নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা জাদুকর

বোকা জাদুকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিস্মৃতি

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৩৫

১।
হেমন্তের সকাল। কেমন যেন অদ্ভুত একটা বাতাস থেকে থেকে চোখে মুখে ঝাপটা দিচ্ছে। বাতাসটা খুব একঘেয়ে ধরনের। শীতের আগমুহূর্তের বাতাসের মতো ওই খ্যাপাটে ভাবটা নেই। গায়ে লাগলে শান্তিও লাগেনা। খুব অস্বস্তি হয়। বুড়ো দাদুর মতো একঘেয়ে সুরে কিছুক্ষণ পরপর এসে কাকে যেন শাপ-শাপান্ত করছে আবার চলে যাচ্ছে।

এই দিনেই রায়হানের ক্যাম্পাসে যাবার সময় হলো। দিনক্ষণ আগেই ঠিক করা ছিলো। কিন্তু কে জানতো দিনটা এমন হবে! এইরকম বাজে আবহাওয়া আর বাড়ি ছেড়ে যাওয়া দুই মিলিয়ে রায়হানের মন একদমই ভালো ছিলো না। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই! পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়া ওর বাবা একদম পছন্দ করেন না। তাই সেদিন বিকেলে, বিষন্ন মনে বাসের সিটে বসলো রায়হান। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস চলতে শুরু করলো।

অনন্তপুর হাইওয়েতে পৌঁছুলে প্রায় দশ কিলো রাস্তা খুব শর্টকাটে বাইপাস দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু বাইপাসটা খুব নির্জন, আর কিছু বদনাম থাকাতে ড্রাইভাররা পারতপক্ষে ওই রাস্তা দিয়ে যায় না।

শোনা যায় ওই এলাকায় একটা সুতার কল ছিলো। কলটা ছিলো অনেক বড় একটা কাঠের ঘর যেখানে অনেক শ্রমিক কাজ করতো। একরাতে কোন এক শ্রমিকের হুক্কার আগুন পড়ে মসলিন সুতার বান্ডিলে, আর কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আশেপাশের বান্ডিলেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফিনফিনে সুতো আর শুকনো খটখটে শুকনো কাঠ যেন এই মুহূর্তেরই অপেক্ষায় ছিলো। দাউ দাউ করে প্রবল উৎসাহে জ্বলে উঠে একসাথে। সব শ্রমিক আগুন লাগার কথা জেনে বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড় করে পুরো ঘরটা ভেঙ্গে পড়লো হতভাগাদের মাথায়। পরে কাঠ আর মানুষের দেহ ছাই হয়ে মিশে যাওয়ায় অনেককেই শনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। আর এখনো ওই জায়গাটায় নাকি মাঝেমাঝে কাদের আর্তনাদ শোনা যায়!

রায়হানদের গাড়ির ড্রাইভার বাসস্ট্যাণ্ডে বেশ দেরী করে ফেলায়, সময়টুকু পুষিয়ে নেবার জন্য ওই বাইপাসে ঢুকে পড়ে।

এই রাস্তাটা কিন্তু বেশ সুন্দর। দুই পাশে সবুজ গাছের সারি যেন মাথা নিচু করে গার্ড অব অনার দিচ্ছে। একটু দূরেই হলদেটে ধানের ক্ষেত রোদের আলো পড়ে চিক চিক করে উঠছে। তারও পরে কালচে সবুজ গাছেরা যেন জটলা করে সভা করছে। আর নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো পেটমোটা মেঘগুলো যেন চিতপটাং হয়ে ভাতঘুম দিচ্ছে। প্রকৃতির কি সুন্দর একটা সেটআপ!

হঠাত ওর নাকে আসে হালকা একটা পোড়া গন্ধ! খুব হালকা কিন্তু ওর নাকে জ্বালা করে উঠলো। ব্যাপারটাকে অতটা পাত্তা দিলোনা রায়হান। ঢক করে একঢোক পানি খেয়ে চোখ বুজে বাসের সিটে মাথা এলিয়ে দিলো।

২।
‘ভাই নামবেন না?’ প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পর কন্ট্র্যাক্টরের ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গে রায়হানের। বাস থেকে নেমে একটা রিকশায় চড়ে সোজা ওর হোস্টেলের গেইটে এসে নামলো ও। হোস্টেলের গেইট টা পার হতে না হতেই যেন বারান্দার সবক’টা থাম, ঘরগুলোর জানালার খিড়কী, এমনকি দেয়ালের কোনার ঝুলগুলো ওকে বলছে,’আয় বেটা বুকে আয়। কোথায় ছিলি রে? এত্ত দেরী করলি কেনো?’।

