নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পোকা মাকড়ের অস্তিত্ব নিয়ে কিছু দিন বেঁচে থাকা

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

সাঈফ শেরিফ

আমার প্রোফাইলের পুরোটাই অন্ধকার, আলো নেই |যৌবনে যন্ত্র শাসনের পুঁথিপাঠ কালে মনে বাসা বাধে দুরারোগ্য কর্কট রোগ, সেখান থেকেই দগদগে মানসিক ক্ষত | আজ তাই রুটি-রুজির দায়ে কোনো এক বিরান ভূমে নির্বাসিত, দেশে ভিক্ষে নেই | জীবন ধমনীর ভেতর থেকে কন্টাকীর্ণ ডালপালা টেনে হেচড়ে জুটে দুটো পয়সা, চিকিত্সার পথ্য| সংকীর্ণ হয়ে আসা অস্তিত্বে তাই অভুক্ত থাকা হয় অনেক প্রহর, সেখানে নিদ্রা, স্নান , ক্ষৌরকর্মের সময়, সুযোগ প্রায়শই নেই |দূর ভবিষ্যতে সুস্থতার সনদ নিয়ে দেশে ফিরলে, ততোদিনে হয়ত জীবনের চাহিদাশূন্য নির্বিকার কেউ একজন |

সাঈফ শেরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

'কি বা হায় আসে যায়... তারে যদি কোনোদিন না পাই আবার?'

০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৩

তমার সাথে তিন বছরের ভার্চুয়াল যোগাযোগ "বাস্তবে দেখা না দেবার" কঠোর শর্তে বন্দী। শুধুই ভার্চুয়াল যোগাযোগ। কোন সম্পর্কের সংজ্ঞা নেই। আবেগের বশে বাস্তব হতে চাইলে সেখানে বলি হুমায়ুন আজাদের কথা, "কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা!"



কিন্তু মন দখলের জন্য বাস্তববাদী, বাস্তব, অস্তিত্বমান হবার প্রয়োজন নেই। অদৃশ্য, অলৌকিকতার অনুভব দিয়েও সিজোফ্রেনিক হওয়া যায়। আমি তাই তমার বাস্তব জীবন প্রবাহের কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছি। কখনও আমি ভীষণ স্বার্থপর, আবার কখনও বা আবেগ, অনুভূতিহীন, নির্বিকার গাছ।



-"অনুভূতিহীন জীবের আবার স্বার্থ কী, তমা?"



নিজের স্ববিরোধিতায় অপ্রস্তুত শোনায় তাকে। কখনও বা সখেদে বলে, "আমি আপনাকে চিনিনা, দেখিনি, জানিনা, শুনিনি।" পুরোপুরি নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাবার ক্ষমতাও আমার আছে। কিন্তু তমা চায় আমি পরাবাস্তবেও থাকি, খোজ নিই। কিন্তু তার বাস্তব জীবন থামিয়ে দেবার অপরাধ আমারই, হোক সেটা পরাবাস্তব অংশীদারিত্ব।



পুরনো এক ছবিতে আমাকে প্রথম দেখেই বলেছিল, আপনার মুখে অমানুষিক নিষ্ঠুরতার ছাপ।



--"মানুষ কি মুখে নিষ্ঠুরতার ছাপ নিয়ে জন্মায়, তমা?"



উত্তর বুঝেই তার মায়া হয়। মায়া নিজেই একটা মানসিক ভ্রম, তাও পরাবাস্তব কারো জন্যে। আমি তাকে বার বার বিব্রত করি। ছাত্রী পড়ালেও তার রাগ হয়।সম্পর্কহীন, অধিকারহীন জীবের জন্য কিসের এত রাগ?



--"আমি এখনও অমানুষ হয়ে যাইনি, তমা!"

--"কীভাবে বুঝলেন?"



ধরো আমার পাঠশালায় গোটা দশেক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে একজন ভয়ংকর সুন্দরী। আমি বুঝতে পারি, ধরতে পারি সৌন্দর্যের বিষয় গুলো। আমাকে সেখানেও প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হয়, সুন্দরীর চোখের সাথে চোখ যেন এক না হয়। সবাই কম বেশি প্রশ্ন করলেও, সুন্দরী তেমন করেনা। এটা আমার জন্য স্বস্তিদায়ক।



--"ছি ছি...এত অধঃপতন!"



--"আমি তো তোমাদের ঘৃর্ণাহ্ পুরুষের বাইরে কেউ না। পুরুষ, পরিমল সবই তো এক জাত, তাই না?"



আমার কি তাহলে অন্যদিকে তাকিয়ে সুন্দরীর প্রশ্নের জবাব দেয়া উচিৎ ছিল? সেটা কি ভাল দেখাতো? কিন্তু প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে চোখে চোখ পড়তেই সুন্দরী চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়, সেটার কী মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা?



হয়ত সুন্দরীরা সব পুরুষের দৃষ্টিতেই 'পরিমল' দেখে। কিংবা আমার অমানুষিক, ভীতিকর দর্শন এড়াতে চায়। মাস্টার হয়েও হাসতে পারিনা, পাছে আমার হাসির মাঝে কেউ লাম্পট্য পায়। সমাজ, সংসারের কুদৃষ্টি এড়াতে আমি পাথরের মত শক্ত হয়ে আমার দায়িত্ব করে যাই।



বুঝতে দেইনা আমার মাঝে একটা মানুষ আছে, যে অন্যায়ভাবে কারো গতিবিধি অনুসরণ করে, মোহাবিষ্ট হয়। খাতা, কলম দিতে গিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে, স্পর্শমুক্ত থাকতে। তারপরেও দুর্ঘটনা হয়। আসলেই কি দুর্ঘটনা? ইচ্ছাকৃত হলে কি আমার ভাল লাগা উচিৎ? কিন্তু সে ভাল লাগাটাও যে কলঙ্কিত। আমার কি তাহলে অনুভব করার অধিকারটুকুও অবাঞ্ছিত?



তমা প্রায় চিৎকার করে ওঠে,



--"আপনি সুন্দর মুখ দেখে মানুষ বিচার করেন, এটা খুবই খারাপ!"



শাহরুখ খান এলে তোমরা এক সপ্তাহের জন্য মোহাবিষ্ট হওনা? সেটাই বা কী বিচার করে বলো? আমি তো মর্ত্যের মানুষ দেখেই না হয় মোহাচ্ছন্ন হলাম, কটা দিন। রেশ কেটে গেলেই আমি নতুন শহরে, নতুন দিনে, নতুন মানুষ। পুরুষের দৃষ্টি কতটা খারাপ হতে পারে, আমার চেয়ে কে'বা ভাল বুঝে? নারী-পুরুষের জৈব রসায়ন তো এক না, সেখানেও অন্যায় বৈষম্য করেছে প্রকৃতি।



তারপরেও আমি তো অনধিকার দৃষ্টি পাতের চর্চা করিনা, তমা। আমি চাইও না দৃষ্টি থেকে আমার কোন সম্পর্ক হোক, অনুভূতি হোক, সংসার হোক। যদি তাই হত, তবে এই পরাবাস্তব যোগাযোগের একটা ইতি হতো। তোমার মায়া-ভ্রম কেটে যেত, আমার অপরাধ মোচন হত। কিন্তু সেই অবিচার, অপরাধের দায় সারার জন্য বাস্তবের চোখ দিয়েই আমাকে কাউকে পছন্দ করতে হবে, দৃষ্টির মাঝে 'পরিমলে'র খাদ থাকলেও করতে হবে।



কিন্তু পুরুষের কলঙ্কিত দৃষ্টি দিয়ে কাউকে ভাল লাগার মত অপরাধ করার চাইতে নিভৃতচারে থাকা ভাল, পরাবাস্তবতাই ভাল। আমি তাই নিভৃতচার চাই, একান্ত আপন আধাঁরে।

মন্তব্য ২৯ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (২৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:১৭

সাঈদ০০৭ বলেছেন: ki liksen re vai! sundor liksen.
Kolpona ar akakitter joy hok.

