নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !
পনের।
প্রায় তিনমাস পর বদরুল বাসায় ফিরেছে। এই তিনমাস সে কিশোর সংশোধালয় ছিল। তার দুই সহচর রিপন এবং শিপনের কারাদণ্ড হয়নি তাদের দুজনকে মোটা টাকার মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে মহামান্য আদালত। বদরুল গতকাল ছাড়া পেয়েছে, এই মুহূর্তে সে সকালের নাস্তার টেবিলে বসে আছে। টেবিলে তার পছন্দের সব খাবার দেওয়া, রাজ হাসের মাংস সাথে চিতই পিঠা, সাদা ভাত, পাতলা ডাল এবং মুরগীর রেজালা। এসবই রান্না করেছে এ বাড়ির কাজের লোক ইদ্রিস আলী।
ইদ্রিস আলী নিজ হাতে হাসের মাংস বাটিতে বেড়ে বদরুলের দিকে এগিয়ে দিল। তিনি অত্যন্ত মমতার দৃষ্টিতে বদরুলের দিকে তাকিয়ে আছে। বদরুলের সামনের চেয়ারে বসে আছে বদরুলের বাবা মোবারক চৌধুরী। তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বদরুলের দিকে তাকিয়ে বললেন “কিরে তোর মাকে তুই কি বলেছিস? সে রাগ করে বসে আছে।“
বদরুল চুপ করে বসে খাচ্ছে, কোন উওর দিচ্ছে না।
“কথা কানে যায় না?” বিরক্তি নিয়ে বললেন মোবারক চৌধুরী।
“আমি কিছু বলিনি আপনার বউই আমার সাথে ঝগড়া করতে এসেছিল।“ মাথা নিচু করে খেতে খেতে বলে বদরুল।
“এই হতভাগা, আমার বউ মানে কি?”
বদরুল কিছু বলল না, আজ একটি বিশেষ দিন, এই দিনে তার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। সে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল “আপনার বউ মানে আপনার বউ”
“মা বলতে পারিস না?” গর্জন করে বললেন মোবারক চৌধুরী।
“না, কারণ আমার মা সেই চার বছর আগেই মারা গেছে” বলেই একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল বদরুল।
চার বছর আগে হঠাত তার মা মারা যায়। ভাল মানুষ, রাতে একসাথে খেল, বদরুলের সাথে অনেক গল্প করে এক সাথে ঘুমিয়ে পরল। কে জানতো সেই ঘুম যে আর কখনই ভাঙবে না! তার মায়ের মৃত্যুর তিন মাস না যেতেই মোবারক চৌধুরী একদিন হঠাত বিয়ে করে বউ নিয়ে হাজির। বদরুল তার সৎমাকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তার মায়ের নিজের হাতে গড়া এই সংসার, খাট, আলমারি, যেগুলো একসময় তা মা ব্যাবহার করত, সেই জায়গায় আরেকজন এসে ব্যাবহার করছে, এই ব্যাপারটা বদল মেনে নিতে পারে না। বাসায় তার মন বসে না, সারাক্ষণই মায়ের কথা মনে পরে। মায়ের কথা ভাবতেই বদরুলের চোখ আর্দ্র হয়ে উঠে।
মোবারক চৌধুরী কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলেন, নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করলেন “তোর হাজতবাস কেমন হল?”
“খুব ভাল।“
“ঐ হতভাগা, ভাল মানে কি, হাজতে কি ভাললাগার জায়গা?”
বদরুল বিড়বিড় করে বলে “এই বাড়ির থেকে ভালই।“
“বিড়বিড় করে কি বলছিস?” ফের জিজ্ঞেস করে মোবারক চৌধুরী।
থেমে বলে “কিছু না।“ পুনরায় খাওয়ায় মনোযোগ দেয় বদরুল।
“আমি শুনলাম কিছু বলছিস, জোরে বল? মাত্র পরিস স্কুলে, লেখাপড়া না করে এই বয়সে বাঁদরামি করে বেড়াস, কুলাঙ্গার কোথাকার।“ বড় হাসের মাংসের টুকরাটা ঠেসে মুখের মধ্যে চালান করে দিতে দিতে বললেন মোবারক চৌধুরী।
“আপনিতো চোর।“ মুখ ফসকে বলে ফেলে বদরুল।
খাওয়া থামিয়ে দিয়ে মোবারক চৌধুরী জিজ্ঞেস করে “কি বললি, এই হতভাগা চোর মানে কি?”