এই জায়গাটাকে রায়হান খুব ভালোবাসে। এটা যে ওর আরেকটা বাড়ি, ওর অনেক আনন্দ-বেদনার সঙ্গী। এই জায়গার সমস্ত মানুষ আর প্রত্যেকটা বস্তু যেন ওর পরমাত্মীয়। যাই হোক, ভালোবাসার জায়গাটাকে ভালোবাসতে বাসতে ৩০২ নম্বর রুমে ঢুকে ধুম করে ব্যাগটা টেবিলে ছুঁড়ে দিয়ে, ধপাস করে বিছানায় চিত হয়ে বুকভরে শ্বাস নিয়ে চিতকার করে বললো, ‘আহ! শান্তি’! আর অসীম শান্তিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো, টেরই পায়নি ও।

যখন চোখ খুললো তখন চারদিকে মিশমিশে কালো অন্ধকার! সেলফোনটার ঘড়িতে সময় রাত ৯টা ১৭ মিনিট।

৩।
বাসায় ফোন করে কথা বলা শেষে চোখে মুখে পানি দিয়ে পাঁচ তলায় ডাইনিং এর দিকে হাঁটা ধরলো রায়হান। কিন্তু এ কি! ডাইনিং এখনো বন্ধ! খিদের চোটে রাগে-দুঃখে গটগট করে নিচে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হলো ও।

ডাইনিং এর দরজায় যেই উল্টো ঘুরলো রায়হান, তখনই একটা গন্ধ নাকে এলো। হালকা একটা গন্ধ। গন্ধটা কেমন যেন! সামান্য পোড়া পোড়া গন্ধ। ওইযে বাসের ওই গন্ধটার মতো। গন্ধটা খুব খারাপ না, আবার ভালো ও না। মিষ্টি-বাসী-টক- কিংবা কোন ইদুর পচা গন্ধও না। রায়হান ভাবলো ডাইনিং এর রান্নাঘরে বোধহয় কোন খাবার পুড়ে গিয়েছিলো!

খিদের চোটে গন্ধটা নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে ক্যান্টিনে ছুটলো রায়হান। কিন্তু গন্ধটাও যেন ওর সাথে সাথে ছুটলো। কিন্তু আর দশটা গন্ধের মতই রায়হানের মাথা থেকে হারিয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডে।

রাত দশটা নাগাদ তিনটে পরোটা একটু মুগডাল আর খানিকটা সবজী দিয়ে ডিনার সারলো বেচারা। চেয়ার ছেড়ে উঠবে, এমন সময়ে কয়েকটা বন্ধু এসে পড়ায় আর ওঠা হলোনা। আড্ডাবাজী শেষ করে ঘরে পৌঁছুতে বাজলো সাড়ে বারোটা। ঘরে ঢুকেই আবারো বিছানায় ধপাস করে গা এলিয়ে দিলো রায়হান। বাকিটা শুধু ঘ্র ঘ্র নাক ডাকার শব্দ!

৪।
‘দৌড়া রায়হান, দৌড়া’। রায়হান প্রাণপনে দৌড়ুচ্ছে আর কাদামাটি ভরা রাস্তায় রায়হানের জুতো ছপাশ ছপাশ শব্দ করছে। ওর পাশে পাশে হাহ...হাহ...হাহ... করে হাঁপাতে হাঁপাতে সমানতালে দৌড়ুচ্ছে ভয়ংকর দু’টো কুকুর। একটা কালো আরেকটা বাদামী রঙয়ের। ওদের গায়ে খয়েরী রঙয়ের শুকনো কাদামাটি আর মুখ থেকে ঝরে পড়া লাল রঙের লালা দেখে মনে হলো যেন তারা নরকের পাহারাদার! আরেকবার চোখের কোনা দিয়ে তাকাতেই রায়হান বুঝলো ওদের মুখে তো ওগুলো লালা না ! ওগুলো তো তাজা রক্ত! ভয়ে ওর হৃদপিন্ড যেন দ্বিগুণ গতিতে স্পন্দিত হতে শুরু করলো। দৌড়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিলো রায়হান।

