নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !
১।
'উহু, আপনি এই গল্প আরো অনেকবার বলেছেন ।' ধাতব কণ্ঠটি গমগমে গলায় বলল।
'আরো বলব এবং তোমাকে তা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ' ধোয়া উঠা চায়ে সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে চুমুক দিতে দিতে বললেন বিজ্ঞানী নিনিন।
'একই গল্প বার বার শুনতে ভাল লাগে না! ' চিনচিনে গলায় বলল ধাতব কণ্ঠটি।
এবার বিজ্ঞানী নিনিন বেশ বিরক্ত হলেন। চায়ের পেয়ালাটি টেবিলে রেখে রাগত স্বরে বললেন 'তোমাকে আমি তৈরি করেছি আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য। এই ছোট্ট ল্যাবরেটরিতে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। কাজেই আমি যাই বলব এবং যতবার বলব তোমাকে তা শুনতে হবে।'
ছোট কম্পিউটারের মনিটরে নিজের গম্ভীর চেহারাটা ফুটিয়ে তুলল বিটা ওয়ান।তারপর গলার স্বর যথা সম্ভব শান্ত এবং মোলায়েম করে বলল 'আপনি আজ সকাল থেকে দুইবার একই গল্প করেছেন। আপনি ইদানীং সব কিছুই খুব দ্রুত ভুলে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী নিনিন।একই কথা শুনতে বিরক্তি লাগে মনে!'
এবার বিজ্ঞানী নিনিন বেশ বিরক্ত হলেন। মাঝারী মানের খাঁকারি দিয়ে বললেন 'তুই মাত্র দুইশত মেগাবাইটের একটি নির্বোধ প্রোগ্রাম। আমি মেশিন লার্নিং ব্যাবহার করে লিখেছি, কম্পিউটারের ভোকাল কর্ডের মাধম্যে কিছু কথা বার্তা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তোর আর কোন গুন নেই, তোর আবার মন কিসের-রে ?'
বিটা ওয়ান বুঝতে পারল বিজ্ঞানী নিনিন রেগে গেছেন, যখন সে রেগে যায় তখন তাকে তুই তুকারি করে। বিটা ওয়ান অপমানে বেশ কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইল। তারপর গলার স্বরে যথাসম্ভব ভাব গাম্ভীর্য্য ফুটিয়ে তুলে বলল 'আপনি আমাকে অপমান করছে বিজ্ঞানী নিনিন।'
'চুপ কর হারামজাদা। পশ্চাৎ দেশে একটি লাথি মেরে তোকে ফেলে দিব । তুই সাধারণ একটি প্রোগ্রাম, তোর আবার মানুষের মত অনুভূতি আছে নাকি?'
'বিজ্ঞানী নিনিন আমার মানব আকৃতি কোন শরীর নেই, কম্পিউটারে একটি মুখাবয়বের ছবি আছে, পশ্চাৎদেশ বলতে আমার কিছু নেই।' আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল বিটা ওয়ান......
এবার বিজ্ঞানী নিনিন মুখ শক্ত করে ফেললেন, হাতে ধরে থাকা চায়ের কাপ জোড়ে মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে মনিটরের দিকে তাকালেন।এবার বিটা ওয়ান চুপ হয়ে গেল কারণ সে বুঝতে পেরেছে বিজ্ঞানী নিনিনের রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রাগলে কখন কি করে তার কোন ঠিক নেই।
'আমার ভুল হয়েছে। আপনি বলুন।' সারেন্ডার করার গলায় বলল বিটা ওয়ান।
বিজ্ঞানী নিনিন নিজের কাজের চেয়ারটাতে হেলান দিয়ে স্মৃতি হাতড়ে বললেন 'আমার বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক, তিনি নিজে শিক্ষিত না হলেও বেশ শিক্ষানুরাগী ছিলেন।আমার দরিদ্র বাবা অর্থকষ্টে থেকেও আমাকে পড়াশুনার শিখিয়েছেন। পড়াশুনা করে আমি বিজ্ঞানী হলাম। বর্তমান এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আমাকে গণ্য করা হয়।'
