নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহসানুল কবির বরন

নিজের সম্পর্কে এখনও জানার চেষ্টা করছি...

আহসানুল কবির বরন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

২য় গল্পঃ অভিমান



(এই গল্পটাও যথারীতি একটা নির্ঘুম রাতের ফসল! যদিও গল্পের পটভূমি মাথায় এসেছিল বেশ কিছুদিন আগে, 'কম্পাইলার' পরীক্ষা ড্রপ দেবার দিন সকালে, পরীক্ষার ৩ ঘণ্টা আগে:-p । আগের মতই এই গল্পটাও কিছু এলেবেলে চিন্তার ফলাফল। কাজেই পুরোটা পড়বার পর যদি কারো মেজাজ খারাপ হয়ে মনে হয়, এসব ছাইপাঁশ বারবার লেখার কোন মানে আছ নাকি!!, তাদের কাছে আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, মূল্যবান সময় নষ্ট করবার জন্য :( .



'নীল' গল্পের প্রতিটা পর্ব কে আমি 'পর্ব' উল্লেখ না করে 'গল্প' উল্লেখ করছি, কারন 'নীল' এর প্রতিটা পর্বে রুদ্র আর নন্দিনীর জীবনের ছোট ছোট কিছু গল্প বলা হবে। তাই 'নীল' এর সব গল্প মিলেই আসলে দুটো সম্পূর্ণ জীবনের গল্প।



১ম গল্পটা লেখার পর আমার এক ছোট ভাই (Ariful Islam Prottoy), অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল দ্বিতীয় গল্পের জন্য। আমাকে সে কয়েকবার জিজ্ঞেস ও করেছে কবে আমার নির্ঘুম রাত আসবে এবং আমি ২য় গল্পটা লিখব। আমি এই গল্পটা তাই "প্রত্যয়" কে উৎসর্গ করলাম। জানিনা, এটা তার কেমন লাগবে, তবে আমি এই গল্পটা, প্রথম পর্ব থেকে এখন পর্যন্ত যা লিখেছি, পুরোটাই পুরোপুরি সেলফ স্যাটিসফেকশনের জন্য, তারপরও আমার চারপাশের কিছু কিছু মানুষের যে গল্পটা ভাল লেগেছ, সেটা নিঃসন্দেহে আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। :) )



নন্দিনীর ফোন। বিস্তৃত হাসিমুখে ফোনটা ধরে রুদ্র,

"এই যে মিস মেঘবতী নন্দিনী, আমি তো মনে মনে আপনাকেই খুঁজছিলাম!”

”তাই নাকি?? আমার বিশাল সৌভাগ্য! তো কি কারনে,শুনি??”

“নতুন একটা গান শুনলাম। বাপ্পা দার। লিরিক্স টা অসাধারণ। কম্পোজিশন টাও অস্থির! তোমাকে না শুনিয়ে শান্তি পাচ্ছিলাম না! কিন্তু যখন দরকার, তখন তো ফোনে টাকা থাকবেনা, এটাই হচ্ছে নিয়ম, তাই তোমাকে ফোন দিতেও পারছিলামনা। ভাল হয়েছে তুমি ফোন করেছ। “

“হুম। বুঝলাম, গান শুনব, তার আগে বল, তোমার পড়াশোনা কতদূর?? কালকে না তোমার ফাইনাল।“

“ও, আপনি তাহলে আমাকে এই কারনে ফোন দিয়েছেন??”

“জী জনাব। আপনার পড়াশোনার কতদূর কি অগ্রগতি হল, সেটা জানবার জন্য।।"

“আরে বাদ দাও তো, এত পড়াশোনা করে কে কবে কি করেছে, বল তো, বাদ দাও, বাদ দাও।"

“মানে??”

“শোন, এত সুন্দর একটা মিউজিক মাথায় করে বই নিয়ে বসাটা এক ধরনের অন্যায়!!”

“রুদ্র, ব্যাপারটা কি বলতো?? পরীক্ষার আগে তোমার এহেন মতিগতি কিন্তু সুবিধার না।।“

“বললাম না, এত সুন্দর একটা মিউজিক মাথায় করে....”

“রুদ্র, কালকে তোমার ফাইনাল পরীক্ষা। সবসময় ফাইজলামি কিন্তু ভাল লাগেনা! তুমি কি পরীক্ষা দিবানা??” শীতল কণ্ঠে বলে নন্দিনী।

“দিব তো! মানে... দেখি আর কি...আসলে কালকের পরীক্ষাটা দিয়ে মনে হয় খুব একটা লাভ হবেনা। খুব ই ত্যারা একটা কোর্স! আগে থেকে পড়াও হয়নি তেমন। পাস করতে পারব বলে মনে হয়না!...”

