![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে !! যেদিকে তাকানো যায় শুধু মাইলের পর মাইল সবুজে মোড়ানো ধানক্ষেত । আর মাঝে বয়সের ভারে নুজ্য একটি বটগাছ ছাতার মত করে পরম যত্নে এক প্রেমিকযুগলকে বৃষ্টি থেকে আড়াল করে রেখেছে । ভালবাসা বুঝি সত্যই স্বর্গীয় !! আজ এই বৃষ্টি যেন স্বর্গ থেকে ভালবাসার বার্তা নিয়ে এসেছে ।
কলেজের সেই চপল মায়াহরিণীটি আজ সব চপলতা হারিয়ে আকাশের বুকে ঘুপটি মেরে আছে । আর ভালবাসাকে বুকে পেয়ে আকাশ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে ! আর ছাড়বে না কখনও ! ছাড়লে যদি আবার সে চলে যায় তখন কি হবে ভেবে আরও শক্ত করে ধরে ও । ঝুম বৃষ্টিতে সব কৃষক বাড়িতে চলে গেছে । আশে-পাশে , কাছে-দূরে কেউ থাকলেও এই বৃষ্টিতে দেখা যাওয়া অসম্ভব । আজ প্রকৃতি ওদের বলছে ভালবাসতে , সেখানে মানা করা কার সাধ্য ! সোনালীর খুব সত্যি খুব ভাল লাগছে আজ । এর আগে ওরা কখনও এত কাছাকাছই আসতে পারেনি , কিংবা আসার সুযোগই হ্য়তো আসেনি । আজ সোনালী সব ভালবাসা উজার করে দিবে আকাশকে , কোন বাধা মানবে না । আকাশ বুঝতে পারছে না কি করবে । ওর হার্টবিট প্রচন্ড বেড়ে গেছে , পারলে মনে হয় খাচার মধ্য থেকে হার্ট টি বের হয়ে আসে কিনা সেই চিন্তাই করছিল। সেই মুহূর্তে ও হঠাৎ গালে আলতো স্পর্শ অনুভব করল । তাকানোর সাথে সাথে সোনালী লজ্জায় চুপসে গেল । এমনিতেই সোনালী কাঠগোলাপের স্নিগ্ধতাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে , সেই সাথে ক্ষনিকের লজ্জায় ওর মুখ যেন টকটকে গোলাপের মত লাল হয়ে আছে । ওর চোখগুলো সেই মায়াবনের হরিণীর থেকেই যেন ধার নেয়া আর ঠোটদুটি ঠিক আবির রাঙানো সন্ধার সদ্য ফোটা রক্তজবা ! ভালবাসার লোভ সামলাতে পারছেনা আকাশ । মন চাইছে আজ সবকিছু বাঙিয়ে দিতে । সোনালীকে কপালে আলতো করে একটি চুমু বসিয়ে দিল আকাশ । এবার সোনালী আকাশের দিকে তাকাল , আকাশ তো সোনালীকে চিনতে পারছে না ! একি স্বর্গের অপ্সরা ধরায় নেমে আসল ! আকাশকেও যেন সোনালীর স্বপ্নে দেখা সেই রাজপুত্রের মতই লাগছে।স্বপ্নই আজ ধরা দিল বুঝি !! ........................
নাহ !! আর ভাবতে পারছে না সোনালী । আজ প্রায় দু'বছর হয়ে গেল আকাশের সাথে কোন যোগাযোগ নেই ! ও তো সব ভুলেই থাকতে চেয়েছিল । কিন্তু কেন আবার আজ সেই বিধে থাকা পুরোনো কাচের টুকরা জেগে উঠল ? নিজেকে প্রশ্ন করে কোন জবাব খুজে পায় না।বুঝতে পারছে না কি করবে ও , অঝরে বারিবর্ষন কি কখনও কোন সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছিল ? এরই মাঝে ওর ফোন বেজে উঠল । একদমই কথা বলতে ইচ্ছা করছে না । কিন্তু রজনী ফোন করেছে , দুইদিন পর থেকে ওয়ার্ড ফাইনাল ।জরুরি কথা ভেবে ফোন ধরল সোনালী.......
- হ্যালো !! কি খবর ?
- এইতো , তুই কেমন আছিস রে ?
