নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীনচেতা মানবী

স্বাধীনচেতা মানবী

আমার নিজস্ব একটা দর্শন আছে । সেখান থকে লিখি, বলি, করি; কারো তোয়াক্কা করিনা ।

স্বাধীনচেতা মানবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বাবার সঙ্গে লং ড্রাইভ"

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩০

ছোটবেলা থেকেই মা'র চেয়ে বাবার বেশ ভক্ত ছিলাম আমি । প্রথম গান গাওয়া, প্রথম পড়তে শেখা, প্রথম স্কুলে যাওয়া, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম সম্পর্কের ডাক সবটাই ছিলেন আমার বাবা । আমার এখনো মনে পড়ে, রাতে যখন বিছানা থেকে নামতে ভয় পেতাম, বাবা কোলে করে আমাকে বাথরুমে নিয়ে যেতেন । হাঁটু পানিতে পা ফেলব না বলে যখন স্কুলে যেতে না চাইতাম তখন বাবা আমাকে কাঁধে নিয়ে, এক হাতে স্কুল ব্যাগ নিয়ে আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন । একজন প্রাইমারী স্কুল টিচার হয়েও তিনি আমার সব আবদার কিভাবে যেন সহাস্যে মেনে নিতেন । আজ যখন ছোট ভাইকে একটা বই কিনতে টাকা দেয়ার সময় ও আমি ২য় বার ভাবি, সেই সময়ে বাবা আমাকে কখনো অপূর্ণ রাখেন নি । এখনকার ছেলে মেয়েদের দেখি বাবা'র সঙ্গে এত্ত বাজে ব্যাবহার করে, আমি অবাক হয়ে যায় !!! অনেককেই বলতে শুনেছি “তুমি আমার দরজায় নক না করেই আমার রুমে ঢুকে পড়ো কেন, আমার কোন প্রাইভেসি নেই”? আমার কান্না পায় এই ভেবে যে সেই জায়গায় যদি আমার বাবা থাকতেন তবে বাবা কি করতেন ! একদিন ছোট ভাইকে দেখলাম বাবার সঙ্গে উঁচু গলায় তর্ক করছে, সেদিন ওর রুমে গিয়ে চড় মেরে বলেছিলাম আর কোনদিন যদি সে এমন করে তবে তার পড়াশোনা সহ বাকি সব কিছু বন্ধ । ভাই আর কখনো এমন করেনি । এই লেখা যদি আমার ছোট কেউ পড়েন তবে একটা কথা বলব, পৃথিবীতে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে কিন্তু বাবার মত নিঃস্বার্থ একজন ও হবেন না !!! বাবার তুলনা একমাত্র বাবা । আমাদের কর্কশ ব্যাবহারে তারা কিছু না বললেও কিন্তু তারা কষ্ট পান । আমরা ওনাদের জন্য কিই বা করি, একটু ভালো ব্যাবহার পেলেই যখন তারা খুশি তখন বিনামূল্যে এতটুকুন করা কি আমাদের জন্য খুব দুঃসাধ্য ???

আমার দাদি যখন মারা যান তখন আমি বাবার কাছাকাছি তেমন একটা যেতাম না, ঠিক মত কথা বলতাম না । বাবা খুব গম্ভীর থাকলেও কাঁদেন নি এক ফোঁটাও । অথচ আমাকে যেদিন বাবা হোস্টেলে রেখে যান সেদিন স্পষ্ট বাবার চোখে চিকচিক করছিল জল ! আমি গুনে রেখেছি ঠিক পাঁচবার বাবা চলে যাওয়া পথ থেকে ফিরে ফিরে এসেছিলেন । বলে যাচ্ছিলেন আমি যেন বাইরে কম যাই, ঠিকমত পড়াশোনা করি, অচেনা কারো সঙ্গে কথা না বলি, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করি আর ওষুধ খাই । বাবা কে শক্ত রাখার জন্য আমি এক ফোঁটাও কাদিনি তবে কিছুক্ষন পর পর ফোঁস ফোঁস করছিলাম । সেই যে বাড়ি ছাড়লাম সারা জীবনের জন্যই ছাড়লাম । আর কখনো বছরের পর বছর বাবার হুমকি ধামকি শুনতে হবেনা । বাবা শুচিবায় গ্রস্ত মানুষ । খাবার প্লেটে কারো হাত ছোঁয়ানো যাবেনা অথচ আমার মাখা ভাত আমি প্রতিদিন বাবার প্লেটে তুলে দিতাম আর মা বড় বড় চোখ করে একবার আমার দিকে আরেকবার বাবার দিকে তাকাতেন ! :D বাবা অনেক সহজ সরল একটা মানুষ, প্যাঁচ গোচ একদম বোঝেন না কিন্তু তাই বলে কি রাগ নেই ??? থাক সে আর না বলি ...