“এর জায়গা, ওর জায়গা কবজা করেন, স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা সরান” আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল বদরুল, কিন্তু কিছু একটা ভেবে চুপ করে বদরুল।
মোবারক চৌধুরী নিজেকে সামলাতে পারেন না, সজোরে চড় মারে বদরুলের নরম গালে, চট করে শব্দ হয়, সাথে সাথেই তার গালে হাতের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ পরে যায়। বদরুল উঠে চলে যায়।
কাজের লোক ইদ্রিস আলী পাশেই ছিল। মিনমিন করে বলল “আজ ওর মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী ছিল, তাই মনটা খারাপ আর আজ ওর গায়ে হাত তুললেন?”
মোবারক চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ করে মুরাদ বলে ডাক দিলেন। মুরাদ হল মোবারক চৌধুরীর ডান হাত, দেখতে বাঁটু এবং গোলগাল হলে কি হবে মারামারিতে উস্তাদ, তবে মাথায় কোন টাক নেই মুরাদের, ঘন চুল। মুরাদ বাইরেই ছিল, মোবারক চৌধুরী ডাক শুনে বললেন “বান্দা হাজির স্যার।“
“স্কুলের ঐ মাষ্টারের নাম জানি কি? অজগর না?”
“না স্যার। আজগর।“ হাচ কচলায় মুরাদ।
“যাইহোক, ব্যাটারে আচ্ছা মত একটা দোলাই দিবি বুঝলি? এই মাস্টারের জন্য আমার ছেলে এতদিন জেল খাটছে।“
“হাত পা কি ভাঙব স্যার?” তৈলাক্ত গলায় বলে মুরাদ।
“মন চাইলে ভাঙ্গিস। ও সাথে ঐ তিনটা ছোকরা আছে ওদেরও ধরে নিয়ে আসবি এখানে।“
“দুই চারটা চর থাপ্পড় কি মারব?” পুনরায় হাত কচলাতে কচলাতে বলে ঘন চুলওয়ালা মাথার মুরাদ।
হ্যা সূচক মাথা নাড়ল মোবারক চৌধুরী। মোবারক চৌধুরীর মনটা খারাপ, আজকের দিনে ছেলেটার গায়ে হাত উঠানো ঠিক হয়নি, মা মরা ছেলে তার উপর গতকাল মাত্র হাজত থেকে এসেছে ভেবেই মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠে। তার সমস্ত রাগ গিয়ে পরে আজগর স্যারের উপর, আজগর স্যারের জনই তার ছেলে এতদিন হাজত বাসে ছিল ভাবতেই হাতের মুঠি শক্ত হয়ে আসে তার।
অনেক দিন পর বদরুল স্কুলে এসেছে। স্কুলে এসেই সে একটি ব্যাপার লক্ষ করল আগে সবাই যেমন অনেক সমীহ করত, এখন এই ব্যাপারটি আর নেই। সবাই বেশ অদ্ভুত ভাবে আড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখছে। বদরুল ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসে পরল, সেখানে আগে থাকতেই আরো দুইজন ছাত্র বসা ছিল, বদরুলকে দেখে তারা সেখান থেকে উঠে অন্য বেঞ্চে গিয়ে বসল।
পুরো ক্লাসেই বদরুলকে নিয়ে কানাঘুষা চলছে, অনেকে আড় চোখে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসাহাসি করছে। টিটুন সামনের বেঞ্চে বসা ছিল সে সেখান থেকে গিয়ে পিছনে বদরুলের পাশে বসল তাকে সংঘ দেবার জন্য।
“কিরে এখানে বসলি কেন?” চোখ পাকরিয়ে জিজ্ঞেস করে বদরুল।
“কেন তোর কোন সমস্যা আছে?” নিজের ব্যাগটা বেঞ্চের উপর রাখতে রাখতে বলে টিটুন।
“দেখছিস না আমি বসছি এখানে?” খেঁকিয়ে বলে বদরুল।
“এই বেঞ্চ কি তোর বাবার? বলেই থামে টিটুন।
থেমে বলে “আমরা ভাল বন্ধু না হতে পারি ভাল সহপাঠিতো হতে পারি কি বলিস বদরুল?“
বদরুল চুপ করে থাকে। তখন তার দুই বন্ধু রিপন এবং শিপন এসে উপস্থিত হয়। বদরুলকে দেখে দুজনের তার দুই পাশে দুজন বসে পরে।
আজগর স্যার ক্লাসেই ঢুকের চক ডাস্টার টেবিলে রাখে। তারপর ব্ল্যাক বোর্ডে ঘষে ঘস শব্দ করে করে লিখে শ্রেণী নবম, শাখা খ, বিষয় পদার্থ বিজ্ঞান, পরিচ্ছেদ বলবিদ্যা। লেখা শেষ হতেই বলেন “আজ আমি তোদের বল বিদ্যা পড়াব।“
“বল মানে কি জানিস-তো?” সকলের উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলেন আজগর স্যার।
উত্তেরর অপেক্ষা না করেই বলল “বল বা ফোর্স হল ত্বরণ এবং ভরের গুণফল” বলেই স্যার বোর্ডে বলের সূত্র লেখতে লাগলেন।
টিটুন প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে “স্যার একাধিক মানুষ কি একই স্বপ্ন দেখতে পারে?”