- ভাল নেই রে !!
- কেন ? কি হল আবার ? তোকে না কতবার বলেছি আকাশের মত বেঈমানের কথা ভুলেও মাথায় আনবি না !! ভাল কথা শুনতে ভাল লাগে না !!
- চুপ করে থাকিস না , ঢং না করে বল কি হল আবার !!
- আমি তো কিছু মাথায় আনিনি । আজ সকালে নিনাদ ফোন করেছিল । অনেকদিন পর ওর সাথে কথা হল । আমি নিজে থেকে আকাশের কথা বলিনি ওকে । আকাশের সাথে ওরও যোগাযোগ নেই তাই ও জানে না যে আমার সাথে আকাশের ব্রেক আপ হয়ে গেছে । আমি যখন বললাম , সবকিছু শুনে নিনাদ বলল যে ও নাকি আগে থেকে জানত এমন হবে । আমি বুঝতে পারলাম না নিনাদ কি বলতে চাচ্ছে তাই ওকে পরিষ্কার করে বলতে বললাম । ও প্রথমে বলতে চাচ্ছিল না কিন্তু আমার জোরাজোরিতে পরে বলল । ওর কথা শুনে আমার আর কিছু বলার ছিল না । আমি লজ্জায় ফোন রেখে দিলাম ।
- কি বলল ও ? আমাকে বলবি তো ?
- আমি আর আকাশ একবার শহরের বাইরে গ্রামের দিকে ঘুরতে গিয়েছিলাম ।তোর মনে আছে ?
- হুম !! বেশ মনে আছে । ওটা তোর প্রথম ব্লাইন্ড ডেট ছিল । বল তারপর কি হল?
- আমরা সেদিন প্রমিজ করেছিলাম যে সে দিনের ঘটনা কখনও কাউকে বলব না। কিন্তু আকাশ নাকি সেদিন ফিরেই ওর সব বন্ধুদের বলে দিয়েছিল । শুধু বললে কিছু হত না কিন্তু ও নাকি সাথে আরও অনেক মিথ্যা বানিয়ে বলেছে যেগুলো সেদিন ঘটা তো দূরের কথা কখনও আমি কল্পনাই করতে পারি নি । মানুষ এত জঘণ্য হয় কিভাবে বল তো ?
- হুম ! কি বলব বল ! বুঝতে পারছি না । নিনাদ কি ছিল সেখানে ?
- ছিল ! কিন্তু এর পর থেকে নিনাদ আর আকাশের সাথে কথা বলেনি ।
- কেন?
- কারণ ও আকাশকে নিজেদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার সবার সাথে শেয়ার করতে না করেছিল এবং সেটা নিয়ে ওদের মাঝে বেশ ঝামেলাও হয়েছিল ।
- থাক ! তুই এসব নিয়ে বেশি ভাবিস না।আকাশের কাছে এর থেকে বেশি আশাও করা যায় না । বিকালে আসব তোর বাসায় । তখন কথা হবে আবার । আর মেডিসিন আমি কিছুই পারি না । তোর কাছে ডেমো নেয়া লাগবে । এখন রাখি রে
- আচ্ছা !! তাড়াতাড়ি আসিস।বেশি দেরি করিস না ।বা বাই !!
- ওকে ! বাই !!
ফোন রেখে কিছু ভাবতে পারছিল না রজনী।মানুষ কিভাবে এত জঘণ্য মানসিকতার হয় !! কত মজার ছিল সেই দিনগুলো , যখন রংপুর মেডিকেলে ওদের প্রথম ক্লাশ শুরু হয় । সোনালী , আকাশ , নিনাদ আর ও মিলে কত যে মজা করেছে ভাবলেই মনটা কেমন আনচান করে ওঠে। ব্যাচের সবথেকে লম্বা ছিল দেখে ওরা সবাই মিলে আকাশ আর সোনালীকে জিরাফকাপল বলে ডাকত ।আর সোনালি !! চাদমুখো চন্চল মেয়েটিকে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়েছে আকাশ । আকাশের কথা মনে হলেই ওর খুব রাগ হয় । কি বোকাই না ছিল তখন । সোনালীর সাথে সাথে সেও এই আকাশকেই ভালবেসে ফেলেছিল ।পরে আকাশ যখন সোনালীকে প্রপোজ করে ফেলে তখন খুব কষ্ট লেগেছিল রজনীর ।কিন্তু প্রিয় বন্ধুদের কথা ভেবে সব কিছু মেনে নিয়েছিল সে । দুই মাস পর আকাশ মাইগ্রেট করে চলে যায় রাজশাহী মেডিকেলে । আর যাবার আগে শেষ করে দিয়ে যায় সব কিছু !!