“বাহহ! তোমার মনে হচ্ছে তুমি পাস করতে পারবানা, তাই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে গান শোনা শুরু করলা???”

“না মানে... যেহেতু পরীক্ষা টা দিয়ে লাভ হবেনা” মিনমিন করে বলে রুদ্র, “কাজেই এখন মন খারাপ করে কান্নকাটি করে কি লাভ, বল?? এর চেয়ে গান শোনা ভাল না??”

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে নন্দিনী, “রুদ্র, তুমি এখানে একা থাক, তোমার কোন গার্জিয়ান এখানে নাই...”

“সেই ভূমিকা তো তুমি পালন করছ...”

“না, আমি সেই ভুমিকা পালন করছিনা! করতে পারছিনা! কারন তুমি আমার কোন কথাই শোননা! একটু সিরিয়াস হও রুদ্র, সারাটা জীবন এরকম ফাজলামি দিয়ে পার করা যায়না। এই যে তুমি বাসা থেকে এত দূরে কষ্ট করে আছ...”

“কষ্ট করে আছি কে বলল?? এই যে রাত ২ টা সময় ইচ্ছা হলেই টঙ্গে যেয়ে চা খেয়ে আসি, বাসায় থাকলে কিন্তু সেটা পারতাম না! ”

“রাত ২ টায় টঙ্গে চা খেলেই জীবনটা আনন্দের হয়ে যায়না রুদ্র। আমরা যারা বাইরে থাকি, তারা যে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে থাকি, সেটা আমরা সবাই কিন্তু জানি। তাই চেষ্টা করা উচিত, সেই কষ্টটা যেন সার্থক হয়! জীবনটা অনেক কঠিন রুদ্র। এই জীবনে উপড়ে ওঠার জন্য চেষ্টা করতে হয়, স্যাক্রিফাইস করতে হয়। ভাল না লাগলেই বই ফেলে দিয়ে গান শোনা শুরু করলাম – এরকম স্ব ইচ্ছায় জীবন চলেনা। তুমি নিজেও জান, কালকের পরীক্ষাটা না দিলে পরে এই কোর্স তুলতে তোমার কত সমস্যায় পড়তে হবে! আজকে রাতটা একটু কষ্ট করে পড়াশোনা করে দেখ, নিশ্চই তুমি পারবা। আমি জানি। কারন সেই ট্যালেন্ট তোমার মধ্যে আছে। একটু চেষ্টা কর রুদ্র, প্লিজ! এভাবে সব ছেড়ে দিয়োনা!”



চুপ করে থাকে রুদ্র। “কি হল, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?”

“আচ্ছা যাও, চেষ্টা করব! সকাল পর্যন্ত পড়ে যতটুকু করা যায় আর কি!!”

“সত্যি তো কথা দিচ্ছ??”

হাসতে হাসতে বলে রুদ্র, “সত্যি বোঝানর জন্য এখন কি করতে হবে ম্যাডাম?? আপনার গা ছুঁয়ে কসম কাটব?? কিন্তু সেটা তো এখান থেকে সম্ভব না, তাহলে বাইরে আসেন, এক কাপ চা খেয়েও আসি, সাথে আপনার গা ছুঁয়ে কসম ও কেটে আসি!”

“জী না। আপনাকে কসম কাটতে হবেনা। আপনি এখন ফোন রেখে বই নিয়ে বসেন। তাহলেই আমি খুশি!”

“আচ্ছা, ঠিক আছে, কিন্তু একটা শর্ত আছে, আমার সাথে সাথে আপনাকেও জেগে থাকতে হবে। এস এম এস দিলে আনসার দিতে হবে।”

“কবে আপনার জন্য আমি জেগে থাকিনি বলেন?? এসএমএস দিব যান।”

“ঠিক আছে।”

ফোন টা রেখে রুদ্র কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে ভাবে কিছুক্ষণ। কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।

