারা রায়ের বাজারে যে কত অসংখ্য লোককে গুলি করে মেরেছে তার হিসাব নেই। এদিন ঢাকা শহরকে মনে হয় লাশের নগরী। চারদিকে স্তূপীকৃত লাশ। সরকারি পশু হাসপাতালের সুইপার পরদেশীর কাছ থেকে জানা যায়, ঢাকা পৌরসভা অফিস থেকে ৩ দল ডোমকে পাঠানো হয় বাংলাবাজার, মিটফোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। মিটফোর্ড এলাকায় তখন লাশের বিরাট স্তূপ। এই এলাকার প্রতিটি লাশের বুক ও পিঠ মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা। এর মধ্যে অসংখ্য সম্ভ্রমহারা, নির্যাতিতা কিশোরী ও নারীর লাশও ছিল। যাদের অনেকের বুক-স্বাভাবিক স্থান ক্ষত বিক্ষত, বুকের স্তন থেতলে গেছে; বহু পোড়া-ভস্ম লাশও দেখা যায়।
এদিন পাকিস্তানস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার মি. বিকে আচার্যকে পররাষ্ট্র দফতরে ডেকে এনে বলা হয়, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত এবং নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করছে। পূর্ব-পাকিস্তান সম্পর্কিত ভারতের প্রচারিত খবরকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা বলে উল্লেখ করে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক এবং ষড়যন্ত্রমূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্যে ভারতীয় হাই কমিশনারকে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। (তথ্যসূত্র- উইটনেস টু সারেন্ডার; বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলীলপত্র, দৈনিক পাকিস্তান, ১ এপ্রিল ১৯৭১ ঈসায়ী।)
©somewhere in net ltd.