![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার নিজস্ব একটা দর্শন আছে । সেখান থকে লিখি, বলি, করি; কারো তোয়াক্কা করিনা ।
উচ্চতাভীতি জিনিসটা কি, সেটা বোঝার আগে থেকেই আমি উচ্চতাভীতিতে আক্রান্ত ছিলাম । ছোটবেলা মই দিয়ে ছাদে উঠতে পারতাম না । হাত পা কাঁপতে কাঁপতে ঠাণ্ডা হয়ে যেত ভয়ে । তখন হাত ধরে আদর করে ছাদে উঠিয়ে দিতেন যিনি, তিনি অবনী আপা; মাঝে মাঝে কোলে করেও উঠিয়ে দিতেন । আমার দূরসম্পর্কের চাচাতো বোন ছিলেন তিনি, থাকতেন তিরিশ কি.মি. দূরে স্বামীর বাড়িতে । তবে বছরে কয়েকবার তিনি আমাদের বাড়িতে আসতেন । আমার শৈশবটা মোটামুটি বাক্স বন্দীই বলা যেত অনায়াসে যদি না সেখানে অবনী আপার অস্তিত্ব থাকত । বাবা শিক্ষক হওয়ার সুবাদে আমাকে তথাকথিত ভাইরাস- ব্যাকটেরিয়ার ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে ঘরের বাইরের খেলাধুলাকে চিরকালই না বলতে হয়েছে । তেমনই শৃঙ্খলিত জীবনে আমার ছোটবেলার একমাত্র খেলার সাথী ছিলেন অবনী আপা, তিনি বয়সে প্রায় মায়ের বয়সী হওয়া সত্ত্বেও আমার সঙ্গে কেন জানি খুব বন্ধু বন্ধু ভাব হয়ে গিয়েছিল । আমার মেয়েবেলায় প্রথম পুতুল খেলার পুতুলটিও অবনী আপার পুরনো কাপড় দিয়ে বানানো ছিল । সেজ চাচির সেলাই এর ঝুড়ি থেকে একটু সুতো চুরি করে এনে চুল বানিয়ে দিয়েছিলেন । আমার ছোট্ট মাথার সবটুকু আবাক হবার ক্ষমতা নিয়ে আমি তার হাতের দিকে তাকিয়েছিলাম । ছাদের ওপর বেল গাছের একটা বড় ডাল ছাদটির বেশির ভাগ দখল করে ছিল । সেই বেল গাছের নুয়ে পড়া ডালকে গাড়ি বানিয়ে পুতুলের বিয়েতে যেতাম । সবই তো মাত্র কটা দিন আগের কথা !!!
আমার স্কুলের বাকি সময়টা আমি তার সঙ্গে পুতুল খেলেই কাটিয়েছি । আপার দুই ছেলে আর এক মেয়ে । দুই ছেলেই মোটামুটি আমার চেয়ে বছর সাত আট এর বড় হবে । আপার কাছেই প্রথম শুনেছিলাম ণ,এ,ও,প,খ,গ,শ এই কয়েকটা অক্ষর ছাড়া বাকিগুলো মাত্রা দিয়ে লিখতে হয় । রাতে আপার পাশে শুয়ে প্রথম মল্লিকাদির গান শুনে বুকের কোথাও চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভূত হয়েছিল । গ্রামের এমন প্রাণোচ্ছল একটা মেয়ে কেন ঘোমটা টেনে দাসীদের মত কলস ভরে পানি আনবে সেটাই মানতে পারিনি কখনো । অবনী আপা বলতেন, “সবই ভাগ্য, বুঝলি বিথী !” সেদিন তার জায়গা থেকে তিনি যে ভাগ্যের কথা বলেছিলেন আর আমি যে জায়গা থেকে ভাগ্য বুঝেছিলাম তার ভেতর কতটা ফারাক ছিল তা দুজনের কেউই বুঝিনি । বুঝিনি ভাগ্য আমার আর ওনার মাঝেও একটা দেয়াল তুলে দিতে পারে ।
আমার শৈশব, কৈশরে যতবার খারাপ সময় এসেছে, ভেবেছি আমার আর কিছু নেই, আমি নি:শেষে বিভাজ্য ততবার অবনী আপা আমার জীবনে চেইঞ্জমেকার হয়ে এসেছেন । এই না বোঝা মানুষগুলোর মাঝখান থেকে আপা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বাবা আর মা কে বোঝাতেন তারা কেন আমাকে বোঝেন না !!! কত কষ্ট এখনো আমি অবনী আপার আঁচলে মুছেছি, সেসব পুরনো কোন শাড়ীতে এখনো তোলা আছে হয়ত । রাতের আধারে এই আঁচলে মুখ গুঁজেই মল্লিকাদির পুরনো টানাপড়েনে কষ্ট পেয়েছি ।
দশমীর এক রাতে অবনী আপাকে কয়েকজন মানুষ আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেন । সেই রাতে কেউ না বুঝলেও এখন সবাই জানে সেই থেকেই তিনি পাগল । পাগল অবস্থাতেও মাকে নাকি তিনি প্রায়ই আমার কথা জিগ্যেস করেন । তাকে এখন আর কেউই বাড়িতে উঠতে দেন না, কয়েকটা বাড়ি থেকে জিনিসপত্র চুরির গুজব ও শুনেছি ।
এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে, সেজ কাকুর বাড়ির দরজার একটু খানি চালার নিচে একটা চাদর জড়িয়ে সারারাত পড়েছিলেন অবনী আপা । ইদানিং মানুষজনের সামনে কাপড় চোপড় খুলে ফেলেন, বেফাস কথা বলেন বলে কেউ আর তাকে পরিচয় দেয়না । এতটুকুন শুনে আমি চোখ বন্ধ করেও আর জল আটকাতে পারলাম না । শৈশবের দেখা সেই জোয়ান শরীর আর পান খেয়ে লাল করা তরমুজের বিচির মত দাঁত বের করে উচ্চস্বরে হেসে যাওয়া এই অবনী আপা যে আমার জন্য কি ছিল সে আমি কোনদিনও হয়তো বোঝাতে পারব না, বোঝানোর দিনগুলোও হয়তো আর আমার আসবেনা । বাবা, মা, চাচা, চাচি তাকে ছোট সংসারের গলগ্রহ মনে না করে আর কিই বা করবেন !!! তিনি যে এখন পাগল । এইতো সেদিন তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় জোরে জোরে গলা ছেড়ে গাইছিলেন,
“তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম
সে এখন ঘোমটা টানা কাজলা বধূ দুরের কোন গাঁয়।
যেদিন গেছে সেদিন কি আর ফিরে পাওয়া যায়......।।’’
আমি খুব পরিচিত একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলাম, একটু জল ও এল এক চোখে । এটা কি শুধু মল্লিকাদির জন্যই...।। তাই হবে হয়ত, পাগলের জন্য আবার কেউ কাঁদে নাকি ?????
২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৫
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ঠিক বলেছেন
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৬
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
স্মৃতি কথন ভালো লাগল, আসলে স্মৃতি কথন ভালোই লাগে।
২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪৮
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ধন্যবাদ কাণ্ডারী
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২০
অভ্র বর্ষণ বলেছেন: ভালো লাগছে!
২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪৮
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৭
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
চমৎকার লেগেছে স্মৃতি কথন।
বেশ গল্প বলার ঢঙে লিখেছেন।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৩৯
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নাজিম আপনাকে । আবার আসবেন, ভালো থাকবেন
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:২২
শ্যামল জাহির বলেছেন: চমৎকার লেখায় প্লাস উপহারে কঞ্জুস নহি আমি।
আমার তৃপ্তির জন্য থ্রি স্টার রেখে গেলাম।
লিখাটা পড়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো!
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শ্যামল জহির । ভালো থাকবেন । মন ভালো খারাপ তো হয়ই, এর মাঝেও যে আমাদের বাঁচতে হবে ।
৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫০
শুঁটকি মাছ বলেছেন: কিছু কিছু মানুষ আমাদের শৈশবটাকে আরো আনন্দময় করে দিয়ে যান।আমাদের বাসার উপর তলায় একজন থাকতেন।আমার আবছা স্মৃতিতে যতটুকু মনে পড়ে তাকে বড় কাকী বলে ডাকতাম।কোনো আত্মীয়তার বন্ধন ছিল না।তবু কেন বড়কাকী ডাকতাম,কে জানে? আপনার লেখাটা পড়ে বড়কাকীর কথা মনে পড়ে গেল। এই মানুষটার কোলে চড়ে কত সময় ঘুরে বেড়িয়েছি,কত দুপুর এই মহিলার পাশে শুয়ে গল্প শুনে ঘুমিয়ে পড়েছি। অথচ এই মানুষটার খোজ নেই না কত কাল!!
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: বড় কাকীর জন্য প্রার্থনা । আপনি ভালো থাকুন ।
৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা!!
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৩
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ ।
৮| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০১
মামুন রশিদ বলেছেন: অবনি আপার গল্প ছুঁয়ে গেল ।
সুন্দর গল্পে ভালোলাগা ।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: আপনার ভালো লাগায় আমি পুলকিত ।
৯| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সুন্দর একটা লেখা।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: আপনাকেও সুন্দর একটা ধন্যবাদ ।
১০| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:১১
শ্যামল জাহির বলেছেন: আপুমণি, এর পরের বার আমার নামের 'জ' এর সাথে 'আকার' টাকেও ধন্যবাদ দিবেন কিন্তু!
শুভ কামনা।
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫
স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: দুঃখিত ভাইয়া, অনিচ্ছাকৃত কিভাবে চোখ এড়িয়ে গিয়েছে আপনার " া" বুঝতেই পারিনি । ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞ, আশা করি ক্ষমা করবেন । ভালো থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০৫
সাইনাস বলেছেন: স্মৃতি জিনিসটা চিরকালই অধরা আর ভুলবার নয়।