তারপর মনিটর টা অফ করে দিয়ে পাশে আধা বন্ধ করে রাখা বইটা খুলে বসে।



রাত ৪ টা।

বইটা পাশে আধা বন্ধ করে রেখে ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবতে থাকে রুদ্র, মাকড়শা গুলো এখনো জালের মধ্যে নড়াচড়া করছে। এদেরও কি রাতে ঘুম পায়না নাকি?? নাহ,তার সাথে থাকতে থাকতে এদেরও স্বভাব খারাপ হয়ে গেছে! পাশে রেখে দেয়া বইটার দিকে তাকায় আবার। নাহহ, যত রাত যাচ্ছে,আশার আলো নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে! পাশ নাম্বার উঠবে বলে মনে হয়না! তবুও চেষ্টা করবে, দেখা যাক কি হয়। একটু গান শুনে আসা যাক। মনিটর টা ওপেন করে পিসির প্লে লিস্টে আবারো বাপ্পার গানটা প্লে করে রুদ্র। এই নিয়ে নয়বার শুনছে। গানটা মাথায় ঢুকে গেছে , আজকে রাতে আর বের হবেনা। নন্দিনী কে এস এম এস দিয়েছে দশ মিনিট হয়ে গেল, রিপ্লাই নাই। বেচারি সম্ভবত ঘুমিয়ে গেছে। সারাদিন, ক্লাস, এসাইনমেণ্ট, টিউশনির ধকলে তবু মেয়েটা তার জন্য জেগে থেকেছে মাঝরাত পর্যন্ত। মাঝে মাঝে রুদ্রর নিজেকে খুব স্বার্থপর মণে হয়। কিন্তু কী করবে?? তার প্রাত্যহিক জীবনে এই মেয়েটা কেমন করে জানি মিশে গেছে। পরীক্ষার আগের ভয়াবহ কোন রাত, অসাধারণ কোন বৃষ্টির দিন, ভাললাগা চমৎকার কোন মিউজিক – এসবের কিছুই রুদ্র, নন্দিনী কে ছাড়া কল্পনা করতে পারেনা।



ভোর ৬ টা

রুদ্রর টেবিলের উপড়ে বইটা পুরোপুরি বন্ধ করে একপাশে রেখে দেয়া (আগামী বছরের জন্য??)! ব্যালকনিতে দাড়িয়ে সকাল হওয়া দেখছে রুদ্র। পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর দৃশ্য মনে হয় সকাল হওয়ার দৃশ্য। যখন সকাল হতে শুরু করে তখন চারপাশটা হঠাৎ করে এত সুন্দর আর সতেজ হয়ে ওঠে, দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। হঠাৎ করে মনে হয়, এই জীবনে কোন হতাশা নেই, দুঃখ নেই, অভিনয় নেই, অভাব নেই! আছে ভালবাসা, শুধুই ভালবাসা!

মুগ্ধ হয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে রুদ্র। কিন্তু পর মুহূর্তেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। হাতের মুঠোফোনটা বের করে মেসেজ টাইপ করতে শুরু করে,



“নন্দিনী, জানি, এখন ঘুমিয়ে আছ। ঘুমন্ত মানুষকে চিঠি লেখার মধ্যে একটা আলাদা মজা আছে। এই যে আমি এখন তোমাকে লিখছি, তুমি সেটা জানতেও পারছনা, আবার ঘুম ভেঙ্গে যখন তুমি আমাকে লিখবে, তখন আমি বুঝতেও পারবনা, কারন তখন আমি থাকব গভীর ঘুমে! আমি অনেক সরি নন্দিনী। তুমি প্রতি সেমিস্টারেই আমাকে খুব করে বুঝাও ভালমত পরীক্ষা দেয়ার জন্য। কিন্তু তবুও আমি ১-২ টা পরীক্ষা দেইনা শেষ পর্যন্ত। আসলে প্রিপারেশন খারাপ থাকলে আমার কোনভাবেই পরীক্ষা দিতে ইচ্ছে করেনা। হয়ত আশেপাশের কিছু সাহায্য নিয়ে আমি পাশ করে ফেলতে পারি, কিন্তু আমার আসলে এভাবে পাশ করে যেতে ভাল লাগেনা নন্দিনী। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো মেঘ। তোমাকে দেয়া এই কথাটা আমি রাখতে পারলাম না। ঘুমে আমার চোখ জড়িয়ে আসছে। হয়ত আর ৩ ঘণ্টা খুব করে পড়লে আমি পাশ করে ফেলব,কিন্ত আমার আসলে একেবারেই ইচ্ছ করছেনা,কি করব, বল?? একেবারে অনিচ্ছা নিয়ে যে আমি কিছু করতে পারিনা! শুভ সকাল মেঘ!”



সকাল ৯ টা

রুদ্রর ফোনটা বেজেই যাচ্ছে... একবার, দুইবার, তিনবার...

