নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

‘মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়’

কাছের-মানুষ

মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে বদলায়, অকারণেও বদলায় । তবে আমি মনে হয় আগের মতই আছি , কখনও বদলাবওনা মনে হয় ! !

কাছের-মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজ্ঞান পোষ্টঃ এরিয়া ৫১ আমেরিকার গোপন এলিয়েন গবেষণা কেন্দ্র

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০৯



ঘটনাটি শুরু হয় ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৭ সালে আমেরিকান পাইলট Kenneth Arnold সর্বপ্রথম আমেরিকার ওয়াশিংটনে একটি UFO (Unidentified Flying Object) দেখতে পান। এটি প্রচণ্ড গতিতে উড়ে যাচ্ছিল, যার গতি ঘণ্টায় প্রায় ১,২০০ মাইল। সত্যি বলতে, সেই সময় এই ১,২০০ মাইল প্রতি ঘণ্টার গতি প্রচণ্ড দ্রুত বলে মনে হলেও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমার কাছে এটি মামুলি গতি বলেই মনে হচ্ছে! যাই হোক, Kenneth Arnold-এর মতে, এই UFO দেখতে অনেকটা সিডির ডিস্কের মতো ছিল, যা পরবর্তীতে এলিয়েনদের যান "সসার" নামে পরিচিতি পায়। এই ঘটনা সেই সময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর পর রহস্যজনকভাবে একের পর এক জায়গা থেকে ধুমছে আরও অনেক UFO বা সসার দেখার খবর আসতে শুরু করে। আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে লোকজন দাবি করতে থাকে, তারা সসার বা UFO দেখেছে।


Kenneth Arnold

এরপর পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আরেকটি ঘটনা ঘটে— 1947 Roswell Incident। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে নিউ মেক্সিকোর Roswell শহরের কাছে একটি UFO বা ফ্লাইং ডিস্ক ক্র্যাশ করে। আমেরিকার এয়ার ফোর্স ঘটনাস্থল থেকে সেই ডিস্কটি উদ্ধার করে। প্রথমে তারা স্বীকার করে যে এটি একটি ফ্লাইং ডিস্ক ছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে, কিছুদিন পর তারা তাদের বক্তব্য পুরোপুরি বদলে ফেলে এবং দাবি করে এটি কোনো ফ্লাইং ডিস্ক নয়, বরং একটি ওয়েদার বেলুন। তবে নিউ মেক্সিকোর Roswell ঘটনার অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, যে UFO বা ফ্লাইং ডিস্কটি ক্র্যাশ করেছিল, তার সকল যাত্রী—যাদের এলিয়েন বলে মনে করা হয়—তৎক্ষণাৎ মারা যান। তারা আরও বলেন, আমেরিকার আর্মি সেই মৃত এলিয়েনদের এবং ক্র্যাশ হওয়া UFO-কে উদ্ধার করে এরিয়া ৫১-এ নিয়ে যায়। সেখানে তারা ফ্লাইং ডিস্কটিকে পুনরায় বানানোর জন্য রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে।


1947 Roswell Incident

এই ঘটনা আরও জনপ্রিয়তা লাভ করে যখন পদার্থবিদ বব লাজার ১৯৮৯ সালে দাবি করেন যে তিনি এরিয়া ৫১ এর পাশের আরেকটি গোপন স্থান S4-এ কাজ করতেন এলিয়েন প্রযুক্তির উপর। তিনি বলেন, তিনি অনেক ফ্লাইং ডিস্ক বা সসার আকাশে উড়তে দেখেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, আমেরিকান সরকার গোপনে এই সসারের উপর রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করছে এবং বিষয়টি গোপন রাখছে। তার দাবি অনুযায়ী, আমেরিকার সরকারের কাছে এলিয়েন প্রযুক্তি রয়েছে। তবে, বব লাজার তার দাবির পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