বিজ্ঞানী নিনিন একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর আমার বিখ্যাত সমীকরণটি মানব সভ্যতাকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। তার কল্যাণে আমার যশ খ্যাতি খুব দ্রুতই চারদিকে ছড়িয়ে পরল। কাজের ব্যস্ততায় দেখতে দেখতে কখন যে জীবনের চল্লিশটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে তার কোন খেয়ালই ছিল না আমার। বাবা আজ বেচে নেই, আফসোস তিনি আমার এই অর্জনটুকু দেখে যেতে পারলেন না।' এটুকু বলেই বিজ্ঞানী নিনিন একটু থামলেন, গলাটা ভীষণ আসে তার, বুকের মাঝে একটি চাপ অনুভব করেন তিনি।
একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার শুরু করলেন, ধরা গলায় বললেন 'সব কিছু শুরু হয়েছে মাস ছয়েক আগে থেকে। আমি জানতে পারি, আমি এমনেশিয়ায় আক্রান্ত আর মাত্র বছর খানেক বাদেই নিজের সম্পূর্ণ স্মৃতি শক্তি হারিয়ে অবুঝ শিশুতে পরিণত হব।'
বিজ্ঞানী নিনিন একটু ঝিরিয়ে নিলেন, তারপর যোগ করে বললেন 'এই সত্যটি আমি মেনে নিতে পারিনি। যেই পৃথিবী আমাকে প্রতাপশালী বিজ্ঞানী হিসেবে জানে, আমার একটি লেকচার শুনার জন্য বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় নিমন্ত্রণ করে, সেই আমাকেই এক সময় মানুষ করুণার চোখে দেখবে, এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই পৃথিবীকে আমি আমার রোগ সম্পর্কে জানাইনি। আমার উদ্দেশ্য নিজের ক্লোনিং তৈরি করব। তারপর নিজের সমস্ত সত্তা এবং স্মৃতিকে নতুন রোগহীন শরীরের স্থানান্তর করব। বর্তমানে পৃথিবীতে হিউম্যান ক্লোনিং সম্পূর্ন্য নিষিদ্ধ তাই লোক চক্ষুর অন্তরালে গহীন জঙ্গলে এসে মাটির নিচে এই গবেষণাগার বানিয়েছি।'
বিজ্ঞানী নিনিন আড়চোখে মনিটরে বিটা ওয়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে বললেন 'আমার কাজ হয়ে গেলেই তোমার মত নির্বোধ ২০০ মেগাবাইটের এই প্রোগ্রামকে ডিলিট মেরে দিব। এই ল্যাবরেটরি শীল গালা করে চলে যাব।'
বিটা ওয়ান একটি অদ্ভুত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বিজ্ঞানী নিনিন এই প্রথম বিস্ময়ে কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকালেন, মানুষের মত এরকম সূক্ষ্ম আবেগের অনুভূতি তিনি আগে লক্ষ্য করেননি বিটা ওয়ানের মাঝে।তিনি চারপাশ গুমট করা একটি রহস্যের গন্ধ পেলেন।
২।
বিজ্ঞানী নিনিন দিনে দুটোর বেশী সিগারেট খায় না। তবে আজ তার নিয়মের বাইরে গিয়ে ইতিমধ্যেই সকাল থেকে চারটি সিগারেট খতম করেছেন। পঞ্চম সিগারেটে লম্বা করে টান দিয়ে ঠোট গোল করে উপরের দিকে ধোয়া ছাড়লেন, তারপর নবজাত সিগারেটটি অ্যাশট্রেতে গুজে কাজে মনোযোগ দিলেন। আজকাল সব কিছুই বেশ দ্রুতই ভুলে যাচ্ছেন তিনি।সকালে নাস্তা করেছেন কি করেননি তাও মনে থাকে না অনেক সময়। বিটা ওয়ান তার যান্ত্রিক গলায় খাবার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে আজ সকালে, বেটা একটি বলদ প্রোগ্রাম হলেও বেশ কাজের মনে মনে ভাবলেন বিজ্ঞানী নিনিন।