আমি অবশ্য কখনোই বাবাকে ভয় পাইনি তেমন একটা তবে মাকে যমের মত ভয় পেতাম । বাবা আমার প্রথম বন্ধু, এখনো প্রথম । একবার বাবা দিবসে বাবার একটা ছবি এঁকে বাবাকে কুরিয়ার করেছিলাম, সঙ্গে একটা চিঠি । মার কাছে পরে শুনেছি, সেই চিঠি পড়ে বাবা নাকি কাঁদছিলেন । কেন কাঁদছিলেন বাবা ???

না, আমি তাকে কষ্ট দেইনি । কষ্ট দেবার মত কিছু লিখিনি । ছোটবেলার কিছু মধুর স্মৃতি বাবাকে লিখে পাঠিয়েছিলাম, সেই পড়ে বাবা কেঁদেছেন । উনি অনেক শক্ত মনের মানুষ, দিনের পর দিন নিজের মনে দৈন্যতা পুষে রেখেছেন কিন্তু আচরনে বুঝতে দেননি যে আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার । ভালো শিখিয়েছেন, পড়িয়েছেন, খাইয়েছেন, পরিয়েছেন এবং সেটা এখনো করছেন... আমার পরিবারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য আমার । প্রথম সিদ্ধান্তটি আমিই নেই, তারপরে আর কেউ এমনকি মা ও । এর পেছনের কারণটিই কিন্তু আমার বাবা এবং বন্ধু । গ্রামের মানুষ যখন মেয়েদের হাই স্কুল পর্যন্ত পড়তে দিতেন না তখন বাবা আমাকে স্বপ্ন দেখাতেন আমি দেশের বাইরে থেকে যেন উচ্চতর ডিগ্রী নেই । “বাবা, তুমি আসলেই আমার ২য় ঈশ্বর ।’’ আজ যে স্বপ্ন আমি দেখি সে আমার নয়, বহু বছর আগে বাবার দেখা পুরনো স্বপ্ন । বাবা কে নিয়ে সারাজীবন ধরে লিখলেও আমি শেষ করতে পারব না । আমার জীবনে বাবার বিকল্প আর কেউ নেই, এটা শুধু আমার কথা নয় এটি সবার জন্যই চিরন্তন । আজ এতটা পথ এসেও আমার কাছে প্রাথমিক স্কুলের এই শিক্ষকের জায়গাটি খুব স্পষ্ট । একজন সৎ মানুষ তৈরির জন্য একজন বাবাই যথেষ্ট । আমি বলছিনা আমি পুরোপুরি সৎ কিন্তু বাবার আদর্শে আমি চলতে চেয়েছি বরাবর এবং চলার চেষ্টা করছি । ছোটবেলা টাকে খুব মিস করি আমি, আমার ছোট বেলার বাব টাকেও খুব মিস করি । গোসলের আগে আমি বাবার আধাপাকা চুলের মাথায় দখল করে থাকা “টাকে” পরম ভালবাসায় তেল মালিশ করে দিতাম । বাবা হো হো করে হেসে বলতেন, “তুই এক্কেবারে আমার মা’র মতন হয়েছিস ।’’ দাদিকে আমার খুব হিংসা হত । বাবাকে যখন ই দেখতাম দাদির যত্ন নিচ্ছেন তখন ই মনে হত এই বুড়িটা বাবা কে ভগ্নাংশে পরিনত করে ফেলেছেন এবং আমি এবং এই বুড়ি ভগ্নাংশ ভাগ করে নিচ্ছি !!! :P তখন ও বুঝিনি বাবা তো তার মাকে যত্ন করবেন ই ... এখন অবশ্য আমার খুব হাসি পায় :D

