নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কল্প-গল্প : ওমেগা ক্যারেকটার

১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪২

ভ্রু কুচকে চশমার ফাঁক দিয়ে নিজের লেখা সমীকরণের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন প্রফেসর রহমান। তাঁর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মাথার চুলগুলো ধবধবে সাধা, লিকলিকে শরীর তাঁর উপর ধূসর বর্ণের একটি ঢিলেঢালা কোর্ট পরাতে বেমানান লাগছে তাকে অবশ্য সেদিকে তাঁর কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। প্রফেসর রহমান আজ বেশ কয়েকদিন যাবত চিন্তিত, সমীকরণটি কিছুতেই মিলছে না, তিনি এই নিয়ে সকাল থেকে তেরো বারের মত পুনরায় পুরো সমীকরণটি ব্ল্যাক বোর্ডে লিখে ফেললেন। একই সমীকরণ বার বার লেখলে অনেক সময় ভুলটা চোখে পরে, তবে আজ কোন ফল পাচ্ছেন না তিনি। প্রফেসর রহমান নামকরা বিজ্ঞানী, তাকে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মস্তান লোক হিসেবে ধরা হয়, বর্তমানে তিনি নিজের ল্যাবে টাইম-মেশিন বানানোর কাজ করছেন । এই যন্ত্র দিয়ে ইচ্ছেমত অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে ভ্রমণ করা যাবে। এই গবেষণার জন্য তিনি একটা হাইপোথেসিস দার করিয়েছেন মনে মনে, যদি সমীকরণের মান ‘ওয়ান’ হয় তবে সাকসেস এবং ‘জিরো’ হলে বুঝতে হবে ফেইল । ফিজিক্যাল মেশিন বানানোর কাজ মোটামুটিভাবে শেষ কিন্তু সমীকরণটি উল্টাপাল্টা মান দিচ্ছে, তার লজিক অনুসারে মান ‘ওয়ান’ হবার কথা কিন্তু কম্পিউটার স্কিনে এক এক সময় এক এক মান দেখায় , একবার দেখায় ‘ওয়ান’ আরেকবার ‘মাইনাস ওয়ান’। কোথাও একটা ভুল হচ্ছে অন্তত সমীকরণের মান মাইনাস হবার কথা নয়!

“স্যার কফিটা খেয়ে নিন।” পিছন থেকে দ্বিতীয়বারের মত বলল লোহান ।

প্রফেসর রহমান শুনতে পেল বলে মনে হল না । তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন সমীকরণের দিকে। লোহান এই ল্যাবে নতুন জয়েন করেছে সহকারী গবেষক হিসেবে, বয়সে তরুণ কিন্তু প্রচণ্ড মেধাবী । আরেকবার ডাকল লোহান, এবার প্রফেসর রহমান ব্ল্যাক বোর্ড থেকে দৃষ্টি নামিয়ে লোহানের দিকে তাকালেন । লোহানকে ইশারায় সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বললেন ।

“আমাদের কোথাও একটা ভুল হচ্ছে! তোমার কি মনে হয় লোহান ?” কিছুটা হতাশ এবং দীর্ঘশ্বাসের চাপে তীক্ষ্ণ তাঁর কণ্ঠ।

লোহান সামনের চেয়ারটি টেনে বসল। কফির মগটি প্রফেসর রহমানের দিকে এগিয়ে দিল। তারপর নিজের জন্য আনা আরেকটি কফির মগে সুড়ুত করে চুমুক দিয়ে বলল “আমার মনে হয় আমরা ঠিকভাবেই এগোচ্ছি স্যার। আইনস্টাইনের সূত্র অনুসারে কোন বস্তু আলোর গতির সমান অথবা তার চেয়ে বেশী গতিতে চললে সময়কে অতিক্রম করা যায় । আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে হিউম্যান বডি এত দূত অতিক্রম করলে শরীর নিতে পারবে কিনা!”