আর রুদ্র?? রুদ্র দেখছে, সে একটা মাঠে ক্রিকেট ব্যাট হাতে দাড়িয়ে আছে। ছোট্ট মাঠের চারপাশ কাশবন দিয়ে ঘেরা। অপাশ থেকে কেউ একজন বল করছে অনেক দূর থেকে। মাঠে আর কেউ নাই। রুদ্র বল লক্ষ করে সজোরে ব্যাট দিয়ে হিট করে। নিশ্চিত, বল মাঠ পার হয়ে কাশবনের ভেতরে ঢুকে যাবে। কিন্তু হঠাৎ রুদ্র খেয়াল করে, মাঠের প্রায় শেষ প্রান্তে একটা বাচ্চা ছেলে বলটা ধরে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। রুদ্র অবাক হয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে যতই অবাক হচ্ছে, বাচ্চাটা ততই হাসছে, কেমন যেন একধরনের তিরস্কার সূচক হাসি! কি আশ্চর্য!! বাচ্চাটা হাসছে আর ধীরে ধীরে কাশবনের ভেতর মিশে যাচ্ছে! কি আশ্চর্য!!



সন্ধ্যা ৬ টা ৩০

ভার্সিটি গেইটে টঙ্গে বসে আছে রুদ্র। হাতে চায়ের কাপ। উদাস হয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ দৃষ্টি আটকে গেল, নন্দিনী রিকশা থেকে নেমে লাইব্রেরির পাশের দোকানটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রুদ্র তাড়াতাড়ি চা শেষ করে উঠে দাঁড়াল। চায়ের দাম দিয়ে দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎ নন্দিনীর চোখ পড়ল রুদ্রর দিকে। চোখমুখ শক্ত করে ফেলল! “এই নন্দিনী, কি ব্যাপার, সারাদিন ফোন ধরলানা, কোথায় ছিলা?? কি হয়েছে??” নন্দিনী একবার তাকাল শুধু রুদ্রর দিকে, তারপর কিছু না বলে এগিয়ে গেল, গেইটের দিকে। রুদ্র পেছন পেছন গেল। একটা রিক্সা ঠিক করে উঠে পড়ল নন্দিনী। রুদ্রও পেছন পেছন একটা রিক্সা নিয়ে এক কিলো রোডের ভিতর ঢুকে পড়ল। রিক্সাওয়ালা মামা কে বলল নন্দিনীর রিক্সার পাশে নিয়ে যেতে।



নন্দিনীর রিক্সার পাশে যেতেই রুদ্র আবার বলে উঠল, “আচ্ছা, তুমি এমন করছ কেন?? আমি জানি, তুমি আমার উপর রাগ করেছ, কিন্তু আমি তো তোমাকে এসএমএস করেছি। প্লিজ কথা বল নন্দিনী।”

এবার কথা বলে নন্দিনী, “আমাকে আসলে তোমার কোন প্রয়োজন নেই রুদ্র। যদি থাকতই, তাহলে আমাকে দেয়া কথা তুমি রাখার চেষ্টা করতা। যাও, এখন রাস্তার মধ্যে বিরক্ত করোনা।” অভিমানে জড়িয়ে যায় নন্দিনীর গলা। কথা হারিয়ে ফেলে রুদ্র। চুপ হয়ে যায়। গোলচত্তরে এসে রিক্সা থামিয়ে নেমে পড়ে নন্দিনী। রুদ্রও নেমে পড়ে। নন্দিনী হাঁটতে থাকে তার হলের দিকে। রুদ্র পেছন থেকে নন্দিনীর হাত ধরে বলে, “তুমি এমন করলে আমি কোথায় যাব বল?? প্লিজ চলো বসে একটু কথা বলি, তারপর চলে যেয়ো।” একটু সময় চুপ করে দারিয়ে থাকে দুজন। তারপর আবার বাসস্ট্যান্ডে এসে টঙ্গে বসে। । “বল কি বলতে চাও” শীতল গলায় বলে নন্দিনী।



“দেখ, আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি তো চেষ্টা করেছি। শেষের দিকে মনে হল, আর সম্ভব না। আর জেগেও থাকতে পারছিলাম না। আর তুমি তো জান, আমি সবসময় কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনা, এসব ব্যাপারে আমি একটু দুর্বল। ”

“তুমি কি পার রুদ্র?? আমাকে বলবা প্লিজ??”



রুদ্র নন্দিনীর দিক থেকে চোখ নামিয়ে অন্য দিকে তাকায় “তুমি ঠিকই বলেছ, আমি আসলে কিছুই পারিনা। কিছুই না। কাউকে দেয়া কথা রাখতে পারিনা,কারো জন্য কিছু করতে পারিনা। কিছুই পারিনা! ” রুদ্রর চোখেমুখে একরাশ অভিমান জড় হয়, সেই অভিমানের অনেকটাই হয়ত তার নিজের উপরে! টঙ্গের মামা চা নিয়ে এগিয়ে আসে। রুদ্র বলে, “চা খাব না মামা,নিয়ে যান”, নন্দিনীও বলে, “খাব না মামা”, মামা অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাকিয়ে দেখে, একে অপরের অন্তপ্রান দুজন মানুষকে, যারা আজ নিজেদের মাঝে এক ছোট্ট অভিমানের দেয়াল তুলে দুজন দুদিকে তাকিয়ে আছে। বড় বিচিত্র এ জীবন!