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৫

সপ্নভূক বলেছেন: অসাধারণ হইছেরে ভাই...............।

"ধরো আমার পাঠশালায় গোটা দশেক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে একজন ভয়ংকর সুন্দরী। আমি বুঝতে পারি, ধরতে পারি সৌন্দর্যের বিষয় গুলো। আমাকে সেখানেও প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হয়, সুন্দরীর চোখের সাথে চোখ যেন এক না হয়। "

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২১

শায়মা বলেছেন: কেমন আছো ভাইয়া?


তুমি লিখালিখি প্রায় ছেড়েই দিয়েছো।


তারপরও তুমি আসলেই এক অসাধারণ লেখকই আছো।

এই লেখাটাতো একদম ফাস্ট!!!

প্রিয়তে রেখ দিলাম ভাইয়া।:)

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২২

শায়মা বলেছেন: কেমন আছো ভাইয়া?


তুমি লিখালিখি প্রায় ছেড়েই দিয়েছো।


তারপরও তুমি আসলেই এক অসাধারণ লেখকই আছো।

এই লেখাটাতো একদম ফাস্ট!!!

প্রিয়তে রেখ দিলাম ভাইয়া।:)

০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪০

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপাতত রুটি-রুজি নিয়ে ব্যস্ত। আপনি ভাল তো?

৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৬

এম নাঈম খুশবু বলেছেন: /:) /:)

৬| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২৫

চাটিকিয়াং রুমান বলেছেন: আপনার এই লেখাটা অনেক ভালো লেগেছে।

+++++++

আপনার লেখা খুব কমই পাই!

০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪২

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৫

সাবা তামান্না বলেছেন: ভালো লাগলো.

৮| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৭

নরাধম বলেছেন: ওরে রে রে, আমি ইডা কি দেখলাম? সাইফ শেরীফ রোমান্টিক কথাবার্তা বলা শুরু করেছে! সূর্য্য তবে কোনদিকে উঠল? তো তমা তো আপনাকে ভালই তমায়িত করে ফেলেছে, এখন ধুমায়িত আসরে ঘামায়িত হয়ে রোমান্টীকিত কিছু করেন!

তবে লেখাটা যা রাবিন্দ্রীক হইছে, কি বলব, তমার ইন্টেলিজেন্স লেভেল কত জানিনা, বা বাংলা ভাষার গাঁথুনি কত মজবুত, যদি মজবুত হয় তবে তমা এই লেখা পড়ে নির্ঘাত হার্টফেইল করবে! ওয়াট এ পিস, ওয়াট অ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট পিস অফ রাইটিং!

তবে সেদিন আমার এক প্রাক্তন ছাত্রী আমারে কইছে আমার চেহারায়ও নাকি নিষ্ঠুরতা আছে আর আমি নাকি বেশ নিষ্ঠুর! এইটা সে বেশ ঘৃণার সাথেই কইছে মনে হইল! কেমনে কী?

তো দাদা, তমাকে এবার পরাবাস্তব থেকে বাস্তবে নিয়ে আসেন!

০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:৩৭

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: অন্যকে কথায় কথায় শরমিন্দা দেবার চেয়ে নিজের গাটছড়া বাধা ব্যবস্থাটা আগে করলে ভাল হয়না, ভ্রাতা? :-)

৯| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫১

নরাধম বলেছেন: প্রিয় পোস্ট এবং ফেবুতে শেয়ার্‌ড!

১০| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫৭

হেমায়েতপুরী বলেছেন: :)

১১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:২৩

কবির চৌধুরী বলেছেন: ++++

১২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০৮

বক্তা১ বলেছেন: লেখায় আলো আঁধারির খেলা। পুরোপুরি বুঝিনা তবুও বিমূর্ততা ভাল লাগে তাই লেখার বিষয়বস্তু কেটে ছিঁড়ে হলেও বুঝতে আগ্রহ হয়।

"শুধুই ভার্চুয়াল যোগাযোগ। কোন সম্পর্কের সংজ্ঞা নেই।"----সম্পর্কের বুনিয়াদ অনুভব থেকে। আর ভার্চুয়াল যোগাযোগ অনুভূতির সুযোগ দেয় বলেই জানি।

আপনিও বললেন “কিন্তু মন দখলের জন্য বাস্তববাদী, বাস্তব, অস্তিত্বমান হবার প্রয়োজন নেই” অর্থাৎ ভার্চুয়াল যোগযোগেও মন দখলের মত সম্পর্ক হতে পারে। মন দখলের মত সম্পর্কের পর বাস্তব হতে চাইলে সেটা “আবেগের বশে” ?

এই আবেগটা কি? অহেতুক? অপ্রয়োজনীয়? অলীক? নাকি মূল্যহীন? প্রয়োজনের তুলনায় আবেগ কি সবসময়ই গুরুত্বহীন? কোন কোন ক্ষেত্রে আবেগ গুরুত্বপূর্ণ? নাকি আবেগ শব্দটা না থাকাই উচিত?

"কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা!" -----অর্থাৎ শ্রদ্ধাটাও ভার্চুয়াল হোক, নাকি
প্রকৃত শ্রদ্ধার ধার ধারিনা, নাকি
প্রকৃত অর্থে শ্রদ্ধা করা সম্ভব না বা চাই না তাই মনকে প্রবোধ দেয়ার জন্য একটা কাল্পনিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরী করা?

এভাবে অন্যকে বিভ্রান্ত করতে পারছেন ভেবে নিজেই নিজের বিভ্রান্তির জ্বালে আবর্তিত হচ্ছেন কিনা খুঁজে দেখুন আর হুমায়ুন আজাদ বলেছেন তাই বেদ বাক্য মেনে কারো সাথে সাক্ষাৎ করলামনা মানেই তাকে শ্রদ্ধা করলাম বলে বিশ্বাস করলে সেটা ভুল বরং টাটে শ্রদ্ধা বিষয়টি এবং শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি উভয়কে অপমানিত করা হবে; কাল্পনিক শ্রদ্ধার চেয়ে বাস্তবিক ভর্ত্‌সনাও অধিক মূল্যবান। পৃথিবীর অসংখ্য ভুলের স্রোতে অন্তত ছোট্ট একটা ন্যায়ের জয় হোক, হোকনা তা রূঢ়। তবে ব্যাক্তি বা প্রসঙ্গ এড়ানোর জন্য যদি এমন বুলি আওড়ে থাকেন সেক্ষেত্রে বলার কিছু নেই।

"অনুভূতিহীন জীবের আবার স্বার্থ কী?" -------.অনুভূতিহীন হলেই স্বার্থহীন হওয়া যায়? আমি অনুভুতিহীন, পানির তেষ্টা পেলে আমি পানির জগ খুঁজি, খুঁজেপেলে গ্লাস হাতে নেই, পানি ঢেলে পান করি অতঃপর জগের কথা ভুলে যাই, কারন কি? শুধুই আমার অনুভূতিহীনতা? পানির জগ কিন্তু আমি নিজ স্বার্থেই খুঁজেছিলাম। তাহলে অনুভূতিহীন মানুষ স্বার্থহীন হয় কিভাবে?

একজন অনুভূতিশীল মানুষ জগটা খুঁজে পাওয়ার পর খেয়াল করে তা দেখতে কেমন, পানি কোন ছন্দে গ্লাসে পড়ছে, সেই ছন্দে তার মনে ঢেঁউ উঠবে, কারও মন সেই ছন্দে ঝরনার ছন্দ খুঁজে পাবে কেউ পাবে নদীর কুলু কুলু ছন্দ কেউবা সাগরে ঢেঁউয়ের ছন্দ, যার মন যেদিকে দূর্বল সে সেইভাবে জগের ছবি আঁকবে , জগের প্রতি তার সাধারন কৃতজ্ঞতা আবেগের ধাক্কায় অসাধারন হয়ে উঠবে। কিন্তু আমি পানি পান শেষে চলে আসব, কারন হিসেবে জানব আমি অনুভূতিহীন।