কুড়িতে পা দিতে যাচ্ছি প্রায় । তবু মনেই হয়না আমি বড় হয়েছি । এখনো আধো ঘুমে স্বপ্ন দেখি, বাবার সঙ্গে বাবার স্কুলে বৃষ্টিতে ভিজতে যাবো এমন সময় বাবা এসে আমাকে ধরে ফেললেন । অফিসে গিয়ে পাহারা দিচ্ছেন আমাকে, আমি লোভাতুর চোখে সহপাঠীদের বৃষ্টিতে ভেজা দেখছি !!! বাবা আমাকে ছোটবেলায় শিখিয়েছেন সত্যি বলতে, সত্যি স্বীকার করে নিতে, নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছের সঙ্গে কখনো আপোষ না করতে আর সহজ গলায় নিজের পছন্দ-অপছন্দ গুলো স্পষ্ট বলতে !!! আমি এখনো মাঝে মাঝে বিস্মিত হই এই ভেবে যে আমার সমবয়সী বেশিরভাগ ছেলেমেয়েদের কেই বাবা-মা জোর করে নিজেদের ইচ্ছে মত বানাচ্ছেন সেখানে সেই সময়ের মানুষ হয়েও তিনি কিভাবে এমন হলেন !!! বাবার খুব ইচ্ছে ছিল আমকে ডাক্তার বানানোর, আমি সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে হতে যাচ্ছি ফিল্ম মেকার । বাবাকে খুব ভালবাসলেও বাবার এই ইচ্ছেটাকে কখনোই আমার আপন মনে হয়নি । বাবার স্বপ্ন থাকলেও তিনি এটা আমাকে জোর করে চাপিয়ে দেননি বরং আমার ইচ্ছেটাকেও আপন করে নিয়েছেন । হয়তো অপরাধ করেছি কিন্তু বাবা আমাকে সফল দেখতে চান এবং এই স্বপ্নটা যে কোন মূল্যে আমি পূরণ করব । বাবার আরও একটি স্বপ্নের কথা শুনেছিলাম ছোটবেলায় । তা হচ্ছে আমি বাবাকে আমার পাশের সিটে বসিয়ে ড্রাইভ করব আর বাবা বাইরে তাকিয়ে থাকবেন । আমি মনে মনে শপথ করেছি যেদিন নিজের টাকায় আমি গাড়ি কিনব এবং প্রথম ড্রাইভিং করব বাবাকে পাশে বসিয়ে । আমি আর বাবা লং ড্রাইভে যাবো ।

বাবা যা দিয়েছেন তাতো দুহাত ভরেই দিয়েছেন, যা দিচ্ছেন তা অফুরন্ত । র্যা ঙ্কিং এ ৪ এর মধ্যেই আছে এমন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে পড়াচ্ছেন, ভালো সুযোগ সুবিধা সহ সবই দিচ্ছেন আর আমার ব্যার্থতায় সফলতার জন্য অপেক্ষা করেছেন ধৈর্য ধরে । আর মাত্র কয়েকটা বছর পরেই আমি আর বাবা লং ড্রাইভে যাবো, সঙ্গে আমার প্রিয় শিক্ষক আমার বাবা, আমার প্রিয় বন্ধু বাবা, আমার প্রিয় সাথী বাবা আর আমার জন্ম দেয়ার পরেও আরও অনেক ভুমিকা তিনি পালন করেছেন এবং করছেন । কিন্তু বাবাকে কখনো বলা হয়নি, “বাবা, তোমাকে খুব ভালোবাসি”...... বলার দরকার কি !!! আমার বাবা আমার চোখে সুপার হিরো, ২য় ঈশ্বর এবং মানবিক ভুল থাকার পরেও একমাত্র নির্ভুল এবং নিখুঁত মানুষ । একজন মানুষ হয়েও তিনি অনেকজন চরিত্র... জন্মদাতা, বাবা, শিক্ষক, বন্ধু, সাথী এবং আরও অনেক কিছু ...

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৯

পেন্সিল স্কেচ বলেছেন: die heart fan of mom..

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৯

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: বাহ খুব ভাল।। ভালো থাকবেন :)

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আপনার ও আপনার বাবার জন্য শুভ কামনা রইল।

বাবারা খুব সম্ভবত সকলের কাছেই সুপার হিরো।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫০

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: হ্যাঁ, সত্যিই বাবা মানেই সুপারহিরো।। :)

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭

তন্ময় ফেরদৌস বলেছেন: বাবা ব্যাপারটাই আসলে অন্যরকম, আমার বাবা, আমার আইকন।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৪

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: একদম সত্যি কথা... :) ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন ।

৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৩

মামুন রশিদ বলেছেন: লেখাটা ছুঁয়ে গেলো । আপনার বাবার জন্য শুভকামনা ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৫

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ :)

৫| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার বাবার প্রতি রইল শুভ কামনা।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৬

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা কাল্পনিক ভালোবাসা :)

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩২

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: খুব ভালো লাগলো বাবা কে নিয়ে অনুভূতির কথা গুলো । আপনার ইচ্ছে পূরণ হোক , শুভকামনা আপনার আর আপনার বাবার জন্য ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: আপনার শুভকামনা বাস্তবে পরিনত হোক আপু :) ভালো থাকুন ।

৭| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৭

জয়নাল আবেদীন বলেছেন: খুব ভাল লাগল লেখাটি পড়ে ..
আপনার ইচ্ছে পূরন হোক এই কামনায় ..

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০০

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: :) ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন ভাইয়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.