প্রফেসর রহমান জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললেন “হুম এর জন্য আমি একটু অন্যভাবে ট্রাই করেছি , সমীকরণটা এমনভাবে সাজাতে চেষ্টা করছি যাতে সরাসরি কোন হিউম্যান বডিকে এত দূত মুভ করতে না হয় , বরং টার্গেটের (যে ট্রাভেল করবে) চারদিকে হাই রেডিয়েশন ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিজম কম্পন উৎপন্ন হবে । এখানে টার্গেটের মস্তিষ্কে এক ধরনের ভ্রম তৈরি হবে , মস্তিষ্ক ধরে নিবে সে ভ্রমণ করছে প্রচণ্ড বেগে । আর এভাবেই টার্গেট আমাদের ত্রি-ডাইমেনশনাল স্পেস থেকে ফোর ডাইমেনশনে স্পেসে জাম্প করবে।”

প্রফেসর রহমান লোহানের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা করলেন, তারপর বললেন “ব্যাপারটা কিভাবে ঘটবে বুঝতে পারছ?”

উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলতে শুরু করলেন “আমরা ত্রি-ডাইমেনশনাল ওয়ার্ল্ডে থাকি, এখানে দৈর্ঘ্য , প্রস্থ এবং ডেপথ বা একটা বস্তু থেকে আরেকটি বস্তুর দূরত্ব এই তিনটা জিনিষ মিলে ত্রি-ডাইমেনশন হয় । তুমি কি জানো আমাদের চোখ টু-ডাইমেনশনাল কিন্তু আমরা ত্রি-ডাইমেনশনাল ইফেক্ট দেখতে পাই? আমরা যখন কোন বস্তুর দিকে তাকাই , আমাদের দুই চোখ সেই একই বস্তুর দুটি এঙ্গেল থেকে দুটি ইমেজ আমাদের মস্তিষ্কে পাঠায়। আমাদের মস্তিষ্ক তখন এই একই বস্তুর দুটো ইমেজের কো-রিলেশন পরিমাপ করে ডেপথ বের করে আর এভাবেই আমরা টু ডাইমেনশনাল চোখ দিয়ে ত্রি-ডাইমেনশনাল ওয়ার্ল্ড দেখি। সত্যিকার অর্থে আমরা সরাসরি ত্রি-ডাইমেনশনাল ওয়াল্ড দেখি না, আমাদের মস্তিষ্ক ত্রি-ডাইমেনশনাল একটি ভ্রম তৈরি করে। আমিও হাই রেডিয়েশন তৈরি করে মস্তিষ্কে এক ধরনের ভ্রম তৈরি করে ফোর ডাইমেনশনাল ওয়ার্ল্ড -এ প্রবেশ করতে চাই।”

লোহান বেশ নড়েচড়ে বসল প্রফেসর রহমানের কথা শুনে। কফি খাওয়া থামিয়ে দিয়ে বলল “তাহলে টাইমটাকে আপনি আরেকটা ডাইমেনশন ধরছেন ! এখানে আমার একটা দ্বিমত আছে , আমার মতে টাইম কোন ডাইমেনশন নয় এটা কেবল মাত্র ডিরেকশন।”

নিজের চশমাটা টেবিলের উপর রেখে গলা পরিষ্কার করে প্রফেসর রহমান বললেন “সময়টাকে ডিরেকশন বলতে পারো কিন্তু এটাও-তো একটা ডাইমেনশন , সুপারষ্টিং সূত্র অনুসারে মহাবিশ্বে দশ ডাইমেনশন অবস্থিত, তার মধ্যে ৪র্থ ডাইমেনশন হল সময় ।”

“হুম । আপনি ৪র্থ ডাইমেনশনে কেন জাম্প করতে চাচ্ছেন, এখানে আমাদের কি ধরনের সুবিধা হতে পারে?” জিজ্ঞেস করল লোহান।

