![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"মানুষই সবচাইতে নিষ্ঠুর জানোয়ার" - নিৎসে সাহেবের কথা।
রানা প্লাজায় ঘটা ইমারত ধ্বসের কারণ গুলো নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিচে দেয়া হল। এর বাইরে আরো কারণ থাকতে পারে। মূল কারণটি যথেষ্ঠ পরীক্ষা এবং লে আউট না দেখে বলা সম্ভব নয়।
প্রথম প্রকাশ চতুর্মাত্রিক http://tinyurl.com/c792lza
১। ইমারত ধ্বসের একটি অন্যতম কারন হল তার ফাউন্ডেশন দূর্বল থাকা কিংবা জমির মাটির বিয়ারিং কেপাসিটি কম থাকার কারণে ফাউন্ডেশনের সেটলমেন্ট সৃষ্টি। অর্থাৎ উপর থেকে আসা অতিরিক্ত বোঝার কারণে ফাঊন্ডেশন দেবে যেতে পারে। বেশির ভাগ রেসিডেনশিয়াল বিল্ডিংয়ে সাধারনত আইসোলেটড কলাম ফুটিং (অর্থাৎ প্রতি কলামে আলাদা ভিত) ব্যবহার করা হয়। কারন এতে খরচ কম পড়ে। কিন্তু মাটির ভার নেবার ক্ষমতা বিচার করে আমরা ম্যাট ফাউন্ডেশনের কথা বলে থাকি। বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলের বাড়ি গুলোতে যেখানে মাটির বিয়ারিং কেপাসিটী খুবই কম এবং বহুতল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভবন যেখানে লোডের পরিমান বেশি সেখানে সাধারনত এই রকম ভিত ব্যবহার করা হয়। এতে খরচ বেশি পড়লেও ভবনটিতে সেটলমেন্ট ইন্টিগ্রেটেড হয়। অর্থাৎ কোন একটা অংশ আলাদা ভাবে সেটল করে পুরো কাঠামো নাড়িয়ে দেবে না বড়ং পুরো ভবনটি একসাথে মাটিতে ডেবে যাবে। রানা প্লাজার ক্ষেত্রে এটি ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া না গেলেও আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে - হয়ত এটি ঘটে নি। কারন আমরা দেখছি যে ভবনটির বিভিন্ন অংশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ফাউন্ডেশনের কারণে ফেইলিওর হলে পুরো ভবনটি কলাপ্স করতে পারত।
২। ডিজাইনে ত্রুটি - আমরা জানি যে ভবন্টির সামনের দিকের অংশে ব্যাংক ও বিপনি বিতান ছিল। এখন মূল ডিজাইন না দেখে এটি নিরূপন করা অসম্ভব যে ডিজাইনে ত্রুটির কারণে পুরো কাঠামোয় ইন্সটাবিলিটি দেখা দিয়েছে। আমি দেখেছি যে বিল্ডিং এর সামনের অংশে একটি চলমান সিড়ি ছিল। এটি খুব সম্ভব কোরিয়ায় ঘটা। বিল্ডীং এর মূল ডিজাইনে এলেভেটেড ওয়ে ছিল না কারন ডিজাইন করা হয়েছিল রেসিডেনশিয়াল ভবন হিসেবে। স্থপতিদের মানা সত্তেও মালিক পক্ষ অন্য ফার্ম দিয়ে ডিজাইনে একটি চলমান সিড়ি যোগ করে ভবনটিকে শপিং মল বানান। ভবনের মূল অংশে (কোর কলাম) পরিবর্তন আনা হয়। অতঃপর ভবনটি ধ্বসে পড়ে। এখন মূল ফ্রেমে ইন্সটাবিলিটি কি একমাত্র কারণ কিনা সেটি বাপক অনুসন্ধানের দাবি রাখে। এক্ষেত্রে ভুল সম্পূর্ন ডিজাইনার ও যারা এটি পাস করেছে তাদের। এটি মূল প্ল্যান আর লে আউট না দেখে বলা সম্ভব নয়।
৩। দূর্বল নির্মান সামগ্রী ও দ্বায়িত্ববোধের অভাব- ২৩ তারিখ রাতে যে প্রকৌশলী ভবনটি দেখতে গিয়েছিলেন তার জবানবন্দি থেকে আমরা জানতে পারি যে মূল কাঠামোর সেকেন্ড ও থার্ড ফ্লোর থেকে ফাটল দেখা দেয়। এবং উনার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে অন্তত একটি কলাম পুরোপুরি ক্রাশড অবস্থায় ছিল। উনি বলছেন - "আমি দেখলাম একটি কলাম পুরোপুরি ক্রাশ হয়ে গেছে। এটি দেখে আমার আর উপরে উঠার সাহস হয় নাই।" (কোন টিভিতে দেখেছি ঠিক বলতে পারছি না এই মুহুর্তে। কেউ জানলে যোগ করে দিন) অর্থাৎ উপর থেকে আসা লোডের কারণে কলাম এর দুই প্রান্তে যে স্ট্রেস তৈরী হয়েছে তা বহন করার ক্ষমতা ওই মেম্বারটির নাই। কারণ - ক) ডিজাইনে ত্রুটি - ইমারতটি ইন্ডাস্ট্রীর জন্য যে বিল্ডিং কোড সেটি অনুসারে করা হয় নাই এবং খ) ব্যবাহার করা নির্মান সামগ্রী, স্টীল ও কংক্রীটের মান এবং স্ল্যাব কাস্ট করার সময় অবহেলা অর্থাৎ পুওর ওয়ার্কম্যানশিপ। যার কারণে মেম্বার গুলোতে ফাঁকা স্থান রয়ে গেছে। ফলে কংক্রীট ফেইল করেছে। সিমেন্ট আর স্টীল আলাদা হয়ে কলাম ক্রাশ করেছে। খুব সম্ভব এইটাই মূল কারন।
