নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল আহমেদ

একজন গাঙ্গচিল

লেখলেখি করি একটু আধটু যদিও লেখার হাত ভালো না। অবশ্য লেখালেখির চেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন বড় পাঠক। মুক্তিযুদ্ধ আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। সবসময় স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর বাংলাদেশের। ইমেইল[email protected]

একজন গাঙ্গচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি তুমি বেদনা।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪

আমার এখনো বেশ ভালো করেই মনে আছে ছোট থাকতে যা কিছুই দেখতাম সবই সুন্দর লাগতো, স্বর্গের মত লাগতো, কিন্ত সেগুলো অনেক দিন পর দেখলে কেমন একটা মায়া লাগে। মনের কোনে গেথে থাকা স্মৃতিগুলোর পরিবর্তন দেখলে খারাপ লাগে। কিছু জিনিস পরিবর্তন না হওয়ায় ভালো, মানা যায় না। সবসময় চোখের সামনে ভাসে স্মৃতিগুলো।

আমাদের শহরের বাসাটা একটা অফিস হিসেবে ভাড়া ছিলো দীর্ঘদিন। একসময় শহরের বাসাটা ফাঁকা হয় এবং আমরা শহরে চলে যাই। শহরই তখন হয়ে গেল নতুন ঠিকানা। যদিও মাঝে মাঝে গ্রামে আসতাম, সব জিনিস গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতাম। প্রয়োজনের তাগিদে একটা সময় গ্রামে যাবার পরিমান দিনের দিন কমতে লাগলো। শহর ছেড়ে ঢাকা আসলাম আবারো সেই প্রয়োজনের তাগিদে। তখন থেকে গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয় না। আর গেলেও খুব একটা থাকা হতনা।

হটাৎ একদিন ঢাকা থেকে গিয়ে খেয়াল করলাম গ্রামের বাসার পেছনের পুকুরটা কেমন যেন হয়ে গেছে। আগে কখনোই ওইভাবে খেয়াল করিনি। এত সুন্দর পুকুরটা ঠিক আগের মত নেই। যে পুকুরটার পাশে শৈশবে কত সময় কাটিয়েছি, পুকুরটা এখনো স্বর্গের মতই চোখে ভাসে সেই পুকুরের দিকে তাকাতেই কান্না লাগে, কেমন একটা চাপা ব্যাথা অনুভব করি। এই পুকুরেই দাদা মাছ চাষ করতেন, তেলাপিয়া, রুই, কাতল, চিতল, টাকি, কার্প সহ কত মাছ। সেই পুকুরে বড়শি দিয়ে কত মাছ ধরেছি, পানি কম থাকলে মাঝখানে মাটি দিয়ে পানি ছেকে কাদা তে গড়াগড়ি দিয়ে মাছ ধরতাম। আজ মাছ ধরি তো আবার কাল পানি ছেকে মাছ ধরি। এখন পুকুরটা পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে। পুকুরটার চারপাশে একটা ঝোপে ছেয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পানি আসে বছর জুড়ে প্রায় পানি থাকে অথচ পোনা ছাড়া হয় না। গ্রামে আর তেমন কেউ থাকেনা, জীবিকার প্রয়োজনে সবাই এদিক ওদিকে ছিটিয়ে আছে। যৌথ পরিবার টা আজ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কারোরই আর গ্রামে এসব করে এতটা সময় নষ্ট করার প্রয়োজন মনে হয় না। কেউই বোধ করেনা সেটা।

পুকুরের পাশে যমজ নারিকেল গাছ ছিলো সেটাকে কেন্দ্র করে আমার অনেক মধুর সময় কেটেছে, জোড়া গাছ বলে গাছদুটোর খ্যাটি ছিল বেশ। শুধু আমার না আমার চাচাতো ভাই বোনের সবারই খুব ভালো সময় কেটেছে। বাড়ির পেছন দিকের দরজা খুললেই নারিকেল গাছ টা চোখে পরতো, নারিকেল গাছের পাশে একটা লেবু গাছ ও কিছু ফুল গাছ ছিলো। সুন্দর একটা বাগান। এবং পুকুরের চারিপাশ দিয়ে নারিকেল গাছ ছিলো। ছিলো সুন্দর পরিবেশের একটা জায়গা। ওখানে বাসার কাজের লোক দিয়ে আমার দাদি প্রায়ই পরিস্কার করিয়ে রাখতেন। কারন সব গাছের নারিকেল যখন পাড়তো তখন সব ওখানেই জড় করা হতো। নারিকেল পাতা থেকে খিল ছড়ানো হতো ওখানেই। আজ ওইদিকের দিকে তাকাতেই মনটা কেমন বিষণ্ণ হয়ে গেল। সেখানে আজ পরিস্কার তো দূরে থাক গত ৫-৭ বছরে সেখানে কারো পা পড়েছে বলে মনে হয়না।

