নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহসানুল কবির বরন

নিজের সম্পর্কে এখনও জানার চেষ্টা করছি...

আহসানুল কবির বরন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:২৮

(তেমন কিছু চিন্তা না করে , মাথায় যা আসল, হুট করে লিখে ফেলা একটা গল্প। শুধুমাত্র নিজের ভাল লাগার কারনেই লেখা। অনেক সময়ই এমন অনেক কথা মাথায় ভিড় জমায়, সেগুলা হুট করে আসে, হুট করে চলেও যায়, তাই ঠিক করলাম এগুলাকে একটু কিবোর্ড বন্দি করে রাখা দরকার। তারই প্রথম ফলাফল এই গল্প। যেহেতু কোন আগামাথা চিন্তা না করে লিখে ফেলা অত্যন্ত সাদামাটা একটা গল্প, এবং এটি কেবলমাত্র তার প্রথম পর্ব(যার পরবর্তী পর্ব নিজেই জানিনা কি লিখব), কাজেই ধৈর্য ধরে পুরোটুকু পড়ার পর কারো যদি মেজাজ খারাপ হয়ে যায় , তাহলে আমি সত্যিই দুঃখিত। :( )





রুদ্রর ফোন। । “হ্যালো...

এই যে নন্দিনী ম্যাডাম, কি করছেন??”

চিরচেনা সেই হাসি। হাসল নন্দিনীও, “তেমন কিছু না, ঘর গোছাই, তো মশাই, এই অসময়ে ?? আপনার না এখন ক্লাসে থাকার কথা? এখন কেন ফোন দিয়েছেন শুনি??”

“আমার অসময় গুলোকে একটু রঙচং দিতেই তো আপনাকে ফোন করা। ক্লাসের বোরিং লেকচারে সময়গুলো জলাঞ্জলি দেয়ার কোন মানে হয়, বলেন??”

খানিকটা রাগ করে নন্দিনী “রুদ্র, তুমি আজকেও ক্লাসে যাওনি! মনে হচ্ছে ঘুম থেকেও উঠেছ সবেমাত্র! একটু মনোযোগ দিলেই না ক্লাস ভাল লাগে রুদ্র। সেই সুযোগটুকু দিয়েছ কখনো ??”

“মনোযোগের সহিত ক্লাস পরীক্ষা দিয়ে এত তাড়াতাড়ি এই চমৎকার ছাত্রজীবনটা শেষ করে ফেলার কোন মানে হয়, বল? আমার ছাত্রজীবনটা না হয় একটু লম্বাই হল। তবে আমার লম্বা ছাত্রজীবনে আমি একটা বড় সমস্যায় পড়ে যাব!!”

“কি সেটা শুনি??”

“আপনি তো আর আমার জন্য বসে থাকবেন না, আপনি ঠিকই যথাসময়ে পড়াশোনা শেষ করে আপনার কর্মজীবন-সংসারজীবনে পদার্পণ করবেন। তখন তো আমি একা হয়ে যাব।”

একটু চুপ করে বলে নন্দিনী, “রুদ্র, পড়াশোনাটা ঠিকভাবে করলে হয়না?? তাহলে তো আমরা একসাথেই বের হব। তখন আর তোমাকে একা থাকতে হবেনা রুদ্র!”

“আচ্ছা , সে দেখা যাবে, এখন এইসব বাদ দাও তো। ”

ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে নন্দিনী, “আচ্ছা, যাও, দিলাম বাদ। এখন বলেন, আর কি অবস্থা আপনার??”

“অবস্থা হল, একটা গল্প লেখার চেষ্টা করছি।”

“গল্প?? কবি/গীতিকার রুদ্র কি গল্পকারও হয়ে যাচ্ছেন??”

“সে যাই বল। হুট করে ইচ্ছে হল, লিখা শুরু করলাম। অবশ্য এখন পর্যন্ত কেবল দুই পেইজ লিখেছি।”

“বুঝলাম, আপনার তো হুট করে ইচ্ছা আসে, আবার হুট করে সেটা চলেও যায়!”

