নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল আহমেদ

একজন গাঙ্গচিল

লেখলেখি করি একটু আধটু যদিও লেখার হাত ভালো না। অবশ্য লেখালেখির চেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন বড় পাঠক। মুক্তিযুদ্ধ আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। সবসময় স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর বাংলাদেশের। ইমেইল[email protected]

একজন গাঙ্গচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের ত্রিপুরায় একখণ্ড বাংলাদেশ ।। (কপি পেস্ট )

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫০

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ত্রিপুরার অবদান অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনীয়া মহকুমার ‘চোত্তাখোলা’ একটি ঐতিহাসিক নাম। এই গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বেসক্যাম্প।

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ঢুকে পড়তেন স্বদেশ ভূমিতে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার চোত্তাখোলার স্মৃতি সংরক্ষণে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার গড়ে তুলছেন ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’। মুক্তিযুদ্ধে পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত আখাউড়া সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরার আগরতলা রাজধানী থেকে ১৩০ কিলোমিটার এবং ফেনী সীমান্তের ওপারের বিলোনীয়া শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী এলাকা চোত্তাখোলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী এই নৈসর্গিক পাহাড়ঘেরা স্থানটি হয়ে উঠেছিল মুক্তিবাহিনীর অলিখিত আশ্রয়স্থল।

যেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে ম্যুরাল, মিউজিয়ামসহ ১৯৭১ গণহত্যা জাদুঘর মঞ্চ। তৎকালীন ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা খাজা আহম্মেদ মূলত এই জায়গাটিতে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন। শুরুর দিকে এ স্থানে একটি ট্রানজিট শরণার্থীর ক্যাম্প ছিল। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা শরণার্থীদের শুরুতে এখানে আশ্রয় দেয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত চোত্তাখোলা ছিল মুক্তিবাহিনীর প্রথম রিক্রুট সেন্টার।

৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামে এই চোত্তাখোলার বেসক্যাম্পকে কেন্দ্র করেই হানাদারমুক্ত হয় ফেনী, পশুরাম, ছাগলনাইয়া, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পর্যটনের নতুন ঠিকানা। মুক্তি সংগ্রামের স্মৃতিবিজরিত এই চোত্তাখোলাতেই বর্তমানে গড়ে উঠছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে ‘ভারত-বাংলাদেশ’ মৈত্রী উদ্যান।চোত্তাখোলার এ মৈত্রী উদ্যান ভ্রমণের লোভ সামলে নিতে পারছিলাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও ইতিহাস গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন স্যারের একান্ত আগ্রহে রাজি হয়ে গেলাম।

আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্ত পথে ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছাই সাত সদস্যের একটি দল। সেখানে ত্রিপুরা সিপিআই (এম) ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র ও দেশের কথা পত্রিকার সম্পাদক গৌতম দাশ আগেই স্ট্র্যাট গেস্ট হাউস (রাজ্য অতিথিশালা)’য় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন বাংলার প্রথিতযশা শিল্পী হাশেম খান, ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক চৌধুরী শহীদ কাদের, ভাস্কর্য শিল্পী শ্যামল চৌধুরী, তেজস হালদার, মাহমাদুল হাসান সোহাগ। সন্ধ্যার পর রাজ্যের রাজধানী আগরতলা দর্শনে বের হলাম আমরা।

পরদিন সকাল সাড়ে ৮টায় গৌতম দাশের নেতৃত্বে আগরতলা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে চোত্তাখোলার উদ্দেশে আমরা যাত্রা করলাম। পথে সিপাহীজলা জেলার তৃষ্ণা ফরেস্ট বাংলোতে চা বিরতিতে ক্ষাণিক বিশ্রাম। ত্রিপুরারাজ্যের তৃষ্ণা ফরেস্ট রেঞ্জ। সেখানে ১৯৪ হেক্টর পাহাড়ি উঁচু নিচু জমি নিয়ে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। পুরো এলাকাটি নিয়েই গড়ে উঠছে একটি পর্যটন কেন্দ্র। আমরা যখন তৃষ্ণার পথ ধরে চোত্তাখোলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম পথে বাইসন, বানর, বনমোরগ, সাপ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি হরহামেশাই চোখে পড়ছিল। দুপুর ১২টায় পৌঁছলাম আমাদের কাক্সিক্ষত চোত্তাখোলা পার্কে অর্থাৎ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানে।