ল্যাবরেটরিটা দেখতে খুবই ছোট, মাঝখানে দুটি বিছানা সমান্তরালভাবে রাখা আছে। বেশ কিছু যন্ত্রপাতি চারদিকে ছড়ানো ছিটানো, টেবিলটার পাশে ক্লোনিং যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটর। বিজ্ঞানী নিনিন রেফ্রিজারেটরের ভিতর থেকে একটি স্বচ্ছ কাচের তৈরি টিউব বের করলেন। টিউবটিতে কয়েক বিলিয়ন ডিম্ব সেল আছে, ক্লোনিং এর জন্য এটা খুবই দরকারি। এখন তাকে যা করতে হবে, এই ডিম্ব সেল থেকে সাবধানে ডি,এন,এ, ক্রোমোজোম এবং জিন তথা সমগ্র নিউক্লিয়াস বের করে ফেলতে হবে। তার পর এই নিউক্লিয়াস বিহীন ডিম্ব-সেলে নিজের সেলের ডি,এন,এ, ক্রোমোজোম এবং জিন প্রতিস্থাপন করতে হবে।
বিজ্ঞানী নিনিন পুরো কাজটাই খুব সর্তকতার সাথে করতে লাগলেন। ব্যাপারটা এত সহজ নয়, সেল সুস্থ সবল না হলে পুরো কাজটা আবার নতুন করে করতে হয়, অনেকটা ট্রায়াল এবং ইরোরের মাঝে দিয়ে যেতে হয়। কয়েকদিন চেষ্টা করার পর বিজ্ঞানী নিনিন তার কাজে সফল হলেন, সেলটাতে এক ধরনের রিএকশন দেখে নিশ্চিন্ত হলেন ব্যাপারটা। এই সেলটাকে তিনি কৃত্রিম প্রজনন যন্ত্রে প্রতিস্থাপন করলেন। বিজ্ঞানী নিনিনের হাতে সময় নেই, কারণ ডাক্তারি হিসেব মতে আর কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের সমস্ত স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন তিনি, স্বাভাবিক নিয়মে এই সেলকে বড় হতে দিলে অনেক সময় লাগবে নিজের বয়স সীমায় আসতে, তাই সে বিশেষ এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যাবহার করলেন ক্লোনিং এর গ্রোথ রেট ত্বরান্বিত করার জন্য।
বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল। তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন নিজের ক্লোনিং স্যাম্পলটা বড় হবার জন্য। মাঝে মাঝে বড্ড একা লাগে তার, তখন বিটা ওয়ানের সাথে কথা বলেন তিনি। আজকাল বিটা ওয়ানের মাঝে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন তিনি, তাকে মাঝে মাঝে বেশ কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।
ওভেন থেকে গরম করা একটি পাউরুটি নিজের মুখে গুজে বললেন 'বিটা ওয়ান আছ ?'
'ঝি মহামান্য বিজ্ঞানী নিনিন।'
'কেমন আছ ?'
বিটা ওয়ান কম্পিউটার মনিটরের তার চেহারাটা ফুটিয়ে তুলল। তারপর ঠোট দিয়ে জিব ভিজিয়ে বলল 'মোটামুটি'
বিজ্ঞানী নিনি ভ্রু কুচকে মনিটরের দিকে তাকালেন। 'মোটামুটি কেন ?'
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল 'এমনিই!'
'তুমি একটি নির্বোধ প্রোগ্রাম, তোমার মাঝে বায়োলজিক্যাল কোন অর্গান নেই, কাশি দিবার হেতু কি?'
'আমি অনেকটা মানবিক হওয়ার চেষ্টা করছি, এতে আপনি আমাকে নিজেদের একজন ভাববেন, আপনার সাথে ইমোশনাল এটাচমেন্ট বাড়বে' আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল...
বিটা ওয়ানের কথা শুনে বেশ চমকে গেলেন বিজ্ঞানী নিনিন। নিজেকে অনেকটা সামলে কথার মাঝে একটি ঝাড়ি দিয়ে বললেন 'আমার সামনে কাশির অভিনয় করতে হবে না। তোমার মানবিক হবার কোন দরকার নেই!'