কুকুরগুলোর চলাফেরায় কি যেন একটা আছে। যেটা ওদের শারীরীক অবস্থার সাথে যায় না। হ্যাঁ! ওরা যেন খুব ভয় পেয়েছে কোণ কারণে। দৌড়ুতে দৌড়ুতে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকাচ্ছে আর কানদুটো খাড়া করে আরো জোরে দৌড়াতে চেষ্টা করছে।

আবারো কে যেন চিতকার করে উঠলো, ‘জোরে দৌড়া রায়হান!’। দৌড়ুতে দৌড়ুতে পেছনে তাকিয়ে দেখলো, খুব পরিচিত কারো অবয়ব ওকে হাত নেড়ে নেড়ে সামনে এগিয়ে যেতে ইশারা করছে। অবয়বটার আকৃতিটা খুবই স্পষ্ট কিন্তু আর সব অস্পষ্ট। চেহারা, গায়ের রঙ, জামার রঙ কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। হঠাত চোখের পলকে কোত্থেকে যেন একটা নিকশ কালো কিম্ভুতকিমাকার ছায়া এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওই মানুষটার ওপর আর তার গা থেকে মাংস খুবলে খুবলে নিতে লাগলো।

সামনে ঘড় ঘড় শব্দে ওটা কি ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে আসছে? ইন্সটিংক্ট এর বসে ডানহাতটাকে নিজের মুখের সামনে নিয়ে এলো রায়হান! কিন্তু! কিছু হলো না তো। কিছু তো ওর মুখে এসে আছড়ে পড়লো না। । বরং ওর মনে হলো ও যেন এখন শুয়ে আছে! লাফ দিয়ে উঠে বসলো রায়হান। মাথার উপরে ওই ঘড় ঘড় শব্দটা শুনে চোখ তুলে দেখে, ওটা ওর ঘরের সিলিং ফ্যানটা। ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দু’ গ্লাস জল খেয়ে ভাবলো ও, ‘উফ! এতো ভয়ংকর ও হয় দুঃস্বপ্ন! আর স্বপটা যেন পুরো বাস্তব ছিলো, কেননা ওর পুরো শরীর ঘামে ভেজা আর ও এতটা হাঁপাচ্ছে যেন মাত্রই কোত্থেকে দৌড়ে এলো! অদ্ভুত।

বাতি বন্ধ করে বিছানায় মাথা রাখবে এমন সময়ে ডাইনিং এর গন্ধটা আবারো খুব ধীরে ধীরে রায়হানের নাকে সুড়সুড়ি দিলো! গন্ধটার সাথে ওর চেনা কোন গন্ধের মিল নেই। কিন্তু গন্ধটা যেন ওর পরিচিত সব গন্ধের সংমিশ্রণে তৈরি হওয়া একটা অদ্ভুত গন্ধ। ঘামের গন্ধ, বৃষ্টির দিনের গন্ধ, রাস্তার নেড়ি কুকুরটার গায়ের গন্ধ, খাটের চিপায় ইঁদুর মরা গন্ধ, গোসল না করা গায়ের গন্ধ, পোলাও-বিরিয়ানীর গন্ধ সহ সব গন্ধ মিলে যেন এই গন্ধটার জন্ম। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে খুব হালকা পোড়া একটা গন্ধ। গন্ধটা ওর কাছে অসহ্য লাগে না, আবার ও সহ্যও করতে পারছেনা!

ঘরে এয়ার ফ্রেশনার মেরে টয়লেটে গেলো রায়হান। কিন্তু ঘরে এসে পেলো আবারো সেই গন্ধ। এয়ার ফ্রেশনারের নাম গন্ধও নেই ঘরে। কিন্তু ওই গন্ধটা এখনো নাকে লাগছে। কখনো বেশি আবার কখনো কম। গন্ধটা যেন পুরো ঘরময় হেঁটে বেড়াচ্ছে!