অনুভূতিহীনতা আর নৈতিকতার মাঝের সূক্ষ্ম দেয়ালটা অনেকেই খেয়াল করেনা। কেউ এই দেয়াল নিকটবর্তী নীতিহীনিতাকে অনুভূতিহীনতা ভেবে ভুল করে আর কেউ উল্টোটা।
তেষ্টা পেলে মানুষ পানি পান করবে এটা সহজাত প্রবৃত্তি এখানে কিভাবে কি দিয়ে তেষ্টা মেটানো হল তা দেখার দরকার নেই এভাবে না ভেবে জগের অবদান স্বীকার করে নিলেই নৈতিকতাহীনতার গ্লানি মোচন হয় কিন্তু সম্পর্ক বা অন্য অনেক বিষয় এতটা সহজ হয় না। সবসময় অনুভূতিহীনতাকে কারন দেখিয়ে স্বার্থপরতা বা নীতিহীনতাকে ঢাকা যায় না। বরং নিজেকে স্বার্থপর স্বীকার করে নিয়ে বলা যায় -অনুভুতিহীন হতে হলে স্বার্থপর হতেই হবে।

“চোখে চোখ পড়তেই সুন্দরী চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়, সেটার কী মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা?” সুন্দরীর সামনে আপনি,পরিমল অথবা কোনও সুফি-দরবেশ যেই হোকনা কেন সে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলবে এটা স্বাভাবিক জৈবিক বৈশিষ্ট্য, এতে তার হাত নেই, সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছায় সে নারী হয়েছে বলেই তার এমন আনত নয়না বৈশিষ্ট্য। এটা দেখে আপনার হাসি পাওয়ার কিছু নেই।


”কিন্তু সে ভাল লাগাটাও যে কলঙ্কিত”-----কেন? সে ভাল লাগা কলংকিত হবে কেন? এমন ভাল লাগা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু ভাল লাগাকে অস্বীকার করা, সস্তা ভাবা বা অপমান করা অন্যায়, হোকনা তার পেছনে যত মহৎ কারন।

একবার বলছেন "অনুভূতিহীন জীব" আবার বলছেন "বুঝতে দেইনা আমার মাঝে একটা মানুষ আছে..." স্ববিরোধিতা নাকি যখন যে মতামত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন তার সমর্থনে বলা আরকি?


“শাহরুখ খান এলে তোমরা এক সপ্তাহের জন্য মোহাবিষ্ট হওনা? সেটাই বা কী বিচার করে বলো?”----একজন তমা থাকতেও মর্ত্যের অন্য কারও প্রতি মোহাবিষ্টতা আর একজন স্বামী বা বয় ফ্রেন্ড থাকার পরও শাহরুখ খানের প্রতি মোহাবিষ্টতা এক নয়।


“আমি চাইও না দৃষ্টি থেকে আমার কোন সম্পর্ক হোক, অনুভূতি হোক, সংসার হোক।”----তাহলে সম্পর্ক কি থেকে হওয়া উচিৎ?

“পুরুষের দৃষ্টি কতটা খারাপ হতে পারে, আমার চেয়ে কে'বা ভাল বুঝে?...সেই অবিচার, অপরাধের দায় সারার জন্য বাস্তবের চোখ দিয়েই আমাকে কাউকে পছন্দ করতে হবে, দৃষ্টির মাঝে 'পরিমলে'র খাদ থাকলেও করতে হবে।...... কিন্তু পুরুষের কলঙ্কিত দৃষ্টি”----এই কলঙ্কিত দৃষ্টি কি শুধু নিজের জন্যই বলছেন নাকি সমস্ত পুরুষ প্রজাতির জন্য? তাহলে ভাল লাগার যত সম্পর্ক পৃথিবীতে হয়েছে তার সবই কি পরিমল খাদ যুক্ত? নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের দৃষ্টি সীমা এটুকুতেই সীমাবদ্ধ বলতে চান?

"পুরুষের কলঙ্কিত দৃষ্টি দিয়ে কাউকে ভাল লাগার মত অপরাধ"----হ্যাঁ, পুরুষের কলঙ্কিত দৃষ্টি দিয়ে কাউকে ভাল লাগার মত অপরাধ করার চাইতে নিভৃতচারে থাকা ভাল, শুধু নিভৃতচারেই নয় বাস্তব পরাবাস্তব সব ধরনের সম্পর্ক মুক্ত থাকা উচিত। যা কিছু বাস্তবে অন্যায় অমানবিক তা পরাবাস্তবে ন্যায্য এমন ভাবাটাই ভয়ংকর অন্যায়।
পরাবাস্তবে কি ব্যাক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকেনা? পরাবাস্তবে কি অনুভূতি সৃষ্টি হয়না? নাকি পরাবাস্তবে আইন নেই তাই তাতে নৈতিকতা বা ন্যায্যতার বালাই নেই? আইন প্রণয়ন দেরীতে হতে পারে কিন্তু মানুষের বিবেক বুদ্ধিমত্তাতো আগে থেকেই আছে। পরাবাস্তব শব্দটা যতখানি পর তার প্রভাব মোটেও ততখানি পর না।

প্রযুক্তি দৈনন্দিন কাজকর্মকে যেভাবে গতিময় আর সহজলভ্য করতে পারে সম্পর্ক তৈরী বা বজায় রাখায় সেভাবে সাহায্য করতে পারেনা। বাটন চেপেই গা জুড়ানো ঠান্ডা বাতাস, বাটন চেপেই হাজার মাইল পেরিয়ে যাওয়া, বাটন চেপেই মহামূল্য অর্থ হাতে পাওয়ার মত সুবিধা পেতে পেতে আমরা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এমন সহজেই সব পেতে চাই কিন্তু ভুলে যাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কোনও অবদান নেই, যা আছে তা ক্ষতিকরই।
জীবন যাপন এত সহজ হয়ে আমাদের ধৈর্য্য এত কমিয়ে দিয়েছে যে সম্পর্কের টানাপোড়েনে ধৈর্য ধরে মোকাবেলা করে সম্পর্কোন্নয়ন করে তা দীর্ঘস্থায়ী করা যায় এমনটা আমরা ভাবতেই পারিনা বরং সম্পর্ক না করে কিভাবে সম্পর্কের সুবিধা পাওয়া যায় সে চিন্তা করি।

আজ একজন পরকীয়া করছে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন করছেন? সে বলে "বউকে ভাল লাগেনা, দুজনের এ্যাডজাস্টমেন্ট হচ্ছেনা, কি করার আছে আমার? আমিওতো মানুষ, আমারও জীবন আছে, ভালভাবে বাঁচার অধিকার আছে"।
এই ভাল ভাবে বাঁচার দাবির কাছে এখন সম্পর্ক মূল্যহীন, কিন্তু একসময় মানুষ সম্পর্ককে সর্বোচ্চ মূল্য দিত, কেন দিত? শুধুই গোঁড়ামী থেকে? মূর্খতা থেকে?

আবার সমাজ পরকীয়া সমর্থন করছেনা তাই ধৈর্য্যহীন সম্প্রদায় যা করছে তা শুধুই ভোগান্তির জন্ম দিচ্ছে, এই ভোগান্তির মূল কারন ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম, তারা ভাবছে সম্পর্কে জড়ানোই যত অশান্তির মূল, ফলে তারা সম্পর্ক বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা কি সম্পর্কে জড়ানোতেই ছিল নাকি সম্পর্ককে যথাযথ ভাবে বজায় রাখায় ঘাটতি ছিল?

০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:০৪

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ, ভাই (আন্তরিকভাবেই বলছি) । ভিন্ন আয়নায় লেখার সমালোচিত মূল্যায়ণ ভাল লাগে, আমার নিজের জন্যও দরকার।

১. অনুভূতি আছে, তবে সংজ্ঞায়িত না। সম্পর্কের মত প্রকাট-প্রকাশমান দশাকে "ভার্চুয়াল হৃদ্যতা" জাতীয় নাম দেয়াটা ম্যাড়ম্যাড়ে। কাজেই এখানে অনুভূতি থাকলেও, লিটারাল সম্পর্ক নেই।

২. মন দখলের জন্য বাস্তবে আসার প্রয়োজন নেই। মনকে এখানে বাস্তবের উপর অনির্ভরশীল রেখে একটা স্বাধীনতা দেয়া যায়। মানুষ আবেগের বশেই কেবল স্বাধীনতাটা নষ্ট করতে পারে।

৩. "আবেগ" আর "অনুভূতি" শব্দ দুটোকে আলাদাভাবে মাপি। প্রথমটা প্রায়শই বেহিসাবী, কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য। পরেরটা স্বতঃস্ফূর্ত মনোবৃত্তীয়, মানবীয় বিষয়।