,
,
,
,
,
শূণ্যতার সাথে দূরন্তপনাকে নিয়ে বেড়ে উঠেছে আকাশ। ছোটবেলায় মা হারিয়ে শুধু বাবাকেই পেয়েছ পাশে, সব সময়। মানুষের জীবনটাই বা কেমন, কখন কোন দিকে মোড় নেয় কেউ বলতে পারে না। জীবন নিয়ে কখনও খুব বেশি ভাবেনি আকাশ, তাই সোনালীকে যখন ভাল লেগেছিল তার পর থেকে ভাগ্যের ওপরই ছেড়ে দিয়েছিল বাকিটা। আজ যখন প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে জেগে জানালার পাশে দাড়ায়, তখন মনে হয় হৃদয় বিদির্ণ করে দেয়া ভালবাসার আকুতি আজও সোনালীর অপেক্ষায় আছে। মাত্র দুই মাসে আকাশের জীবনটাকে পুরো অন্যরকম করে দিয়েছিল সোনালী। ভালবাসায় ভাললাগা তো সোনালীই শিখিয়েছে, কিন্তু সেই সোনালী কিভাবে পারল একটি সামান্য ছোট ব্যাপার নিয়ে সম্পর্ক শেষ করে দিতে..................
না....................মনও লাগে না
এ জীবনে কিছু যেন ভালো লাগে না
না....................মনও লাগে না
এ জীবনে কিছু যেন ভালো লাগে না
লতার এই গানটা আকাশ এখনও শুনে প্রতিদিন, প্রতিবেলা। সোনালীর প্রিয় গান ছিল এটি। সেদিনের প্রতিক্ষণ-মূহুর্ত কি ভোলা যায়, যেদিন সোনালী ওকে এই গানটির কথা বলেছিল। সাথে আরও কত ভালবাসার কথা। কথা দিয়েছিল সোনালীকে কাউকে বলবে না সেদিনের কথা। কথা রেখেছে আকাশ। কিন্তু আজ এতদিন পর কি হবে এসব ভেবে, সোনালীকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ভাবার কোন অবকাশ নেই আর।
.................................................................
সকাল থেকে এই হল পাচবার আকাশকে ফোন দিয়েছে রজনী। আকাশ কি ইচ্ছা করে ফোন ধরছে না, নাকি খেয়ালই করেনি। আকাশের সাথে কথা বলা খুব যে দরকার সেটা বুঝতে পেরেছে রজনী। গতকাল যখন সোনালীর বাসায় গিয়েছিল তখন ব্যাপারটা নিয়ে বেশ আপসেট ছিল সোনালী। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না আকাশ এমন কথা বলতে পারে। পরে রজনীও ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছে। এখন শুধু আকাশের সাথে কথা বলেই বুঝা যাবে আসল ঘটনা কি। আবার ফোন দিল আকাশকে রজনী।আকাশ এবার ফোন ধরল.........
- হ্যালো, আকাশ ! আমি রজনী বলছি, তোর সাথে কথা বলা দরকার খুব। একটু সময় দিতে পারবি?
- হ্যালো, আই এম এক্সট্রিমলি সরি দো্স্ত।তুই সকাল থেকে ফোন দিচ্ছিস, আমি খেয়াল করি নি। একটু আগে দেখে তোকে ফোন দিতে যেয়ে দেখি মোবাইলে ব্যালেন্স নেই একদম। তো হঠাৎ কি মনে করে ফোন দিলি এত দিন পর ?
- দেখ! সিরিয়াস কথা আছে, কিন্তু তোকে কথা দিতে হবে দয়া করে মিথ্যা বলবি না।
- আচ্ছা বল ।
- কাল নিনাদ ফোন করেছিল সোনালীকে। তোরা যে ঘাঘটে ঘুরতে গিয়েছিলি সেটা নিয়ে কিছু বলেছে, আর সোনালী এসব শুনে সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু কান্নাকাটি করছে!
- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সেদিনের কথা আমি কাউকে বলিনি।নিনাদ শুধু জানে যে আমরা ঘাঘট গিয়েছিলাম। আর নিনাদের সাথে আমার অনেকদিন কথা নেই। আমরা যে ঘাঘট গিয়েছিলাম এটা তো তুই আর নিনাদ ছাড়া আর কেউ জানে না। নিনাদ কি বলেছে ওই জানে(রজনীর কথায় আকাশের বুকের ভিতর শুণ্যতাটা যেন হঠাৎ দ্বিগুণ বেড়ে গেল)
- দেখ আকাশ! আমি তোকে বিশ্বাস করি না। তুই তো সোনালীর সাথে রিলেশনের সময় আর একটা মেয়ের সাথে কথা বলতি। তুই সোনালীকে ধোকা দিয়েছিলি। সবই আমার ভালভাবে মনে আছে। মেয়েটাকে আর কষ্ট দিস না। সত্য করে বল তুই কাকে কি বলেছিস !
- জানি আমাকে বিশ্বাস করবিনা কিন্তু আজ কিছু বলব আমি। আমি সোনালীকে ছাড়া কাউকে কখনও ভালবাসিনি এবং বাসবোও না। সেই মেয়েটি আমাকে পাগলের মত ভালবাসত। তারপরও আমি ওকে পরিষ্কার ভাবে বলেছিলাম আমার আর সোনালীর রিলেশনের কথা। ও সব মেনে নিয়েছিল কিন্তু বিনিময়ে চেয়েছিল আমার বন্ধুত্ব।আমরা শুধু বন্ধুই ছিলাম।এমনকি সোনালীর সাথে ব্রেক আপের পর আমি ওর সাথেও কোনদিন কথা বলিনি। সোনালী আমাকে বিশ্বাস করেনি। ভেংগে দিল সব কিছু। প্রতিদিন সোনালীকে চোখের সামনে দেখে কাছে না পাবার ব্যাথা আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব ছিল না, তাই আমি রাজশাহী মাইগ্রেট করেছিলাম। এর পর থেকেই নিনাদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। তবে আসার আগে নিনাদের সাথে আমার কিছু ব্যাপার নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমি তখন বুঝতে পারিনি, কিন্তু নিনাদ যে সোনালীকে মনে মনে ভালবাসত সেটা পরে খুব ভালভাবেই বুঝেছিলাম।হতে পারে, আমাদের ব্রেকআপ হয়েছে শুনে নিনাদ সোনালীর মনে আমার জন্য আরও ঘৃণা ভরে দিতে চাচ্ছে !
- নিনাদ সোনালীকে ভালবাসত !! আমার বিশ্বাস হল না। দেখ, যাই হোক কথাগুলো জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আর এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি সোনালীর সাথে কথা বলব।
- প্লিজ! ওকে কান্না করতে মানা করিস।আমি ওর কান্না সহ্য করতা পারি না একদমই। আমি বুঝতে পারছি না ওকে কি আমার ফোন করা উচিৎ ??
- আচ্ছা ! আমি বলব সব। তুই ওকে ফোন করবি না। আমি পরে তোর সাথে আবার কথা বলব।
- ওকে, আই ওইল বি ওয়েটিং। বাই !
