নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীনচেতা মানবী

স্বাধীনচেতা মানবী

আমার নিজস্ব একটা দর্শন আছে । সেখান থকে লিখি, বলি, করি; কারো তোয়াক্কা করিনা ।

স্বাধীনচেতা মানবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দূর পাহাড়ের আমন্ত্রণে !!! বান্দরবান, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্ণা । পর্ব- ৩

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৯

এবার ঝর্ণা, আমার প্রেম...... জাদিপাই ঝর্ণা !
ঝর্ণায় যাবার পথটা এত্ত বেশি খাড়া নিচুতে চলে গেছে যে সবাই রীতিমত ভয় পেয়ে যাচ্ছিল । একটু সহজ করেই বলি এটা প্রায় ৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে খাড়া নিচের দিকে চলে গেছে । প্রায় ঘণ্টা দেরেক নিচুতে নামতে নামতে অবশেষে ঝর্ণা । আমি পাগলের মত জুতো, ঘড়ি, মোবাইল ফোন, ছুড়তে ছুড়তে সবার আগে পা ডুবিয়ে পাথরের উপর বসে পড়লাম । কেন উন্মাদ হলাম না আমি !!!!! ঝর্ণার নিচের দিকে রংধনু, এত্ত রঙ, এত সৌন্দর্য কেন এতদিন আমাকে গ্রাস করেনি । উপরের দিকে তাকিয়ে ঝর্ণার শুরুটা খুঁজতে চাইলাম কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব নয় জেনেই কাজটা করছিলাম । দেখে মনে হচ্ছে চিকন শ্যামলা শরীরটা কেউ স্বচ্ছ সাদা শাড়ি দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে, এটা সেই সুন্দরী ঝর্ণা । এমন চিকন খাড়া রাস্তা দিয়ে ঘণ্টা দেড়েক গড়াতে গড়াতে আর হাঁটতে হাঁটতে শেষমেশ পৌঁছে যাবার পরে সব কথা ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায় । এটাও ভুলে গিয়েছিলাম যে কিছুক্ষনের মাথায় আবার ফেরার পথে হাঁটতে হবে ! ঝর্ণার পানি এত বেশি বিশুদ্ধ যে সাবান শ্যাম্পু কিছুর প্রয়োজন ই পড়ছিল না । একটুও বাড়িয়ে বলছিনা, এটা সত্যিই !
এবার ফেরার পালা । নামতে একটুও কষ্ট হয়নি আমার কিন্তু কতটা নিচে নেমেছি এটা টের পেলাম ওঠার সময় । আমার দলের সবাই আমাকে নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিল । কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্যের বিষয় যে প্রায় পুরো ভ্রমণটায় আমার মত সুস্থ, স্বাভাবিক আর প্রাণবন্ত আর কেউই ছিলনা । বেলা প্রায় তিনটে, ক্ষুধার তাণ্ডবে সবাই বারবার নেতিয়ে পড়ছিল তবু চারটের ভেতর কেওক্রাডং পৌঁছাতে হবেই, নাহলে আজ রাতে এখানেই থাকতে হবে । এটা চিন্তা করে উঠতে শুরু করলাম । লাঞ্চ করে ৫ টায় আবার লেকপাড়ের সেই কটেজে ফেরার তাড়া । ততক্ষণে সূর্যটা আমাদের মতই তাড়াহুড়ো করে ঘরে ফিরবার আয়োজনে মত্ত । কমলা রঙের থালার মত রঙ ধরেছে ওটা । আমরা কেবলই হাঁটছি, এবার আর কোন রেস্ট নয় । এমন সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য জীবনে হবে কিনা জানিনা তবে এতগুলো রঙ দিয়ে সূর্যাস্ত হতে আমি কখনো দেখিনি । প্রথমবারের মত জীবনে এতকিছু করলাম যে বারবার ভেবে দেখতে ইচ্ছে করছিল আরও কতকিছু দেখার বাকি আছে প্রথমবারের মত । আসার সময় পথ যতই সংক্ষিপ্ত মনে হোক না কেন পথ ফুরনোর নাম ছিলনা । এর মধ্যে একজন তো কিছুক্ষন পর পর আছাড় খেয়ে আতঙ্কিত করে তুলছিল আমাদের, আরেকজনের সুগার ফল করল । তবে বাঁচলাম, জোছনার বদৌলতে । বেচারা সেদিন দিগন্ত জোড়া ধুয়ে মুছে দিচ্ছিল আলো দিয়ে । মশাল জ্বালালেও কিছুক্ষন পর পর নিভে যাওয়াতে মূমূর্ষ মোবাইল ফোনের বেঁচে থাকা চার্জে টর্চ জ্বালিয়ে তবে বাঁচোয়া । আগেই শুনেছিলাম সন্ধ্যেরাতে নাকি মাঝেমাঝেই স্থানীয়দের উৎপাতে বড়সড় ঝামেলায় পড়তে হয় । গাইডের তখন নিশ্বাস ফেলার ফুরসত মিলছিল না, একের পর এক সবাইকে হাত ধরে ধরে সংকীর্ণ রাস্তাগুলো পার করে দিচ্ছিল বেচারা । আমি তখন পুরদস্তুর একশনে :P একজনকে তো বলেই ফেললাম, ভাই- আমার কিন্তু সেই এডভেঞ্চার ফিল হচ্ছে । কেন যে প্রতিমাসে একবার করে এমন কিছু হয়ে ওঠেনা । বেচারা তখন আমার মুখের উপর কিছু না বললেও বুঝতে পারছিলাম আমাকে খাদ থেকে ফেলে দিতে যতটুকু রাগ একজন মানুষের লাগে তার একটুও কমতি নেই । ওই একটিবার আমাকে সবাই মেয়ে হিসেবে ট্রিট করল, সামনে পেছনে ৩ জন করে করে ভিআইপি প্রটোকল ! আমি আর কথা বাড়ালাম না । লাউয়াছড়া, সুন্দরীছড়া আর চিংড়ি ঝর্না পার করেই গাইড পরবর্তী পথকে বিপদমুক্ত ঘোষণা করলেন । এরপর প্রায় ঘণ্টা খানেক বাদে আমরা লেকপাড়ায় পৌঁছে গেলাম । একটা বড় দল তখন আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে গোল হয়ে বসে গান করছিল । আহ !!!!! কি একটা দৃশ্য, কি একটা সময়, কি একটা জায়গা !!!! যার প্রত্যেকটা পরতে পরতে, মুহূর্তে, মুহূর্তে ভাললাগাগুলো ঠাসাঠাসি করে জাপটে আছে ।
পরেরদিন ছিল আমাদের ফিরে আসা, রুমা বাজার হয়ে বান্দরবান । সেদিন ছিল রুমা বাজারে হাটবারের দিন । বাঁশের, বেতের ঝুড়িতে করে সবাই যার যার পণ্য নিয়ে পশরা সাজিয়ে বসেছে । আর ছিল এক সমুদ্র শুঁটকি !!!!! মানুষগুলো দেখে, তাদের জীবনধারা দেখে অনুভব করছিলাম এটাকেই মিশে যাওয়া বলে, প্রকৃতির সঙ্গে । আমাদের আগের সভ্যতা গুলো সহস্র বছর আগে হয়ত এমন করেই মিশে মিশে ছিল আর আমরা যেভাবে মিশে মিশে আছি কংক্রিটের সঙ্গে !