৪. সাক্ষাৎ বনাম শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি হল এমন। বাস্তবে আসলে মানুষের শারিরীক, মানসিক অনেক দুর্বলতার, ত্রুটি, নোংরামির মুখোশ ধরা পড়ে। এটা হয়তো কাউকে বিশ্বাস, আশা ভঙ্গের পীড়া দিতে পারে। মানুষ তার নানাবিধ স্বার্থ সুবিধার জন্য বাস্তব সম্পর্কের বিবিধ দশায় মুখোশ বদলায়। ভার্চুয়াল শ্রদ্ধা, অনুভূতিগুলো বাস্তবের দেখায় অপ্রয়োজনীয় আবেগ (যেখানে বাস্তববাদী হবার হিসেব নেই) জন্ম দেয়। যদি ভিন্ন ধর্ম, রুচির মানুষের মাঝে সখ্যতা হয়, সেটার জন্য পারস্পারিক শ্রদ্ধাটা ভার্চুয়াল ফ্রেমবন্দী থাকাটাই শ্রেয়।

5. "কাল্পনিক শ্রদ্ধার চেয়ে বাস্তবিক ভর্ত্‌সনাও অধিক মূল্যবান।" ভৎসনা করার অধিকার আদায়ের জন্য একটা সম্পর্কের জায়গা তৈরি করতে হয়।সম্পর্ক দায়হীন কাউকে শুধু সম্মান/শ্রদ্ধাই চলে, ভৎসনা না। সেই বাস্তব সাক্ষাতের শেষটা কোথায়? আদৌ কী শেষ হতে চাইবে? যেখানে হয়তো, ধর্ম আলাদা, রুচি আলাদা, জীবনাচার আলাদা, সেখানে অসম সম্পর্ক স্থাপনে সমাজ বিদ্রোহ করবে কিনা, ভাববার অবকাশ দিলাম।

৬. অনুভূতিহীন কারো স্বার্থ, চাহিদা থাকতে পারেনা। সেটি অবশ্যই নিঃস্বার্থ। তমার কথা, আমি একই সাথে "স্বার্থপর" এবং "অনুভূতিহীন"---যেটা শুনে স্ববিরোধী মনে হয়। তাই তমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছি, "অনুভূতিহীন জীবের আবার স্বার্থ কী?"

আমি অনুভূতিসম্পন্ন এবং স্বার্থপর---এটাই বাস্তবতা এবং আপনি সেটিই বুঝাতে চেয়েছেন।

"সবসময় অনুভূতিহীনতাকে কারন দেখিয়ে স্বার্থপরতা বা নীতিহীনতাকে ঢাকা যায় না। বরং নিজেকে স্বার্থপর স্বীকার করে নিয়ে বলা যায় -অনুভুতিহীন হতে হলে স্বার্থপর হতেই হবে।"---এ কথাটির পরিষ্কার করলাম, আশা করি।

7. "একজন অনুভূতিশীল মানুষ জগটা খুঁজে পাওয়ার পর খেয়াল করে তা দেখতে কেমন, পানি কোন ছন্দে গ্লাসে পড়ছে,...." এটাকেই আমি আবেগাশ্রয়ী হয়ে ওঠা বুঝিয়েছি। নিজের জন্য সেটা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় মনে করি।

8. "এটা দেখে আপনার হাসি পাওয়ার কিছু নেই।"---হাসি না, জনাব। বিব্রত হই। আমি অন্যদের মাঝে দৃষ্টিপাত নিয়ে এধরনের সমস্যায় পড়িনি। সেই অন্যরাও কিন্তু নারী হিসেবেই জন্মেছে। কথা, মুখোভঙ্গি তাদের স্বাভাবিকই থাকে। যারা করে তারা কী পুরুষের চোখের মাঝে সূক্ষতম দুর্বলতার ভাষাটা পাঠ করতে পারে? সেটার আমার প্রশ্ন?

৯. "কিন্তু সে ভাল লাগাটাও যে কলঙ্কিত” । আপনি রাতারাতি অস্বীকার করলেন? কিন্তু শাওন.... হুমায়ূন আহমেদের কল্পিত শ্যাম বর্ণের কন্যা চরিত্রের সাথে মিলে যাবার কারণে, নতুন সম্পর্ক, ভাল লাগা তৈরি হল, সেটার বিরুদ্ধে নিন্দার স্রোত কিন্তু কম বয়নি। আমার বয়স, পেশা (মাস্টারি), ধর্ম, বর্ণ বিবিধ কারণে সম্পর্ক তৈরির আগে "ভাল লাগা" তৈরি হওয়াটাও পাপ। সমাজের তো একটা ধর্ম আছে, নাকি? আমরা কী পছন্দ করবো, না করবো, কার সাথে আমাদের চলবে না চলবে এসব সংস্কারের উপর দাড়িয়ে আপনার আমার সমাজ।

10. "একজন তমা থাকতেও মর্ত্যের অন্য কারও প্রতি মোহাবিষ্টতা আর একজন স্বামী বা বয় ফ্রেন্ড থাকার পরও"......হাসালেন ভাই! তমার সাথে সেই সম্পর্ক থাকলে/তৈরি হলে, এসব বাড়তি ভাল লাগাটা গোপন রাখাই কী বুদ্ধিমানের কাজ ছিলনা? আমি বা সে কেউই তাদের ভাল লাগা বাস্তব পৃথিবীটাকে গোপন করিনি। সেসব গোপন রেখেই একটা শক্ত, কঠোর সম্পর্ক করার দায়টা নেয়া যে কষ্টকর।

১১. একবার বলছেন "অনুভূতিহীন জীব" আবার বলছেন "বুঝতে দেইনা আমার মাঝে একটা মানুষ আছে..."---অনুভূতিহীন দাবিটা তমার। আমার নয়। আমার অনুভূতি আছে, কিন্তু সেটাকে প্রকাশ করিনা বলেই এত বিভ্রান্তি, বিবাদ।

১২. "তাহলে সম্পর্ক কি থেকে হওয়া উচিৎ?" -----সম্পর্কহীন ভার্চুয়াল যোগাযোগের কথাই বারবার বলছি। আদিকালের কলম-বন্ধুদের কথাও ভাবতে পারেন। ভাল লাগাটাকে বাস্তবে নিয়ে আসলেই তা থেকে সম্পর্ক হতে পারে।

13. "নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের দৃষ্টি সীমা এটুকুতেই সীমাবদ্ধ বলতে চান?
"....আপনি নিশ্চয়ই পুরুষ হয়ে তার অনেকটাই উপলব্ধি করেন। একবার এক উচ্চ শিক্ষিতের ঘটকালি করেছিলাম, পাত্র ছবি দেখেই বলে, মেয়ের গালে মাংস নেই। আর কিছু? আপনি জরিপ চালিয়ে এর গড় নিতে পারেন।

১৪. "যা কিছু বাস্তবে অন্যায় অমানবিক তা পরাবাস্তবে ন্যায্য এমন ভাবাটাই ভয়ংকর অন্যায়।"---প্রশ্ন হল ভালা লাগাটা পরাবাস্তবেও হতে পারে। কিন্তু আমি/আমরা কি ভাল লাগার মত দশা/সম্পর্কে এসেছি? আমার ছাত্র পরাবাস্তব ব্লগ পরিসরে এসে ছদ্মনামে একটা গালি দিয়ে যেতে পারবে, বাস্তবে তা সম্ভব? প্রযুক্তির যুগে ভার্চুয়াল বিষয়টি রাতারাতি বাস্তব হচ্ছে, যেটা আদিকালে দূর দূরান্ত থেকে লেখা কলম বন্ধুদের বেলায় সম্ভব ছিলনা। বাস্তব আর ভার্চুয়ালের তফাতটা আমার কাছে এখনও গুরুত্ববহ।

১৫. "পরাবাস্তব শব্দটা যতখানি পর তার প্রভাব মোটেও ততখানি পর না।"----হতে পারে হয়ত। তাই সম্পর্ক, দুর্বলতা বিবিধ বিষয় তৈরির আগেই নিরাপদ থাকতে চাই, কিন্তু সেখানেও একটা জিম্মি দশা কাজ করে। আদি কালের কলম বন্ধুরা কী করতেন?