- বাই।
-----------------------------
আকাশের সাথে কথা বলে রজনী আরও কনফিউসড হয়ে গেল। সোনালীর সাথে কথা না বলা পর্যন্ত বুঝা যাচ্ছে না ঘটনা কি! আকাশের কথা যদি সত্য হয় তাহলে আকাশ এখনও সোনালীকে অনেক ভালবাসে। আর সোনালী তো আকাশের জন্য কতটা পাগল সেটা রজনীর চেয়ে ভাল কেউ জানে না। সামান্য একটু অভিমান থেকে ওদের পবিত্র ভালবাসা এভাবে নষ্ট হয়ে গেল! খুব খারাপ হয়েছে তাহলে। আকাশের সাথে কথা বলেই সোনালীর বাসায় চলে গেল রজনী।আকাশের সাথে কি কথা হয়েছে সব খুলে বলল সোনালীকে।সব শুনে সোনালী বুঝতে পারছিল না কি বলবেথাআকাশের কথাগুলো সোনালীর কাছে সত্যই মনে হল। কারণ ওদের ব্রেকআপের মূলে দুইজনের আভিমানই বেশি ছিল, সেটা ও ভাল জানে। একটা সিম্পল ব্যাপার নিয়ে এভাবে ঝগড়া করার মানে নেই সেটা আগে বুঝলে আজও আকাশ ওরই থাকতো। কিন্তু নিনাদ কিভাবে এসব বলতে পারল। আর সোনালীইবা কিভাবে বিশ্বাস করল নিনাদের মিথ্যা কথা। এসব ভেবে সোনালী কেদেই চলেছে। থামাতে পারছে না নিজেকে কিছুতেই।
- তুই আকাশের সাথে কথা বল, রজনী বলল।
- কিভাবে কথা বলব এই মুখে? আমি ওকে অবিশ্বাস করেছি যে।
- তুই যদি ওকে ভালবেসে থাকিস তাহলে ওর সাথে তোর কথা বলতেই হবে।আমি এখন যাব।কথা বলে দেখ! সব ঠিক হয়ে যাবে।
- আচ্ছা! যা এখন। তুই পড়। পরশু ওয়ার্ড ফাইনাল।আমি দিব না।তোকে অনেক ডিস্টার্ব করলাম। স্যরি !
-হয়েছে অনেক! ন্যাকামি কম কর। আমার এসব ভাল লাগে না।
রজনী হোস্টেলে চলে গেল। সোনালী বুঝতে পারছে না আকাশকে কিভাবে ফোন দিবে।ওর সাথে কথা বলার কোন মুখ নেই যে আর।কিন্তু আকাশও তো ওকে নিয়ে চিন্তা করছে। একটা মেসেজ দেয়া যায়।
--------------------------
আই এম স্যরি। আমাকে ভুল বুঝো না। তোমাকে অনেক ভালবাসি।
সোনালীর নাম্বার থেকে এই মেসেজ দেখে আকাশ চমকে ওঠল। সব অভিমান ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সেও সোনালীকে রিপ্লাই দিল।
আমি রওনা দিচ্ছি।রংপুর আসতে রাত হয়ে যাবে।তুমি চাইলে রাতেই দেখা করতে পারি।দেখাতেই সব কথা হবে।আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি সোনালী।
রাজশাহী থেকে রংপুর যেতে তিন-চার ঘন্টার বেশি লাগে না।কিন্তু সন্ধ্যায় সরাসরি কোন বাস না পেয়ে লোকাল একটি বাসে ওঠে বসল আকাশ। এই বাসটি বগুড়া হয়ে যাবে রংপুর। খুব বেশি হলে আধাঘন্টা বেশি লাগবে।বাস রওনা দিল ঠিক সন্ধ্যা ছ'টায়।ছাড়ার কিছুক্ষন পর থেকেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না দেখে ড্রাইভাব বেশি জোরে চালাতে পারছিল না।আকাশ ঠিক ড্রাইভারের পেছনের সিটে বসেছিল।
চার ঘন্টার মত হয়ে গেছে। বাস প্রায় চলে এসেছে রংপুর। সময় যেন আর কাটছিল না আকাশের। সোনালীর সাথে দেখা হবে কতদিন পর! আবার ও ভালবাসাকে ফিরে পাবে। ভাবতেই এক অদ্ভূত ভাললাগায় মন ভরে ওঠছিল আকাশের। আর আপন মনে পুরোনো দিনের সেইসব সুখস্মৃতি রোমন্থন করছিল, সেই সাথে গুণ গুণ করে লতার ঐ গানটি গাচ্ছিল।সোনালীরও খুব প্রিয় এ গানটি।
আমি চলতে চলতে থেমে গেছি
আমি বলতে বলতে ভুলে গেছি
যে কথা তোমাকে বলব.................
