নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল আহমেদ

একজন গাঙ্গচিল

লেখলেখি করি একটু আধটু যদিও লেখার হাত ভালো না। অবশ্য লেখালেখির চেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন বড় পাঠক। মুক্তিযুদ্ধ আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। সবসময় স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর বাংলাদেশের। ইমেইল[email protected]

একজন গাঙ্গচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন এবং ভালোবাসা।

১৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৫৯


মিমি, এই যে এখানে বসো সিট ফাকা আছে।
-থ্যাংকস
মন থেকেতো??
-কি মন থেকে?
থ্যাংস
-হুম মন থেকেই থ্যাংস জানাইছি।
বুঝলাম।

বুঝলি দোস্ত, পার্ট নিচ্ছে। এখানে বসার ইচ্ছে তার নেই। একটায় সিট ফাকা আছে তো তাই বসেছে। ডান পাশে বসে থাকা আমার বন্ধুকে কথাটা বললাম।
-বসেছে ভালোই হইছে, গল্প কর কাজে দেবে। জবাব দিলো বন্ধু।
-সাহস পাচ্ছিনা, কিভাবে শুরু করবো।
-কথা না বললে প্রেম আর হবেনা, প্রেম করার ইচ্ছে থাকলে কথা বল।

পাশ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে, আজ রাতে ঘুমাওনি মিম??
-মানে?
-তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে তুমি কাল রাতে ঘুমাওনি।
-ও আচ্ছা।
-জানো, আজকেই প্রথম এতো কাছ থেকে তোমার চোখ দেখছি?
-তো কি হয়েছে?
-তোমার চোখ কিন্ত অনেক সুন্দর, টানা টানা, আমি বেশিক্ষন তাকাতে পারছিনা।
-থ্যাংস।
-মন থেকে?
হাসতে হাসতে ও বলে- হুম।
-তোমার হাসিটাও কিন্ত অনেক সুন্দর, একেবারে মাধুরী.........
-থাক থাক আর বলা লাগবেনা, বহুত মিছা বলছো।

এই যে মেয়েদের একটায় সমস্যা, সত্য কথা বললে মনে করে মিথ্য বলতেছি।
-ও তাই?
-হুম তাই। এই যে ধরো তোমারে আমি এতো ভালোবাসি অথচ তুমি আমাকে একবারো বোঝার চেস্টায় করতেছো না। তোমার জন্য আমি পাগল হয়ে গেছি আর তুমি তার কিছুই বোঝনা...
মানিক, তোমারে তো স্ট্রেইট কথা বলেছি আমি এতোদিন সম্পর্ক করি নাই এখনো করবোনা, আমার আব্বু আম্মু আমারে যেখানে বিয়ে দেবে সেখানেই বিয়ে করবো।
আমি কি এতই অযোগ্য?
-আচ্ছা মানিক তুমি এইটা নিয়ে এতো ক্যাচাল কেন করো? তোমার জাগায় অন্য কেউ থাকলে তারেও আমি এই কথা গুলোই বলতাম। খামাখা এই বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলবেনা। বন্ধু আছি বন্ধুই থাকি, এর বেশি আমি চাইনা।
-কিন্তু আমিতো থাকতে পারিনা...।।
-প্লিজ এখন এই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না, এখন ক্লাশে স্যার আসবে। আমাকে একটু স্টাডি করতে হবে।
আচ্ছা করো তাহলে।

স্যার এখনো ক্লাশে আসে নাই। মোটামুটি আমরা সবাই চলে এসেছি। আমি নিজেও চাচ্ছি স্যার একটু দেরিতে ক্লাশে আসুক। স্যারের পড়ার চাপ আর ভালো লাগেনা। ইউনিভার্সিটিতে যখন নতুন ভর্তি হইলাম, ভেবেছিলাম পড়াশোনায় একটু চাপ কম থাকবে তারপরেও দেখি কেজি স্কুলের মত স্যার এত্তগুলো পড়াবে, তার উপর আবার আজকে কেস সলভ করতে দেবে। তাছাড়া আমার ক্লাশে কেন যেন আজ মন বসছে না। পাশে মিমি, আমার সব মনোযোগ তার দিকে। অন্য কিছু আমি ভাবতে পারছি না। চেষ্টা করছি অন্য কিছু ভাবতে, অন্য বিষয়ে মনোযোগ দিতে। হয়তো কিছুক্ষন পারছি অন্য কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে, কিন্তু কিছুক্ষনের ব্যাবধানে আবার মিমির দিকে চোখ চলে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে মনোযোগ। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারছিনা। এই ধরনের অনুভুতি তো আগে কখনোই আসেনি।

মানিক তুই আজ কার পাশে বসেছিস? পেছন থেকে একজন জিজ্ঞেস করলো।
তার প্রশ্ন শুনে আরেকজন কৌতূহলী ভাবে জিজ্ঞেস করলো “কিরে খুব রঙ্গে আছিস মনে হচ্ছে”

-আচ্ছা তোমার বন্ধুরা এসব কি শুরু করেছে? তুমি না কথা দিয়েছিলা এখন থেকে কেউ আর টোন করবেনা???? লিখতে লিখতে আমার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বল্লো মিমি।
আমি আমতা আমতা করি, কিছুই উত্তর দিতে পারিনা।
-তোমার তো কথা আর কাজে কিছুই মিল পাইনা। তোমার বন্ধুদের এসব নিষেধ করে দিবে, কারন এগুলো আমি পছন্দ করিনা।
নিষেধ করে দিলে কি তুমি আমাকে ভালোবাসবা??
-না আমিতো তোমারে বলেই দিয়েছি আবার খামাখা আবার সেই একই ক্যাচাল।
-একবার ভালোবাসলে কি হয়?
-ভালোবাসলে অনেক কিছুই হয়, মেয়েরা একবারই ছেলেদের মন দেয়, আর আমি মন অনেক দেরি আছে, মন দেবো আমার বিয়ের পর।
-তাহলে চলো আমরা বিয়ে করে ফালায়।
-হা হা হা, মজা পাইলাম। থাক আর বেশিদুর যাওন লাগবে না। বহুত হয়েছে।
-আমি সিরিয়াসলি রিলেশন তো করতেই চাই, কিন্তু তুমি তো আগ্রসর হইতেছো না।
-এখন স্যার আসছে, প্লিজ চুপ থাকো। পাগলামি কইরো না।