৪। এখন আসা যাক আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে - আমরা এখনো জানি না ঠিক কোন মেম্বারটি থেকে ফাটল শুরু হয়। হরতাল সমর্থকরা মেইন গেটের কাছের কলাম গুলোতে যদি দড়াম দড়াম করে বাড়িও দেন তবুও মূল স্ট্রাকচারের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। যদি কলাপ্স করত তাহলে মূল ভবনটির সামনের দিনের অংশ পড়ে যেত পেছনের অংশ ঠিক থাকত। কারণ লোড নেয় কোর কলামগুলি। ঐগুলি যদি ঠিক থাকে তবে ইমারতটির টিকে থাকার কথা।
-------------------------------------------------
- চারটি বাহিনীর ভেতর সমন্বয়হীনতা প্রকট। প্রথম দিন সকাল ১১ টা থেকে আমি ঐ স্থানে ছিলাম। আমি দেখেছি প্রথম দিন অনেক জওয়ান গাড়িতে বসে সময় পার করেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে প্রথম সাড়িতে দমকল বাহিনী দ্বিতীয় ফেজে আর্মড ফোর্সেস ও অনান্য বাহিনী সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। একসাথে সবাই মিলে লম্ফ ঝম্প না করে প্রথম দিন সকালেই টিম গুলিকে কাজ ভাগ করে দেয়া উচিত ছিল। তবে আজ প্রথম আলোয় ছাপা কাবেরি গায়েনের একটি কলামে দাবি করা হচ্ছে বাহিনীর সস্যরা দুপুর দুটার পর মাঠে নামেন। একথা একেবারেই ঠিক নয়। সকালে নয়টায় দূর্ঘটনার পর ঘন্টা খানেক পর থেকেই দমকল ও আর্মির সদস্যরা মাঠে ছিলেন। তবে পর্যাপ্ত টুলস না থাকায় উদ্ধার কাজ জোরেসোরে শুরু করা যায় নাই।
- ফিল্ড হাসপাতাল নাই। বের করার পর চার পাচ জন মিলে প্রায় বগল তলা করে গাড়িতে উঠাচ্ছেন আর এনাম মেডিকেলে চলে যাচ্ছেন। অথচ এমন বিপজ্জনক ভাবে আহত ব্যক্তিদের নড়াচড়া করাই নিষেধ। অন্তত স্ট্রেচারের ব্যবস্থা করা যেত। কাছেই বেরিকেড দিয়ে আর্মি হাসপাতাল করা যেত।
- দমকল বাহিনীর পর্যাপ্ত হাতিয়ার-সরঞ্জাম নেই। সরঞ্জাম ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে প্রাইভেট কোম্পানি থেকে। বড় বড় মেশিন দিয়ে আর যাই হোক প্রথম ফেজে রাব্ল সড়ানো যায় না। পুরোটাই হ্যান্ড প্রসিডিউর। প্রথম ৪৮ ঘন্টায় সবাইকে উদ্ধার করা গেলে হয়ত আরো অনেকই বেঁচে যেতেন।
সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে দেশে ভূমিকম্প সে যত কম মাত্রারই হোক না কেন ঢাকার অধিকাংশ ধ্বসে যাবে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে আমরা ভূমিকম্প প্রবন এলাকা। টেকটোনিক প্লেটে ফাটল ধরেছে এবং ধীরে ধীরে সেটা বাংলাদেশের দিকে সম্প্রসারিত হচ্ছে। নিম্ন ভূমির দূর্যোগ প্রবন এই দেশটির মানুষের সামনে চরম ভোগান্তি অপেক্ষা করছে।
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:২৭
বহুব্রীহি বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০
রোহান খান বলেছেন: ভূমিকম্প কথাটা ঠিক...বোধহয় আমি বা আপনি আমাদের জিবন কালেই তা দেখে যেতে পারব..।
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:২৭
বহুব্রীহি বলেছেন: না দেখতে পারলেই খুশী হব।
৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৩৭
নীল জানালা বলেছেন: কিছুদিন আগে একজন লিখসিল যে বাংলাদেশের মাটি নাকি বেলে মাটি। আর বেলেমাটি নাকি কম্পন হ্রাস করতে সক্ষম। এইজন্যে ভূমিকম্পে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের আশংকা বাংলাদেশে নাকি নাই।
আপনে কি নির্মান প্রকৌশলী?
