নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষার্থী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা।

কালো গুপ্তচর

An average person, always lack of perfection

কালো গুপ্তচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধ্বংসের পথে ক্রিকেট : কঠিন বাস্তবতা

০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৫২

স্কোরবোর্ডে ২২ রান যোগ করতেই ৩ উইকেট পড়ে গেলো। ৪র্থ উইকেট জুটিতে ৫ম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামল শফিক। তার সাথে ক্রিজে আছে তানিম। খেলা চলছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ এবং আয়ারল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২৩ দলের মধ্যে। টসে জিতে ফিল্ডিং করছে আয়ারল্যান্ড। ব্যাট হাতে প্রথম থেকেই ধুঁকছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ৬ষ্ঠ ওভার শেষ হওয়ার পথে। প্রতিপক্ষের পেসার বোলারদের তোপের মুখে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যখন নাজেহাল এই সংকট মুহুর্তে ক্রিজে শফিকের আগমন।

তানিমকে সাথে নিয়ে ৭৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ল সে। তারপর তানিম আউট হয়ে যাওয়ার পর বাকি ব্যাটসম্যানরাও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু একপ্রান্তে পাহাড়ের মতো অটল ছিল শফিক। একাই বাংলাদেশের স্কোর আড়াইশো পার করাল সে।

ইনিংস বিরতির পর বাংলাদেশের বোলাররা যেন খেই হারিয়ে বসল। একের পর এক বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছুটতে লাগল সারা মাঠ জুড়ে। ১৫তম ওভারে বল করতে আসল শফিক। বাহাতি স্পিনার সে। ততক্ষণে আয়ারল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৬০ ছাড়িয়েছে। শফিকের ঘূর্ণি জাদুতে টপ ওর্ডার থেকে মিডল ওর্ডারে পুরোই ধ্বস নামল। একাই ছয়জন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠালো সে মাত্র ২০ রানের বিনিময়ে ৭ ওভার বোলিং করে। আর তার এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারনেই ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। ম্যান অব দা ম্যাচের সম্মানও তার গলায় জুটল।

সবাই বলে ছেলেটা অনেক প্রতিভাবান। "এ" দল, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে অনেক খেলায় বাংলাদেশের সম্মান রক্ষা করেছে সে। এইতো গত বছর এশিয়ান গেমসে প্রায় একাই বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মর্যাদা এনে দিয়েছে সে। বাংলাদেশ দলের যখনই করুণ অবস্থা তখনই সে ত্রানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়। সবার কাছে প্রতিভাবান এই ছেলেটা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়নি এখনো।

সবার মত তারও অনেক দিনের স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলার, দেশের নাম উজ্জল করার। তার অনেকদিনের ইচ্ছা এদেশের তীর্থের কাকের মত প্রতিক্ষার প্রহর গোনা মানুষগুলোর কাছে বিশকাপ ট্রফি এনে দিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেবে যে আমরাও পারি। কিন্তু তার স্বপ্নগুলো স্বপ্নঈ থেকে যায়। বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা খুজে পায়না সে।

আজকের খেলায় জিতানোর পর সারাদেশ জুড়ে শফিকের প্রশংসার বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক, টুইটারে তাকে নিয়ে মানুষের কি গর্ব। বসে বসে তাই দেখছিল শফিক আর মুচকি হাসছিল। বুকের ভিতর একটা তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব করল সে। মনের ভিতর গহীনে হু হু করে কেঁদে উঠল কেউ। ল্যাপটপটা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে চোখ মুদল শফিক। তার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল অনেক স্মৃতিময় ক্যানভাস।

তার বাবার ইচ্ছে ছিল সে ডাক্তার হবে। মানুষের সেবা করবে। কিন্তু ক্রিকেটের নেশায় মত্ত শফিককে বাবা কিছুতেই বাগে আনতে পারেননা। তাদের অভাবের সংসার। ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হলে সংসারে শান্তি আসবে এতাই তার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু শফিকের এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিলনা। সে খেয়ে না খেয়ে অনেক দুর-দুরান্তে গিয়ে খেলে আসত। আশপাশের দশ গ্রাম জুড়ে তার সুনাম ছিল।