“শোন শোন, আমার গল্পের যে নায়ক, সে খুব সাধাসিধা টাইপের, এলোমেলো –ছন্নছাড়া জীবন, জীবনের কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সে কখনো চিন্তা করেনা। সে বিশ্বাস করে, ছোট্ট এই জীবনে, পড়াশোনা শেষে চাকরি বাকরি করে টাকা পয়সা কামানো ছাড়া আরও অনেক কিছুই করার আছে।”

“হাহ হাহ। তোমার গল্পের নায়ক তো তোমারই কার্বন কপি মনে হচ্ছে! নিজেরই আত্মজীবনী লিখছ নাকি??”

“নাহ, সেভাবে কিছু চিন্তা করে লিখতে বসিনি। কিন্তু লিখার পরে আমার নিজেরও মনে হল, নিজের সাথেই মিলে গেছে অনেকটা! আসলে কোন চরিত্র তৈরি করতে গেলেই আমার বাস্তব জীবনের আশেপাশের কোন চরিত্রের সাথেই তা মিলে যায়!!”

“হুম, বুঝলাম, এবার গল্পের নায়িকার কথা বল।”

“নায়িকা?? নায়িকার কথা এখনো লিখিনি। ঠিক কিভাবে তাকে উপস্থাপন করব, বুঝতে পারছিনা।”

“ও...”

“কি হল, চুপ হয়ে গেলা যে??”

“না, জানতে ইচ্ছা করছিল, তোমার গল্পের মেয়েটাকে তুমি কার চরিত্রের সাথে মিলিয়ে লিখেছ??”

হেসে বলে রুদ্র “আমি যদি পারতাম, তোমাকে নিয়ে বিশাল কোন উপন্যাস লিখে ফেলতাম, কিন্তু তোমার চরিত্র নিয়ে লিখতে আমি ভয় পাই নন্দিনী! আমার ভয় হয়, তোমাকে আমি ঠিকভাবে আঁকতে পারবনা! হয়ত তোমার সবটুকু সেই চরিত্রে আনতে পারবনা!”

“আমার সবটুকু, তোমার মত, আর কে এতটা ভাল করে চেনে রুদ্র??”

“তবুও...” হাসে রুদ্র “শোন, অন্ততপক্ষে, যেই গল্পের নায়ক আমার টাইপের, সে গল্পে নায়িকা তোমাকে দিলে মানুষ বিরক্ত হবে।”

“কেন?? বিরক্ত হবে কেন??”

“তোমার মত একজন ভাল স্টুডেন্ট, ভাল মানুষ, পারফেক্ট লেডির পাশে আমার মত উড়নচণ্ডীকে তো মানাবেনা! মানুষ বলবে, ‘এই মেয়ের পাশে একজন ইনটেলিজেন্ট, স্মার্ট ছেলের প্রয়োজন, সেটা এই ছেলেকে দিয়ে হবেনা, উঁহু! নেভার!”

“চুপ রুদ্র। তুমি কথা বেশি বল”

“আচ্ছা, ঠিক আছে, চুপ।”

“জীবনের গল্পটাই কি সবচেয়ে বড় গল্প নয় রুদ্র?? এই গল্পে কি আমরা পাশাপাশি আছি না , বল??”

“হুম, তা অবশ্য ঠিক।”

“তাহলে?? মানুষকে খাওয়ানোর জন্য গল্প লিখার দরকার কি বল??”

“হুম, সেটা ঠিক বলেছ...”