***********************************

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫২

এ. এস. এম. রাহাত খান বলেছেন: বান্দরবন গেলেও ঐ অব্দি যাওয়া হয় হয় নাই।।।আফসুস

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৮

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: জীবনে একটিবার হলেও যাবেন । জীবন জিনিসটা একবার হলেও উপলব্ধি করতে পারবেন :)

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

সুমন কর বলেছেন: বর্ণনা ভাল লাগল। ছবি দিলে অারো সুন্দর হতো।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৯

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: দেয়ার মত তেমন ছবি তোলা হয়নি আসলে । খুঁজে পেলে সঙ্গে সঙ্গে আপলোড করে ফেলব । ধন্যবাদ সুমন কর । :)

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভাল লাগল

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১০

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: ধন্যবাদ আপু :)

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১১

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সুন্দর হয়েছে --- বান্দরবান একাধিকবার গিয়েছি --- যতবার গিয়েছি ততবারই ভাল লেগেছে

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১১

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: বান্দরবান আসলে ভালো লাগার মতই একটা জায়গা । ধন্যবাদ আপু :) :)

৫| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৬

আলম দীপ্র বলেছেন: বাহ! বেশ !

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১১

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: :) :) :) :) :)

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০২

তুষার কাব্য বলেছেন: অতি চেনা জায়গার গল্প শুনতে ভালো লাগছিল খুব...তবে আরো কিছু ছবি দিলে গল্প টুকো পূর্ণতা পেত...গাইড কে/কারা ছিল?

সামনে পিছনে ৩ জন করে !!! আপনি তো দারুন ভিআইপি প্রটোকল পেলেন সবার থেকে :)
আসলে যে একবার পাহাড়ের প্রেমে পড়েছে তার তো পাহাড় কে ছেড়ে বেশি দিন থাকা একেবারেই কঠিন ।এক মাসের বেশি হয়ে যাচ্ছে আমিও যেতে পারছিনা ।দম বন্ধ হবার মত অবস্থা ।

আপনার অভিযাত্রী জীবনের শুভকামনা থাকলো ।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৬

স্বাধীনচেতা মানবী বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন কাব্য । কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় আর হয়ে উঠছে না । আশা করছি সামনের সেমিস্টার ব্রেকে আবারো পাহাড় আর ঝর্না দর্শনে বেরুবো । অনেক ধন্যবাদ কাব্য !!! :) :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.