স্যার টিটুনের দিকে তাকালেন তারপর একটু ভেবে বললেন “একই স্বপ্ন একাধিক মানুষ দেখতে পারে। সাধারণত সেই মানুষগুলো যদি একই পরিবারের সদস্য, বা জমজ হয়, অথবা অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয় সেই ক্ষেত্রে একই স্বপ্ন দেখতে পারে।“ বলেই থামলেন স্যার।
আবার বললেন “তবে ধর দুজন মানুষ একই স্বপ্ন দেখল, তুই যদি দুজন মানুষকে পুংখানুপুংখ ভাবে জিজ্ঞেস করিস কি স্বপ্নে দেখেছে তাহলে হয়ত দেখবি দুটো স্বপ্ন একই হলেও কিছুটা ভিন্নতা আছে। একেবারে একই রকম স্বপ্ন হয়ত মানুষ দেখে না”
“আচ্ছা স্যার, এমন কি হতে পারে হুবহু একই স্বপ্ন তিনজন মানুষ দেখছে? এবার দিপু দাঁড়িয়ে প্রশ্নটি করল।
ক্লাসের সবাই দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিপুর দিকে তাকায়। স্যার কিছুটা চুপ থেকে বলল “সেটার সম্ভাবনা কম কিন্তু হ্যাঁ সেটা হতে পারে। যারা স্বপ্ন দেখছে তাদের জীবন ধারণ পদ্ধতি যদি একই হয়, তাদের মস্তিষ্কের গঠন, তাদের চিন্তাভাবনা করার পদ্ধতি ইত্যাদিতে যদি মিল থাকে সেই ক্ষেত্রে হুবহু একই স্বপ্ন দেখতে পারে।“
“স্যার স্বপ্ন কি ভবিষ্যতের কোন ইঙ্গিত হতে পারে?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আজগর স্যারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে টিটুন।
এবার জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে স্যার বললেন “মানুষ সাধারণত চার ধরনের স্বপ্ন দেখে, প্রথমটা হচ্ছে সাধারণ স্বপ্ন যেটা যেটা সচরাচর মানুষ দেখে, দ্বিতীয়টা হল লুসিড স্বপ্ন। লুসিড স্বপ্নে এমন একটি অবস্থা যখন মানুষ বুঝতে পারে যে সে স্বপ্ন দেখছে, এতে স্বপ্নের উপর তার পুরো কন্ট্রোল থাকে, মানুষ তার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে সেই স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে” বলেই একবার টিটুনের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা করল স্যার।
থেমে বলল “ধর তুই স্বপ্ন দেখছিস, যেহেতু তুই জানিস স্বপ্ন দেখছিস তাই তুই চাইলেই সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবি, তর মনে হল তুই সুপারম্যানের মত উড়বি, তুই মনে মনে ভাববি আর সত্যিই দেখবি তুই উড়ছিস।“
স্যার যখন কথা বলছিল তখন ক্লাসের সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। বদরুলের আজ আর কেন জানি টিটুনের অতিরিক্ত প্রশ্ন করাতে বিরক্তি লাগছে না। সে ভালবাসা নিয়ে আজগর স্যারের কথা শুনছে, এই তিন মাসে আজগর স্যার প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বদরুলকে দেখতে যেত হাজতে। তবে বদরুল কখনই স্যারের সাথে দেখা করত না, দূর থেকে লুকিয়ে দেখত স্যারকে। প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও শেষের দিকে স্যার যখন আসত তখন তারও মনে হত স্যারের সাথে গিয়ে কথা বলতে কিন্তু নিজের ইগোর কাছে সবসময় পরাজিত হয়েছে। স্যার যখন চলে যেত সে গভীর বেদনা নিয়ে তাকিয়ে থাকত পিছন থেকে যতক্ষণ না স্যারকে না দেখা যেত।
পুনরায় বলতে লাগলেন স্যার “তৃতীয় স্বপ্ন হচ্ছে দুঃস্বপ্ন, অর্থাৎ, মানুষ হতাশা, দুশ্চিন্তায় রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে। আর চতুর্থ স্বপ্ন হল সাইক্রিক ড্রিম, অর্থাৎ এই ধরনের স্বপ্নে তুই ভবিষ্যতের কোন ঘটনার ইঙ্গিত পেতে পারিস। তবে এই ধরনের স্বপ্ন অনেক দুর্লভ ।“