এই এরিয়া ৫১ নিয়ে আমেরিকান সরকার কী বলে? তাদের মতে, এরিয়া ৫১ হল তাদের এয়ার ফোর্সের সবচেয়ে গোপনীয় এক গবেষণা কেন্দ্র। তারা দাবি করে, এখানে হাই-টেকনোলজি এয়ারক্রাফট, যেমন স্পাই প্লেন ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা হয়। তবে, খোদ আমেরিকার অনেক জনগণই সরকারের এই দাবির উপর ঈমান আনেননি! যাই হোক, এরিয়া ৫১ আমেরিকার নেভাদা রাজ্যের এক গহীন মরুভূমির মাঝে অবস্থিত। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এটি এক রহস্যময় নাম। এখানে কল্পনা ও বাস্তবতা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, এখানে আকাশে রহস্যজনক আলোর ঝলকানি দেখা যায়। যুগ যুগ ধরে এই এরিয়া ৫১ নিয়ে নানা রহস্য এবং কল্পকাহিনী প্রচলিত হয়ে আসছে।


বেটি এবং বার্নি হিল

এখানে একটি মজার তথ্য জানিয়ে রাখি—এরিয়া ৫১ নামে কিছু একটি যে আছে, তা আমেরিকার সরকার ২০১৩ সালের আগে কখনো স্বীকারই করেনি। ২০১৩ সালে, প্রথমবারের মতো আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা CIA অফিসিয়ালি এরিয়া ৫১-এর অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে। জানা যায়, এরিয়া ৫১ ১৯৫৫ সালে গঠিত হয়। যদিও ব্যক্তিগতভাবে এই তারিখ বা সাল নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ১৯৪৭ সালে যে সসার ক্র্যাশ করেছিল বলে সংবাদ উঠেছিল, সেটি তখনই এরিয়া ৫১-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে। তাহলে ১৯৫৫ সালে এটি গঠিত হয় কীভাবে! যাইহোক, নিউ মেক্সিকোর Roswell Incident ছাড়াও এরিয়া ৫১ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের গুজব এবং অদ্ভুত ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১৯৬১ সালের আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ার (New Hampshire) রাজ্যের বেটি এবং বার্নি হিল-এর ঘটনা অন্যতম। ১৯৬১ সালে, এই দম্পতি দাবি করেন যে এলিয়েনরা তাদের অপহরণ করেছিল এবং পরে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনাটিও সে সময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

এরিয়া ৫১ নিয়ে মানুষের মাঝে যুগ যুগ ধরে বহু তত্ত্ব, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (কনস্পিরেসি থিওরি), কল্পনা এবং তর্ক-বিতর্ক হয়ে আসছে। আমেরিকার সরকার ২০১৩ সালে এরিয়া ৫১-এর অস্তিত্ব স্বীকার করে, তবে সবকিছু খোলাসা করেনি। যেহেতু এটি আমেরিকার একটি গোপন গবেষণা কেন্দ্র এবং এর সঙ্গে নিরাপত্তা (সিকিউরিটি) বিষয়ক জটিলতা জড়িত, তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হয়। তবে তারা এটুকু স্বীকার করে যে কোল্ড ওয়ার-এর সময় এরিয়া ৫১-এ আমেরিকা বিভিন্ন গোপন এয়ারক্রাফট নিয়ে কাজ করত, যার মধ্যে U-2 স্পাই প্লেন অন্যতম। এই স্পাই প্লেনকেই হয়তো তখনকার মানুষ সসার বা UFO ভেবে থাকতে পারে। তবে এরিয়া ৫১ নিয়ে এমন আরও অনেক রহস্যময় ঘটনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সেখানে আকাশে রহস্যজনক আলোক রশ্মি দেখা যাওয়ার কথা শোনা যায়। এসব ঘটনার ব্যাখ্যা আজও অজানা।