“আমরা ৪র্থ ডাইমেনশনে পৌছতে পারলে, সময় পরিভ্রমণ করতে পারব। আমাদের মহাবিশ্ব , এই গ্রহ উপগ্রহ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে । সময় আমাদের এই মহাবিশ্বেই অবস্থিত, এর বাইরে সময়ের কোন অস্তিত্ব নেই। এখন ধর তুমি যদি কোন ভাবে ৪র্থ ডাইমেনশনে পৌছাতে পারো তাহলে মহাবিশ্বের বাহিরে জাম্প করবে অর্থাৎ তুমি সময়ের বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে । মহাবিশ্বের বাহিরে অবস্থান করলে সেখান থেকে মহাবিশ্বের যে কোন সময়ে তুমি ভ্রমণ করতে পারবে।”

প্রফেসর রহমানের কথা শুনে লোহান নিজের মেরুদণ্ড সোজা করে বসল, সামনের দিকে ঝুঁকে এসে বলল, “সর্বোচ্চ ডাইমেনশন মানে নবম বা দশম ডাইমেনশন থেকে কি করা যাবে?”

প্রশ্নটি শুনে বেশ মজা পেল প্রফেসর রহমান। বেশ আগ্রহ নিয়ে বললেন “দশম ডাইমেনশনে তুমি এমন এক পয়েন্টে পৌঁছাবে যেখানে সব কিছুই সম্ভব , এখানে পসিবল সব ধরনের মহাবিশ্বকে দেখা যাবে এমনকি কল্পনাতীত বিষয়গুলোর লজিকাল ব্যাখ্যা পাবে সেখানে। সেখান থেকে আমাদের এই পরিচিত মহাবিশ্বকে অন্যভাবে আবিষ্কার করা যাবে , আমাদের এই ত্রি-ডাইমেশনাল ওয়ার্ল্ডকে যেভাবে দেখি সেটা আসলে অন্যভাবে ধরা দিবে হয়ত।”

থেমে আবার বললেন “কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সমীকরণটি এক এক সময় এক এক মান দেখায়, একবার “ওয়ান” আরেকবার “মাইনাস ওয়ান” দেখায়। আমার হাইপোথেসিস অনুসারে এর মান কখনই “মাইনাস ওয়ান” হবার কথা নয়, হয় “জিরো” হবে নয়ত “ওয়ান”।”

দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ রইল। প্রফেসর রহমানকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছে হঠাত। লোহান নীরবতা ভেঙে প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে জিজ্ঞেস করল “স্যার কফি-টাকি বেশি কড়া হয়ে গেছে? এক্সটা চিনি দিব?”

লোহানের কথা শুনে প্রফেসর রহমান হঠাত লাফিয়ে উঠলেন। “পেয়ে গেছি, পেয়ে গেছি। তোমাকে ধন্যবাদ লোহান।”

লোহান হতভম্ব হয়ে প্রফেসর রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখেমুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন একে জিজ্ঞেস করল “স্যার বুঝলাম না। কি পেয়ে গেছেন, আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন কেন?”

প্রফেসর রহমান দাঁড়িয়ে লোহানের দুই কাঁধে তাঁর দুই হাত দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে বললেন “তোমার এক্সটা শব্দটা শুনে আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। এই সমীকরণের শেষে যদি একটি এক্সটা কন্সট্যান্ট বা অপরিবর্তিতশীল মান “প্লাস ওয়ান” যোগ করি তাহলে এর মান কখনো মাইনাস ওয়ান হবে না। এটা হয় ওয়ান অথবা জিরো হবে।”

প্রফেসর রহমান নিজের লেখা সমীকরণটা কিছুটা পরিবর্তন করে লোহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন “তুমি সমীকরণটাকে কম্পিউটারে ইনপুট দাও, একটা লজিকাল আউটপুট আসার কথা । সফল হলে আমাদের এই আবিষ্কার মানব জাতির জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে । চারদিকে হইচই পরে যাবে।”