রাগ-দুঃখ-বিরক্তি আর আসহায়ত্বে দাঁত কিড়মিড় করে কপাল কুঁচকে বসে রইলো বেচারা রায়হান।

কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তি ওকে বেশিক্ষণ চোখ খুলে রাখতে দিলোনা। কোন ফাঁকে চোখ বুজে বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো নিজেই টের পেলোনা।


৫।
পরদিন।
ঈদের পর প্রথম ক্লাস, ক্লাসে একটা উৎসব উৎসব ভাব ছিলো। সবার গল্প যেন যেন শেষই হচ্ছিলো না।

ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র রায়হান, মজা করে সবাইকে মাতিয়ে রাখার জন্য ওকে একনামে চেনে ছাত্র-শিক্ষক সবাই। সবার সাথে অনেক হাসি-ঠাট্টা করে আর ঈদের গল্প শুনিয়েই সবগুলো ক্লাস পার করে দিলো। ক্লাসের পরেও আবার লম্বা আড্ডা দিয়ে বন্ধুদের সাথে জম্পেশ একটা দিন কাটালো। সেইদিনের মত ক্ষান্ত দিয়ে ও যখন ঘরে পৌঁছায় তখন রাত প্রায় আটটা। সবাই মিলে লুচি-চাপ আর রসমালাই খেয়ে পেট পুরো টইটম্বুর। তাই কেউই ডাইনিং এ না গিয়ে যার যার ঘরে ঢুকে পড়লো। আর ভোজনরসিক রায়হান খেয়েছিলো সবচেয়ে বেশি! তাই ওর খিদেই নেই।

ছুটির আমেজ তো এতো সহজে শেষ হয়না, তাই রায়হানও পড়াশোনার কথা মাথায় আনলোনা। বরং সে ইউটিউবে লোভনীয় একটা রান্নার ভিডিও প্লে করলো ও। ভিডিওটা যখন প্রায় শেষের দিকে, অর্থাৎ উপস্থাপক যখন রান্না শেষ করে পরিবেশন করবে এমন সময়ে, গন্ধ! রায়হান অবাক হয়ে ভাবল, প্রযুক্তি এত উন্নত কবে হলো যে, ভিডিও থেকে ঘ্রাণ ও বের হয় আজকাল! বাহ!

কিন্তু দু’টো সেকেন্ড পরেই ভুল ভাঙ্গলো ওর। গন্ধটা কোন সুস্বাদু কোন খাবারের গন্ধ না। ওই যে অদ্ভুত গন্ধটা। সূক্ষ্ম পোড়া গন্ধটার নেতৃত্বে যেন হাজারটা বেরসিক গন্ধ যেন দলবেঁধে এসেছে আজ ওর ঘরে। গন্ধটা টং করে রায়হানের মাথাটা ধরিয়ে দিলো। রাগে যেন মাথায় আগুন ধরে গেলো ওর! ‘নাহ। এর একটা বিহীত করতেই হয়’, ভাবলো রায়হান।

ঠিক তখনি পাশের ঘরের পলাশ যাচ্ছিলো রায়হানের ঘরের সামনে দিয়ে। ওকে থামিয়ে রায়হান জানতে চাইলো যে ও কি কোন গন্ধ পাচ্ছে কিনা! উত্তরে পলাশ জানালো যে কোন গন্ধই নাকি নেই! তারপর পলাশকে কামরার এখানে ওখানে দাঁড়াতে বলে গন্ধ নিতে বললো রায়হান। কিন্তু প্রতিবার একি উত্তর পলাশের। শেষমেষ পলাশকে বিছানায় বসতে বললো ও। কিন্তু যখনই পলাশকে বিছানায় রায়হানের পাশে বসলো তখনি নাক কুঁচকে পলাশ বললো, ‘গন্ধটা তো তোর কাছ থেকে আসছে! পচা গন্ধের সাথে পোড়া গন্ধ ফ্রি। কোথায় গিয়েছিলি?’। বলে চোখ নাচিয়ে দুষ্টূমিভরা ইঙ্গিত করে পলাশ। কিন্তু ঠিক পরমুহূর্তে আরেকটু কৌতুহলি হয়ে রায়হানের গা শুঁকে পলাশ অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে ওর গায়ে ওই গন্ধের লেশমাত্র নেই। গন্ধটা যেন রায়হানের গায়ের ঠিক আশেপাশে ঘুরছে। কথাটা রায়হানকে বলাতে ও হো-হো করে হেসে উঠে বললো, ‘যা ঘুমাতে যা। তোর মাথা গ্যাছে। আর শুন, আজ থেকে আমি ক্যাম্পাসের গন্ধ বাবা। হোহোহো।’

৬।
সে রাতে গন্ধটা যেন পলাশ যাবার পরপরই পালালো। সকালে ক্লাস ছিলো না, তাই আস্তে ধীরে বিছানা ছেড়ে হেলেদুলে চা খেতে মামার টং এ রওনা হলো রায়হান।

‘আহ! এই মামার টং এর চায়ের ঘ্রাণটাই আলাদা, মন ভালো করে দেয়!’। চায়ে প্রথম চুমকটা দিয়ে ভাবলো রায়হান।

কিন্তু, ওই মুহূর্তেই চায়ের ঘ্রাণের পরিবর্তে রায়হানের নাকে এলো ওই গন্ধটা। যেন কাপড় আর মাংস একটু একটু করে পুড়ছে দূরে কোথাও! গন্ধটা যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই হঠাত দুম করে মিলিয়ে গেলো!

