নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বনী ইসরাইলের ব্লগ

আমার কোন গল্প নেই। মানুষের গল্প টানে আমাকে তাই তাদের গল্প লিখি।

বনী ইসরাইলে\'র ব্লগ

পড়তে এবং লিখতে ভাল লাগে, ভালবাসি কবিতা খুব বেশি। আর আছে প্রচণ্ড ছবি আকার নেশা।

বনী ইসরাইলে\'র ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

** জুয়া ** _ [ ছোট গল্প ] _ বনী ইসরাইল_

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯

১.

রাত্রি সাড়ে ন'টা। বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়ালো একটি গাড়ি। বাড়িটি দোতালা, সাদা রঙের। গেটের পাশে কাঠের টুলে ঝিমুনি দিচ্ছে দারোয়ান জয়নাল শেখ। তার আধপোড়া সিগারেট নিভে গেছে অনেক আগেই। জয়নালের ভাল একটি অভ্যাস হল, মশা কামড়ে ওকে কাহিল করতে পারে না। মাঝে মাঝে মশারাই বিরক্ত হয়ে চলে যায়। জয়নাল নিশ্চল থাকে। একটি সাদা রঙের টয়োটা গেটের বাইরে হর্ন দেয়। হর্নের শব্দে নয়, গাড়ির হেড লাইটের আলোতে ঝিমুনি ছুটে গেল জয়নালের। খয়েরী কালারের টুপিটা মাথায় ঠিক করে উঠে আসে জয়নাল। মানুষটির বয়স চল্লিশ ছোঁয়া ছোঁয়া। সাদা পাঞ্জাবি, গায়ে জড়ানো কালো একটি চাদর। গরমের রাতে চাদর গায়ে, চরিত্র সন্দেহজনক লাগলো জয়নালের। জয়নাল সরাসরি আলো ফেলে মুখে। চমকে যায় লোকটা। জয়নাল চিনতে পেরে লজ্জা পেয়ে সালাম ঠুকে।

জয়নালঃ সালামুওলাইকুম, স্যার।
আগুন্তকঃ ওলাইকুম, গেট খুলো।
জয়নালঃ জি স্যার। পরিচয় পত্র।

আগুন্তক একটি সবুজ কালারের কাগজ এগিয়ে দেয়।

জয়নালঃ স্যার লাল রঙেরটা।
আগুন্তক সিগারেটের শেষ অংশ ছুড়ে দেয় বিরক্তি নিয়ে, প্রায়ই একই ক্যাচাল।
আগুন্তক ভিতরে প্রবেশ করে।
আগুন্তকঃ জয়নাল ভেতরে কে কে আছে?
জয়নালঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পর-রাষ্ট্র মন্ত্রী, মিনিট তিরিশেক আগে অর্থ মন্ত্রীও এসেছেন। ক'জন বিদেশীও আছে ভেতরে।

আগুন্তকের মুখে বিদ্যুৎ ঝলক সাথে বিকীর্ণ হাসি। আজ রাত ভাল মনে হচ্ছে। বাঁকা চাঁদের সাথে তার খুব সখ্যতা। চাঁদের নীল আলোতে সাদা পাঞ্জাবী আলোকিত হয়ে উঠে। চাঁদ ভাল লাগে তার সাথে ভরপুর জোৎস্না হলে মন ছুঁয়ে যায়।

জয়নালঃ স্যার আজ সাথে কি এনেছেন?

আগুন্তকের মুখের হাসি সারা মুখে ছড়িয়ে পরে। মনে হচ্ছে জয়নালের কথা ভাল লেগেছে তার। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে জয়নালের পকেটে কিছু ঢুকতে পারে। জয়নালও হাসে মনে মনে।

জয়নালঃ স্যার ভিতরে তো সেইরাম ব্যাপার-স্যাপার। দেশী-বিদেশী মেহমান, টাকা , ডলার, রুপী, এক্কা, দোক্কা, জোকার, জিন, ভদকা, রাম।

২.