লোহান সমীকরণটা কাছে টেনে নিয়ে ভালভাবে দেখে নিলো , তারপর ফিজিক্যাল মেশিনের মনিটরের সামনে গিয়ে বসল । কম্পিউটার এ ইনপুট দিতে গিয়ে সামান্য একটু ভুল করে বসল ,সমীকরণের এক জায়গায় প্লাসের জায়গায় ভুল করে মাইনাস বসিয়ে দিল । তারপর পাশে থাকা মেশিনের বাটনটাকে নিচে নামিয়ে দিল । গমগম শব্দ করে মেশিন চালু হয়ে গেল । প্রফেসর রহমান এবং লোহান উদ্বিগ্ন নয়নে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল । এই শীতের মধ্যেও উত্তেজনায় ঘামছে প্রফেসর রহমান, তার দৃষ্টি মনিটরের দিকে । কিছুক্ষণ পর মনিটরে আউটপুট ভেসে উঠল , লোহান আউটপুট দেখে চমকে উঠে প্রফেসর রহমানের দিকে তাকাল । মনিটরে জিরো অথবা ওয়ান দেখানোর কথা কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই দুটোর কিছুই দেখালো না । মনিটরে শুধু মাত্র “ওমেগা ক্যারেকটার” দেখাচ্ছে ।

“এর মানে কি স্যার? নিউমেরিক সংখ্যা দেখানোর কথা কিন্তু এখানে “ওমেগা ক্যারেকটার” আসলো কোথা থেকে?” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল লোহান ।

প্রফেসর রহমান উত্তেজিত হয়ে বলল “ওহ মাই গড, এর মানে আমরা যখন খুশী তখন এক মুহূত্যেই এক ইউনিভার্স থেকে আরেক ইউনিভার্সে ভ্রমণ করতে পারব।” (শেষ)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:১৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: :)

++++++++

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩১

কাছের-মানুষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৫২

সুমন কর বলেছেন: প্লট কমন ছিল কিন্তু বর্ণনা নতুন এবং ভালো হয়েছে।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯

কাছের-মানুষ বলেছেন: হুম , এর উপর অনেক গল্প হয়েছে । তাই একটু অন্যভাবে লেখতে চেয়েছিলাম ।
পড়েছেন ভাল লাগল ।
ভাল থাকুন ।

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:



৩ ডাইমেনসনের বাহিরে কঠিন পদার্থকে এখনো কল্পনা করতে পারি না, সমস্যা

২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪৯

কাছের-মানুষ বলেছেন: ৩ ডাইমেনশন এর বেশী কল্পনা করা সত্যিই কঠিন কর্ম ! তবে সময়কে আরেক ডাইমেনশন ধরে ৪ ডাইমেনশন কল্পনা করতে পারেন সহজে ! ৪ ডাইমেনশনের উপরে কল্পনা করা আমার কাছে কঠিন মনে হয় ! তাই এর উপরে কল্পনা করে ব্রেনের উপর প্রেশার কম দেই !

পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল ।

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:২০

প্রামানিক বলেছেন: দারুণ হয়েছে। ধন্যবাদ

২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই পড়ার জন্য ।
ভাল থাকবেন সবসময় ।

৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৫৬

রাকু হাসান বলেছেন:

গুগলে সার্চ করতে গিয়ে আপনার লেখাটি আসলো । অনেক দিন ধরেই মনে মনে মিস করছি আপনাকে । কেমন আছেন /? যেখানেই থাকুন ফিরে আসুন সামুতে সেই প্রত্যাশা । আপনার পোস্ট ও প্রাণবন্ধ মন্তব্য মিস করি ।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৫:৪৫

কাছের-মানুষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ খোজ নেয়ার জন্য। গত বছরটা আমার জন্য অনেক কঠিন একটি বছর ছিল। সেটা নিয়ে নতুন একটি পোষ্টে করেছি মাত্র।

এখন থেকে আবারো নিয়মিত হব আশা করি। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.