কিন্তু রায়হান নিজেকে সামলে নিতে পারলোনা। মাথায় হাত দিয়ে শূণ্য অসহায় দৃষ্টিতে দূরে চেয়ে রইলো।


৭।
এর পর থেকে গন্ধটা রায়হানের কাছে আসা বাড়িয়ে দিলো। ও গন্ধটা রাতে তো পায়ই এমনকি দুপুর-বিকেল-ভোরেও পায়। রায়হানের সাধারণ জীবন যাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়লো এই গন্ধের যন্ত্রণায়। রায়হান খেতে পারেনা, ঘুমাতে পারেনা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারেনা। কিছুক্ষণ পর পরই কোত্থেকে যেন এই পোড়া-মিষ্টি-বাসী গন্ধটা এসে ওর মাথা ধরিয়ে দেয়। সারাটাদিন মাটি হয়ে যায় ওর! ও এই গন্ধ ছাড়া আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। প্রতিটা মুহূর্ত এই গন্ধের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে। কখন আসে কখন আসে!

না ঘুমিয়ে না খেয়ে রায়হানের কালিপড়া চোখ দুটো যেন একেবারে কোটরে ঢুকে গেছে। চোখ দুটো সবসময় ঢুলুঢুলু হয়ে থাকে।

ছেলেটা সোজা হয়ে হাঁটতে পারেনা, ঝুঁকে ঝুঁকে স্যান্ডেল টেনে খস খস শব্দ করে টলে টলে হাঁটে। ক্লাসও করেনা। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে কিচ্ছু বলে না। ঠিকমতো কারো সাথে কথাও বলে না। বন্ধুরা জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করলে ওদেরকে বকাঝকা করে ঘর থেকে বের করে দরজা আটকে বসে থাকে।

গন্ধটা বেশিক্ষণ থাকেনা। খুব বেশি হলে পনের সেকেন্ড পুরো ঘরময় ছুটে বেড়ায়। কিন্তু ঘন্টাখানেক পর পরই এসে হানা দেয়। ওকে জ্বালিয়ে মারে। ও সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকে, ‘এই বুঝি এলো, এই বুঝি এলো।’

৮।
এক সন্ধ্যায় গন্ধের আক্রমণে অস্থির হয়ে উঠলো রায়হান। গন্ধটা যেন একবার ওর নাক হয়ে মাথায় ঢুকে বাড়ি মারছে, আবার পরক্ষণেই সাঁই করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আবার ঢুকছে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। আবার কখনো যেনো বোঁ বোঁ করে পুরো মস্তিষ্কে চক্কর মারছে। কখনো আবার মাথার ভেতরটাকে সজোরে চেপে ধরছে, যেন মগজটা ভর্তা করে ফেলবে। কখনো যেন খুলির ভেতরের অংশে টোকা দিচ্ছে।

ব্যাথায় পাগলের মতো মাথার চুল টানতে টানতে মাথায় কয়েক মগ পানি ঢেলে দিলো রায়হান। কিন্তু তাতে কোন কাজ না হওয়াতে মাথাটাকে দেয়ালের সাথে চেপে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ, তারপর মাথাটাকে জোরে জোরে দেয়ালে বাড়ি দিতে লাগলো। কিন্তু কিচ্ছু হলোনা। অস্বস্তি আর কষ্টে রায়হানের মাথাটা যেন বিষ্ফোরিত হবে বলে মনে হলো ওর। কারণ আজ আর গন্ধটার চলে যাবার কোন নামগন্ধ নেই, সে যেন ওর সমস্ত স্নায়ুতে চেপে বসে হাহা করে হাসছে।

একপর্যায়ে ঘরের দরজা খুলে দৌড়ুতে দৌড়ুতে মাথা ঝাঁকিয়ে মতো চিতকার করে বলতে থাকলো, ‘চলে যাও ! মুক্তি দাও আমাকে! চলে যা...ও। মুক্তি দা......ও’। চিতকার শুনে খুলে দরজা খুলে অন্য কামরার ছেলেরা বেরিয়ে আসতে লাগলো। সবাই উতকন্ঠা নিয়ে রায়হানের দিকে চেয়ে রইলো।