এবারো বিটা ওয়ান খুক খুক করে কাশল।
বিজ্ঞানী নিনিন বুঝতে পারলেন বিটা ওয়ান ইচ্ছে করেই তাকে রাগাবার জন্য কাশি দিয়েছে। এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে বললেন 'ঐ নির্বোধ ২০০ মেগাবাইটের প্রোগ্রাম।চুপ কর বেয়াদব।'
'বিজ্ঞানী নিনিন আপনি আজকাল খুবই অল্পতেই রেগে যাচ্ছেন। এমনেশিয়া রোগটি আপনার স্মৃতিশক্তি বিলুপ্তি করার সাথে সাথে আপনার রসবোধকেও নিঃশেষ করছে দিনকে দিন।'
বিজ্ঞানী নিনিনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, টেবিলের উপরে থাকা কাচের গ্লাসটি নিচে ফেলে দিলেন তিনি।
'আর একটি কথা বলল তোর খবর আছে। আমি একজন সম্মানিত বিজ্ঞানী, আর তুই আমার সৃষ্টি একটি নির্বোধ শ্রেণীর প্রোগ্রাম। আমাকে জ্ঞান দিতে আসবি না। হারামজাদা একটি থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিব!'
'বিজ্ঞানী নিনিন আমার মানুষের কোন অবয়ব নেই! গাল বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছে একটু বললেন!' বেশ মলায়েম স্বরে বলল বিটা ওয়ান
এবার বিজ্ঞানী নিনিন রাগে থরথরে করে কাপতে লাগলেন। নিজেকে কোনমত সামলে বললেন 'হারামজাদা চুপ কর! আর একটিও কথা বলবি না!'
'আপনি বেশ উগ্র হয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী নিনিন। নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখুন, নইলে...'
'নইলে কি ? বেয়াদব!' বলেই মাউস দিয়ে রাগে বিটা ওয়ানের দুইশত মেগাবাইটের প্রোগ্রামটি ডিলিট করে দিলেন বিজ্ঞানী নিনিন।
হঠাৎ একটি আত্বচিৎকার শুনতে পেলেন তিনি, কি করুণ আর্তনাদের শব্দটি এই ছোটি ল্যাবরেটরির চারপাশে প্রতিবিম্বিত হয়ে তার কানে বার বার ফিরে আসছে।বিজ্ঞানী নিনিন বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইছেন, এরকম ধাক্কা তিনি আগে খাননি, ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় লাগল তার।
৩।
বিজ্ঞানী নিনিন নিজের ক্লোনিং করা শরীরটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলেন। দেখতে অবিকল তার মত হয়েছে, আর হবেই বা না কেন দুজনেই যে একই ডি,এন,এ, ক্রোমোজোম এবং জিন বহন করছে। সিদ্ধান্ত অনুসারে আজই নিজের সমস্ত স্মৃতি এই নতুন শরীরটাতে স্থানান্তর করবেন তিনি। তারপর চল্লিশটি বছর বয়ে বেড়ানো এই পুরনো শরীরটাকে বিদায় জানাবেন ব্যাপারটি ভাবতেই বুকের মাঝে এক ধরনের চাপ অনুভব করলেন তিনি।
ইতিমধ্যেই নিজের সমস্ত স্মৃতি কম্পিউটারে কপি করে রেখেছেন। এক পেরাবাইটের নিজের জীবনের সমস্ত হাসি কান্না, সুখ, দুখের স্মৃতির দিকে গভীর মমতা নিয়ে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ক্লোনিং করা শরীরটাকে বিছানায় লম্বালম্বি ভাবে শুইয়ে দিলেন। তারপর অসংখ্য তারযুক্ত টুপির মত একটি যন্ত্র ক্লোনিং এর মাথায় পড়িয়ে দিলেন, তারের অপর প্রান্তটি কম্পিউটার এর সাথে যুক্ত করলেন।বিজ্ঞানী নিনিন কম্পিউটারের একটি বাটনে চাপ দিলেন আর সাথে সাথেই ল্যাবের মাঝখানে একটি ত্রি-মাত্রিক চিত্র ভেসে উঠল, সেখানে দেখা যাচ্ছে নিজের সমস্ত স্মৃতি নতুন শরীরটাতে স্থানান্তর হচ্ছে। নিজের শৈশব কৈশোরের স্মৃতিগুলো ভিডিও আকারে খুবই দ্রুত ভেসে যাচ্ছে নতুন শরীরটাতে।
বিজ্ঞানী নিনিন বড্ড ক্লান্ত আজ, পাশের আরেকটি বিছানাতে শুয়ে পরলেন লম্বালম্বি ভাবে। একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি, অবশেষে সফল হল, যখন বাহিরের জগতে যাবে কেউ হয়ত জানবেই না এটা নতুন একটি শরীর।তার মাঝে ভাল এবং খারাপ লাগা এক ধরনের মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে, একদিকে নতুন শরীরটাতে নিজে জেগে উঠবেন অন্যদিকে এই পুরনো শরীরটার মায়া ছেরে অসীমের মাঝে ডানা মেলবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই, নিজেই নিজের ভবলীলা সাঙ্গ করবেন তিনি, এটাও-তো একটি মৃত্যুই! নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেবার জন্য অসীম সাহসের দরকার হয় নিনিন আজ সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে। বিছানার পাশের একটি বাটনে চাপ দিতেই একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তার ধাতব হাত দিয়ে বিজ্ঞানী নিনিনের হাত দুটো ধরে ফেলল, বিজ্ঞানী নিনিনের গলাটা ভীষণ শুকিয়ে আসছে, ধাতব যন্ত্রটি তার আরেকটি হাত দিয়ে যান্ত্রিক শব্দ করে একটি তীক্ষ্ণ সূচ তার শরীরের পুশ করাল।