স্যারের কথাগুলো শুনতে বেশ ভয় পেল টিটুন। তারা তিনজন কি তাহলে কিছুদিন আগে সাইক্রিক ড্রিম দেখছিল? ভাবে টিটুন, সেই অদ্ভুত ভয়ঙ্কর প্রাণীর কথা ভাবতেই বুকের ভিতরটা কেমন জানি করে উঠে টিটুনের।
স্যার ঝেড়ে গলা পরিষ্কার করলেন তারপর লম্বা একটি দম নিয়ে বললেন “মানুষের মস্তিষ্ক হল এই ইউনিভার্সের সব থেকে একটি জটিল একটি যন্ত্র। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, "Compound Interest হল এই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য"। ডারেন হারডি দ্যা কম-পাউন্ড ইফেক্ট নামের একটি বই লিখেন, যেখানে তিনি বলেন মানুষের সফলতা এবং ব্যর্থতার পিছনে তার জীবনের ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া অবধি সমস্ত ছোট ছোট নেয়া সিদ্ধান্তগুলো দায়ী। ছোট বেলায় সে কিভাবে বড় হয়েছে, সে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ছোট সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীতে তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে।“ বলেই একবার সবার দিকে তাকালেন প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য
ফের বলে চললেন “মানুষের ব্রেইন তার জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, যাদের কগনিটিভ পাওয়া খুব বেশী তাদের ব্রেন সেই অভিজ্ঞতার বিচার বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের কোন ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আভাস পেয়ে যেতে পারে আর তার অবচেতন মন স্বপ্নে সে ঘটনা দেখাতে পারে“
স্যার যখন কথা বলছিলেন তখন হঠাৎ তার মাথার উপর জ্বলে থাকা লাইটটি হঠাত আরো উজ্জ্বল হয়ে ঠাস করে ভেঙ্গে পরল। এটা নিয়ে আজ চতুর্থ-বারের মত এই ঘটনা ঘটল, স্যার আকর্ষিক ভাবে কথা থামিয়ে দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলেন মোবাইলে কোন নেটওয়ার্ক নেই, ঠিক যেটা ভেবেছিলেন মনে মনে। তিনি বুঝতে পারছিলেন কি যেন ঘটতে যাচ্ছে, তার ধারনা সত্যি হলে কয়েকদিনের ভিতরই পুরো রেডিও সিগন্যাল কাজ বন্ধ করে দিবে।
স্যার তড়িঘড়ি করে ব্ল্যাক বোর্ড মুছতে মুছতে বললেন “আজ পড়াতে ইচ্ছে করছে না। কাল হোম ওয়ার্ক জমা নিব।“
ষোল।
টিটুন বাবার রুমের ভিতর দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলের উপরের কলম দানিতে কলম, একটি কম্পিউটার ল্যাপটপ সহ বাবার ব্যবহৃত জিনিষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। টিটুন মাকে বলে বাবার একটি ছবি বড় করে বাদাই করে এনেছিল এই রুমের দেয়ালে রাখার জন্য, তবে সেটা আর দেয়ালে লাগানো হয়নি, ছবিটার দিকে টিটুন কিছুতেই তাকাতে পারে না, বুকের ভিতরটা কেমন জানি ভেঙ্গেচুরে যায়। বাবার ব্যবহৃত পুরনো জিনিস পত্রগুলোতে তাকাতেই কেমন হাহা কার করে উঠল বুকটা, বুকের ভিতর থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে।
“কি ব্যাপার কি করছিস এখানে?” পিছন থেকে জিজ্ঞেস করল মা।
চুপ করে থাকে টিটুন।
“কি ব্যাপার কিছু বলছিস না কেন? মন খারাপ?” ফের প্রশ্ন মা রাবেয়ার।
“না। “ গলায় ঝাঁঝ মিশিয়ে বলে টিটুন।
“আমিতো দেখতে পারছি, মন খারাপ করে আছিস। “
টিটুন বিরক্তি নিয়ে বলে “আমার তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না মা।“
মা একটি একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, বললেন “তুই কি এখনো আমার সাথে রাগ করে আছিস?”