ও যখন সিঁড়ির দিকে বিপজ্জঙ্কভাবে ছুটে যাচ্ছিলো তখনই কয়েকজন ওকে জাপটে ধরে রুমে নিয়ে আসে।

গোলমালের শব্দ শুনে হোস্টেল সুপার ছুটে এলেন। সব শুনে দ্রুত ডাক্তার ডাকলেন।

ডাক্তার রায়হানকে একটা ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। আর ওর শারীরীক অবস্থা দেখে বললেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর বাবা-মাকে খবর দিতে। কারণ ওর খুব ভালো যত্নের দরকার ছিলো।

৯।
খবর পেয়েই পরদিন দুপুরে রায়হানের বা-মা ছুটে এলেন ছেলের কাছে। ছেলের অবস্থা দেখে মা রায়হানকে জড়িয়ে ধরে হু-হু করে কেঁদে ঊঠলেন।
‘ছাড়ো তো মা। আমার কিচ্ছু হয়নি।’ জড়ানো কন্ঠে খুব কষ্ট করে বললো রায়হান।

রায়হানের বন্ধু পলাশ ওর বাবাকে ডেকে রায়হানের গন্ধ পাবার ব্যাপারটা জানালো। জানালো যে সমস্ত ঝামেলার উৎস ওই গন্ধই। রায়হানের বাবা সবকিছু শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কারণ ছেলে যে তাদেরকে কিছুই জানায় নি। এখনো আগের মতো রয়ে গেলো ছেলেটা। নিজের কোন সমস্যা জানাতে চায় না কাউকে!

পরের দু’টো দিন ঘুমের ইঞ্জেকশন আর স্যালাইনের প্রভাবে অনেকটাই সুস্থ্য হয়ে উঠলো রায়হান। সেদিন বিকেলেই ঘুরতে যাবার কথা বলে রায়হানের বাবা তাঁর বন্ধু বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট ড.মতিউর রহমানের চেম্বারে নিয়ে গেলেন রায়হানকে।

১০।
বন্ধুর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে রায়হানকে চেম্বারে রেখে বাকিদেরকে বের করে দিলেন ডাক্তার।

গন্ধের ব্যাপারে রায়হানকে জিজ্ঞেস করতেই ও যেন আকাশ থেকে পড়লো। ও যেন বেমালুম ভুলে গেল সবকিছু। যেন ওর জীবনে অদ্ভূত কোন গন্ধের অস্তিত্ব ছিলোই না!

রায়হান ইচ্ছে করে ব্যাপারটা লুকোচ্ছে কিনা পরীক্ষা করার জন্য ওকে আরো কিছু প্রশ্ন করলেন ডা.মতি। কিন্তু কোনভাবেই কোন কিনারা করতে পারলেন না। রায়হান বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে আসার দিন থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ঘটা সব কিছু খুব সুন্দর করে বর্ণণা করলো শুধু গন্ধের ব্যাপারটা ছাড়া। ওর কথায় মনে হলো, শেষ কয়েকটাদিন যেন অন্যান্য দিনগুলোর চেয়ে বড্ড বেশি স্বাভাবিক ছিলো।

ডা. মতির মনে হলো, রায়হান যেন খুব কৌশলে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসল ঘটনাটা এড়িয়ে যাচ্ছে।
অনেক চেষ্টার পর, শেষমেষ ডাক্তার সাহেব বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে থেকে দাদার দেয়া রোলেক্স ১৯২০ মডেলের পকেট ওয়াচটা বের করলেন। তামার লম্বা চেইনের মাথায় জুড়ে দেয়া গোলাকার সোনালী রঙয়ের মাস্টারপিস। ছোট্ট বোতাম চেপে ঢাকনা খুলতেই বেরিয়ে এলো সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে নিখুতঁ কালো রঙয়রে রোমান হরফে এক থেকে বারো পর্যন্ত লেখা ডায়াল।

