![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়তে এবং লিখতে ভাল লাগে, ভালবাসি কবিতা খুব বেশি। আর আছে প্রচণ্ড ছবি আকার নেশা।
[]
দরজা এখনো খোলা। স্বাতি চলে গেছে কিছুক্ষণ হল। সুব্রত ওপাশের ঘরে ঘুমিয়ে। সুব্রত তাদের পাঁচ বছরের ছেলে। অমিত ধীরে ধীরে হুইল চেয়ারের চাকা হাত দিয়ে ঠেলে এগিয়ে গেল। আটকে দিল দরজা। টিভিতে নিউজ চলছে রাত দশটার। সে দিকে কি মনযোগ আছে অমিতের ? না, সে অন্য কিছু ভাবছে। আজ ক’দিন ধরে ভাবছে। কিন্তু কিভাবে সেটা সম্ভব ঠিক করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। যে করেই হোক আজ রাতেই করতে হবে। টিভির ভলিউম আরেকটু কমিয়ে দেয়।
রাতের খাবার খাওয়া শেষ। বারান্দায় বসে সিগারেট ফুঁকছে অমিত। আজ ভরা পূর্ণিমা। চারিদিকে অসহ্য নীরবতা। তার মাঝে মাথা খারাপের এই জোছনা। কিন্তু গত কয়েক মাস এই পূর্ণিমা জোছনা টানে না তাকে। এখন সেই কবিতাটা মনে পরছে খুব বেশী, “যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ / মরিবার হল তার সাধ”। পারফেক্ট কবিতা এই সময়। হুমায়ন আহমেদের হিমু হইতে ইচ্ছে করতো এক সময় ভরা জোছনায়। আজ আর করে না। প্রতিদিন রাতের খাবার খেয়ে অমিত একটি সিগারেট টানে। আজ দুটো টানবে, স্পেশাল দিন। কবে আবার খেতে পারবে তার কোন ঠিক আছে নাকি?
সিগারেট ফেলে অমিত ফিরে আসে শোবার ঘরে। বিছানার পাশ থেকে একটি কাপড়ের থলে থেকে বের করে আনে লাইলনের শক্ত পোক্ত দড়ি। দিন পাঁচেক আগে অফিসের কলিক বন্ধু হাসান কে দিয়ে কিনিয়ে এনেছে। হাসানের একটি ভাল গুণ যে, সে কিছু জানতে চাই না। না জানার মাঝে যে সুখ চরমভাবে নিহিত এটা হাসান কে না দেখলে বোঝা মুশকিল। পাঁটের দড়ির উপর বিশ্বাস করা কঠিন। গত পাঁচ দিন স্বাতি যখন কাজের জন্য বাইরে যাই আর সুব্রত ঘুমিয়ে থাকে, তখন অমিত সিলিং এর দিকে দড়ি ছুঁড়ে মারে। পাঁচ দিন অনবরত সে সিলিং এ দড়ি ছুঁড়ছে। ওর মন বলছে আজ হবে আজ হবেই।
বছর চারেক আগে অফিসের কাজে শহরের বাইরে যেতে হয়েছিল। ফেরার পথে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজেছিল সারা দেশ। রাঙামাটির মাটির ঢল পথে আছড়ে পড়েছিল। সামনের সিটে বসে ছিল অমিত। ড্রাইভারের নেশা পেয়েছিল তারও ঘণ্টা দুয়েক আগে। গিলেছিল পাহাড়ি মদ। রাতের অন্ধকারে ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি সে। পিচ্ছিল কাঁদা রাস্তাতে বৃষ্টির কারণে গাড়ি চালাতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছিল। আচমকা এক পাহাড়ি সামনে চলে আসলো, ব্রেক কষলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে চালক। গাড়ি ধাক্কা মারে স্যাঁতস্যাঁতে একটি গাছে। সামনের কাঁচ ছিটকে বাইরে