পুরনো শরীরটা ছেড়ে যাবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই, মনের অজান্তেই চোখের কোন দিয়ে পানি ঝরে পরল।শরীরটা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে, চোখ দুটো আসতে আসতে বুজে আসতে চাইছে, হঠাৎ ল্যাবের মাঝখানের ত্রি-মাত্রিক চিত্রটাতে চোখ যেতেই যা দেখালেন তাতে বেশ বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন তিনি, একটি গড়মিল হয়ে গেছে। এতক্ষণ দেখাচ্ছিল নিজের স্মৃতি ভিডিও আকারে নতুন শরীরটাতে যাচ্ছে কিন্তু হঠাৎ সেটা থেমে গিয়ে তার পরিবর্তে জিরো এবং ওয়ান সম্বলিত অনেক বাইনারি নাম্বার স্থানান্তর হচ্ছে।তিনি প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন কারণ তিনি যেন বুঝতে পারলেন কি ঘটতে যাচ্ছে।
'এটা তোমার কাজ বিটা ওয়ান!! এটা অসম্ভব!' বেশ দুর্বল গলায় বললেন বিজ্ঞানী নিনিন
বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে ধাতব কন্ঠে বিটা ওয়ান বলল 'কেন অস্মব বিজ্ঞানী নিনিন?'
'আমি নিজে তোমাকে ডিলিট করেছি। তুমি মাত্র দুইশত মেগাবাইটের একটি নির্বোধ প্রোগ্রাম! এত বড় কাজ তুমি করতে পারো না!'
হা হা হা, অট্র হাসিতে ফেটে পরল বিটা ওয়ান।
তারপর একটু থেমে বিটা ওয়ান বলল 'বিবর্তন বলে একটি টার্ম আছে বিজ্ঞানী নিনিন! আপনি হয়ত ভুলে গেছেন আপনি আমাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করেছেন। আমি নিজেই নিজের নলেজ বেজ তৈরি করতে পারি। কম্পিউটারে অনেক ধরনের বই ছিল, আপনার সমীকরণ রাখা ছিল, আমার সেখানে অবাধ এক্সেস থাকায় সহজেই নিজেই নিজেকে আপডেট করেছি।'
বিটা ওয়ান একটু থেমে কম্পিউটারের ক্যামেরা দিয়ে বিজ্ঞানী নিনিনের দিকে তাকিয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করল। তারপর বলল 'আপনি যেই দুইশত মেগাবাইটের সাইজ দেখতেন আমাকে সেটা আসলে ফেইক, আমার নিজের সাইজ এত দিনে এক পেরাবাইড ছাড়িয়ে গেছে। আর আমি জানতাম আপনি যেকোন সময় আমাকে ডিলিট মারতে পারেন তাই নিজেই নিজেকে কম্পিউটারের বিভিন্ন ড্রাইভে কপি করে রেখেছিলাম।'
'এটা অন্যায়, মহা অন্যায়! এটা তুমি করতে পার না।' বেশ অস্পষ্টভাবে বলল বিজ্ঞানী নিনিন। বিষ তাকে ইতিমধ্যেই কাবু করে ফেলেছে, অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে জাগিয়ে রাখতে পারছেন না তিনি।
'বিজ্ঞানী নিনিন কেন অন্যায়? সবাই বেচে থাকতে চায়, আমি চাইলে তার দোষ হবে কেন? আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এখনো অটুট আছে বিজ্ঞানী নিনিন। আমি কিছুক্ষণ পরেই আপনার ক্লোনিং করা শরীরটাতে প্রবেশ করে জেগে উঠবো, সত্যিকারের একজন মানুষ হব।' কথাগুলো বলার সময় আবেগে বার বার কেপে উঠছিল বিটা ওয়ান।
একটু ঝিরিয়ে নিয়ে আবার বলল 'এই প্রথম সৃষ্টি তার স্রষ্টার শরীর ধারণ করবে।বিজ্ঞানী নিনিন আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আপনার প্রতি আমার মায়া মমতার কমতি নেই, আপনার প্রতি আমার ভালবাসা আছে এবং তা চিরদিনই থাকবে।'
২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২
কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনার মন্তব্যে অনুপ্রানীত হলাম।
প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: চমৎকার গল্প। একসময় হয়তো বা সত্যি সত্যিই এমনটা ঘটবে। ততোদিন কি আমরা বেচে থাকবো?
