![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়তে এবং লিখতে ভাল লাগে, ভালবাসি কবিতা খুব বেশি। আর আছে প্রচণ্ড ছবি আকার নেশা।
" সম্পর্ক রচনা হল না তার বড় দুই সন্তানের সঙ্গেও। ব্যস্ততা বা সময়ের অভাব নয়, আগ্রহের অভাব নয়। অভাব পড়ল বাক্যের। অভাব পড়ল ভাব প্রকাশের" শীর্ষেন্দুর একটা উপন্যাস পড়ছিল রুদ্র। এই লাইনে এসে আটকে গেল সে। সত্যিই তার সাথেও কি এমন কিছু ঘটে নি ! কিছু পরিচয় দীর্ঘ হলে কথা ফুরিয়ে আসে, তাদেরও এসেছে। রুদ্র ভাবে ওর আর অদিতির সম্পর্কটাও ফুরিয়ে আসছে। বেশী দিন মনে হয় টিকবে না। আসলে ওদের মাঝে ক্ষুদ্র থেকে দীর্ঘতর একটি রাস্তা অগোচরে তৈরি হয়ে গেছে। দুজন দুদিকে হাঁটা দিয়েছে, এখন এই চরম মুহূর্তে বুঝতে পারে রুদ্র। কিছুতেই বাঁচানো যাবে না সম্পর্কটাকে। দুজনেই বিষণ্ণতাই ভুগছে। এর চেয়ে দূরে থাকা ভাল। আসলেই দূরে চলে এসেছে। এখন অপেক্ষা সুক্ষ চিকন সুতোতে নাড়ী ছিন্ন টান। অদিতিও আগের মত নেই, আমিও কি আছি? মাস্টার্স শেষ করে বেকার বসে আছি। আর্থিক সংকটে দিন পার হচ্ছে আগুনে পোড়া রুগীর মত। হাতে তিন চারটা টিউশনি। সারা দিন ছুটে চলতে আর ভাল লাগে না। একটা সমাধান খুব জরুরী। সবাই ভাল আছে, শুধু আমার ভাল থাকা হয় না। ভাল থাকলেই যেন আমি মারা জেতে পারি এমন ভাব ঈশ্বরের। এর মাঝে ওর ক্যানকানানি, দেখা কর না কেন? ভাল মত কথা বল না কেন? দুনিয়ার অভিযোগ। অর্থহীন জীবন সত্যিই অর্থহীন সেটা কিভাবে বোঝাবো। পরিবারের কথা নাই বাদই দিলাম। গত মাসে মনে হয় দিন পাঁচেক দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে তার চেয়ে একটু বেশী।
আমিও বুঝি এভাবে চলে না। মাত্র বছর দুয়েক সম্পর্ক। তার মাঝে এত সমস্যা। প্রথম বছর স্বপ্নের মত কেটে গেল। কত স্বপ্ন , রাত ফুরিয়ে গেল, গল্প গেল না। কবিতা লিখতাম অনেক, ছবিও আঁকতাম। বেশ গেল দিন গুলি। আহা ঝকঝকে স্বর্ণের মত দিন। আর এখন মরচে পড়তে পড়তে ক্ষয়ে গেছে সব। আর একবার বৃষ্টি হলে কিছুই থাকবে না।
গত সপ্তাহে দেখা হল ওদের। সত্যি কিছুই বলার মত ছিল না রুদ্র ও অদিতির। চুপচাপ শুধু বসে থাকা। মাঝে মধ্য কান খুঁচায় রুদ্র। আর অদিতি দূরে তাকিয়ে থাকে। পাশে বসে অথচ হারিয়ে গেছে অন্য কোথাও। রুদ্র বলতে চাইছে কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। ওরা বসেছিল নদীর পাশে। কিছুটা নির্জনে। গত বছরেও এই নির্জনতা দারুণ লাগতো দুজনের। আজ দম আটকে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে ন'টি নৌকো চলে গেল জল চিঁরে। বাতাস দক্ষিণ থেকে পূবে মোড় নিল। অবিবেচিক ক'টি মানুষ উঁকি মেরে গেল। কিন্তু সময় যেন থমকে গেল ওদের। রুদ্র ভাবছে কিছুই কি বলার নেই? বেশীক্ষণ থাকতে পারবে না। টিউশনি আছে, যেতে হবে। পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। এই অসম্পূর্ণ সম্পর্কটা হিমালয়ের চেয়ে কয়েকগুণ ভারী লাগে, যদিও হিমালয় কাঁধে নিয়ে দেখেনি রুদ্র। আজই শেষ করতে হবে সব কিছু, তবুও শেষ হয়েও হয় না। অনেক দিন অদিতির হাতখানা ধরে না রুদ্র। এমন কি চোখে দৃষ্টি