১৬. "এই ভাল ভাবে বাঁচার দাবির কাছে এখন সম্পর্ক মূল্যহীন, কিন্তু একসময় মানুষ সম্পর্ককে সর্বোচ্চ মূল্য দিত, কেন দিত? শুধুই গোঁড়ামী থেকে? মূর্খতা থেকে?"---তা যা বলেছেন!

আবারও ধন্যবাদ, পড়া ও মন্তব্যের জন্য।

১৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩৪

চানাচুর বলেছেন: উফ! নায়কের কি এ্যাটিটিউড:P:P

০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:১২

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: যেমন? বখাটে নাকি লম্পট নাকি প্রতারকের এ্যাটিটিউড?

১৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৮

বক্তা১ বলেছেন: মন দখলের জন্য বাস্তবে আসার প্রয়োজন নেই। মনকে এখানে বাস্তবের উপর অনির্ভরশীল রেখে একটা স্বাধীনতা দেয়া যায়। মানুষ আবেগের বশেই কেবল স্বাধীনতাটা নষ্ট করতে পারে। --আমিওতো তাই বলি, মন দখলের জন্য বাস্তবে আসার দরকার নাই, তবে দখলি মনটা কিন্তু বাস্তবের অংশ তাই এই প্রকার দখলকে কোন মতেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করিনা বরং দখলদার বাস্তবের হলে যে মূল্য সমান মূল্য এক্ষেত্রেও দিই । কারন মনের খোরাক প্রাথমিক পর্যায়ে বাস্তব অথবা পরাবাস্তব অথবা কল্পরাজ্য যেখান থেকেই দেয়া হোক চূড়ান্ত ভাবে মনে বা মগজে গ্রহনযোগ্যতার জন্য তাকে যে দশায় রূপান্তরিত হতে হয় তা কিন্তু বাস্তব কোন দশা না। কিন্তু স্বাধীনতাটা কোন ক্ষেত্রে? কার জন্য?

বাস্তবে চেহারা, অর্থ, যোগ্যতা নামক প্রভৃতি স্বৈরাচারের হাত থেকে নিজেকে রেহাই দিতে পারিনা কিন্তু পরাবাস্তবে কোনও স্বৈরাচার নাই তাই পরাবাস্তব স্বাধীন হয়েগেল ?

এটা স্বাধীনতা না, ধোঁকা, নিজেকে সহ সবাইকে ধোঁকা দেয়া, এজন্য পরাবাস্তবই ভাল এমন বলাও ঠিক না।

চেহারা, অর্থ, যোগ্যতা প্রভৃতি বাস্তব উপাদানের দৌরাত্মে বা এদের প্রতি আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারছিনা এটা আমার হীনতা, অক্ষমতা, একে মেনে নিতে পারছিনা তাই পরাবাস্তব সক্ষমতা তৈরী করি--এটা আমার স্বাধীনতা না, বরং বাস্তবতাকে অপমান করে বাস্তব অক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা; বাস্তব অক্ষমতা আর অন্যায়ের ন্যায্য সমধানের পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া।

এটা বাস্তবতা মানতে না পেরে মাদকের নেশায় স্বপ্নের দুনিয়ায় ঘুরে আসার মতই অশুভ, মাদকের ক্ষয়-ক্ষতি তাৎক্ষনিক আর পরাবাস্তবতারটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।

এটাই যদি স্বাধীনতা হয় তবে সে স্বাধীনতা নষ্ট করে দেয়াই ভাল তাইনা?

একটা ছোট্ট ছেলে দুর্ঘটনাক্রমে বিভীষিকাময় আগুনে পোড়া দৃশ্য দেখে এতটাই ভয় পেল যে দৌড়ে একটা অন্ধকার গর্তের ভেতর ঢুকে গেল, কোনও মতেই তাকে বের করা যাচ্ছেনা, বের হলেই বিভৎস দৃশ্য দেখতে হবে এই কারনে সে যদি ঠিক করে বাইরের সব কাজ সে গর্তে বসেই করবে তাহলে এই পরিস্থিতি কি কাম্য নাকি গর্ত থেকে বের হয়ে কিভাবে আগুন নেভাতে হয় বা সে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় তা শেখাটাই কাম্য?

"আবেগ" আর "অনুভূতি" শব্দ দুটোকে আলাদাভাবে মাপি। প্রথমটা প্রায়শই বেহিসাবী, কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য। পরেরটা স্বতঃস্ফূর্ত মনোবৃত্তীয়, মানবীয় বিষয়। --এটুকু আমিও জানি কিন্তু আবেগের লাগামটা কখন টেনে ধরতে হবে বলে বুঝিয়েছেন সেটাও জানতে চেয়েছিলাম, এই লাগাম টেনে ধরার মাত্রা ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তিতে ভিন্ন হলে পারস্পরিক সম্পর্ক বা যোগাযোগে বিভ্রাট আসে। স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ আসে, একজনের স্বেচ্ছাচারিতা অন্যের প্রতি অবিচার। একটা নির্দিষ্ট মাত্রা থাকলে কি বিভ্রাট কিছুটা কমতো? সম্পর্ক বা যোগাযোগকারী মানুষের তখন কি করা উচিত?

সাক্ষাৎ বনাম শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি হল এমন। বাস্তবে আসলে ----পারস্পারিক শ্রদ্ধাটা ভার্চুয়াল ফ্রেমবন্দী থাকাটাই শ্রেয়।
“ভার্চুয়াল শ্রদ্ধা, অনুভূতিগুলো বাস্তবের দেখায় অপ্রয়োজনীয় আবেগ (যেখানে বাস্তববাদী হবার হিসেব নেই) জন্ম দেয়।”---বার বার বাস্তবতাকে দোষী করছেন কেন? বাস্তবে এলে অপ্রয়োজনীয় আবেগ জন্ম নিবে--এভাবে না ভেবে, নিয়ামক থাকলে আবেগের জন্ম হবেই, নিয়ামক বাস্তব বা পরাবাস্তব যেখানেই থাকুক প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় আবেগ তৈরীর জন্য সেটাই দায়ী, বাস্তবতা না; আর নিয়ামক দেয়ার পর তার ফলাফল বা দায়দায়িত্ব স্বীকার না করা প্রতারনা। আবেগের প্রয়োজনীয়তা বা স্বীকৃতি-যোগ্যতা নিয়ে মাথা ব্যাথা থাকলে সেটা নিয়ামক দেয়ার বা পাওয়ার আগেই ভাবা উচিত, নৈতিকতাটা এখানেই--এভাবে ভাবলে ক্ষতি কি? বরং বেশি যুক্তি যুক্ত হয়না?

আর হুমায়ুন আজাদের ভুল পথে উৎসাহ দানকারী উক্তির ব্যাখ্যা জানতে চাইনি, বলতে চেয়েছি এ ধরনের ভাবনা অশুভ। বাস্তবতার সমস্ত উপকরণ সহ যেটা বা যাকে শ্রদ্ধা করা যায়না তাকে নির্বাচিত কিছু বিষয় বিবেচনা করে পরাবাস্তবতার মাধ্যমে শ্রদ্ধা করি বলাটাও প্রতারনা, এ শ্রদ্ধা মূল্যহীন, ছোট্ট শিশুকে প্রবোধ দেয়ার মত। আমি হুমায়ুন আজাদের মতবাদের সাথে ভিন্নমত।

“যদি ভিন্ন ধর্ম, রুচির মানুষের মাঝে সখ্যতা হয়, সেটার জন্য পারস্পারিক শ্রদ্ধাটা ভার্চুয়াল ফ্রেমবন্দী থাকাটাই শ্রেয়।” --- কেন? একজন মানুষের ১০০% ভাল থাকবে বা আমার সাথে মিলবে অথবা কাউকে শ্রদ্ধা করি মানেই তার ১০০% ভালবাসি বা অন্ধ অনুকরণ করি এমন কোনও কথা নেই। আপনার ৩০% ভাল লাগে ৭০% লাগেনা, ঐ ৩০% ভাল লাগা বাস্তবেই আপনাকে বলা যায় আর ৭০% সমালোচনাও সামনা সামনিই করাযায়, এমনটাই উচিত। ভার্চুয়াল ফ্রেমে ৩০% কে বন্দী করে ৭০% কে উহ্য রেখে শ্রদ্ধা করছি ভাব নিলে যাকে ভন্ড শ্রদ্ধাটা দেখাচ্ছেন সে যদি সত্যি ভেবে এক মুহূর্তের জন্যও সস্তি পায় তবে ততটুকু প্রতারনার জন্যও আপনি দোষী, আর সেই সস্তি থেকে সে যদি আপনার প্রতি বিন্দু মাত্রও শ্রদ্ধা বা ভাল লাগা পোষণ করে তবে সেটা বাজারে ফরমালিন দিয়ে মাছ, ফল মূল ,সবজি টাটকা দেখিয়ে বিক্রি করার মতই প্রতারনা। ব্যাবসায়ীর প্রতারনা শরীরকে আর আপনারটা মনকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।