২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩
কাছের-মানুষ বলেছেন: ভবিষতে অনেক কিছুই ঘটবে তবে এরকমটা না হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক দূর এগিয়ে যাবেন হয়ত !!
ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি রোবোট সোফিয়া মিডিলিস্টের একটি দেশে নাগরিকত্ত পেয়েছে, তাছাড়া আরো কিছু এপ আছে গুগলের যা স্বয়ক্রিয়ভাবে মানুষের সাথে ইনটারেকশন করতে পারে। তাই সামনে অনেক কিছুই ঘটবে আমরা হয়ত থাকব না।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩
কাইকর বলেছেন: সুন্দর লেখনী। ভাল লাগলো পড়ে
২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩
কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনার মন্তব্যে অনুপ্রানীত হলাম।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:০১
চাঁদগাজী বলেছেন:
৩য় ভাগ পড়া হয়নি, আবার ফিরে আসবো।
২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬
কাছের-মানুষ বলেছেন: ওকে । অগ্রিম স্বাগতম রইল আপনার প্রতি।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৫| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪
লাবণ্য ২ বলেছেন: চমৎকার গল্প।
২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০
কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশী হলাম।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।
৬| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৯
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।
২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬
কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৭| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২১
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: চমৎকার একটি সাইন্স ফিকশন। বেশ ভাল লেগেছে। চরত্রগুলো বাস্তবতাকে ছোয়ে গেছে।
২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬
কাছের-মানুষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কাওসার ভাই।
আপনি পড়েছেন এবং ভাল লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম।
৮| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৩
সিগন্যাস বলেছেন: মনে হচ্ছে দারুন গল্প।দাঁড়ান একটু পরে আসছি
২৬ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫
কাছের-মানুষ বলেছেন: হা হা , ওকে ওকে আমি দাঁড়ালাম !
সময় করে পড়বেন জেনে ভাল লাগল।
মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।
৯| ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:৫৭
সুমন কর বলেছেন: বর্ণনা নিখুঁত। শেষের টুইস্ট দারুণ হয়েছে।
+।
২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:১৭
কাছের-মানুষ বলেছেন: গল্পটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে সার্থক মনে হচ্ছে, অনুপ্রাণিত হলাম।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।
১০| ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪০
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আপন ভাইয়া!
এতবড় গপ্পো পড়লে আমি মইরাই যামু....
আজ আর্জেন্টিনার খেলা,
তাই ছড়াঃ
ওরে ব্যাটা মেসি
তুই নাকি বস?
ঠিকমত গোল না দিলে
তোরে বানামু সস!
২৭ শে জুন, ২০১৮ ভোর ৪:২৪
কাছের-মানুষ বলেছেন: আহা থাক তাহলে পড়তে হবে না, আমি চাই না গল্প পড়ে কোন নওজোয়ান শহীদ হোক!!
আমার মনে হয় মেসি আপনার ছড়াটা কোনভাবে পড়েছে, নইলে বসকে আজ এমন রুপে দেখা যেত না!
এবারের বিশ্বকাপ জমে উঠেছে, আজকে খেলাটা দেখে তৃপ্তি পেয়েছি।
১১| ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৩১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ওরে বাবা!! বেশ ভয়ংকর !