সামনের দিক থেকে একটা বিন্দুর মত আলো দেখা যাচ্ছিল। রাতের বেলা বুঝা যাচ্ছিল না কি, হয়ত হবে কোন মটর সাইকেলের হেডলাইট। আলোটা যত কাছে আসতে লাগল মনে হচ্ছিল এটা মটর সাইকেল না হয়ে নসিমনও হতে পারে।নসিমনেরও একটাই হেডলাইট থাকে।বৃষ্টিতে বেশি কিছু বুঝাও যাচ্ছিল না।রাস্তাও বেশ প্রশস্ত তাই ড্রাইভার গা করছিল না।মাঝামাঝি বরাবর বাস চলছিল।আলোটা যতই কাছে আসছিল মনে হচ্ছিল আরও বড় কোন কিছু হবে।এবার আরো কাছে চলে আসল।শিট!! এটাতো বিশাল এক ট্রাক!! বাম পাশের হেডলাইট নষ্ট। কিন্তু ট্রাকটা এত কাছে চলে এসেছিল যে বাস ড্রাইভারের কিছুই করার ছিল না। যাত্রীরা সব ঘুমাচ্ছিল । আকাশের এই মূহুর্তে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। ট্রাকটি একেবারে সামনা সামনি বাসটিকে আঘাত করল !!
,
,
,
সারা রাত ঘুম হয়নি সোনালীর। রাতে যখন টিভিতে নিউজে দেখলরংপুরগামী বাসের সাথে বিপরীতগামী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং আহত ২০ জন তখন এক অজানা আশংকায় ভয়ে কুকড়ে গিয়েছিল। আকাশেরও তো আসার কথা ছিল। এরপর সোনালী আকাশের ফোন বন্ধ পেয়ে কিছু ভাবতে পারছিল না। রজনী ফোন দেয় তখনই। দুর্ঘটনায় নিহত-আহত সবাইকে রংপুর মেডিকেলে নেয়া হয়েছিল। রাতেই ও আর রজনী মিলে ক্যাজুয়াল্টি থেকে শুরু করে সব ডিপার্টমেন্ট তন্ন তন্ন করে খুজে দেখেছে।কিন্তু কোথাও আকাশকে খুজে পায়নি। তাহলে আকাশ কোথায় ?..............ভেবে কিছু পাচ্ছে না সোনালী। সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে ওর। এর মাঝেই আবার রজনীর ফোন। সোনালী ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করল।
- কিছু খবর পেলি?
- অনেক ভাল খবর। আকাশের কিছুই হয়নি।
- আলহামদুলিল্লাহ!! কোথায় এখন ও? কেমন আছে? ফোন দেয়নি কেন সারারাত?? (সোনালীর বুক থেকে পাহাড়সম বোঝাটা নেমে গেল এক নিমিষেই)
- চিন্তা করিস না। জিহান ফোন করেছিল। আকাশ জিহানের বাসায়ই আছে। রাতে দূর্ঘটনার খবর শুনে জিহানরা সবাই গিয়েছিল হাসপাতালে।আকাশ সেন্সলেস ছিল কিছুক্ষন। মাথায় সামান্য ব্যাথা পেয়েছে। এর পর যখন জ্ঞন ফিরে, ডাক্তার সিডেটিভ দিয়েছিল আর জিহান জানত না আকাশ তোর সাথে দেখা করার জন্য এসেছে। একটু আগে আকাশ ঘুম থেকে উঠেছে।জিহানের বাসায় আন্কেল-আন্টি কেউ নেই। জিহান যেতে বলছে আমাদের ওর বাসায়।এখনই !
- আচ্ছা, আমি রেডি হয়ে হোস্টেলে আসছি। তুই রেডি হ তাড়াতাড়ি। একসাথেই যাব
- আচ্ছা আয়।এখন রাখি তাহলে। বাই।
- বাই!!