প্রশ্ন হল, এরিয়া ৫১ নিয়ে এত গল্প, রহস্য এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (কনস্পিরেসি থিওরি) কেন? কয়েকদিন আগেও এর উপর নেটফ্লিক্সে একটি ডকুমেন্টারি দেখলাম। এর কারণ হতে পারে মানুষের চিরন্তন বিশ্বাস—এই মহাবিশ্বে শুধু মানুষই নয়, আরও অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে। মানুষ যুগ যুগ ধরে ধারণা করে এসেছে যে, এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই। এই বিশ্বাস থেকেই হয়তো এলিয়েন নিয়ে অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, এবং সিনেমা তৈরি হয়েছে। মানুষের অবচেতন মনের গভীরে যে ধারণাটি বাসা বেঁধে থাকে, তা হলো—কোথাও দূরে অন্য কোনো গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকতে পারে। এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই হয়তো এত গুজব, কল্পনা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব জন্ম নিয়েছে। মানুষ যখন কোনো বিষয়ে প্রবলভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করে, তখন তার মস্তিষ্ক সেই বিশ্বাসের সঙ্গে একধরনের খেলা শুরু করে। মানুষকে তার মস্তিষ্কে সেটাই দেখায়, যেটা সে দেখতে চায়। এটি হতে পারে হ্যালুসিনেশন আকারে বা মস্তিষ্কের জটিল রাসায়নিক কার্যপ্রক্রিয়ার ফসল হিসেবে।

এই বিষয়ের উপর একটি ভিডিও বানিয়েছি, নীচে দেয়া হল। আগে এক সময় নিয়মিত বিজ্ঞান পোষ্ট লেখতাম, ভাবছি আবার শুরু করব সাথে থাকবে ভিডিও!




আগের কিছু পোষ্টঃ
বিজ্ঞান পোষ্টঃ পর্ব ২ : টাইম মেশিন কল্প না বাস্তবতা, থিওরিটিকাল বিজ্ঞান কিন্তু বলে এটা সম্ভব
বিজ্ঞান পোষ্টঃ পর্ব ১ : টাইম মেশিন কল্প না বাস্তবতা, থিওরিটিকাল বিজ্ঞান কিন্তু বলে এটা সম্ভব
বিজ্ঞান পোষ্টঃ মানব মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসছে ! বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি আমাদের পিছনে নিয়ে যাচ্ছে নাতো ?

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৩৯

জেনারেশন৭১ বলেছেন:



সৌর জগতে পৃথিবী ব্যতিত, মানুষ কিংবা প্রাণী বসবাসের করার মত পরিবেশ অন্য কোন গ্রহে নেই; মিলকিওয়ের অন্য নক্ষত্রে বসবাসযোগ্য কোন গ্রহ থাকলে, ওখান থেকে কোন যান কিংবা জীবিত কোন কিছু আমাদের এলাকায় আসতে পারবে না; ফলে, এলিয়েন থাকলেও মানব জাতি কখনো সেটা জানতে পারবে না।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২২

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি সঠিক বলেছেন! আমাদের সৌরজগতে কোন বুদ্ধিমান প্রাণী নেই, এটা নিশ্চিন্ত। তবে ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীব মাটির নিচে আছে কিনা, সেটা নিশ্চিন্ত বলা যায় না। মিল্কিওয়ের অন্য জায়গায় বা অন্য গ্যালাক্সিতে থাকতে পারে, তবে আমাদের এলাকায় আসার তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে হাই টেকনোলজি দিয়ে হয়ত কোন গ্রহে প্রাণ আছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করা যেতে পারে ভবিষ্যতে। তবে তাদের এখানে আসার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য!

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



মানুষ পৃথিবীতে এলিয়েন।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১২

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি সঠিল বলেছেন! অন্যগ্রহের বাসিন্দাদের জন্য আমরাই পৃথিবীতে এলিয়েন!

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭

শেরজা তপন বলেছেন: সব সসার শুধু আমেরিকান আকাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করে ক্যান?
এরিয়া ৫১ হল লক্ষ কোটি মানুষকে আরো কতোটা দ্রুত নিখুঁত ও নির্মম উপায়ে হত্যা করা যাবে তার গবেষণা নিয়ে গোপন স্থান! বাকি সব ভাঁওতাবাজি।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন! মানুষজন কল্পকাহিনী শুনতে এবং বিশ্বাস করতে ভালবাসে, এরিয়া ৫১ এই যোগান দিয়ে যাচ্ছে সফলতার সাথে যুগযুগ ধরে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.