একটু থেমে পুনরায় বললেন “আজ প্রায় তিন মাস হল তুই আমার সাথে ভালভাবে করা বলিস না। “
“তোমার সাথে আজ আর আমার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না।“ বলে টিটুন।
“আমি ঝগড়া করছি না টিটুন।“
টিটুন বলে “তুমি বাবার ডায়েরি কেন দিয়ে দিলে তাদের?”
মা একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন টিটুনের দিকে তাকিয়ে, কোমরে হাত দিয়ে হতাশ গলায় বললে “তোকে কতবার বলেছি, এছাড়া আর আমার কোন উপায় ছিল না।“
“তাই বলে তুমি বাবার ব্যবহৃত ডায়রিটা দিয়ে দিবে?” খেঁকিয়ে বলে টিটুন।
“আমি কি করতে পারতাম? ফিউচার ইনকর্পোরেশনের লোকেরা তোকে আর তোর বন্ধুদের ছাড়বে না বলতেই ভয় পেয়ে গেলাম, আমি ভাবলাম তোর বাবার কোন জিনিষ পেলে হয়ত তারা তোদের ছেড়ে দেবে” ছেলের কাছে কৈফিয়ত দেবার সুরে বলল মা রাবেয়া।
থেমে ফের বলে “আচ্ছা সেদিন আমাকে যেই ভিডিও দেখালো, যেখানে দেখা গেল তুই এবং তোর বন্ধু ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলি, আর তোর ঐ বন্ধু কি যেন নাম বদরুল আর দুইজন তাদের নাম মনে নেই, তারা তিনজনই দু হাত দিয়ে মাথা ধরে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আমাকে সত্যি করে বলত ব্যাপারটা কি ঘটছিল?”
বরাবরের মত চুপ থেকে বলে “আমি তোমাকে বলতে পারব না।“
“ঠিক আছে বলিস না, তবে এটা-তো বুঝতে পারছিস ডায়েরিটা না দিয়ে আমার কোন উপায় ছিল না বাবা? আরে মাত্র একটা ডায়েরি জন্য তুই ঠিকমত আমার সাথে কথা বলিস না?” বড় করুন গলায় বলে রাবেয়া।
“এটা শুধু মাত্র একটা ডায়েরি না, এটা আমার বাবার স্মৃতি, আর তুমি সেটা তাদের হাতে তুলে দিলে?” মুখ শক্ত করে বলে টিটুন।
“আমি সেটা বুঝাইনি টিটুন, আমি বুঝাতে চেয়েছি, আমার কি কিছু করার ছিল তুই বল?” বলেই থামে রাবেয়া।
পুনরায় বলে “ঐ ডায়েরিতে কি ছিল?”