আজ এত ভাল লাগছে সোনালীর!! কতদিন পর আবার দেখা হবে আকাশের সাথে! অবশেষে ও আকাশকে ফিরে পেতে যাচ্ছে। এবার আর আকাশকে যেতে দিবে না সোনালী। সারাজীবন বেধে রাখবে। এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতে সোনালী রেডি হয়ে বাসার বাইরে হল। রাস্তায় কোন রিক্সা দেখা যাচ্ছিল না। আজকাল রিক্সাওয়ালাদের যে কি হয়েছে, যখন আসে একসাথে আসতেই থাকে আর যখন কিছু পাওয়া যায় না তখন কোন কিছুই পাওয়া যায় না। হেটে হেটে বেশ দূর যাবার পরই সোনালী একটা রিক্সা খুজে পেয়ে সেটাতে ওঠে বসল।ধাপ থেকে মেডিকেলে যেতে বেশিক্ষণ লাগে না। তারপরও সোনালী রিক্সাওয়ালাকে তাড়া দিচ্ছিল তাড়িতাড়ি যেতে। সর্টকাট হবে বলে রিক্সাওয়ালা ক্যান্টনমেন্টের সামনের হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছিল।সকাল বেলা দেখে রাস্তায় বেশি বাস-ট্রাক ছিল না। তারপরও রিক্সাওয়ালা রাস্তার কিনারা ঘেষেই চলছিল। হঠাৎ পেছন থেকে একটি ট্রাক এসে রিক্সাটিকে চাপা দিয়ে চলে গেল.......................................
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
-
এক বৎসর পর.......................................
আজ সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ডে প্রথম দিন। সাইকিয়াট্রি নিয়ে আমার প্রথম থেকেই বেশ আগ্রহ ছিল। তাই সবার আগেই চলে গিয়েছিলাম। স্যার তখনও আসেনি কিন্তু ওয়েটিং রুমে দুইজন লোক বসেছিল। আমি মামা কে জিজ্ঞাসা করলাম যে উনারা কি রোগী নাকি। মামা বলল যে একজন রোগী আর পাশের জন রোগীর বড়ভাই। রোগী রাজশাহী মেডিকেলে পড়ত। আপনি চাইলে কথা বলতে পারেন। বেশ আনকমন কেস। আমি ভয় পাচ্ছিলাম কথা বলব কিনা, কিন্তু মামা বলল যে কোন ভয় নেই। রোগীর বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে আমার পরিচয় দিয়ে কেস হিস্ট্রি নিলাম। রোগীর নাম আকাশ। সিজোফ্রেনিক পেসেন্ট। সাথে রিসেন্ট মেমরি লসও আছে। এরপর রোগীর ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। উনি যা বললেন সেটা সংক্ষেপে, আকাশ একটা মেয়েকে ভালবাসত। এক বৎসর আগে একদিন ওদের দেখা করার কথা ছিল। বাসা থেকে দেখা করতে আসার পথে মেয়েটিকে পেছন থেকে একটি ট্রাক চাপা দেয়। মেয়েটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর থেকেই আকাশ খুব কম কথা বলত। পড়াশুনা একেবারে ছেড়েই দিল। রাতে ঘুমাতে পারত না। সব সময় মিডাজোলাম খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করত। আট মাস ধরে ও সিজোফ্রেনিয়ার রোগী। সেই সাথে রিসেন্ট কোন ঘটনা মনে রাখতে পারে না। ঘটনাটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগছিল, চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। সেদিন আর ক্লাস করতে পারিনি, চলে এসেছিলাম। পৃথিবীটা এত নিষ্ঠুর কেন, বারবার নিজেকে প্রশ্ণ করেও কোন উত্তর খুজে পাচ্ছিলাম না।মাঝে মাঝে বাস্তব কল্পনাকেও হার মানায় আর সময় সেদিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দেয়।
শুধু তোমারই জন্য