জয়নালঃ জি স্যার
আগুন্তকঃ গাড়ির বনেটে কিছু সস্তা মাল আছে, ভেতরে আনো।
জয়নালঃ জি স্যার, আপনি যান আমি আনতেছি।

আগুন্তক এগিয়ে যায়, তার পোশাকে আজ শুভ্রতা লেগে আছে। হাতে কিছু ফুল আনলে মন্দ হত না।

জয়নাল বনেট খোলে। প্রথমেই বের করে একটি সবুজাভ কাপড়, সিনথেটিকের। অনেক গুলি ফুটো। মনে হয় সিগারেটর কল্যাণে হয়েছে। সে বের করে মাটিতে ফেলে দেয়। এবার টেনে আনে মৃত প্রায় ময়লা চেহারার একটি নারী। বয়স চল্লিশ পেড়িয়ে গেছে। জড়সড় হয়ে বসে আছে। গায়ের রং তামাটে কালো। ভিখারিনী নাকি? একে দিয়ে কি করবে ভেবে পায় না জয়নাল। এটাকেও মাটিতে ছুড়ে ফেলে। আহ! করে শব্দ বের হয়ে আসে নারীটি মুখ থেকে। জয়নাল খিস্তি দেয়, চুপ কর মাগী। আরেকটি জিনিস পরে আছে কালো কাপড়ে মোড়ান, সিল্কের কাপড়ে । মনে হয় বেশ দামি। তাই জয়নাল জিনিসটা না ছুড়ে হাতে রেখে দেয় যত্নে।

৩.

(ভেতরের দৃশ্য)

চারিদিকে মেঘ ধোঁয়া। তার মাঝে চারকোনা একটি টেবিলের চতুর্দিকে নানা পোশাকের মানুষ। জয়নাল মালগুলা রেখে বাইরে চলে গেছে। আগুন্তক হাতে হাতে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে সিল্কের কাপড়ে মোড়ানো জিনিসটা। সবাই দারুন উৎসাহী, কেউ কেউ অতি আমুদে হাত তালি দিয়ে ফেললেন। ঘরের ভিতর জনেক সাত মানুষ তাস খেলাতে ব্যস্ত। এদের মধ্য সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটি একজন জাতিসংঘান। তিনি বিয়ার ছাড়া কিছু নেন না। একজন ডলার আছে, রুপীর মালিক আছে আর দেশ কাঁপানো মন্ত্রীরা। জাতিসংঘানটি সিল্কের কাপড়ের ভেতরের জিনিসটা খুব নেড়ে চেড়ে দেখছেন। মজাও পাচ্ছেন বেশ। তার মজা দেখে মনে
হচ্ছে তিনি বিছানায় কোন এক উর্বশী ষোড়শী বালিকার সাথে সঙ্গমে ব্যস্ত। আর বলতে চাইছেন তোমাদের দেশের মালের জবাব নেই হে।

আগুন্তকের হাতে অনেকগুলি তাস। একটু চিন্তিত, ভ্রু কুঁচকে আছে। তেমন ভাল কার্ড পরেনি মনে হয়। তবু যেভাবেই হোক জিততে হবে। দেশের মানুষের কথা ভেবে তিনি সাহস পান।
প্রথম দানে সে সবচেয়ে সস্তা সবুজাভ ছেঁড়া সিনথেটিকের কাপড় টেবিলে রাখল। জাতিসংঘানটা এখনো ওটা নিয়ে ব্যস্ত। প্রথম দান হেরে গেল আগুন্তক।

দ্বিতীয় দানে ঘরের কোনে হাঁটু জড়ো করে বসে থাকা ভিখারিনীটাকে টেনে টেবিলের উপর এনে রাখল একজন। নারীটির গায়ে তেমন কিছু ছিল না, তবু ভাল করে দেখার জন্য ডলার ও রুপী দুজনে দুদিক থেকে টান দিয়ে ঝটপট ছিঁড়ে ফেলল শতছিন্ন ব্লাউজ। মুহূর্তে উলঙ্গ হয়ে গেল ময়লা নারীর বুক। শুকনো লাউয়ের পাতার মত শূন্যে ঝুলে থাকল স্তন জোড়া। সে লজ্জায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরল বুক। তাতে আরো মজা পেল ডলার ও রুপী। আগুন্তকের সেদিকে হুস নেই। তাকে জিততে হবে। শেষ দান এখনো বাকি, বাকি সিল্কের কাপড়ে উর্বশী।

৪.