নারিকেল গাছ গুলো আছে ঠিকই, কিন্ত লেবু গাছ আর ফুল গাছের জায়গা দখল করে নিয়েছে ঝোপ জঙ্গলে। দাদা দাদী বৃদ্ধ হয়ে গেছে। পেছনের দরজাটাও বন্ধ হয়ে গেছে, দরজার ওইদিকে যাবার প্রয়োজন পড়ে না। একটা সময় এই দরজা দিয়েই আমাদের সবার কত আনাগোনা ছিল, আজ তার প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। বন্ধ দরজার ওদিকে আটকে আছে আমার শৈশবের স্মৃতি।

পুকুরের উল্টা পাশে রাস্তা বরাবর একটা বাঁশের মাচা বানিয়েছেন আমার দাদা। মাচায় গিয়ে বসতে সব মনে পড়ে গেল। ১৭-১৮ বছর পূর্বের স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল। পুকুরটার পাশে আম বাগান ছিল, সাথে ছিল কাঠাল গাছ, মাঝখানে বিশাল এক লেবু বাগান, বাগানের একেবারে এক কোনায় কলার গাছ ছিলো অনেকগুলো। প্রতিটা আম গাছের, কাঠাল গাছের আলাদা আলাদা নাম ছিল। বাঁকা কাঠাল গাছ, অচল কাঠাল গাছ, বাইট্টা আম গাছ, ছোট আম গাছ, লগা আম গাছ, মিস্টি আম গাছ, টেংগা আম গাছ ইত্যাদি ইত্যাদি। নামগুলো কে দিয়েছিলো জানি না, তবে আমরা বড়দের কাছ থেকেই শিখেছিলাম নামগুলো। অনেক বড় হবার পরেও আমি সব গাছের নামগুলো মুখস্ত বলে দিতে পারতাম, এখনো চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি। সেই গাছগুলোর প্রতিটা ডাল আমাদের মুখস্ত ছিলো, কাকাতো ভাই দের নিয়ে গাছের ডালে বসে বসে আড্ডা দেওয়া, মাঝে মাঝে গল্পের বই পড়া, আম পেরে খাওয়া আরো কত কি।

সেসময় গ্রামে এত সবার বাড়ি বাড়ি আম গাছ ছিলনা। আমার শুধু মনে হইতো গাছ থেকে আম গুলো পাহারা না দিলে সবাই চুরি করে নেবে, এজন্য চাচাতো ভাইবোন দের সাথে বসে বসে পাহারা দিতাম।পাহারা দিতে গিয়ে কবে কবে সেই গাছগুলো আমার ভাইবোন দের মতই আপন হয়ে গিয়েছিলো টের পাইনি। এইবার কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে গ্রামে গেছি যাবার পথেই বাগানের দিকে চোখ পড়ে গেল। যা দেখলাম তা মেনে নেওয়া খুব কষ্টের। গাছগুলো সব কাটা হচ্ছে। বিক্রি হয়ে গেছে। আগের গাছ গুলোর উৎপাদন ভালো না হওয়াতে নতুন করে ভালো আম ও লিচু গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গাছ গুলো কাটা হচ্ছে আর চোখের সামনে থেকে একেকটা স্মৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব। একটা গাছ কিভাবে একটা মানুষের অন্তরে গেথে যেতে পারে সেদিনই আমার প্রথম অনুভব করলাম। যে কয়দিন গ্রামে ছিলাম ভুলেও বাগানের দিকে যায়নি আমি। ওই কয়টা দিন কি পরিমান কষ্টে কেটেছে ওই রকম কষ্ট খুব কমই পেয়েছি জীবনে।

এখন ওইখানে নতুন নতুন গাছ লাগানো হয়েছে। একটু মাটি দিয়ে জায়গাটা একটু উঁচু করা হয়েছে। বাগানের পাশে আগে রাস্তা ছিলনা। পাশ দিয়ে পাকা পিচ ঢালা রাস্তা হয়ে গেছে। বাগানটার সামনে দাঁড়ালে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে। শুধু ভাবী এতটা পরিবর্তন না হলে কি খুব অন্যায় হয়ে যেত? নতুন করে সব গড়ে উঠছে, আর কবর হয়ে যাচ্ছে কিশোর হৃদয়ের স্মৃতি গুলো।


খুব ছোট থাকতে আমি উপলব্ধি করতাম আর নিজেকে প্রশ্ন করতাম আমার কিছুই মনে থাকেনা ক্যানো। আর এখন শুধু প্রশ্ন করি ক্যানো স্মৃতিগুলো ভূলতে পারিনা? কিছুই তো হারায় না মন থেকে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৮

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

নীল_অপরাজিতা বলেছেন: সত্যিই এক সময় সবই কেমন যেন বদলে যায়, আমার শৈশবের দেখা সবকিছুই বদলে গেছে সময়ের সাথে সাথে। মেনে নিতে কষ্ট হয়। ভালো লেগেছে লেখা।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: এই পরিবর্তনগুলো মেনে নেওয়া যায়না, খারাপ লাগে।
ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.