নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাসেল আহমেদ

একজন গাঙ্গচিল

লেখলেখি করি একটু আধটু যদিও লেখার হাত ভালো না। অবশ্য লেখালেখির চেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন বড় পাঠক। মুক্তিযুদ্ধ আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। সবসময় স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর বাংলাদেশের। ইমেইল[email protected]

একজন গাঙ্গচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার স্বপ্না আপু।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৪০

তুমি রাসেল না?

হ্যাঁ আমি রাসেল। কিন্ত..কথা শেষ করতে পারলাম না। তার আগেই উনি বলে উঠলো কেমন আছো?



আমার এমন অপ্রস্তুতভাবে তাকানো দেখে হয়তো বুঝতে তিনি পেরেছিলেন যে তাকে ঠিক চিনে উঠতে পারিনি।
জিজ্ঞেস করে বসলো আমায় চিনতে পারছো তো?

আমি হ্যাঁ বা না সূচক কিছুই বলতে পারলাম না, শুধু বোকার মত হাসলাম। আর আমার অমন ভঙ্গীতে হাসি দেখে উনি কি বুঝলেন কে জানে। তা কোথায় থাকো এখন? জানতে চাইলেন।

ঢাকা থাকি বললাম আমি।

কি করছো এখন? পালটা প্রশ্ন।

বললাম এই এই করছি আজকাল।

আমার বিস্ময় কাটছে না, যারপরনাই আমি আশ্চর্য হচ্ছি আমার সাথে এত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলাতে। তার স্বাভাবিকতা দেখে মনে হচ্ছে উনি আমার খুব খুব পরিচিত। অথচ আমার তেমন মনে হচ্ছে না। আমি শুধু উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছি, চেনার চেষ্টা করছি।

সেই এসএসসি পরীক্ষার পর তোমার সাথে দেখা হয়েছিলো, তারপর কি আর দেখা হয়েছিলো? হয়নি তাইনা?

আমি খুব করে ভাবতে লাগলাম আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি তখন তো আমাদের সাথে কোনো মেয়ে প্রাইভেট পড়েনি। আর আমিতো বয়েজ স্কুলে পড়েছি, মেয়ে থাকার অবকাশই নেই। তার উপর উনার বয়স দেখে মনে হচ্ছেনা যে উনি আমাদের বয়সী।

আমি আর সংকোচ না রেখেই বলেই ফেললাম- আপনাকে ঠিক চেনা চেনা মনে হলেও আমি মনে করতে পারছিনা।

সুমন স্যারের কাছে পড়তাম সেই ভোর বেলা? আমি স্বপ্না আপু।

স্বপ্না আপু? আমি বললাম তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?

শ্বশুর বাড়ি, কোথায় থাকবো আবার? স্মিত হেসে উত্তর দিলেন।

কোথায় বিয়ে হয়েছে তোমার?

খুলনা।

কবে?

এইতো ২০০৯ সালে।

আমি একটু ভেবেই বললাম তোমার সাথে, ১৩-১৪ বছর তো হবে তাইনা? উত্তরের অপেক্ষা নাকরে আমি খুব করে জানতে চাইলাম আমায় তুমি চিনতে পারলে?

উনি কাছে এগিয়ে এসে কাধে হাত রেখে বললেন তুমি কত্ত বড় হয়ে গেছো ভাইয়া। চেহারতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি কিন্ত ভাবিনি যে তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে।

সেসময় মোবাইলের এত প্রচলন ছিল না।
সত্যি বলতে আমিও প্রায় ভূলেই গিয়েছিলাম। তার বাবার বদলি হবার পর যখন তারা মেহেরপুর থেকে নড়াইলে চলে গিয়েছিলো তখন একপ্রকার মেনেই নিয়েছিলাম যে আর বোধহয় কখনোই কোনদিন দেখা হবে না। তারপর ধীরে ধীরে কোন একসময় আর মনেই হতোনা সেই স্বপ্না আপুর কথা, ভূলেই গিয়েছিলাম। অথচ এক সময় স্বপ্না আপু আমায় কত ভালোবাসতো, স্নেহ করতো।

ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি তখন।
খুব ভোরে উঠে পড়তে যেতাম সুমন স্যারের কাছে, আলো ফুটছে এমন সময়ে বাসা থেকে বের হতাম। স্যারের কাছে ভোরের ব্যাচে তখন ২ টা ক্লাশের ছাত্রছাত্রী পড়তো। আমরা ষষ্ঠ শ্রেনীর কয়েকজন আর বাকীগুলো সব দশম শ্রেনীর, যার সবাই ছিলো ছাত্রী। তাদের মধ্যে ছিলো স্বপ্না আপু।

জানিনা কিভাবে আপুর সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। শুধু এটুকু মনে আছে বছরের শুরুতেই যখন নতুন ক্লাশে উঠে নতুন বই নিয়ে পড়তে গেলাম সুমন স্যারের কাছে, প্রথম দিন জায়গা না পেয়ে বসেছিলাম স্বপ্না আপুর পাশে। তারপর কাকতালীয় কিনা কে জানে- দেখা গেল প্রায় প্রতিদিনই আমাদের পাশাপাশি বসা হতো। আর এক পর্যায়ে ওটাই তখন নিয়্ম হয়ে গেলো। আর বসে বসে টুকটাক এই গল্প সেই গল্প, কলম দেওয়া, চকলেট দেওয়া, পেয়ারা দেওয়া কিংবা বড়ুই দেওয়া, আমার অনেক ব্যাপারে সে আবার তার ব্যাপারে আমি খোজ নেওয়া সহ কথা বলতে বলতে সম্পর্ক বেশ ভালো হয়ে গিয়েছিলো।