ঐ দেখ আকাশ ।হালকা উড়ে উড়ে যাওয়া মেঘেদের নিয়ে আকাশ । আবার কখনো বা কালো মেঘে ঢেকে থাকা এইতো বৃষ্টি হবে হবে চেহারা নিয়ে জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকা আকাশ ।হঠাত্ নেমে যাওয়া অঝোর বৃষ্টি ।
এ আকাশ,এ অনন্ত বিস্তৃতি,এই মেঘ,এই সরলতা , এই শুভ্র উদার অসামান্য অনুভবের বয়ে চলা সে ও আজ তুচ্ছ ।বড় আবেগহীন -তুমি হীন ।
ভাবনাতে মত্ত হই আমি ,অনুভূত হও তুমি । ভাবনার কিছু অনুভূতি তোমার স্পর্শকে অনুভব করে । আর আমার ভাবনার স্পর্শ তোমাকে অনুভব করে ।
বর্ষা,আমার কল্পনা আর তুমি সবকিছু শুধু অনুভূতি ই নয় ,যেন এক ই সূত্রে গাঁথা । আমার চিরাচরিত,অসহনীয়,চির অকাম্য জীবনের সকল অস্বস্তিকে পিছু হটিয়ে তোমার আগমন এ কি আমার দূর্ভাগ্যের চিরনির্মমতার পরিসমাপ্তি ঘটাবে ?নাকি সকল নির্মমতার অশ্রুগুলো এখন যেমন কালো মেঘ হয়ে আকাশে জড়ো হয় ,তেমনটি আর আঁধার ডেকে আনবেনা ?আকাশের চোখে অশ্রু হয়ে তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে আর সেই বৃষ্টি শিহরিত
করবে আমায় ।দূরে তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে ,মুগ্ধ হয়ে দেখবে কি তুমি আমার বৃষ্টিতে ভেজা ?নাকি বৃষ্টির ঐ আনন্দ সরোবরে অবগাহন করতে তুমি ও এসে দাঁড়াবে আমার পাশে ,বাড়িয়ে দিবে তোমার হাত ।
কি ভাবছ ?বর্ষা আমার প্রিয় সঙ্গী কিনা ?!তুমি ছুঁয়ে দিলে গ্রীষ্মের দাবদাহ ও অস্বস্তিকর নয় , অসুন্দর নয় । তোমার উপস্থিতি কাঠফাটা রোদ্দুরে ও শান্তির আভাস দেবে আমায় ।আমার দিকহীন ,অজানা জীবনপথের সকল অশান্তির শেষে শান্তির দূত হবে তুমি আর বিন্দু মাত্র শান্তির পরশ নিয়ে তোমার ঐ উপস্হিতিই মুছিয়ে দেবে আমার ছুটে চলার ক্লান্তি ।
আজতো আমি কিছুই পারিনা ।আমি শুধু স্বপ্ন দেখে যাই ;কিন্তু সত্যি করতে পারিনা । আমি গেয়ে যাই দুঃখের গান একটা ভাঙা বেহালা হাতে নিয়ে ।আমি পথে নামতে পারিনা সম্ভ্রমের ভয়ে ।
আমার অর্থহীন অশ্রু আজ অপেক্ষমান,মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে পড়ে একাকী সংগ্রাম করতে করতে কঠিন বাস্তবতার সাথে ।কিন্তু অপেক্ষার শেষ ঠিকানা হয়তো তার নিজের ও অজানা ।আবার হয়তো একদিন আমার মনের এ ভাবনাগুলো পড়ে তুমি হাসবে ,আর সে স্নিগ্ধ হাসি ছুঁয়ে দেবে আমায় ,আমার সকল কল্পনাকে বাস্তবের রূপ দেবে ।
আবার কি ভাবছ ? গল্প লিখছি তোমায় নিয়ে ? এ হল আমার মনের জানালা যেখানে নিরবে নিভৃতে আমার বসবাস ।দূরের মানুষ কাছে এসে কখনো বা মনের জানালা খুলে একটু দাঁড়ায় । তখন মনের ঘরে একটু আলো পড়ে ,কেউবা আমার ভাবনা নিয়ে হাসে ; বিদ্রুপ করে । কেউবা ভালোবাসার মিথ্যে আশ্বাস দেয় । কেউবা আবার মিথ্যে অপমানে কাঁদায় । কখনোবা কার ও করুনায় সিক্ত হই ,এভাবেই কাটে সময় ।প্রয়োজন শেষে সবাই চলে যায় তারপর
নেমে আসে নিবিড় অন্ধকার ।
তুমি কখনো আমার মনের ঘরে আঁধার পৌঁছতে দেবেনা ,আমি জানি । আজ ভালবাসা কি আমি বুঝিনা । কারন একদিন তুমি শিখাবে আমায় কিভাবে ভালবাসতে হয় ।সেদিন আমার সকল কল্পনার হবে পরিসমাপ্তি ,শুরু হবে আমার নব জীবনের নব বাস্তবতা ।তারই অপেক্ষায় আছি .থাকব ।আমার সকল কল্পনা তোমায় নিয়ে , আমার সকল অপেক্ষা শুধুই তোমার জন্যে
সংরহ-বলরাম পাল
©somewhere in net ltd.