নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিবাদ তো পজিটিভ ও হতে পারে।

ডাব্বা

জোছনা রাত। হট চকলেট। লেক এর পাড়। ছোট ছোট চুমুক। ভেজা রাস্তায় চেনা মুখ। আলিঙ্গন। হট চুমুক। ছোট ছোট জোছনা রাত। চকলেট লেক এর পাড়।

ডাব্বা › বিস্তারিত পোস্টঃ

Seeing is believing. ফেইক ফটোগ্রাফির যুগে এই একদা জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত উক্তিটি কতখানি প্রায়োগিক বা প্রাসঙ্গিক?

০২ রা মে, ২০১৯ বিকাল ৩:০৬

একবার খুব অসুস্থ অবস্থায় বাসে করে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলাম। প্রথমে সিট পাইনি, মনে হচ্ছিল আমি মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারি যে কোন সময়। পরের স্টেশন আসতেই একটা খালি সিট পেয়ে বসে পড়লাম। আমার পাশে কয়েকজন বয়স্ক নারী পুরুষ বসা। দুটো স্টেশন পর দুজন মধ্যবয়সী মহিলা উঠলেন তাদের একজনের দু হাত ভর্তি বাজার সদাই। অন্তত উনার একটা সিট দরকার। আর দেখতে যেহেতু আমিই সবচেয়ে শক্তসমর্থ অন্যদের চাইতে তাই আমারই উচিৎ উনাকে সিটটা অফার করা। আমার মনও তাই বলছে কিন্তু শরীর বলছে 'খামোশ'। আমার চোখে সানগ্লাস, কানে হেডফোন, manpri পরনে, আর মাথায় বেইজবল হ্যাট পরে আপাত যুবক আমি বসে আছি চেয়ার না ছেড়ে, খুব সুখকর দৃশ্য না। আশপাশের লোকজন আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে বুঝতে পারি। হয়ত ভাবছে 'এই ইন্ডিয়ান টা তো একটা jerk'. তবুও বসে আছি আমি নির্বিকার। কে কি ভাবছে আমার কাছে তখন মূখ্য না। মাইগ্রেন এর যন্ত্রণায় যে আমি অস্থির এটা কাকে কি করে বুঝাই? দোষ কারোরই না। This is not a WYSWYG situation. এটা আসলে যা দেখা যায় তা ঠিক না, যা ঠিক তা দেখা যায় না অবস্থা।

শেখ মুজিবর রহমানের সাথে আমার ছবি দেখা যায় না অর্থ এই না যে আমি উনাকে বঙ্গবন্ধু ডাকতে সংকোচ করি। আবার উনার সাথে আমার ছবি আছে অর্থ আমি উনার বাকশাল সমর্থন করি তা ও না। পোপের সাথে আমার ছবি থাকার অর্থ এই না যে আমরা গলা জড়িয়ে ধরে গান গাই 'দোস্ত আমরা দুজন, হব না কারো দুশমন'। আবার ছবি নেই বলে আমি তার শত্রু হয়ে রাতে ফোন দিয়ে বলি না, 'যো ডর গ্যায়া, ও মর গ্যায়া'। কাবা শরীফের ঈমামের সাথে আমার ছবি আছে সো আমি জান্নাতি, এটা শুধু পাগলেই বিশ্বাস করবে। দালাই লামা আমার হাত ধরে বসে আছেন তার ছোট্ট ঘরে এই ছবিটার অর্থ আমি পৃথিবীর সব বৌদ্ধদের ভালবাসি বুঝায় না। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর সঙ্গে উনার বাসভবনে আমার চা পানরত ছবিটি দেখিয়ে যদি কাউকে বলি যে আমি উনার মেয়ের জামাই সেটা খুবই হাস্যকর হবে।

কত মানুষইতো বিখ্যাত সব ব্যক্তির সাথে ছবি তুলে, সেল্ফি তুলে। জাস্টিন ট্রুডোর হয়ত আমার কথা কোনদিনই দ্বিতীয় বার মনে হয়নি। গত দশ বছরে আমার স্টুডেন্টরা কয়েকশ ছবি তুলেছে আমার সাথে। তাদের কথা আমার ঠিক মনে আছে। কোথাও বেড়াতে গেলে বিদেশি অনেকেই ছবি তুলতে চায় স্মৃতি ধরে রাখতে। আমি কি তাদের মনে রেখেছি? আমি কি জানি সেসব ছবি কোথায় কি অবস্থায় আছে?