ভৎসনা করার অধিকার আদায়ের জন্য একটা সম্পর্কের জায়গা তৈরি করতে হয়।----- সমাজ বিদ্রোহ করবে কিনা, ভাববার অবকাশ দিলাম। ---ঐ যে ৭০% এর জন্য সমালোচনা ওটাকেই ভর্তসনা বুঝিয়েছি, আক্ষরিক অর্থে না। আর সমাজের বিদ্রোহ? ভাল কথা, কয়জন প্রকৃতই সমাজের কথা ভাবে? আপন স্বার্থে সমাজের দোহাই দিতেই সবাই ব্যাস্ত আবার অন্যের সমাজ মেনে চলাটা যখন আপন স্বার্থহানী ঘটায় তখন তাকে মধ্যযুগীয় মানসিকতা বলতেও সময় লাগেনা। একই ব্যাক্তির দুইরূপ একইসাথে বিকাশমান; দুই পকেটে দুইটা রাখি, যখন যেটা দরকার সেটা বার করার প্রতিযোগিতা করি। নৈতিকতা বা সমাজ চিন্তা এখন এ পর্যায়ে।

আমি অন্যদের মাঝে দৃষ্টিপাত নিয়ে এধরনের সমস্যায় পড়িনি ----- দুর্বলতার ভাষাটা পাঠ করতে পারে? সেটার আমার প্রশ্ন? --- ব্যাপারটা নিউটনের সূত্রের মত, বাহ্যিক শক্তির প্রভাব না থাকলে আদি অবস্থা চলতেই থাকবে, বাংলাদেশে মেয়ে চোখ নামিয়ে কথা বলে আবার পশ্চিমা দেশে অর্ধ নগ্ন হয়ে চলে, দুজনেই নারী হিসেবে জন্মেছে কিন্তু পার্থক্যটা পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে হয়।

আর নারীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের বিশেষ ক্ষমতাতো আছেই; সভ্যতার হাওয়া,আধুনিকতা, বিকৃত সংস্কৃতি প্রভৃতি শক্তির প্রভাবে যে ঐ ক্ষমতাকে এড়িয়ে যায় সে সূক্ষ্মতম দূর্বলতার ভাষাটা বোঝেনা বা বুঝতে চায়না (হয়তো আপনার মত, বুঝতে দিতে চায়না তার মাঝেও একটা মানুষ আছে) নয়তো বুঝতে পারাটাই স্বাভাবিক আর বুঝতে পারলেই দৃষ্টি কম্পন, নামিয়ে নেয়া, অসংলগ্ন কথাবার্তা বা নার্ভাস হওয়া।

"কিন্তু সে ভাল লাগাটাও যে কলঙ্কিত” । আপনি রাতারাতি অস্বীকার করলেন? ----কি রকম?

কিন্তু শাওন.... হুমায়ূন আহমেদের কল্পিত --- সেটার বিরুদ্ধে নিন্দার স্রোত কিন্তু কম বয়নি। ---তারা তাদের অনুভূতিকে আবেগকে নিজেরা স্বীকৃতি দিয়েছে অতঃপর সামাজিকতার বেড়া জালের উর্দ্ধে তুলে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা সমাজকে খুব কেয়ার করেনা বলেই যোগযোগ করেছে, ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং সে অনুভূতির স্বীকৃতি দিয়েছে, নিজেদের অনুভূতিকে সমাজের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছে। সমাজের প্রতি তাদের অন্যায়টা কিন্তু শুধু সম্পর্ক করাটাই না, তাদের ঐ ধরনের যোগাযোগটাই অন্যায়।

আমার বয়স, পেশা (মাস্টারি), ধর্ম, ----এসব সংস্কারের উপর দাড়িয়ে আপনার আমার সমাজ। ----সমাজকে খুব কেয়ার করেন মনে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভার্চুয়ালিটিতে আসক্তি আসে কিভাবে?
যখন আবেগের বশে বাস্তব হতে চায় তখন যোগাযোগ আর সম্পর্কের মাঝের সূক্ষ্ম রেখা গাঢ় করে টানার তৎপরতা আসে কেন?
যোগাযোগের শুরুতে সমাজের কথা মনে থাকেনা কেন?

অনুভূতির প্রকাশ না প্রকাশ নিয়ে বিভ্রাট বিবাদ হবে কেন?

ভেতরের তোলপাড়টা সে পর্যায়ের কেন হয় যে বাহির থেকে বোঝা যায়?

আমাদের সমাজ যে রক্ষনশীল তা কি আগে জানা ছিলনা?

একি প্রথম অভিজ্ঞতা? ব্যাপারটা চারপাশে এত অহরহ যে সচেতন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। মেয়েদের ব্যাপারে এমন বেশি শুনি। কিন্তু আপনি কি করলেন? কেন এমন হল?

আমি বা সে কেউই তাদের ভাল লাগা বাস্তব পৃথিবীটাকে গোপন করিনি। সেসব গোপন রেখেই একটা শক্ত, কঠোর সম্পর্ক করার দায়টা নেয়া যে কষ্টকর। --- ভাল কথা, ভিত্তিটা মিথ্যার ওপর না হওয়াই ভাল। এখানে যেভাবে বাস্তবতা গোপন করছেননা সেভাবে অন্য ক্ষেত্রে কেন বাস্তব থেকে পালাতে চাচ্ছেন? কি বলবেন, সম্পর্কের ইচ্ছা ছিলনা তাই গোপন করিনি? কোনও উদ্দেশ্য থাক বা না থাক সত্য গোপন বা সত্যের মুখোমুখী না হওয়া অনুচিত এটুকু জানলেই চলে।

অনুভূতিহীন দাবিটা তমার। আমার নয়। আমার অনুভূতি আছে, কিন্তু সেটাকে প্রকাশ করিনা বলেই এত বিভ্রান্তি, বিবাদ। --- আপনার অভিনয় প্রতিভার জন্য তারিফ রইল।

সম্পর্কহীন ভার্চুয়াল যোগাযোগের কথাই বারবার বলছি। আদিকালের কলম-বন্ধুদের কথাও ভাবতে পারেন। ভাল লাগাটাকে বাস্তবে নিয়ে আসলেই তা থেকে সম্পর্ক হতে পারে। ----মানে কোনও বাস্তব সম্পর্ক চাই না, বাস্তব থেকে পালিয়ে থাকা, আর গর্তের মধ্যে বসে আলোর পৃথিবীর শুধু ভাল দিকগুলি ভোগ করার আকাঙ্খা, ব্যাপারটা স্বার্থপরতাকে ছাড়িয়ে আরও বেশি কিছু মনে হয় না?