টিটুন কোন উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে হনহন করে বেরিয়ে পড়ল। রাবেয়া বেশ চিন্তায় পরে গেল ছেলেকে নিয়ে, ড সাফায়াত মারা যাবার পর পুরো সংসারই কেমন জানি উলট হয়ে গেছে, যেই ছেলেটা এত অমায়িক ছিল, সবসময় ভাল করে কথা বলতো সে কেমন জানি হয়ে গেছে। বিগত তিনটি বছর নিজের উপর বড্ড ধকল যাচ্ছে, একেতো এনজিওর চাকরি তারপর এই বয়সী একটি ছেলেকে সামলাতে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় বেশ।
বিঃ দ্রঃ প্রতিদিন একটি করে পর্ব দিয়ে বারটি পর্বে শেষ করে ফেলব।
আগের পর্বঃ ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব সাত)
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪০
কাছের-মানুষ বলেছেন: বদরুলের খারাপ হবার পিছনে একটি কারণ ছিল, ভালোবাসা এবং হয়ত শাসনের অভাব। জেল হাজতে থেকেছে তাছাড়া আজগর স্যার তাকে দেখতে যেত এই ব্যাপারটা হয়ত কাজে দিয়েছে! বদরুলের মত অনেক ছেলে মেয়েদের আমি ভাল হতে দেখেছি, আবার অনেককে দেখেছি তাদের কোন পরিবর্তন হয়নি এটা সত্য।
আপনি ঠিক বলেছে টিটুন বুদ্ধিমান কিছুটা অন্যদের তুলনায় কারণ সে ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এর দিক দিয়ে বেনিফিট পেয়েছিল ছোট বেলায়।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০০
সাসুম বলেছেন: ইয়ে মানে, বদরুল কে মারপিটের সময় বা ব্রেণে যন্ত্রনা দেয়ার সময় কি কিছু করছিলেন? নাইলে হুট করে এরকম মাস্তান কেম্নে জেল থেকে বের হয়ে এসে বাপের মুখের উপর হাচা কথা বলে দেয়?
বাই দা রাস্তাঃ জাফর ইকবাল সাবের একটা টেস্ট আছে গল্পে। ছোট বাচ্চাদের কে মেইন পয়েন্ট এ রেখে গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়াতে। আর আম্রিকা থেকে ফেরত আসা বা আম্রিকান ল্যাব থেকে গবেষণা করে আনা সাথে ফিউচার কোম্পানি বাংলাদেশে ব্রাঞ্চ খোলা। সাইকিয়াস্ট্রিস্ট এর লুপ টা ও ধরতে পেরেছিলাম কমন ছিল। এছাড়া আজগর স্যার এর মত স্যার ও অজপাড়াগায়ে থাকা, মাঝে মাঝে মনে হয়েছে জাফর স্যার এর লিখা পড়ছি কিনা। আমরা যারা জাফর স্যার এর বই পড়েছি তাদের কাছে কমন লেগেছে প্লট আর কাহিনী।
একটা চমৎকার কাজ করেছেন, ২২০ ভোল্ট আর ১১০ ভোল্ট এর কাহিনী টাতে। একদম অথেন্টিক ও অর্গানিক জিনিষ। আমি ভেবেছিলাম গল্প পড়ার সময় ডিসি আর এসির গণ্ডগোল করছে বাট আসলে কাহিনী কান্ট্রিওইয়াজ ভোল্টেজ ইউসেজ এ । একদম শান্তি পেয়েছি এই পয়েন্ট এ ।
একটা বিষয় গোলমেলে লেগেছে, এরকম হাই টেক মেশিনের জন্য প্রচুর পরিমানে ইলেক্ট্রিসিটি সার্জ এর দরকার, এত ইলেক্ট্রিসিটি একটা রেসিডেন্সিয়াল বা স্কুল ল্যাব টেনে নিলে পাওয়ার সেক্টরে খবর হবার কথা, লোকাল ট্রান্সফরমার বার্স্ট হবার কথা। এই যায়গা টাকে খালি মেশিনের ইলেক্ট্রোমেগ্নেটিক সার্জ দিয়ে সাজানো টা মনে হয়েছে এক্টু উইক। ইলেক্ট্রিক কন্সাম্পশান টাও আনা যেত কোন উপায়ে।
মায়ের সাথে টিটুন এর সাইকলজিকাল আলাপ গুলো বেশ ফুটিয়ে তুলেছেন। বাবা মারা যাওয়ার বা উধাও হবার পর ছেলে মায়ের যে কমিউনিকেশান বা মানসিক ডিস্টেন্স সেটাও বেশ সুন্দর হয়েছে। ভাল হয়েছে অনেক।