একটা ছবি পেলাম আর ঝাপিয়ে পরে ছাপিয়ে দিলাম কোন কিছু বিচার না করেই এটা আমরা হয়ত অজ্ঞতাবশে করি, জেনে শুনে না। যদি জেনেশুনেই করি তাহলে সেটা বোকামী, মূর্খতাও। কোনও কোনও সময় তা অনৈতিক, আইন ও সমাজ বিরোধী, কারন - (১) ছবি থাকা মানেই কোন কিছুর অকাট্য প্রমান না। (২) ছবি manipulate করা যায় যা অনেক অসাধারণ চোখেও ধরা পড়ে না। (৩) প্রাপ্ত ছবিটির authenticity প্রমান করা হয়নি। সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভবও না তা প্রমাণ করা। (৫) সবকিছু viral করা ইতিবাচক মানসিকতার পরিচায়ক না।

ইরাকের উপর শ্বাপদের মত হামলে পড়ার আগে পেন্টাগন 'স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত' একটি ভিডিও দেখিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করেছিল যে ইরাকের WMD (weapon of mass destruction) আছে। যুদ্ধের পর আমরা জেনেছিলাম যে সেই ভিডিওটা ছিল ফেইক। ক্ষতি যা হবার তা কিন্তু হয়ে গিয়েছে ততদিনে। ২০০,০০০ মুসলিম, খ্রিষ্টান, ও ইয়েজিদি সরাসরি মৃত্যবরন করে যা পরে প্রায় ৮০০,০০০ গিয়ে দাঁড়ায়। মূল্যবান ঐতিহাসিক সম্পদের লুটপাটের কথা নিয়ে একটি আলাদা পোস্ট ই দেয়া যায়। একটি জাতি বা দেশকে ধ্বংসের আর কি বাকি থাকে?

ছবি ১
২০১৬ সালে ভাইরাল হওয়া এই ছবিতে দেখা যায় ইন্ডিয়ার জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার কাশ্মীর কে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে চিত্রিত করা একটি মানচিত্রের সামনে দাড়িয়ে জ্বালাময়ী ভঙ্গিতে বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে তিনি ভারত বিরোধী হিসেবে চিত্রিত হন এবং সাম্প্রদায়িক বজরং দল তার উপর প্রাণঘাতী হামলা চালায়। কুমার ভাগ্যগুণে বেচে যান। পরবর্তীতে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মৃত্যুদন্ডের স্মরণে একটি সমাবেশের পর তিনি দিল্লিতে গ্রেফতার হন এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ফেইসবুকে viral হওয়া সেই ছবিটি পরে ভূয়া প্রমানিত হয় কিন্তু ক্ষতির তো কিছু বাকি থাকল না আর।





ছবি ২
২০১৬, শীতে, দক্ষিণ ক্যারো্লাইনাতে একটি নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় হিলারি ক্লিনটন সিড়ির কয়েকটা ধাপ পেরোনোর সময় হোচট খান। তাঁর সাথে থাকা ব্যক্তিরা চট করে তাঁকে ধরে ফেলেন এবং পরে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন। ঘটনাস্থলে থাকা Getty Image এর ফটোগ্রাফার মার্ক মাকেলা এই দৃশ্যটি তাঁর ক্যামেরায় তুলে ফেলেন। সেই ছবিটি মার্কের অনুমোদন ছাড়াই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষের চরম ডানপন্থী বর্ণবাদী নিউজ গ্রুপ Breitbart হিলারির দূর্বল স্বাস্থ্যের প্রমাণ হিসাবে প্রচার করতে শুরু করে। তারা প্রোপাগাণ্ডা চালায় যে হিলারি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য যথেস্ট fit নন। পরে মার্ক মাকেলা সত্যটা প্রকাশ করে দেন।