২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

২০ হেক্টর পাহাড়ি বনভূমিতে ৭টি টিলা ও একটি প্রাকৃতিক লেকে কতই না আয়োজন - মুক্তিযোদ্ধা-শরণার্থী, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা,’৭১-এর সবকিছু যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে। বাংলার দামাল ছেলেরা কেউ বন্দুক হাতে, কেউবা আহত সহযুদ্ধাকে কাঁধে বহন করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চোত্তাখোলায় একাধিক বাংকার তৈরি করা হয়। বাংকারগুলো এখনও চোত্তাখোলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে বেশকিছু শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থলও।

পার্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সে সময়কার ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর বিশাল প্রতিমূর্তিও গড়ে তোলা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করা অস্ত্র ও পোশাকসহ অন্যান্য সামগ্রীর প্রদর্শনীর জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ঢাকা-সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদ্লে নির্মিত করা হয়েছে একটি স্মৃতির মিনার। অন্যান্য টিলা বা সমতল ভূমিতে স্থাপন করা হবে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র। চলতি বছরের শেষ সময়ে এ পার্কটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।

কিভাবে এ মৈত্রী উদ্যানের সৃষ্টি

ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানের স্বপ্নদ্রষ্টা সিপিআই (এম) নেতা এবং বিলোনীয়ার এমএলএ সুধির দাস ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই চোত্তাখোলায় একটি ছোট পার্ক উদ্বোধনের জন্য ত্রিপুরারাজ্য সিপিআই (এম) মুখপাত্র গৌতম দাশকে আমন্ত্রণ জানান। গৌতম দাশ চোত্তাখোলায় এসে এই পার্ক দেখে আপ্লুত হন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা স্মৃতিচারণ করেন। তিনি ফিরে গিয়ে বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে জানান। পরে মানিক সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে গৌতম দাশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই চোত্তাখোলায় একটি বৃহৎ পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।

সে অনুযায়ী এ স্থানে ২০ হেক্টর জমির মধ্যে সাতটি টিলা এবং একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা নিয়ে গড়ে তোলার পরিকল্পনায় কাজ শুরু করেছেন ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানের। এ উদ্যানকে আরও সুন্দর ও নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারকে পরিকল্পনা, ডিজাইন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন স্থপতি মুবাশির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, শিল্পী হাশেম খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও ইতিহাস গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন। সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশের ১৯৭১-এর গণহত্যা জাদুঘর মঞ্চপার্কে ১৫টি ম্যুরাল, একটি মিউজিয়াম তৈরি করবে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী হাশেম খান, ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী, তেজস হালদার, মাহমাদুল হাসান ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে এ কাজ করে আসছেন। চোত্তাখোলা মৈত্রী উদ্যানের সবচেয়ে উঁচু টিলার ওপর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আদলে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে। তাছাড়া বিচ্ছিন্ন টিলাগুলোকে যুক্ত করতে প্রাকৃতিক আবহ ধরে রাখতে তৈরি হবে কাঠের সেতু। ভাস্কর্যের পেছনে থাকবে টেরাকোটায় চিত্রিত সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নানা চিত্র। এই মৈত্রী উদ্যান নির্মাণে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে গড়ে উঠবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা।

চোত্তাখোলায় কিভাবে যাবেন

বিলোনীয়া চোত্তাখোলায় যাওয়ার জন্য ফেনীর বিলোনীয়া বর্ডার সহজ পথ। তবে ত্রিপুরার আগরতলা রাজধানী হয়ে চোত্তাখোলায় গেলে আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্ত পথে ভিসার আবেদনে আগরতলা রোড উল্লেখ করুন। যাওয়ার আগে স্থলবন্দর শাখা সোনালী ব্যাংকে ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর দিয়ে নিন। আগরতলা শহর থেকে ১৩০ কি.মি. দূরে চোত্তাখোলা। বাস ভাড়া ৮০ রুপি। দুই থেকে আড়াই হাজার রুপিতে প্রাইভেট গাড়িতে করে গেলে উদ্যানটি ঘুরে দিন শেষে শহরে ফিরে আসা সম্ভব। চোত্তাখোলা বাজারে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কমলাপুর থেকে আগরতলার উদ্দেশে বিআরটিসি-শ্যামলী বাসযোগে; তাছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট কিংবা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে নেমে আগরতলা হয়ে চোত্তাখোলায় যেতে পারেন।

যুগান্তর
২ এপ্রিল ২০১৬।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫২

বিজন রয় বলেছেন: জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.