রুদ্র উঠে দাড়ায়। একটা সিগারেট ধরায়, তারপর নন্দিনীর উদ্দেশে “থাকো, যাই” বলে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে থাকে এক কিলো ধরে, রাস্তার দুধারে গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে রুদ্রর নিজেকে ওই গাছগুলোর মত বোবা আর নিঃসঙ্গ মনে হতে থাকে। এমন সময় ফোন আসে। নন্দিনীর ফোন। রিসিভ করে রুদ্র।

“আমাকে একটু হলে আগায় দিয়ে যেতে পারবা??”

একটু সময় চুপ করে থাকে রুদ্র। তারপর “আসছি” বলে ফোনটা কেটে দেয়। ঘুরে আবার গোলচত্তরের দিকে হাঁটা দেয়। চত্তরের কাছাকাছি যেয়ে হাতের আধখাওয়া সিগারেটটা ফেলে দেয়।

হলের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে রুদ্র আর নন্দিনী। একসাথে হলেও দুজন যেন দুটো আলাদা ভাবনার জগতে হারিয়ে গেছে।

“রুদ্র, তোমার বাপ্পাদার গানটা শোনাবা আমাকে??”

নন্দিনীর কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে রুদ্র। কি মায়া নিয়েই না কথাটা বলল! এই মেয়েটার মাঝে এত মায়া কেন?? এত মায়া কেন??

রুদ্র অন্যদিকে তাকায়। গাইতে শুরু করে,



"অবুঝ বলে এদিক সেদিক তোমায় খুঁজে ফিরি

অবুঝ বলে উড়ব জেনেও ছুঁই যে অগ্নিগিরি

অবুঝ বলে হাত পেতে নেই, যা কিছু দাও ছুড়ে

প্রান বাঁচানো আসল জেনেও, প্রাণকে রাখি দূরে



অবুঝ বলে আছড়ে পড়ি সর্বনাশের ঝড়ে

অবুঝ বলে অনড় থাকি এত কিছুর পরে

আমায় তুমি অবুঝ বল, সত্যি আমি অবুঝ

অবুঝ বলেই রঙ ছড়ানো, মন যে আজও সবুজ



আমায় তুমি অবুঝ বল, কি হয়েছে তাতে?

এই আমাকে দেই বিলিয়ে তোমার কোমল হাতে

আমায় তুমি অবুঝ বল, সত্যি আমি অবুঝ

অবুঝ বলেই রঙ ছড়ানো, মন যে আজও সবুজ



অবুঝ বলেই হয়ত ভাব কিশোর কিংবা বালক

অবুঝ বলেই আকড়ে ধরি এক টুকরো পালক

অবুঝ বলেই তোমার ধরন নেইত আমার জানা

সবার এত মানার পরেও স্বপ্ন দেয় যে হানা



অবুঝ বলেই ভাবিনি তো লাভ হবেনা ক্ষতি

অবুঝ বলেই দাও গড়ে দাও, আমার পরিনতি

আমায় তুমি অবুঝ বল, সত্যি আমি অবুঝ

অবুঝ বলেই রঙ ছড়ানো, মন যে আজও সবুজ



অবুঝ বলে ইচ্ছে গুলো মেলছে দেখ পাখা

অবুঝ বলেই এই অনুভব সত্যি দরদ মাখা

অবুঝ বলেই সবকিছু যে কেমন করে বলি

সবাই দেখ এঁটেল দিয়ে গড়ছে শহরতলি



আমি না হয় পুরোই অবুঝ, তুমি তো সব বোঝো

এই অবুঝের ভালটা কি, একটু খানি খোঁজ

আমায় তুমি অবুঝ বল, সত্যি আমি অবুঝ

অবুঝ বলেই রঙ ছড়ানো, মন যে আজও সবুজ......"





নন্দিনী অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে পানি। এই পানি সে রুদ্র কে দেখাতে চায়না। রুদ্র কে সে জানতে দিতে চায়না, এই আধপাগল ছেলেটা যাই করুক, সে তার উপর অভিমান করে থাকতে পারেনা! কখনো না!





প্রথম গল্পের লিঙ্কঃ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১০

ফয়সল নোই বলেছেন:

+

সুন্দর গল্প

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:১২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আসাধারন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.