![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুখের আশায় ছুটতে ছুটতে মানুষ অসুখে পড়ছে। আর আমি তখন সত্যের সন্ধানে ছুটছি।
আলতাফ সাহেবের সাথে তাঁর স্ত্রী শায়লা বেগমের সন্ধায় বেশ ঝগড়াটাই হয়েছে। ঝগড়ার কারনটা ছিল এই যে, আলতাভ সাহেবের ছোট শ্যালক কানাডা প্রবাসী ফরিদ দেশে আসার সময় আলতাফ সাহেবের ছেলে মেয়েদের জন্য দামী ব্রান্ডের প্রসাধনী এনে দিয়েছেন। আলতাফ সাহেব শ্যালককে কিছু সরাসরি না বললেও ফরিদ চলে গেলে স্ত্রী শায়লাকে বলেন “তোমার ভাই আমার সন্তানদের এই সকল দামী প্রসাধনী দিয়ে ভুল শিক্ষা দিচ্ছে। সে তো আর প্রতিমাসে মাসে এগুলো কিনে দেবে না। একবার তাঁরা এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আবার ব্যবহারের জন্য আমার কাছে টাকা চাইবে। আমি তখন তাঁদের এই সকল দামী চাহিদা কিভাবে মেটাবো? আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে এই সকল বিলাসিতা অন্যায়। এগুলো ওদের ব্যবহার করতে নিষেধ কর”।
এই কথা শুনে শায়লা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। এক কথা, দুই কথা। শুরু হয়ে যায় তুমুল কান্ড। শায়লা বেগম তখন তাঁর ৩০ বছরের সংসার জীবনের কি পেয়েছেন আর কি পাননি তা শোনাতে থাকেন। বেচারা আলতাফ সাহেব আর কোন কথা না বলেই রাগ করে শুয়ে আছেন রুমে। এদিকে শায়লা বেগমও আরেক রুমে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।
আলতাভ সাহেবের অনার্স পড়ুয়া দুই মেয়ে একজনের নাম তনভি আরেকজনের নাম লিয়া। আর ছোট ছেলে ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া বাউন্ডুলে সৃজন। সন্তানগুলোর মধ্যে তনভি বাবার নেওটা। বাবার আদর্শে মানুষ। আর বাকি দুজন মায়ের। রাতের রান্না তনভি করেছে মায়ের অবর্তমানে। সে এখন বাবার রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।
দরজার কড়া নেড়ে বাবার রাগ কমিয়ে বের করে রাতের খাবার খাওয়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে ডাকছে। বেচারা একেই ডায়বেটিস রোগী। খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম হলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিন্তু আলতাভ সাহেব খাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তনভি মায়ের রুমে গেলো। মাকে ঘিরে বসে আছে সৃজন আর লিয়া। তনভি এবার মাকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন যেন উনি নিজে গিয়ে বাবার রাগ কমায়। কিন্তু শায়লা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন “তোর বাবা সব সময় আমার ভাইদের দেখতে পারে না। ওদেরকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন। আমার বুঝি কষ্ট লাগেনা? আমি কি তোর চাচাদের নিয়ে খারাপ কোন মন্তব্য করি? কি এমন অপরাধ করেছে আমার ভাই? কানাডা থেকে এতদিন পর এসেছে। আসার সময় আমাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছে। বোমা তো আনে নি! ”
পাশ থেকে সৃজন মার কথায় সায় দিয়ে সহমত জানালো। সে বললো “বাবা সব কিছুতেই বেশি বাড়াবাড়ি করে। বাবার সততার বিনিময়ে আমরা কি পেয়েছি। যত্তসব!
লিয়া আরো যোগ করে বলে, “বাবার বন্ধু লিয়াকত আংকেল আজ বাড়ি গাড়ী সব করেছেন। অথচ তাঁরা দুজনেই একই অফিসে জব করেন। বাবার যখন এই সকল আদর্শমুলক কথা বলেন তখন গা জ্বলে আমার”।
তনভি দুজনের দিকেই অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকায়। শুধু এতটুকুই বলে ”তোরা বাবার কথার মূল্য কোনদিনও বুঝবি না। যেদিন বেচারা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে সেদিন বুঝবি”।
মাকে উদ্দ্যেশ করে তনভি বলে “বাবার রাতে মেডিসিন নেওয়ার কথা। রাতের খাবার না খেলে আর মেডিসিন না নিলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন কিন্তু এর জন্য তোমরাই দায়ী থাকবে। আমার বাবার কিছু হলে আমি কিন্তু তোমাদের মাফ করব না”।
তিনজনের মুখ ম্লান হয়ে গেলো চিন্তায় । এবার সৃজন আর লিয়া দুজনেই মাকে বলল ”মা চল বাবাকে ডাকো। খুব ক্ষুধা পেয়েছে”। শায়লা বেগমও নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। দ্রুত গিয়ে দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়লেন।
এই! বের হও আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাও। খুব ক্ষিধে পেয়েছে। বাচ্চারাও না খেয়ে আছে”।
আলতাফ সাহেবও সাথে সাথে দরজায় খুলে বের হয়ে আসলেন। যেন উনি শায়লা বেগমের ডাকের অপেক্ষায় ছিলেন।
সকলেই খাওয়ার টেবিলে গোল হয়ে বসে খাচ্ছে। আর হাসাহাসি করছে। কিছুক্ষন আগেও নীরব বাসাটা পরিবারের সকলের হাসাহাসিতে একদম সরব হয়ে উঠল। এটাই ছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের হালচিত্র। যাদের সাধ অনেক কিন্তু সাধ্য নেই। আদর্শে মাঝে মাঝে মিল না হলেও পরিবারের একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসে।
#অন্তর_মাশঊদ
২| ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:১৪
শিশির খান ১৪ বলেছেন: দেখেন আপনি মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত যেই শ্রেনীরই হোন চাহিদা সব সময় থাকবেই। উচ্চোবিত্ত পরিবারে চাহিদা ও অশান্তি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আরো অনেক বেশি। তবে মানুষ যদি, যে কোনো পরিবেশে বা পরিবর্তিতো পরিস্তিতিতে তারাতারি খাপ খাইয়ে নিতে পারে তা হলে কোনো অশান্তি হবার কথা নয়।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:১৪
নুহা ফারহান বলেছেন: পরিবারের পরিচিত একদিনের কাহিনী,,