Camera never lies.
ক্যামেরার লেন্স/চোখ কখনো মিথ্যা বলে না, বহুল প্রচারিত এই উক্তির নির্ভরযোগ্যতা প্রযুক্তির উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে কমে আসছে।

ছবি ৩
বছর খানেক আগে পরীক্ষামূলকভাবে বারাক ওবামার চেহারা ও স্বর দিয়ে তৈরি বানানো একটা ভিডিও দেখেছিলাম। ভিডিও টা দেখলে একশজনে একশজনই বলবে যে দিস ইজ ওবামা। কিন্তু কথা গুলো শুনলে বুঝবে যে এই কথাগুলো ওবামার হতে পারে না, এধরনের কথা তিনি বলতে পারেন না। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা দেখাতে ওই ভিডিও টি বানানো হয়েছিল artificial intelligence (AI) ব্যবহার করে।
একবার ভেবে দেখুন, হাসিনা এবং খালেদাকে নিয়ে এধরনের একটি ভিডিও বানিয়ে ছেড়ে দিলে দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধতে কয় ঘন্টা সময় লাগবে?




ছবি ৪
১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডার হুতু উদ্বাস্তুদের এই ছবিটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বইতে বৃটিশ উপনিবেশ পরবর্তী "বাঙালিদের" অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা। কিন্তু অনেকগুলো বছর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা ই বিশ্বাস করে এসেছে। এতে কি আমাদের ক্ষতি হয়নি?



ছবি ৫
১৯৭১ সালে ঢাকায় গণহত্যার পর উদ্ধারকৃত বাংলাদেশীদের মৃতদেহের এই ছবিটি মিয়ানমারে 'বাঙালি কর্তৃক স্থানীয় জনগণের উপর নিষ্ঠুরত্যার ছবি হিসাবে "True News" গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে। কত বড় ইতিহাস বদলে দেয়া জালিয়াতি ভাবুন তো!



ছবি ৬
Pokemon Go ছবির accident টা দেখুন। খবরে বলেছে এক লোক পোকেমন গো খেলতে গিয়ে পয়েন্ট সংগ্রহ করার জন্য রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ গাড়ী থামিয়ে দেয়। পেছনের গাড়ীগুলো তাল রাখতে না পারায় বিরাট দূর্ঘটনা ঘটে যায়। কিছুদিন পর জানা গেল দূর্ঘটনার কথা সত্য কিন্তু কারনটা নির্জলা মিথ্যা। কিন্তু ততদিনে ছবিটি শেয়ার হয়ে গেল ৬০০,০০০ বার।




এ রকম হাজারো ঘটনা ঘটছেে পৃথিবীতে।

সুতরাং, seeing is believing যে আর আগের মত গুরুত্ব বহন করে না তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এতক্ষণে। সামাজিক দায়বদ্ধতা/social responsibility'র কারনেও কানের খোঁজে চিলের বংশ বিনাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আপনার/আমার প্রচার করা ছবি/ভিডিওটি যদি সত্যিও হয় তাতে কারও খুব বেশী লাভবান হবার সম্ভাবনা নেই কিন্তু যদি সেটি মিথ্যা হয় তাতে ক্ষতির পরিমান প্রাণহানিতে গিয়ে ঠেকতে পারে। ক্রোধ সামলাতে পারাই সবচেয়ে বড় জিহাদ, crusade ও বলতে পারেন। আবেগের কান টেনে ধরুন। আর কান যদি চিল সত্যি সত্যি নিয়েই যায় তাহলে চিলের পেছনে না দৌড়ে বরং ডাক্তারের কাছে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

WYSWYG: What You See is What You Get.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.