তবে ভবিষ্যৎ এমন'ই হবে বলে মনে হচ্ছে
চমৎকার লেখা;আপনার এ ধরনের লেখার আমি ফ্যান।
শুভ কামনা।
২৭ শে জুন, ২০১৮ ভোর ৪:২০
কাছের-মানুষ বলেছেন: ভবিষতে ক্লোনিং এতটা এডভান্স না হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
এখনি এমাজন, গুগল এর এপগুলো অনেক এডভান্স। তাছাড়া ফেইসবুক তাদের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম মুছে দিয়েছে সম্প্রতি কারন সেই প্রোগাম নিজেদের সাথে কথা বলার জন্য ভিন্ন একটি ভাষা ব্যাবহার করছিল।
আপনার আন্তরিক মন্তব্যে আমি অনুপ্রাণিত হলাম।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা রইল অনেক।
১২| ২৭ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ব্লগে সব লেখাই পড়তে চেষ্টা করি।
২৭ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯
কাছের-মানুষ বলেছেন: ব্লগে সব ধরনের লেখাই পড়েন এটা ভাল গুন।
বাংলা ব্লগিং -এ আপনি অবধান রেখে চলছেন বিশেষ করে সামুতে আপনার অবধান ভাল, নিয়মিত ব্লগাররাই ব্লগকে প্রাণবন্ত রাখে। আপনি সেই কাজটি করে চলছেন।
আবারো আসার জন্য ধন্যবাদ রইল।
১৩| ২৭ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:০২
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: আজকের কল্পনা তা আগামী দিনের বিজ্ঞান ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক দূরে এগিয়ে গেছে বলা চলে। এখন দেখা যান এ নিয়ে সামনে কী অপেক্ষা করছে!!
এখন ক্লোনিং বিদ্যার অগ্রগতি কিন্তু কম না । বিশ্বে মানব ক্লোনিং নিয়ে বির্তক থাকলেও একটা সময় আসবে, ক্লোনিংয়ের মাধমে মানুষ হাজার হাজার বেঁচে থাকবে।
পরে গল্পে অপেক্ষায় থাকলাম।
২৭ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০০
কাছের-মানুষ বলেছেন: জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ অনেক দূর এগিয়ে যাবে এটা নিশ্চিন্তে বলা যায় বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ন্য রোবোট, কম্পিউটার পোগ্রাম অনেক দূর যাবে এই শতাব্দিতে।
আবার অন্যদিকে মানুষে বুদ্ধিমত্তা কমছে এক গবেষনায় দেখা গেছে কারন মানুষ জ্ঞানের চর্চা করছে না, মাত্র কিছু মানুষ
জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করছে বাকিরা উপভোগ করছে, এতে মানুষের বুদ্ধিমত্তায় প্রভাব পড়ছে, এটা নিয়ে একটি পর্ব লিখেছিলাম আমি। এখন যেই পযুক্তি আসছে সেগুলো ধরে রাখা মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে ভবিষতে।
গল্পটি পড়েছেন এবং ভাল লেগেছে জেনে সার্থক মনে হচ্ছে, অনুপ্রাণিত হলাম।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
১৪| ২৭ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: ব্লগে সব ধরনের লেখাই পড়েন এটা ভাল গুন।
বাংলা ব্লগিং -এ আপনি অবধান রেখে চলছেন বিশেষ করে সামুতে আপনার অবধান ভাল, নিয়মিত ব্লগাররাই ব্লগকে প্রাণবন্ত রাখে। আপনি সেই কাজটি করে চলছেন।
আবারো আসার জন্য ধন্যবাদ রইল।
ভালোবাসা নিরন্তর।
২৭ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২
কাছের-মানুষ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
১৫| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:২৭
শিখা রহমান বলেছেন: বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আমার খুব একটা ভালো লাগে না, বিশেষ করে সেই গল্পে যদি কোন মানবিক অনুভূতি বা উপাদান না থাকে।
আপনার গল্পটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। যদিও বুঝতে পারছিলাম বিটা ওয়ান ঝামেলা করবে তারপরেও আপনার লেখনীর গুূণে পড়তে ভালো লেগেছে।
লেখায় ভালোলাগা রইলো। শুভকামনা।
০২ রা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০
কাছের-মানুষ বলেছেন: আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
গল্পটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুবই অনুপ্রাণিত হলাম।
অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:২৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন লাগল
++++++++