প্রথম যখন নন্দিনীর সাথে দেখা হয়েছিল, মেয়েটাকে আহামরি সুন্দরী বা আকর্ষণীয় কিছু মনে হয়নি। শুধু একটা জিনিসই মনে হয়েছিল, এই মেয়েটা মেঘের মত। এই মেঘ ধীরে ধীরে আমার আকাশ ছেয়ে গেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে রুদ্র, এই মেয়েটা তাকে যত বেশি ভালবাসে, বিশ্বাস করে, রুদ্র মাঝে মাঝে তত বেশি ভয় পায়! ভয় হয়, তার বিশ্বাস আর ভালবাসার সন্মান টুকু সে রাখতে পারবে তো? পারবে তো সারাজীবন মেঘকে তার আকাশে ধরে রাখতে?? নিজের এলোমেলো, ভবঘুরে জীবনে নন্দিনীকে তাই মাঝে মাঝে তার জন্য সঠিক মনে হয়না। মনে হয়, এই মেঘের মত মেয়েটা তার জন্য নয়। হয়ত শুধু শুধুই তাকে কষ্ট দেয়া হবে। কেমন করে সে মেঘকে কষ্ট দেবে? মুখে কয়েক ফোঁটা পানির ছিটা লাগায় হঠাৎ চমকে ওঠে রুদ্র। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রুদ্র খেয়ালই করেনি, আকাশ মেঘ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। মনটা ভাল হয়ে যায় রুদ্রর। বৃষ্টি তার অসম্ভব প্রিয়। ফোনটা বের করে ডায়াল করে নন্দিনী কে।

“কেমন আছ মেঘ?”

হাসে নন্দিনী, “ভাল । তুমি? খুব খুশি??”

“তাতো বটেই। আচ্ছা, চলনা, একসাথে বৃষ্টি দেখি।”

রুদ্রর কথা ফেলার মত শক্তি নন্দিনীর নেই। এই বৃষ্টিপাগল ছেলেটার সাথে বৃষ্টি দেখা, বৃষ্টিতে ভেজার লোভ সামলানোর মত ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা তাকে দেয়নি!



রাস্তার পাশে একটা ছোট্ট টং দোকান। ধোঁয়া ওঠা চা। বাইরে ঝম ঝম বৃষ্টি। রুদ্রর কাঁধে মাথা রেখে বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকায় নন্দিনী। এমন ঝড়বৃষ্টির দিনে একটা পাগলাটে ছেলের সাথে সে বাইরে কোথায় বসে চা খাবে আর বৃষ্টি দেখবে, এটা কিছুদিন আগেও তার কল্পনাতে ছিলনা। এইত কিছুদিন আগেও তার জীবন ছিল একটা নির্দিষ্ট ছকে বাধা, যার একটু অন্যথা হলেই সে বিরক্ত হয়ে নিজেকে শাসন করত। এই ছেলেটার সাথে পরিচয় হওয়ার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিভাবে জানি অনেক কিছু বদলে গেছে! এই ছেলেটা তাকে শিখিয়েছে, মাঝে মাঝে জীবনে অর্থহীন অনেক কাজ করতে হয়। নিজের মনের চাহিদা আর শখের বশে নিয়মের বাইরেও অনেক কিছু করা যায়। এই ছেলেটার সাথে সে সবকিছু ভুলে সারাদিন বসে বসে বৃষ্টি দেখতে পারবে! ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট কোন কিছুর চিন্তাই তার মাথায় আসবেনা। পরম শান্তিতে নন্দিনী চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ করে তার কাছে জীবনটাকে অনেক বেশি সহজ আর সুন্দর মনে হয়, যে জীবনে কোন জটিলতা নেই, দুশ্চিন্তা নাই, অভিনয় নেই, আছে শুধু একটা সহজ সরল পাগলাটে ছেলে, যে তাকে জীবনের নানা রঙের গল্প শোনায়, আর মুগ্ধ হয়ে সে সেই গল্প শোনে!



রুদ্র তার কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর আবার তাকায় বাইরে বৃষ্টির দিকে। তার হাতের চায়ের কাপে এক দুই ফোঁটা বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। রুদ্র সেই চায়ে চুমুক দেয়, আর অপলক তাকিয়ে থাকে বৃষ্টির দিকে। রুদ্রর সাদামাটা জীবনে এই মেয়েটাই তার একমাত্র রঙ! যে মেয়েটার চোখে সে আকাশ দেখতে পায়, সে যখন তার পাশে বসে থাকে, তখন নিজের অতি সাধারন জীবনটাকে তার হঠাৎ করেই অনেক মূল্যবান মনে হয়। চেনা নগরীর পিচ ঢালা রাস্তায় বৃষ্টির পড়ার সাধারন শব্দ তার কাছে অসাধারণ মনে হয়!



চলবে.......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.