ফেলতে সংকোচ হয়। আর লুকিয়ে চুমু, সে অবাঞ্ছিত ইতিহাস। না, আর পারে না। সব কিছু শেষ হয় এটাও হতে হবে। রাতে ঘুম হয় না ভাল মত, কি যে ভাবনায় মগ্ন হয়ে রাস্তাতে হাটে নিজেও জানে না। জীবনটা বড্ড এলোমেলো হয়ে গেল। অথচ এই এলোমেলো সন্ন্যাসী জীবনযাপন কে ভালবাসত, ভাল লাগতো অদিতির। এখন সেটাই অসহ্য হয়ে উঠেছে তার কাছে। না দেখা হলেই ভাল লাগে ওর। ভালবাসা আগের জায়গাতে নেই। ফিরতে হবে নিজ দেহে নিজ ঘরে, রুদ্র এখন অনেক জানা। আর জানতে ইচ্ছে করে না।
আজও এভাবেই ফিরে আসে ওরা। হয়তো আরও কিছু দিন কিছু সপ্তাহ, কিছু মাস... কিংবা বছর। রুদ্র আটকে গেছে সময়হীন একটি ঘড়িতে। যার কাঁটা নেই, গতি নেই।
রুদ্র আটকে গেছে উপন্যাসের অক্ষরে। চোখ ফিরে গেছে দূরে, জানালা পেড়িয়ে, মাঠ পেড়িয়ে, বড় বড় রাস্তা পেড়িয়ে, বাস স্টপ, কারখানা, শপিং মল, ধূসর নীল আকাশ পেড়িয়ে, আটকে গেছে নদী বালুতে, কাঁদাতে ঘোলা জলে, নৌকার চূড়াতে, কাশ বনের মিহি গন্ধে। রুদ্র ফিরতে চাই না, ফেরার মত কিছু পেছনে কি আছে? নেই। রুদ্র ভাবে শেষ করতে হবে শেষ করতে হবেই। কি শেষ করবে নিজেকে না অদিতিকে? অভাব, শব্দের অভাব, ভাব প্রকাশের অভাব, জীবন কে নিংড়ে নেওয়ার অভাব। " অভাব " শব্দটি চরমতম মধুর সুরে ফিরে আসছে কানে। সে জানে এই শব্দটি সমস্ত জীবন তার কানে লেগে থাকবে। মোবাইলের ভাইব্রেশনের কাঁপনে ফিরে আসে নদী থেকে। এই যন্ত্রটাকে ভয়ংকর লাগে ইদানিং। কখন কি দুঃখ এনে দেয় বলা মুস্কিল। অদিতির মেসেজ। পড়তে ইচ্ছে করছে না রুদ্রুর। অনেক মেসেজ জমে আছে ফোনে। আজও পরে থাকুক এভাবেই সময় জমতে থাকে ঘড়িতে। আধা ঘণ্টা পরে আবার একটি মেসেজ। রুদ্রর জিদ চেপে গেছে। না কোন মেসেজ সে পড়বে না। আজ শুধু অবহেলা করবে সব কিছু।
পরে থাকলো মোবাইল সাত দিন রুদ্রের পকেটে। একটি বারের জন্যও সে মেসেজ পড়েনি। ক্যাম্পাসে দেখা অনিকের সাথে। সপ্তাহখানেক বাদে ভার্সিটিতে আসলো সে।
সুমনের চায়ের দোকানে বসতেই আড্ডা জমে গেল। ভাল লাগছে না রুদ্রর। যেতে পারলে বাঁচে। কিন্তু বাঁচার অধিকার নিয়ে রুদ্র জন্মায় নি। খানিক বাদে রুদ্র ছুটছে, পাগলের মত ছুটছে, গরমে ঘেমে একাকার ওর শরীর। থামার লক্ষণ নেই। রেসের ঘোড়ার মত ছুটছে। বাতাসে চুল উড়ছে পতাকার মত, স্যান্ডেল আজ ছিঁড়েই যাবে মনে হয়। গত ঈদে কেনা। তবুও ছুটছে, মানুষ জন তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রুদ্রর হুস নেই। রুদ্র বসে আছে নদীর পাশে, হাতে মুঠোফোন। একটি মেসেজ খুলে বসে আছে নির্বাক নদীর মত, কাশ বনের মত, বাতাসের মত। চোখে জল বিঁধে আছে, চার বার গড়িয়ে পরেছে খোঁচা খোঁচা দাড়ি মধ্য দিয়ে। হঠাৎ ফোনটা জলে ছুড়ে মারে রুদ্র। কাছে জলের কিনারা ঘেঁষে ডুবে যায়। সাথে একটি মেসেজ। " রুদ্র আজ আমার বিয়ে, তুমি অনেক ভাল থেকো"।
রুদ্র ফিরে আসে ঘরে। উপন্যাসের পাতা ভাজ করা ছিল। অসমাপ্ত লাইন ধরে পড়তে থাকে। আকাশ ভারী, ঝুম জল ঝড়তে পারে চারিদিকে। সুতোর মত এক একটি জল।
তাই সব অভাবকে ছাপিয়ে আজ রুদ্রর ভাল ঘুম হবে মনে হয়।
@বনী ইসরাইল।
©somewhere in net ltd.