ঘরজুড়ে মদের গন্ধে মদির। মশাগুলি ভিমরি খেতে থাকে। মেঝেতে ছিটানো কাজু বাদাম, সিগারেটের ভস্ম টুকরো। আর টেবিলের চারিদিকে ঠেসে বসা পাছা, পাঞ্জাবী, কোর্ট, পাগড়ী।
সব চুপ, শেষ দান তবে চালা হবে এখন। আগুন্তকের মুখে হাসি। সিল্কের জিনিসটা রাখলেন টেবিলে। হুমড়ি খেয়ে পড়লো সবাই। সব কটা চোখ টানটান, লাল হয়ে গেছে মদে। একে একে সবাই
দেখে নেয় কি আছে সিল্কের কাপড়ে। আসলেই মূল্যবান জিনিস, এক বাক্যে সবাই স্বীকার করে। আগুন্তক মনে মনে হাসতে থাকে, সেই জিততে যাচ্ছে। সে কার্ড ফেলে উঠে দাঁড়ালো। বিছানার উপর ফেলে রাখা টাকার বস্তা তুলে নেয় হাতে। জাতিসংঘান হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে সিল্কের জিনিস। চোখ তার চকচক করছে আনন্দে।

৫.

জয়নালঃ স্যার, কি হইল? কে জিতল?
আগুন্তকঃ জয়নাল, এই টাকার বস্তা গাড়িতে রেখে এস।

জয়নাল দ্রুত ব্যাগ গুলি গাড়িতে রেখে আসে। পাশে এসে মাথা নিচু করে থাকে। আগুন্তক জয়নাল কে বখশিশ বাড়িয়ে দেয়। জয়নালের চোখ কৃতজ্ঞতায় ভরে আসে। জয়নাল জিগ্যেস করে,

জয়নালঃ স্যার, একটা কথা কইবেন?
আগুন্তকঃ কি?
জয়নালঃ সিল্কের কাপড়ে কি ছিল? মনে হয়ছিল অনেক দামী?
আগুন্তকঃ হুম ওটাই সবচেয়ে মূল্যবান। আমাদের দেশে তৈরি, পার্সোনাল প্রোডাক্ট। সারা দুনিয়ায় কোথাও পাওয়া যায় না। শুধু আমরাই উৎপাদন করি বছর বছর।
জয়নালঃ কি জিনিস স্যার?

আগুন্তক অট্টহাসিতে ফেটে পরে সেটা দেখে জয়নাল হাসে, এটাই নিয়ম সে যেনে এসেছে। মালিক হাসলে ভৃত্যকেও হাসতে হবে।

আগুন্তকঃ আমরা দারিদ্র্য বিক্রি করি, দুর্ভিক্ষ বিক্রি করি, সাম্প্রদায়িকতা বিক্রি করি। প্রতি বছর ঝড়,বন্যা বিক্রি করি, মা ও দেশ বিক্রি করি। আর ডলার, রূপি আর বিশ্ব মানবাধিকার কামাই করি।

জয়নাল ঠিক বুঝতে পারে না। দরিদ্র, দুর্ভিক্ষ, দেশ কিভাবে বিক্রি করা যায়? আর এসব কারা কেনে, কেনই বা কেনে? ও ভাবে এসব বড় লোকের কারবার, এত সব বুঝে কাজ নেই। আজ দিন ভাল,
উপরি কিছু ইনকাম করেছে। কিছু বাড়ি দেবে আর কিছু টাকা জুয়াতে লাগাবে। ওর জুয়ার ভাগ্য বেশ ভাল।

_________________________________________________________________________

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.