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:১৩
বহুব্রীহি বলেছেন: জ্বি, আমি একজন পুরকৌশলী। ভূকম্পন প্রতিরোধে বেলে মাটি খুব একটা সহায়তা করবে কিনা জানি না। তবে ভূকম্পনের উতস যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হয় তাহলে চার থেকে পাচ মাত্রার একটি স্বল্পস্থায়ী কম্পনই গোটা ঢাকা গুড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ঠ। ভূ কম্পন প্রতিরোধের জন্য এখন অনেক নতুন টেকনোলজি এসেছে। বাড়ীর নিচে কম্পন প্রতিরোধের জন্য একটা মেশিন স্থাপন করা যায় যেটি পুরো বাড়িকে লেভিটেট করবে। জাপানে এমনটা ব্যবহার করা হয় কেবল মাত্র কাঠের বাড়ি গুলোতে। স্ট্রাকচারালি অনেক নতুন মেটিরিয়েল আর ডিজাইন এসেছে যা সাত আট মাত্রার কম্পন সহ্য করতে সম্ভব। তবে এসব কিছু আগে ডিজাইন কোড মেনে ডিজাইন করলে রানা প্লাজার মত ঘটনা হবে না।
বাড়ি করার আগে ও কন্সট্রাকশনের সময়...বিশেষ করে স্ল্যাব কাস্টিং এর সময় একজন বিএসসি ইঞ্জীনিয়ারের পরামর্শ ও উপস্থিতি আবশ্যক।
৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
নিমচাঁদ বলেছেন: ফাক্টরি গুলা নিট ফাক্টরি কিনা ? এক এক্টা নীট মেশিনের ওজন ৩ টনের কাছাকাছি (কোরিয়ান হলে ১ অথবা ১/২ টন) । প্রতি ফ্লোরে কয়টি নীট মেশিন ছিলো , এটা জানি না । বয়লার শুনেছি ভবনের উপরের কোন কোন ফ্লোরে ছিলো , এটা ও অনেক ওজন যুক্ত ।ডায়ার মেশিনের ওজন ৭/৮ টনের কাছাকাছি । এটা ও থাকার কথা । আমি বিশেষ করে মেশিনারিজের ওজনের দিক টা দেখতে বলতেছি ।যারা ইঞ্জিনিয়ার তারা ভালো বলতে পারবেন , প্রতিটা ফ্লোর কি পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে ।এর আগের ধ্বসে যাওয়া স্পেক্ট্রাম ফাক্ট্রি টি ও নীট কম্পোজিট ছিলো । এই ওজনের সাথে প্রপার বিলডিং কোড না মেনে এবং নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভবন তৈরীর ব্যাপারটি যুক্ত করে নিলে , ভবন ধ্বসের আসল কারণ টা বুঝা যাবে ।
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:২৪
বহুব্রীহি বলেছেন: মেশিনের ওজন যতই থাকুক ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং এর জন্য যে বিল্ডিং কোড আছে সে অনুযায়ী ডিজাইন করলে সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ সেফটি ফ্যাক্টর ধরেই আমরা বাড়ি ডিজাইন করি। সেখানে ন্যাচারাল কোন ডীজাস্টার না হওয়া সত্ত্বেও একটা বাড়ি যখন আপনা আপনি ধ্বসে যায় তখন আমাকে বাধ্য হয়ে বলতে হয় এটি স্রেফ ও স্রেফ একটা কারনেই ঘটতে পারে - তা হল অবহেলা ও জোচ্চুরি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো।