নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বনী ইসরাইলের ব্লগ

আমার কোন গল্প নেই। মানুষের গল্প টানে আমাকে তাই তাদের গল্প লিখি।

বনী ইসরাইলে\'র ব্লগ

পড়তে এবং লিখতে ভাল লাগে, ভালবাসি কবিতা খুব বেশি। আর আছে প্রচণ্ড ছবি আকার নেশা।

বনী ইসরাইলে\'র ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

***রুদ্রের অসুখ*** ( মাঝারি গল্প )**বনী ইসরাইল**

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৫


নৌকাটি হেলে দুলে প্রায় রাজকীয় হালে পানি কেটে চলেছে। জল দুভাগ হয়ে অভ্যর্থনা দিচ্ছে, যেভাবে মাননীয় নেতা গোছের কেউ আসলে ইস্কুলের বোতল ভর্তি বাচ্চারা অভ্যর্থনা দেয় ঠিক সেরকম। নৌকাটি নদীর বড় ঢেউ পাশ কাটিয়ে ঢুকে গেল নালা মত একটি সরু খালে। খালের পানি বড্ড ঘোলা। গ্রামের উলঙ্গ পুলাপান গোসল সারছে ব্যাপক আনন্দে। ঘোলা খালের পানি যেন ওদের খেলার মাঠ, বারবার ছুটে যাচ্ছে তার নতুন উদ্যমে। এই বর্ষায় বেশ ভাল ভাঙ্গন লেগেছে সবখানে। নদীর উর্বশী যৌবনের জ্বালায় মাটি কেঁপে উঠছে। সদ্য প্রেমিকের মত গড়িয়ে পরছে পায়ে। বেশ লাগে এই খেলা। সেরকম ভাঙ্গা একটি ঘাটে নৌকা ভেড়াল সেলিম চাচা। সেলিম চাচা কুঁড়ি বছর যাবৎ এই নদী খালের সেই পুরাতন প্রেমিক। নদী তার সংসারের মতই প্রিয়। অনেক ভাঙ্গন দেখেছে কিশোর থেকে যৌবন তারপর প্রবীণ বয়সে। সেই সব পুরানো দিনের গল্প শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে গেছিল রুদ্র। পাঁচ বছর পর গ্রামে ফিরছে সে। বলতে গেলে হঠাৎ করে। অনেক পরিবর্তন লক্ষ করেছে এরই মধ্য। রুদ্র ঢাকাতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সেকেন্ড ম্যানেজার। ভাল বেতন, সাথে গাড়ি। তবে বাড়ি নিজ খরচে। এখনো অবিবাহিত, ইচ্ছেও অনেক কম। যদিও মার থেকে মাসির দরদ বেশি মানুষের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু কে যায় এসব ঝামেলায়।

কম্পিউটার, টিভি আর মোবাইল ফোন খুন করছে রুদ্রের চোখ, মস্তিষ্ক। চোখে ইদানিং ঝাপসা দেখে। ডাক্তার পরামর্শ দিল কদিন গ্রাম থেকে ঘুরে আসুন, সবুজ দেখে আসুন। এই রং চোখের ভিটামিন, খুব উপকারী। আমাদের প্রিয় নবীর পছন্দের রং ছিল সবুজ। রুদ্র অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামে বেড়ানোর পরিকল্পনা নিল। নৌকা থেকে নেমে কাঁচা পাকা রাস্তা দিয়ে ঢুকে গেল মাটির ভিতরে। সামনে দিকে বুধবারের হাঁট বসেছে। কত না স্মৃতি, অতীত ঘিরে আছে এই হাঁট বাজারে। প্রথমেই ভাবলো চা খাবে এক কাপ। অনেকদিন খাঁটি গরুর দুধের চা খাওয়া হয় না। ঢাকা শহরে পাউডার দুধ আর কনডেনস মিল্কে ভরে আছে চায়ের দোকানগুলো। রুদ্রের আবার চায়ের ভীষণ নেশা। হাঁট বাজারের পরিবর্তন খুব লক্ষণীয়। ও জানে এই পাঁচ বছরে বদলে গেছে অনেক। তবু সে মন স্থির করে "না, কিছুই বদলায় নি। সব আছে আগের মতন।" হাঁটের প্রথম চায়ের দোকান মফিজের। প্রায় সমবয়সী ওরা, গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে এক ক্লাস নিচে পড়তো মফিজ। মনে হয় ছাত্র ভাল ছিল না। না হলে হাঁটে চায়ের দোকান দেবে কেন?

-আরে রদু ভাই যে! কখন এলেন?
গ্রামের সবাই তকে রদু বলে ডাকে। রুদ্র নাম টা মনে হয় শক্ত লাগে এদের কাছে। ও কিছুই মনে নিল না।

- কি মফিজ মিয়া, ভাল আছো? ব্যবসা পাতি কেমন চলছে?
- জি, সব ভাল রদু ভাই।
- এক কাপ চা দেও। খাঁটি গরুর দুধের চা। পানি টানি মেশাও না তো আবার।
- কি যে কন না? গ্রামে ওসব চলে না।
- তাহলে দুই কাপ দাও। এক কাপে হবে না।
মফিজের হাসি সম্প্রসারিত হতে থাকে। হাসির ভাব সম্প্রসারণ না করে রুদ্র নজর দেয় চায়ের কাপে।

চা শেষ করে মফিজের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুদ্র বাড়ির পথ ধরে। সবুজ খুঁজতে থাকে চারিদিকে। মনে হচ্ছে অনেক কমে গেছে এদিকে। এখন চারিদিকে তামাকের চাষে ভরে গেছে জমি। তামাকের পাতাও সবুজ তবু মনঃপুত লাগে না। ধানের চেয়ে তামাকে লাভ বেশি বলে কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহ বোধ করে। সভ্যতার বিষাক্ত ধোঁয়া গ্রামের নীল আকাশ ধূসর করে ফেলছে ক্রমশ। তবু মনে মনে রুদ্র ভাবে গ্রাম আগের মত আছে থাকবে চিরকাল। তা না হলে ফিরবে কার কাছে। রাস্তার পাশেই সে পেয়ে যাই ধানি ক্ষেত, নতুন কচি পাতা মাথা ঝাঁকিয়ে বাতাসে চুল উড়াচ্ছে। দারুণ লাগে দেখতে। ও দেখতে থাকে, চোখ ভরে দেখতে থাকে। কিছু রিজার্ভ করে নেয়। শহরে ফিরে কাজে লাগবে এই কচি সবুজের খেলা। রুদ্র মুগ্ধ চোখে সবুজ দেখে, চোখ শান্তি পায়, মস্তিষ্ক শান্তি পায়, মনের ধূসর বিষাদ কাটতে থাকে। রুদ্র ভাবে, আমার টেবিলের সামনের অংশে যদি কিছু ধানের চারা লাগানো যেত। আর টেবিলের তলাতে ছোট্ট একটি নদী। জুতো মোজা খুলে পা ডুবিয়ে রাখতো সেই জলে। রুদ্রুর ভাবনায় ছেদ পরে। এক ময়লা কালো কালারের শ্রমিক কৃষক ধান ক্ষেতের আলের ধারে বসে পরে। এরপর লুঙ্গিটা নিতম্ব অবধি তুলে ভারী বর্ষণ শুরু করে সবুজের গায়ে। দৃশ্যটা দারুণ লাগে। ঢাকা শহরে এক পা তুলে কত মানুষ রোজ দেয়ালে দেয়ালে পেশাব করে। যেখানে লেখা থাকে "গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক।" চোখ বন্ধ করে রুদ্র, কল্পনায়
সে দেখে অফিসের ছাদের রেলিঙয়ের উপর দাড়িয়ে আছে। শুধু চিকচিকে রোদ আর রোদ চারিদিকে। ও প্যান্টের চেন ধীরে ধীরে নামিয়ে শুরু করে ভারী বর্ষণ। আর দুপুর রোদে ভিজতে থাকে ঢাকা শহরের মানুষগুলো। এই কাটখোট্টা রোদে এক পশলা বৃষ্টি পেয়ে ঢাকা শহরের লোকজন আনন্দে বিহ্বল, কেউ কেউ কেঁদে ফেলছেন। বাহ! বেশ লাগছে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে, অনন্ত বর্ষণধারা; ব্যাপক সম্ভাবনা। রুদ্র আবার ভাবতে থাকে, একদিন ম্যানেজারের টেবিলে দাড়িয়ে ওই বেটা ভুঁড়িওয়ালা কে ভিজিয়ে দিলে কেমন হয়। এমনটি ভাবতে ভাবতে চাপ বেড়ে যায় রুদ্রুর। আলের পাশে দাড়িয়ে সেও সবুজ কে আরো একটু তরতাজা করতে থাকে। আহা, কি শান্তি!

সবুজ দেখা আপাতত শেষ। বাড়ি ফিরতে হবে। তবে রুদ্র মনে মনে কিছু খুঁজছে। কিছু দিন আগে জয়নুল গ্যালারীতে সে এক চিত্রকলা প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিল। গ্রামের উপর আঁকা একটি ছবি খুব মনে ধরেছিল ওর। বৃষ্টির ভিতর কাঁদা দুপায়ে মেখে আবচ্ছায়া অর্ধ উলঙ্গ একটি মেয়ে বাড়ি ফিরছে। মন ভিজিয়ে দেওয়া দৃশ্য। এমন একটি মেয়ে যদি সে এখন দেখতে পেত! তাহলে চোখ আরো ভাল হয়ে যেত। এই ভাবনা চিন্তা করতে করতে এগুতে লাগলো রুদ্র। ঠিক সেই মুহূর্তে আম গাছের ডাল টপকে নেমে এলো একটি ধূসর রঙের ষোড়শী মেয়ে। গায়ের কালার দোঁয়াশ মাটির মত, মাথার চুলে তেলের কারখানা, দুটি বেণী দুদিকে কানের পাশ দিয়ে ঝুলছে। বাম কানের বেণীতে কচুরি পানার বেগুনী ফুল গোঁজা। শাড়িটা বুক থেকে পেঁচিয়ে পেছনে টেনে রাখা। গ্রামের মেয়েরা সাধারণত ব্লাউজ পরে না। এই মেয়েটা কেন যে পড়েছে তাই ও বুঝতে পারে না। জিগ্যেস করে দেখবে নাকি? মেয়েটির শাড়ির পুরাতন কোঁচড়ে অনেকগুলি কাঁচা আম। রুদ্র কে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে। দারুণ আপমানিত বোধ করছে রুদ্র। চলে যাবার সময় কোঁচড় থেকে টুপ করে একটি আম খসে গেল। বিষহীন একটি সবুজ আম। চারিদিকে সবুজ, মেয়েটা যদি সবুজ হত!

রুদ্র আবার চোখ বন্ধ করে। অফিসের ক্যাশ কাউন্টার। নবাগত একটি মেয়ে এসেছে। আলোকিত হয়ে গেছে পুরো অফিস। তাকে নিয়ে বিবাহিত ও অবিবাহিত দুই ধরণের মানুষের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল কাজ করছে। মনে হয় রুদ্রর মাঝে তার ঢেউ লেগেছে। কি অদ্ভুত সুন্দর নাম "অদিতি"। এমন সুন্দর নাম অনেক দিন শুনেনি ও। রুদ্র ভাবতে থাকে, ক্যাশ কর্নারে তাঁতের লাল পেড়ে একটি শাড়ি পরে বসে আছে অদিতি। গায়ে ব্লাউজ নেই। শাড়িটি সামনে থেকে পেঁচিয়ে সমস্ত বুক ঢেকে পিঠ লুকিয়ে রেখেছে। চুল বেণী করে
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানের মত দুদিকে ঝুলে আছে। নাকে নোলক, কানে সস্তা মাটির দুল। চোখে টানা কাজল। আচ্ছা, ঐ মেয়েটির কি চোখে কাজল ছিল? ক্যাশ কাউন্টারে বসে সবাইকে টাকার পরিবর্তে কাঁচা আম দিচ্ছে অদিতি। আর মাঝে মাঝে লবন দিয়ে চুকচুক করে কাঁচা আম খাচ্ছে। রুদ্রর মন ভাল থেকে আরো ভাল হতে থাকে। শরতের আকাশের চেয়ে বেশী নীল ওর স্বপ্নের ভেতরে। অদিতির জন্য কাঁচা আম নিয়ে যাবে। সাথে চোখ টানা কাজল।

এখান থেকে বাড়ি মিনিট পনের। এই সময় হোঁচট খেল সে। খুলে গেছে জুতোর তলা। ঢাকা শহর হলে লজ্জার শেষ থাকতো না, গ্রাম বলে বাঁচা। মাটির শীতলতা বেশ ভাল লাগছে, মনে হচ্ছে একটি শীতল সাপ ওর ভিতর উঠতে শুরু করেছে। পাশের মাঠে দুটি সাদা বলদ লাঙল টানছে জমিতে। ওদের শরীরে রোদ পরে আলোকিত করে রেখেছে চারিদিকে। যে কৃষক লাঙল ধরে রেখেছে তাকে চেনে রুদ্র, রহিম চাচা। ছোট বেলায় চাচার জমির আঁখ চুরি করে কত খেয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। রহিম চাচার শরীরটা দারুণ। জীম না করেও সিক্স প্যাক এবস। রোদে ঝিলিক দিচ্ছে চাচার শরীরের পেশী। শহরের মেদযুক্ত গাধাগুলোকে গ্রামে এনে রহিম চাচার আন্ডারে রেখে শরীর চর্চা করানো দরকার। রুদ্র আবার চোখ বন্ধ করে, ও দেখে মতিঝিল থেকে শাহবাগ, শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি গরুর গাড়ি চেপে বাড়ি ফিরছে। আর রাস্তার দুপাশে লম্বা লম্বা ঘাস গজিয়েছে। এবং চার পা'য়ালা টয়োটা, ভক্স ওয়াগন, পাজেরো দিয়ে হালচাষ করানো হচ্ছে। গাড়ির পেছনে লাঙল বেঁধে রহিম চাচা গাড়ি চালাচ্ছেন। চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না রুদ্রুর। যেন এভাবেই সব কিছু চলে আসছে আদিম কাল থেকে। দারুণ এনজয় করছে এই খেলা। অচেনা প্রকৃতি নতুন এক রুদ্রকে তার ভিতরে প্রতিস্থাপন করে দিচ্ছে আস্তে আস্তে।

ছয় দিন গ্রামে কাটিয়ে সবুজ ভক্ষণ করে, চাঁদের সাথে সখ্যতা, বুক পকেটে জোনাকির ঘর, জোছনা আর হাতে কাঁচা আম নিয়ে রুদ্রর শহর যাত্রা শুরু করে। মন বসে থাকতে চাই কাঁদা মাটিতে। পকেট বলে চল যাই। বাঁচতে হলে টাকা চাই, আর অদিতিও আছে। সেলিম চাচা, রহিম কাকা, মফিজ, বাবা, মা, ঐ মেঘ রঙা মেয়েটি তারা কি বেঁচে নেই? আসলে বেঁচে নেই শহরের প্রাণীগুলো। সকাল বেলা অর্ধেক ঘুমাতে ঘুমাতে অফিসে যাই। নিত্যদিন ঝগড়া করে বাস কনট্রাক্টরের সাথে, রিক্সায়ালার সাথে, লাঞ্ছিত হয় অফিসের বসের হাতে, যৌন হয়রানি হয় কারখানার মেয়েগুলো পশুদের হাতে। তারপর বিমর্ষ ও বিষণ্ণ দেহ, মন নিয়ে ফিরতে শুরু করে বাড়ি। সন্ধ্যার সময় যদি চাঁদ থেকে একবার এই শহরটাকে দেখা যেত, বোঝা যেত ক্লান্ত পিঁপড়ের মত মানুষগুলো হেঁটে চলেছে বাসে গরমের ভেতর ধাক্কা দিয়ে, দরজার পাশে অর্ধেক ঝুলে চামচিকার মত নীড়ে ফিরছে। অনেক দিন ভেবেছে রুদ্র একদিন এই মানুষেরা গ্রামে ফিরবে, শুয়ে নিদ্রাগত হবে মাটির কুঁড়েতে। কিছুদিন পর পর বৃষ্টির সমঃস্বরে চীৎকার শুনে নদীতে দল বেঁধে ঝাঁপ দিবে। কিন্তু শহরে মানুষগুলা গ্রামগুলোকে প্রমোদস্থান বানাতে ব্যস্ত। নাগরিক সুবিধা নিয়ে আসতে চাইছে। আমূল বদলে দিতে চাইছে গ্রামগুলো। চালাক মানুষ গুলো চালাক থেকে গেল। সরল হতে পারছে না, পারছে না শহর কে গ্রাম বানাতে।

রুদ্র ফের নৌকায় উঠে। চোখ বন্ধ করে, বাতাসের গন্ধ টেনে নেয় হৃদপিণ্ড ভরে। ও বুঝে গিয়েছে বেঁচে থাকার আসল রসদ এই গন্ধ। এখানে ঘামের গন্ধে মাটি লেগে থাকে। আর শহরে ঘামের গন্ধে মুতের গন্ধ ভেসে আসে। তাইতো বডি স্প্রের এত চাহিদা ওখানে। নদীতে চোখ ফেরাই সে। শীতল সোকালী বাতাসে মুদে যায় নেত্র দুখানি। কল্পনায় সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেনের চালকের সিটে। বিশাল সেই যান্ত্রিক দানব নিষ্ঠুর থাবা দিয়ে পুরো ঢাকা শহরকে ফেলে দিচ্ছে এই উর্বশী নদীতে। বাতাসে আছড়ে ফেলছে নির্দয় দানব। আর রুদ্র চিলের মত সারা আকাশ, সারা নদী চীৎকার করছে। নদীর ভিতর ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে শত শত জানালা, দরোজা, কাঁচ, এলম্যুনিয়াম, কম্পিউটার, ব্যাংকের ভোল্ট, টেবিল, চেয়ার প্রভৃতি। নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছে রহিম কাকা, মফিজ, মেঘ রঙা মেয়েটি আর অদিতি। চোখ ভরে উপচে পরছে মুগ্ধতা আর কৃতজ্ঞতা। বেশি মজা পাচ্ছে অদিতি। কারন ও আনন্দে হাততালি দিচ্ছে বারবার। আর মেঘ রঙা মেয়েটি অদিতিকে বিস্ময় ভরা চোখে দেখছে, মনে হয় এমন সুন্দর মেয়ে সে জীবনে আর দেখেনি। অদিতিকে দেখে ছোটবেলায় সিনেমা দেখার কথা মনে হয় রুদ্রের। সারা গ্রামে একটি টেলিভিশন ছিল, শুক্রবারে দুপুরে সবাই একসাথে বসে সিনেমা দেখত। ছোটরা সামনে বসতো মাটিতে আর বড়রা পেছনে চেয়ার বা মাদুরে। নায়ক যখন ভিলেন কে পিটুনি দিত, আমরা ছোটরা আনন্দে হাততালি দিতাম। অদিতিকে দেখে সেরকম মনে হল রুদ্রর। তাই রুদ্র ওর কাল্পনিক হাতে, পকেটে, ব্রিফকেসে, শপিং ব্যাগে, মানিব্যাগে নিয়ে যাচ্ছে ধানের বীজ, সবুজ আম আর অদ্ভুত দোঁয়াশ মাটি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.