এক টানে পড়ে ফেলেছি সব গুলা পর্ব। হয়ত কিছুটা আছ করতে পারছি ফিউচারে কোন দিকে নিয়ে যাবেন সমাপ্তি। একটা ব্যাতিক্রম হল, আমরা কমন সায়েন্স ফিকশানে দেখি এলিয়েন রা অনেক ভাল, পজিটিভ, এখানে ভিন্ন ভাবে তুলে ধরেছেন দেখে আলাদা একটা ফিল হল।
অনেক কথা বলে ফেললাম, ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম। লিখতে থাকুন । পরের সব পর্ব পড়ে ফেলব এক টানে।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৩
কাছের-মানুষ বলেছেন: মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল, এখন পরিবর্তন ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই হতে পারে। বদরুলের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হয়েছে। আমি আমার স্কুল লাইফে এমন অনেক ছেলে পেলে দেখেছি যারা এক সময় বুলিং করত ক্লাসের নিরীহ ছেলেদের পরবর্তীতে তাদের দেখেছি পরিবর্তন হতে, আবার অনেককে দেখেছি কোন পরিবর্তনই হয়নি! বদরুলের অভাব ছিল ভালবাসার, আজগর স্যার তাকে প্রতিদিনই জেল হাজতে দেখতে যেত, এই ব্যাপারটা হয়ত তাকে প্রভাবিত করেছে। আমি বিশ্বাস করি মানুষের পরিবর্তনের জন্য সব সময় বড় কোন কারণ দরকার নেই, মাঝে মাঝে ছোট ছোট কারণগুলোও অনেক কাজে দেয়। আমি অনেককে দেখেছি ক্লাসে ভাল পড়াশুনা পারত না, তবে এক সময় নিজেকে পরিবর্তন করে তারা পড়াশুনায় অনেক এগিয়ে গেছে, আবার যারা ভাল মেধাবী হিসেবে ছিল তারা পিছনে পরে গেছে- পরিবর্তন জীবনেরই অংশ আমি বিশ্বাস করি।
জাফর ইকবালে বাংলাদেশে কিশোর সাইন্স ফিকশন যেরকম লিখেছে অন্যরা সেভাবে লেখেনি তাই আপনার তেমন মনে হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে কিশোর দেয় নিয়ে যেগুলো লেখা হয় সেখানে কমন একটা জিনিষ থাকে, সেখানে স্কুলে দেখা যায় একদল ছেলে সারাক্ষণই বুলিং করে বেড়ায়, ক্লাসের নিরীহ ছেলেদের, মারপিট করে। সত্যিকারেও আসলে ব্যাপারটা তাই ঘটে। কিশোর সাইন্স ফিকশন লেখতে গেলে এর বাইরে-তো যাওয়া সম্ভব নয়!
হাই টেক মেশিনের জন্য প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রিসিটি এর দরকার এটা ঠিক আছে, আমিও ভেবেছিলাম ব্যাপারটা। ইলেকট্রিক কন্সাম্পশানটা আনা যেত ঠিক, এই দায়টা মেনে নিচ্ছি।
আমার মনে হয় শেষটা আচ করাটা কঠিন, ভালর জয় এবং মন্দের পরাজয় এই দিক দিয়ে চিন্তা করলে ঠিক আছে, শেষটা হয়ত চমক আছে, সেটা কেমন লাগবে বুঝতে পারছি না!
আপনি একজন মনোযোগী পাঠক এবং পর্যবেক্ষণ চমৎকার।
মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।
৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৩৪
কাছের-মানুষ বলেছেন: পরের পর্ব
৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এগিয়ে যাচ্ছে দারুন....
আমিও এগিয়ে যাই
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৪৫
কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি ধৈর্য্য ধরে প্রথম থেকে পড়ছেন, আমি অভিভূত।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: বদরুল কি জেলখানায় থেকে নিজেকে শুধরাতে পারলো? বদরুলের জন্য কেন জানি আমার নিজেরই মায়া হচ্ছে।
বদরুলের সাহস আছে। সে তার বাবাকে স্পষ্ট বলে দিলো- আপনি তো চোর!!!!!!!!
টিটুন বুদ্ধিমান ছেলে। কিন্তু এখন আমার টিটুন নয়, বদরুলকেই বেশি ভালো লাগছে।