স্যার ক্লাশে এসেছে। পড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে আবার গল্প করছে, স্যার সামান্য একটা খুদ্র বিষয় কত সুন্দরভাবেই না গুছিয়ে বলছে। শুনেই মন ভরে যাচ্ছে। কিন্ত আমার মন চলে যাচ্ছে মিমির দিকে, মিমি কলম দিয়ে কি করছে কিংবা পায়ের বৃদ্ধ আঙ্গুলি দিয়ে কি যেন খোঁচাখুঁচি করতেছে, তার চোখ দুটো কিভাবে এদিক অদিক তাকাচ্ছে সেগুলোর কিছুই বাদ যাচ্ছে না। মাঝেমাঝে ইচ্ছুক ভাবে জানতে ইচ্ছে করছে সে আমার দিকে তাকাচ্ছে কিনা? আমিও ডান বামে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি কেউ আমাকে লক্ষ করছে কিনা।

এই ছেলে, এই......
স্যার আমি
-হুম তুমি, কি করছো? এদিক ওদিক তাকচ্ছো, ক্লাশে মনোযোগ নাই।
স্যার মানে, আমি, মানে
-কি মানে মানে করছো? মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ করো।
জি স্যার

অনেক্ষন স্যারের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিচ্ছি, ক্লাশ করতেছি। আমি আর কোথাও তাকাচ্ছি না।
স্যার এখন বোর্ডে কি যেন লিখছে।
আমি মিমি এর দিকে তাকিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম ‘তোমারে আমি খুব ভালোবাসি, তোমায় ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগেনা, আমি বাচবো না’
মিমি ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছে সম্ভব না। আমি ও ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছি কিছুই বুঝলাম না।
ও আস্তে আস্তে বললো ক্লাশ শেষে তোমারে বুঝাইতেছি।
আমি বুঝলাম আমার ফলাফল শূন্য, কাজ সম্ভবত হবে না।
তবুও তার খাতার উপর লিখে দিলাম ‘ক্লাশ শেষে আমার কাজ আছে, আমি দাড়াইতে পারবো না। তুমি প্লিজ ফোনে বলে দিও, ফোনের অপেক্ষায় থাকলাম’

তারপর আর মনে নেই, কি হলো কোথায় গেলাম, কি হইলো।

কিছুক্ষন পর টের পাইলাম মোবাইলে ভাইব্রেশন হচ্ছে।
আমি অভার শিওর হয়ে গেলাম নিশ্চয় মিমি আমারে ফোন করেছে। মোবাইল খোজার জন্য প্যান্টের বাম পকেটে হাত দিলাম- দেখি মোবাইল বের হচ্ছে না। জোর করে মোবাইল বের করলাম, স্ক্রিনে দেখলাম কারো নাম লেখা নাই তবুও আশায় ফোন ধরলাম। কিন্ত একি মোবাইলে তো রিং বেজেই যাচ্ছে। আরেক বার মোবাইল রিসিভড করলাম একই সমস্যা- রিং বেজেই যাচ্ছে সেই সাথে মনে হচ্ছে ভাইব্রেশন টাও আরো বেশি হচ্ছে।
কিছুক্ষন পর দেখি ডান হাত একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। হাতে মোবাইলটা নিয়ে চোখের সামনে ধরলাম, ঝাপসা চোখে কিছুই বুঝলাম না। কিভাবে যেন ফোনটা রিসিভড করে কানে ধরলাম- অপর পাশ থেকে চেচিয়ে বললো ‘কতবার ফোন দিচ্ছি ফোন ধরছিস না’
আমি বললাম মাত্রই একবার তো দিলা।
-মোবাইলটা দেখে বল কয়বার ফোন দিয়েছি।
কেমন আমতা আমতা করছিলাম
-এত বেলা করে ঘুমাচ্ছিস কেন? সারারাত কি করেছিস? আর আজ ভার্সিটি যাবিনা?
না আজ ক্লাশ নেই।
-তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আমায় ফোন দে।
আচ্ছা ঠিক আছে।

ফোন রাখার পর বুঝলাম সারারাত শুধু মিমি কে নিয়েই স্বপ্ন দেখেছি। মনে হইলো কেমন একটা ঘোরের ভেতর আছি।

কিছুক্ষন পর দেখি আমার মোবাইলে রিং বেজে যাচ্ছে। মোবাইলটা হাতে নিয়েই দেখি আম্মু ফোন করেছে।
আম্মু বলল নাস্তা করো নাই এখনো?
-নাহ করি নাই।
-এত রাত জাগলে তো ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যাবে, আর আজ গাড়ী কখন তোমার?
-রাত্রে আম্মু। ১০ টায়। শ্যামলী পরিবহনে।
-আচ্ছা সাবধানে এসো, বলে আম্মু ফোন টা রেখে দিলো।

কথা শেষেই বাস্তবে আসলাম। বুঝলাম ভালোলাগা আর ভালোবাসা একই কথা নয়। মরীচিকার পেছনেই শুধু দৌড়াইতেছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.