ঘড়িটা মুছতে মুছতে বললেন, ‘বুঝলে, রায়হান এই ঘড়িটা আমি প্রায় ২৩ বছর বের করলাম।’
‘এই মোবাইলের যুগে আলাদা ঘড়ির তো কোন দরকারই নেই! বের করলেই বা কি না করলেই বা কি!’, রায়হানের সোজাসাপ্টা মন্তব্য।
‘দরকার আছে রায়হান, দরকার আছে। খুব ভালো করে ঘড়িটা লক্ষ্য করো তবেই বুঝবে’, বলে ঘড়িটা রায়হানের চোখের সামনে নিয়ে আস্তে আস্তে দোলাতে লাগলেন মতিউর রহমান।

ব্যাপারটা ছিলো মানবজাতির ইতিহাসে খুবই রহস্যময় এক বিদ্যা ‘হিপনোটিজম’ এর কৌশল। পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এই বিদ্যা আয়ত্ত্ব করতে পেরেছেন। ডাক্তার মতিউর তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ব্যাপারটা খুব কষ্টকর আর বিপজ্জনক হওয়ায় খুব সহজে কাজটা করতে চান না তিনি। কিন্তু আজ বন্ধুর কথা ভেবে কাজটা অনেক বছর পর আবারো করতে সিদ্ধান্ত নিলেন।

ঘড়ি দোলানো শুরু করার প্রায় এক মিনিট পর রায়হানের সাথে কথা বলা শুরু করলেন ডাক্তার সাহেব। রায়হান ঢুলুঢুলু চোখে তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো।
‘রায়হান, তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো?’
‘কেন চিনবো না আপনাকে, মতি আংকেল’!
‘হুম। আচ্ছা ছোটকালে যে একবার সাইকেল থেকে পড়ে তোমার পা ভেঙ্গেছিলো মনে পড়ে?’
‘হ্যাঁ! খুব ব্যাথা ছিলো কয়েকটাদিন। আপনি তো একগাদা চকলেট নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছিলেন। আমি দু’দিনেই সমস্ত চকলেট শেষ করে ফেলেছিলাম। হাহা’
‘এখন তুমি কত্ত বড় হয়ে গেছো। ভার্সিটি প্রায় শেষের দিকে। তা কবে ফিরলে ক্যাম্পাসে?’
‘হাহা। হ্যাঁ খানিকটা বড় হয়েছি। ফিরলাম তো সপ্তাহখানেক আগে। ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু বাবার ভয়ে চলে এলাম।’
‘বাবা কি দিয়ে গিয়েছিলো নাকি একাই বাসে করে এসেছিলে?’
এই প্রশ্নের পর রায়হান যেন একটু ইতস্তত করতে লাগলো। ওর REM (Rapid Eye Movement) হতে লাগলো. যেমনটা ঘটে স্বপ্ন দেখার সময়ে। কয়েকসেকেন্ড দেরী আবার উত্তর দিলো রায়হান।
‘হ্যাঁ। বাসে করেই তো এলাম! কিন্তু... ‘
‘কিন্তু? কি?’
‘কয়েকটা লোক... হঠাত বাসে উঠে সবাইকে খুব জোরে ধমকাচ্ছিল। আর...’
‘আর?’
‘আর ড্রাইভার বললো সামনে এগোতে। কোথাও তাকাতে না। ড্রাইভার তাই করলো।’
‘তারপর কি হলো? তোমাকে ওরা কিছু বলেছিলো?’
‘না। কিন্তু নিজেরা বলাবলি করছিল যে সব্বাইকে নিয়ে কোন এক পুরনো সুতোর কলের পেছনে নিয়ে যাবে।’
‘কি! তারপর?’
‘আমি হঠাত দেখলাম বড়সড় শরীরের একজন যাত্রী খারাপ লোকগুলোর মধ্য একজনের হাতের পিস্তল কেড়ে নিতে চাইলো। আর হঠাত করে গুড়ুম করে একটা আওয়াজ হলো’।
‘তারপর কি হলো?’
রায়হানের চোখ আর মুখের অভিব্যক্তি দেখে ডাক্তার বাবুর ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে ঊঠলো। এতটা ভয় আর অনিশ্চয়তা কখনো কারো মুখে ফুটে উঠতে দেখেননি তিনি!
‘তারপর, তারপর, সবার আগে ড্রাইভার, আর তার কয়েক সেকেন্ড পর আমরা সবাই হূড়মূড় করে কাত হয়ে পড়ে গেলাম বাসটা সহ। তারপর... তারপর খুব গরম। আমি শ্বাস নিতে পারছিনা। এত কালো ধোঁয়া! আমি কিছু দেখতে পারছিনা। আমার চোখ জ্বালা করছে! আমার সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমাকে বাঁচান আংকেল। আমাকে বাঁচান! আমি আর পারছিনা।’ বলে রায়হান কাঁপতে কাঁপতে কেমন যেন গুটিসুটি পাকিয়ে গেলো সোফায়!