একদিন তাদের জেলা স্টেডিয়ামে "ক্রিকেটার বাছাই" শুরু হল। খবরটা শোনামাত্রই শফিক মনস্থির করল সেখানে যাওয়ার। কিন্তু সে থাকে অজপাড়া গায়ে। সেখান থেকে জেলা স্টেডিয়ামে যাওয়া আসা অনেক খরচ। এত টাকা সে পাবে কোথায়? বাবাকে বললে তিনি রাজি হলেননা। বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসল সে। শেষমেশ স্থির করল বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েই যাবে সে।

শফিকের খেলা পছন্দ হল নির্বাচকদের। অনূর্ধ্ব-১৪ দলে খেলার সুযোগ পেল সে। সেই থেকেই শুরু। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শফিককে।

অনেকগুলো খেলায় ভাল পারফরম্যান্সের বদৌলতে ধীরে ধীরে উন্নতি হতে লাগল তার। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়েই সে যেন নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেল। একের পর এক ভালো খেলা উপহার দিতে লাগল। দেশের বাইরে অনেক টুর্নামেন্টে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখল সে। আর এখনতো অনূর্ধ্ব-২৩ দল, "এ" দলের হয়ে নিয়মিতই খেলে সে। লীগের দলগুলোর মধ্যে কাড়াকাড়ি পরে যায় তাকে নিয়ে। সবাই তাকে নিয়ে খুব খুশী কিন্তু শফিকের মনে আনন্দ নেই। আজ অনেক বছর ধরে খেলছে সে। কিন্ত যে স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেটে আসা সেই স্বপ্ন বুঝি আর পূরণ হবেনা তার। জাতীয় দলের খেলার, দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ বুঝি সে পাবেনা। প্রতিবার যখন দল ঘোষণা করা হয়, অনেক আশা নিয়ে প্রতিক্ষার প্রহর গোনে সে। এইতো সেবার জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজের আগে সবাই বলছিল এবার সে জাতীয় দলে সুযোগ পাবেই। কিন্ত বিধি বাম! তার প্রতিক্ষার পালা শুধু দীর্ঘই হতে থাকে। কিন্ত জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়ে উঠেনা। তার চোখের সামনে অনেক ছেলে তার থেকে খারাপ খেলা সত্ত্বেও জাতীয় দলে ডাক পায় কিন্তু তার ভাগ্য যে কোথায় আটকে আছে সে বুঝতে পারেনা।

শুয়ে শুয়ে ভাবছে শফিক। তার মাথার ভিতর মাকড়সার জালের মত সুতো জুড়ে দিচ্ছে সে। হঠাৎ সে খুজে পেল। সে বুঝতে পারল তার জাতীয় দলে ডাক না পাওয়ার কারন। অজপাড়াগায়ের এক গ্রাম থেকে এসেছে সে। তার কোনো মামা-চাচা ক্রিকেট বোর্ডে চাকরী করেননা। কোনো রাজনীতিবিদের সংগেও তার তেমন ভালো সম্পর্ক নেই। সে কোনো বিশেষ দলের সমর্থকও নয়। তাহলে সে কেন জাতীয় দলে সুযোগ পাবে? তার স্বপ্ন কেনইবা পূরণ হবে?

হ্যা, শফিকের মত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়না। কারন এদেশেতো খেলা দিয়ে একজন খেলোয়াড়কে মুল্যায়ন করা হয়না। মামা চাচার জোর থাকলে যে কেউ জাতীয় দলে খেলতে পারে।

আর এভাবেই একদিন গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষের জন্য ধ্বংস হবে লাখো কোটি তরূনের স্বপ্ন আর ধুলোয় মলিন হবে ১৬ কোটি মানুষের ভালোবাসা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩৪

নিরব বাংলাদেশী বলেছেন: পাপন হয়তো একদিন বলে উঠবে "ক্রিকেট এত ভেজাইল্লা খেলা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না" ব্যস সাত খুন মাফ কারো কোন দোষ নাই

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৪২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: পথে ? আমি তো দেখি ধ্বংস হয়েই গেছে !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.