পরে অমিত। কোমরে আঘাত লাগে মারাত্মক। ফিরে আসে বাকিটুকু শুধু মর্মান্তিক জীবনের বাজেয়াপ্ত দলিল। চাকরি চলে যায়। পঙ্গু অমিত হুইল চেয়ার সম্বল করে ফিরে আসে সংসারে। যা কিছু সম্বল ছিল খরচ হয়ে গেছে গত চার বছরের চিকিৎসায়। তারও দু’বছর আগে বিয়ে হয় স্বাতির সাথে। বছর পরে ঘরে আসে সুব্রত। তাদের ছেলে। ছেলেটার চোখের অসুখ সেই তবে থেকে শুরু। দিন দিন মোটা হচ্ছে চশমার গ্লাস। হয়তো এভাবেই অন্ধ হয়ে যাবে। স্বাতি তেমন লেখাপড়া জানে না। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। মায়ের কথা ছিল বেশি শিক্ষিত মেয়েরা সংসার করতে পারে না। এখন স্বাতিই টেনে নিয়ে যাচ্ছে সংসার অমিতের।
অমিত আবার সিগারেট ধরিয়েছে। আজ একটু বেশি নেশাতে পেয়েছে ওকে। চাঁদের সুবর্ণ আলো ভাসিয়ে দিচ্ছে ওর বারান্দা। এত শূন্যতা চারিদিকে। আচ্ছা স্বাতি কি করছে এখন? সে কি এখনো দাড়িয়ে আছে ল্যাম্পপোস্ট এর গা ঘেঁষে, নাকি চলে গেছে কোন হোটেলে? প্রথম দিকে কাজে যাবার আগে অনেকক্ষণ কাঁদত। চোখ ফুলে উঠত। যাবার সময় আমার দিকে তাকাতো না। অন্য দিকে মুখ রেখে চলে যেত। আমিও তাকাতাম না ওর দিকে। সেই প্রথম বার বুঝলাম হীনমন্যতা কি? আজকাল আর কাঁদে না স্বাতি। সয়ে গেছে সব। আমার সয়ে যেতে যেন মানা। ইদানিং যাবার আগে জানতে চাই কিছু লাগবে কিনা? টিভির দিকে তাকিয়ে শুধু বলি তারাতারি ফিরো। প্রতিদিন এভাবেই মরতে আর ভাল লাগে না। না মারতে স্বাতিকে।
সেদিন সকালে রান্না করার সময় স্বাতি গুনগুণ করে গান গাচ্ছিল , “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”। দিন দিন আমার ওষুধের দাম বাড়ছে। ওটার জন্য মনে হয় স্বাতিকে ওভার টাইম করতে হচ্ছে। তাই দেরি করে ফেরে ইদানিং। আচ্ছা আমার মত কি স্বাতিও চাঁদ দেখে জোছনা দেখে, ওর মুখ কি ভেসে যাচ্ছে এখন সুবর্ণ আলোতে?
ফিরে আসে অমিত। রাতের শেষ ওষুধ খেয়ে চেয়ারেই শুয়ে পরে। শোবার আগে দেখে আসে সুব্রত কে। ওর জানালা দিয়ে উড়ে আসা বাতাসের সাথে ভেসে আসছে চাঁদের অদ্ভুত আলো। বিছানায় শুয়ে আছে যেন এক রূপকথার রাজপুত্তুর। খুব ইচ্ছে করছে ওর কপালে একটি চুমু দিতে। মাথায় হাত বুলিয়ে সুর ভাঙ্গা গলায় বলতে, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”।
দড়ির গোছা লুকিয়ে রাখে গোপনতম থলেতে। আগামীকাল রাতে আবার দড়ি সিলিং খেলা শুরু করবে অমিত। তাকে জিততেই হবে এই খেলাতে। জিততেই হবে।
_[ বনী ইসরাইল ]
১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫
বনী ইসরাইলে\'র ব্লগ বলেছেন: খুব ধন্যবাদ ভাই সকাল । সাথে থাকুন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৬
সকাল হাসান বলেছেন: ভালই লিখেন! চালিয়ে যান!