কিংকর্তব্যবিমূঢ় ডাক্তার মতি তড়িঘড়ি করে ফিল্টার থেকে এক গ্লাস পানি নিলেন রায়হানের জন্য। ‘নাহ। একদিনের জন্য খুব বেশী হয়ে গেলো ব্যাপারটা’, ভাবতে ভাবতে যেই না রায়হানের দিকে ঘুরলেন অমনিই যেন তাঁর হৃদপিন্ড কয়েকটা বিট মিস করলো। হাত থেকে প্লাস্টিকের গ্লাসটা পড়ে সমস্ত মেঝে পানিতে চকচক করতে লাগলো। নিজের উপর যেন তাঁর কোন নিয়ন্ত্রনই ছিলো না। এমন দৃশ্য দেখলে কেউই ঠিক থাকতে পারতোনা।

রায়হানের জায়গায় সোফায় সমস্ত গায়ে ফোশকা পড়া একটা দেহ। যেন মাত্র জলন্ত উনুন থেক উঠে এসেছে ওটা, গায়ের ফোশকা পড়া পোড়া চামড়াগুলো যেন খুলে খুলে পড়বে এক্ষুনি। চুলগুলো পুড়ে খুলির চামড়ায় আটকে গেছে। চোখের ভ্রু আর পাপড়ি বলতে যেন কিচ্ছু নেই। ঠোঁট দুটোর আংশবিশেষ মাড়ির সাথে লেগে আছে আর তার মাঝ দিয়ে ঝকঝকে সাদা দাঁত দেখা যাচ্ছে। মুখটা দেখে কেউ কক্ষণো বলতে পারবে না যে একসময়ে দেহটা রায়হান নামের এক সুদর্শন তরুণের ছিলো।

সমস্ত দেহে গায়ের কাপড় পুড়ে আতকে গেছে। আর দেহটা থেকে বেরুচ্ছে মাংস আর কাপড় পোড়া একটা বাজে গন্ধ। কিন্তু পরমুহূর্তেই গন্ধটা বদলে গেল। মাংস আর কাপড় পোড়ার সাথে যেন খুব পরিচিত কিন্তু তবুও অপরিচিত একটা গন্ধ মিশে গেলো। গন্ধটার মানে যেন বুঝেও বুঝতে পারছিলেন না ডা. মতি!

এমন ঘটনা চাক্ষুষ করে ডা.মতি পাথরের মূর্তির মতো হয়ে গেলেন! তিনি যেন মেঝের সাথে আটকে গিয়েছিলেন। একচুলও নড়তে পারছিলেন না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন অদ্ভূত দেহটার দিকে! যদিও তার পঞ্চইন্দ্রীয় তাকে চিৎকার করে পালিয়ে যেতে বলছিলো।

হঠাৎ দেহটার চোখদুটো খুলে গেলো। চোখদুটো আগের মতই আছে। টানা টানা চোখ। ঘন বাদামী রঙ এর বড় বড় মনি। জগতের সমস্ত সারল্য আর মায়া যেন স্রষ্টা ঐ দু’জোড়া চোখে ঢেলে দিয়েছিলেন। ডাক্তার মতির জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর চোখ। যদিও এই সৌন্দর্য্য এই মুহূর্তে ভয়াবহতাটাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

কিন্তু এই চোখ আর কখনো হাসবেনা। পরম মায়ায় কারো দিকে আর তাকাবেনা, ভেবে তাঁর বুকটা হু-হু করে উঠলো।

তারপর, ‘আংকেল, কষ্ট করে আরেক গ্লাস পানি নেবেন? খুব জ্বালা করছে। খুব!’, আকুতি ভরা কন্ঠে বলে উঠলো দেহটা।



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৫২

নাগরিক কবি বলেছেন: বাহ!
ব্লহে স্বাগতম B-)

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৫৩

নাগরিক কবি বলেছেন: টাইপো হয়েছে প্রথম মন্তব্যে ;) ব্লহে < ব্লগেম :
আবারো বলি,
ব্লগে স্বাগতম :)

১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৩

বোকা জাদুকর বলেছেন: জ্বী ধন্যবাদ। : :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.