আদিকালের কলম বন্ধুদের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের যোগাযোগটা কিন্তু প্রশ্ন বিদ্ধই ছিল, এটা কোনও স্বীকৃত মাধ্যম না বরং সমস্যা, প্রতারনা আর অবিশ্বস্ততার সুযোগ দানকারী প্রতিষ্ঠিত মাধ্যম। নারী-পুরুষের যোগাযোগ যেখানেই হোক স্বচ্ছতায় ঘাটতি মানেই অন্যায়ের সুযোগ। আর অন্যায়কে সুযোগ না দেওয়ার কথা নারী পুরুষ সবারই ভাবা উচিত।

বাস্তব আর ভার্চুয়ালের তফাতটা আমার কাছে এখনও গুরুত্ববহ। --হ্যা, তফাতটা গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু আপনি পরাবাস্তবে থাকাটাই ভাল বলেছেন কেন সেখানেই আমার প্রশ্ন যখন পরাবাস্তব নিরাপদ যোগাযোগের সিদ্ধ মাধ্যম না।
আপনি কি বলতে চাচ্ছেন পরাবাস্তবের ভাল লাগা পরাবাস্তবেই থাকুক, বাস্তবে আনা যাবেনা, কেউ আবেগের বশে আনতে চাচ্ছে, সেক্ষেত্রে সে ভুল বা অন্যায় করছে?
আমি বলছি কেন এমন কিছু করতে হয় যে এমন বিভ্রাটের উৎপত্তি হয়? যে আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে পারছেনা কেন তাকে এমন খেলায় জড়ানো হচ্ছে? তার বাস্তব হতে চাওয়া আবেগকে ভুল বলে অস্বীকার করে কি তার আবেগ অনুভূতির প্রতি অবিচার হলনা?
আমি বুঝিনা এত প্রশ্ন, সমস্যা আর অবিচার যেখানে সে পরাবাস্তবই কেন ভাল?

১০ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:০২

সাঈফ শেরিফ বলেছেন:
১. মনের স্বাধীনতাটা আমার নিজের জন্য, মনটাই শুধু স্বাধীন হউক|মনে মগজে গ্রহণ যোগ্য হলে, মনের দশাতেই থাকুক| নিজের অস্তিত্বকে অবমুক্ত করার কোনো আগ্রহ নেই, ওটা বরং শৃঙ্খলিত থাকুক |পরাবাস্তবতায় লৌকিকতার বন্ধন/ স্বৈরাচার নাই |পরাবাস্তবতায় স্বাধীন হতে চাইলে কে বাধা দিবে?

২. ধোঁকা? নিজেকে দিলে কষ্ট নাই, অন্যকে দেয়া হচ্ছে কিনা সেটাই জ্ঞাতব্য |কষ্ট কোথায় নেই? পরাবাস্তব আড়াল, ধোঁকা থেকে যে কষ্ট, "বাস্তবতা, লৌকিকতার" কষ্ট কি এর চাইতে কম? আপনি হিন্দু হয়ে মুসলিম বিয়ে করবেন, গরিব হয়ে বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করবেন, বাস্তবতা আপনাকে ছেড়ে দিবে? গত কালকের প্রথম আলোতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে দুজনের ঝুলে পড়বার কাহিনী পড়েছেন তো ?

৩. আমার হীনতা, অক্ষমতা কোথায় সেটা নিয়ে আরেকদিন আত্মসমালোচনা মূলক কিছু লেখার আশা রাখি |চেহারা, যোগ্যতা, অর্থ বিবিধ বাস্তব, লৌকিক বিষয়াদি তো আছেই অক্ষমতার তালিকায়, সেটা মেনে নিয়ে পরাবাস্তবতার কুঁড়ে ঘর গড়লে সেটা স্বাধীনতা বিরোধী হয় কীভাবে? বাস্তবতা যখন ঔদ্ধত্য দেখিয়ে এক বিকলাঙ্গকে যখন সমাজ চুত্য করেছে, তখন বাস্তবতাকে পাল্টা অপমান করার প্রসঙ্গ থাকে কীভাবে? স্বার্থ ছাড়া সেই সমঝোতা, সমাধান আপনি করে দিবেন, আমার কথিত সুহৃদ রা করে দিবে? কি স্বার্থ তাদের?

৪. "এটা বাস্তবতা মানতে না পেরে মাদকের নেশায় স্বপ্নের দুনিয়ায় ঘুরে আসার মতই অশুভ, মাদকের ক্ষয়-ক্ষতি তাৎক্ষনিক আর পরাবাস্তবতারটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।"---কথা টা ভালো লাগলো | কিন্তু যে সৈনিক বছরে ১০ মাস যুদ্ধের মাঠে থাকে, যার জীবন, মৃত্যুর কোনো ঠিক নেই, অথবা যার দেশে বিদেশে যাযাবরের মত দিন মজুরি করা লাগে, তার জন্য লৌকিকতা, বস্তবতার চর্চা কতটুকু ন্যায়?

৫. "একটা ছোট্ট ছেলে দুর্ঘটনাক্রমে বিভীষিকাময় আগুনে পোড়া দৃশ্য দেখে এতটাই ভয় পেল....."---না ভাই আমার এমন কিছু হয়নি |হয়ত হবার সুযোগ হয়নি তাই | আপনার বাস্তব সমাজ, পরিবার, অর্থ, পেশা, শিক্ষা, শারীরিক গঠন সব কিছু মিলে কারো কারো জীবনে যেসব দূর্ঘট, দুর্যোগ, পীড়ন তৈরি করতে পারে সেটি বরং বাধ্য করে কাউকে পিছনে ঠেলে দিতে | আপনি বিদ্রোহ করে সামনে দাড়াবেন? সেটা কি আপনার অধিকার? নাকি স্বার্থ আদায় করবার স্বার্থপরতা? বাস্তবের জনতা আপনাকে লোভী, স্বার্থপরই ঠাওর করবে| কি দরকার? কি দরকার?

৬. "এই লাগাম টেনে ধরার মাত্রা ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তিতে ভিন্ন হলে পারস্পরিক সম্পর্ক বা যোগাযোগে বিভ্রাট আসে। স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ আসে, একজনের স্বেচ্ছাচারিতা অন্যের প্রতি অবিচার। একটা নির্দিষ্ট মাত্রা থাকলে কি বিভ্রাট কিছুটা কমতো? সম্পর্ক বা যোগাযোগকারী মানুষের তখন কি করা উচিত?"---এটা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ কথা |তাহলে বাস্তবতা বঞ্চিত কারো জন্য পরাবাস্তবের দরজাও বন্ধ? নাকি পরাবাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে এমন কারো সাথেই যোগযোগ রাখা কর্তব্য? অবিচার, অধিকার, আশা, বিভ্রান্তির সুযোগ নেই |

৭. আবেগের প্রয়োজনীয়তা বা স্বীকৃতি-যোগ্যতা নিয়ে মাথা ব্যাথা থাকলে সেটা নিয়ামক দেয়ার বা পাওয়ার আগেই ভাবা উচিত, নৈতিকতাটা এখানেই| ---দুপক্ষই যদি আবেগ টাকে অপ্রয়োজনীয় মেনে নিয়ে, নিয়ামক গুলোকে প্রাসঙ্গিকভাবেই অগ্রাহ্য করেই যোগাযোগ শুরু এবং রক্ষা করে, তাতে কি খুব ক্ষতি? ছোট্ট পরাবাস্তব পরিসরেও কেউ যদি শর্ত স্বার্থ হীন যোগাযোগ রাখতে চায়, টাকে ঠেলে দেয়া কতটা উচিত? "সম্পর্ক" একটি বাস্তব মূর্তি যার মাঝে নিয়মতান্ত্রিকতা ও স্বার্থের টানা পড়েন আছে, যেটা বিমূর্ত পরাবাস্তবতায় নেই | নেহাতই একটা বিশ্বাস, শ্রদ্ধার সূত্র ধরে যোগাযোগ | "যোগাযোগের শুরুতে সমাজের কথা মনে থাকেনা কেন? অনুভূতির প্রকাশ না প্রকাশ নিয়ে বিভ্রাট বিবাদ হবে কেন?"---এগুলো তো সব সময়ই মাথায় আছে, বিবাদ কী পেলেন? বিবাদ হলেই তো যোগাযোগটা বন্ধই হয়ে যেত |

৮. "ঐ ৩০% ভাল লাগা বাস্তবেই আপনাকে বলা যায় আর ৭০% সমালোচনাও সামনা সামনিই করাযায়, এমনটাই উচিত।"---সমালোচনা? তাও বাস্তবে এসে? কত প্রকার গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরতে বলছেন ভাই? বাস্তবে আসা মানেই একটা সম্পর্ক তৈরির আগ্রহ, সেখানেও ভুল বুঝে, নতুন করে মানুষ চিনে আশাহত হয়ে ফিরতে বলছেন? তারপর ঘরে ফিরে আবার নতুন "যোগাযোগ" অনুসন্ধান? তারা কি সমালোচনার সাথে আপোষ করে কারো জন্য পথ চেয়ে থাকবে? নাকি ভালোবেসে, সমালোচনা মেনে গো মাংস খেতে তত্পর হবে? আমার শুটকি মাছ, গরু, ছাগল ভক্ষণের সব কিছুতেই যার নাক সিটকানো প্রবল আপত্তি, তার সাথে বাস্তবতায় এসে টানা পরেনের ঝুঁকি কেন?

৯. আমার শ্রদ্ধার ভন্ডামিটা হলো, যোগাযোগে যাকে বিশ্বাস করি, তার ব্যক্তি গত জীবন নিয়ে আমার কোনো অধিকার/বক্তব্য নেই (এটাও একটা পরোক্ষ শ্রদ্ধা ধরতে পারেন)| অমুসলিমদের বিষয়াদিতে আমার বিশ্বাস নাও থাকতে পারে, কিন্তু তাঁদের অধিকারকে সমর্থন করি (সেটাও এক প্রকার সম্মান করা)| সে সম্মানকে দৃষ্টি ভঙ্গির ৩০% ধরে, আমাকে যদি আদর্শিকভাবে পৌত্তলিকতা বিরোধী বলে/ধরে ৭০% এর ভন্ড অসাম্প্রদায়িক বলেন, সেটা কেমন হলো? কিন্তু নিজের পছন্দ চাপাতে গেলেই সম্মানের বিষয়টা তো আর থাকছেনা, সাম্প্রদায়িকতা হয়ে যাচ্ছে | সেখানে সমাজ বিদ্রোহ, সমাজ স্বার্থ সব একই সুত্রে আসে | আপনার সাথে আমার হটাত দু এক দিনের যোগাযোগ |আপনি সমালোচনা করছেন আপনার ভঙ্গিতে, সেটার বিষয়ে সম্মান জানিয়ে আত্মস্থ করছি | কিন্তু বাস্তবে এসে দু কাপ চা না খেলে, সালাম-কুশল বিনিময় না হলে সেই সম্মানে খাঁদ, ভন্ডামি থাকবে, সেটা তো বোধ গম্য হলনা |

১০. "কিন্তু সে ভাল লাগাটাও যে কলঙ্কিত” । আপনি রাতারাতি অস্বীকার করলেন? ----কি রকম?----পুরুষের দৃষ্টি প্রতিষ্ঠিত ভাবেই মন্দ (সমাজ/বাস্তবতা/লৌকিকতার আলোকে), যে দৃষ্টি দিয়ে মেয়ের বয়সী মেয়েকেও স্ত্রীর দৃষ্টিতে দেখা যায় | কলংকিত দৃষ্টিতে কলংকিত ভালো লাগা বৈকি !

১১. "সমাজের প্রতি তাদের অন্যায়টা কিন্তু শুধু সম্পর্ক করাটাই না, তাদের ঐ ধরনের যোগাযোগটাই অন্যায়।"---নাহ মেয়ের বয়সী মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখা/কথা বলা/দেখা করা অন্যায় হবে কেন? ওটাতো তার কাছে মেয়ের মতই হবে, মুখোশ পরে হলেও মেয়ের মত করেই দেখতে হবে, মামনি করে ডাকবে | এখানে আবার যোগাযোগে ভয়, অন্যায়, শংকা কি? এখন কি ধর্মের ধার ধরবেন? ধর্ম মানতে চান, আফগানিস্তান চলে যান, সমাজের কথা তো সেটাই | আমাদের সমাজই তো শেখায় খালাত, মামাত বোনেরা হলো নিজের বোনের মত, তাদের সাথে সব যোগাযোগের প্রশ্রয় সমাজই দেয় | কিন্তু সম্পর্ক, দুর্বলতা তৈরিক ঝুঁকিটা সমাজ নিবেনা | এটা কি ভন্ডামি?

১২. "সমাজকে খুব কেয়ার করেন মনে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভার্চুয়ালিটিতে আসক্তি আসে কিভাবে?"----রুটি-রুজি, পেটের স্বার্থে সমাজেই চলতে/থাকতে হচ্ছে, নিমকহারামিটা করি কীভাবে বলুন? বাকিটা সময় না হয় আমার জন্য অরুচিকর সমাজ, লৌকিকটাতে (আপনার ভাষায় "আমাদের সমাজ যে রক্ষনশীল তা কি আগে জানা ছিলনা?") এড়িয়ে চলি | তখনি পরাবাস্তব প্রেক্ষাগৃহে পা ফেলা হয় |


১৩. "একি প্রথম অভিজ্ঞতা? ব্যাপারটা চারপাশে এত অহরহ যে সচেতন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। মেয়েদের ব্যাপারে এমন বেশি শুনি। কিন্তু আপনি কি করলেন? কেন এমন হল?"---চাইলে অনেক কারণ দেখানো যাবে, যেটা বাস্তব, সামাজিক মানুষের কাছে নিতান্তই অযৌক্তিক ঠেকবে | কি দরকার?

১৪. বাস্তব থেকে পালিয়ে থাকা মানে আপনার ভাষায় "আলোর পৃথিবীর শুধু ভাল দিকগুলি ভোগ করার আকাঙ্খা"| আফসোস এত দিন জানতাম নিজেকে মুর্খের মত বঞ্চিত করা, সেটাও একপ্রকার স্বার্থপরতা, তবে সেটাকে স্বার্থপরতা বললে একটা সুক্ষ্ণ Irony ও তৈরি হয় |

১৫. "এটা কোনও স্বীকৃত মাধ্যম না বরং সমস্যা, প্রতারনা আর অবিশ্বস্ততার সুযোগ দানকারী প্রতিষ্ঠিত মাধ্যম।"---আমি যদি কারো চরিত্রে কলংক না দি, কথা ভঙ্গ না করি, মিথ্যা কথা না বলি, বিশ্বাস ঘাতকতা না করি ----তারপরেও এই অভিযোগ শুনাবেন?

"যখন পরাবাস্তব নিরাপদ যোগাযোগের সিদ্ধ মাধ্যম না।"---শুরুটা নিঃসন্দেহে অনিরাপদ | প্রতারিত হবার শংকা অনেক |তার পরেও কাউকে কাউকে বিশ্বাস করা হয়ে ওঠে |



বাস্তবে যখন আমি মানসিক রুগী বলে পরিত্যক্ত, তখন পরাবাস্তবতার জানালাটাও বন্ধ করে দিতে হবে |কারণ তাতে বাস্তবের দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে | যে যোগাযোগের কোনো বাস্তব ভবিষ্যত নেই, সেটা ওপ্রান্তে কাউকে পরাবাস্তব কষ্ট দিতেই পারে, যোগাযোগটা অতি সত্বর বন্ধ করাটা কর্তব্য | হোক স্বার্থপর হবার অপবাদ, অভিযোগ, তারপরেও টা বন্ধ করে দিতে হবে | আমি এতদিনের মত আজ একা একা স্বার্থ পরের মত বিদেশ নির্বাসনে কর্ম -ধর্ম করে যেতে পারব |

১৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২৪

বক্তা১ বলেছেন: স্পষ্ট চিন্তা করার ক্ষমতার চাইতে বড় সম্পদ আর নাই, আপনি প্রতিভাবান কিন্তু ভ্রান্তিতে জড়িয়ে আছেন(আমার মতে), আল্লাহ্‌ পাক সব ভ্রান্তি দূর করে দিক, দৃষ্টি স্বচ্ছ হোক এই কামনা করি।

১০ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:৫১

সাঈফ শেরিফ বলেছেন: In search of Sanity :)

১৬| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৩৮

টুকিঝা বলেছেন: প্রিয়তে

১৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫৭

আলোর অভিলাসী বলেছেন: ভাল থাকুন সবসময় ! দোয়া করি ! :)

১৮| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৯

রাতজাগাপাখি বলেছেন: apnar bloge ami notun... lekha pore oshombhob bhalo laglo... tobe jebhabe shomalochona and shetar uttor deya holo... onek jotil... bhalo thakben...

১৯| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১২

সুরঞ্জনা বলেছেন: ভালো লাগলো স্পষ্ট কথন!

২০| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:০৮

অ্যামাটার বলেছেন: ব্যাক্তিত্বের সংঘাত।

২১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ২:০৩

সেলিনা শিরীন শিকদার বলেছেন: প্রিয়তে

২২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: রিভিশন দিলাম আবার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.