একদিন স্বপ্না আপু আসেনি পড়তে। পরের দিনও এলোনা।

৩য় দিন আমি সবার আগে আগেই গিয়েছি পড়তে, অন্যরা এখনো কেও আসেনি। স্যার তখন বাইরে মেসওয়াক করছিলো। আমায় দেখে বললেন রাসেল তুই সাইকেলটা নিয়ে একটু স্বপ্নাদের বাসা যা তো, খোজ নিয়ে আয়। পড়তে আসছেনা কয়দিন। রহিমের মিলের পাশের হলুদ বাড়িটা, ওখানে ভাড়া থাকে।

স্যারের নির্দেশমত কুয়াশার মধ্যেই গেলাম তাদের বাসা। হেটেই গেলাম, ৫মিনিটের রাস্তা।

আমি নক দিতেই দেখি একজন দরজা খুললেন।

বল্লেন তুমি?

কণ্ঠ শুনেই আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম ইনিই স্বপ্না আপু। সেদিনই স্বপ্না আপুর চেহারা প্রথম দেখলাম। একদম পরীর মত ফুটফুটে দেখতে। পড়তে যাবার সময় নেকাব পড়ে আসতেন, বিধায় দুটো চোখ ছাড়া চেহারার কিছুই দেখতাম না। সেই চোখ দুটো দেখে কল্পনায় যে চেহারা ঠিক করেছিলাম সেই চেহারার সাথে এই চেহারার মিল নেই।

স্যারের কাছে পড়তে যাচ্ছেন না ক্যানো? আমি জানতে চাইলাম।

আমার অসুখ ভাইয়া, জ্বর এসেছিলো।

তো কবে থেকে পড়তে যাবে?

হ্যাঁ আজ যাবো পড়তে। তুমি একটু অপেক্ষা করো, শীতের মধ্যে বাইরে দাড়িও না। আমি রেডি হয়ে আসছি।

আমি ভেতরেই ঢুকতে স্বপ্না আপুর মা জিজ্ঞেস করলো কে এসেছে রে?

এক ছোট ভাই, দেখো মা আমি ২ দিন পড়তে যাইনি তাই খোজ নিতে এসেছে।

সদ্য নামাজ পড়া শেষে স্বপ্না আপুর আম্মা হাতে তজবীহ নিয়ে আমার কাছে এসে বসে গল্প শুরু করলেন।

তারপর আবার সেই আগের মতই স্বাভাবিক হয়ে গেলো। স্যার একটু এদিক ওদিক গেলেই কলম খেলা, খাতায় দাগ টেনে খেলা। কিভাবে কিভাবে যেন দিনোগুলো কেটে যাচ্ছিলো। এর মাঝেই একদিন স্যারের কাছে যারা পড়তাম তাদের নিয়ে স্যার পিকনিকে যাবে। গেলাম পিকনিকে।

পিকনিকে গিয়ে খুব হুই হুল্লোড় করলাম সারা বেলা, ছোট ছিলাম বলেই কিনা স্থির কম থাকতাম। খেলতে গিয়েই পড়ে গেলাম, যার ফলে ডান হাতের ২টা আঙ্গুল ছিলে গেলো। তখনো ছিলে যাবার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিনি। কিন্ত সমস্যা হলো দুপুরে খাবার সময়। খেতে পারিনা, ঝালের জন্য আঙ্গুল জ্বলতেছিলো।

স্যার কে বললাম স্যার একটা ছোট চামচ দেন।

স্যার বললেন ছোট চামচ যে নেই। তাই তিনি একটা বেশ বড় চামচ দিলেন।

অমন বড় চামচ দিয়ে খাচ্ছিলাম বলেই ব্যাপারটা সবার নজরে আসলো।

স্বপ্না আপু দেখেই জিজ্ঞেস করলো কি হলো তোমার আবার?

বললাম এই যে পড়ে গিয়েছিলাম বলে হাত উচু করে দেখালাম।

তারপর উনি ডেকে আমাকে তার পাশে নিয়ে গেলেন। পাশে বসিয়ে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন। তার সেই স্নেহমাখা আন্তরিকতাটুকু আমায় আপ্লূত করছিলো সেদিন, একেবারে মন ছুয়ে গেছিলো সেদিন। মা বাদে আর অন্য কেও আমায় এত স্নেহ ও মমতায় খাইয়ে দিয়েছিলো কিনা আমি ঠিক মনে করতে পারছিলাম না।

তারপর সারাদিন ঘুরাঘুরি করলাম, আমার বন্ধুদের চেয়ে যত ঘুরলাম তারচেয়ে বেশি ঘুরলাম স্বপ্না আপুর সাথে। আপুর সাথে কয়েকটা ছবিও তুলেছিলাম। সেই ছবির নেগেটিভ গুলো কার আছে আছে জানিনা, জানতে পারলে ভালো হতো। সারাদিন ঘুরেফিরে যখন ক্লান্ত , ফেরার সময় আপু আমায় একটা হাতপাখা কিনে দিয়েছিলো, কারুকার্য করা। আর দিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলো নাও বাতাস খেতে খেতে যাও। পাখাটা এখনো আছে আমার কাছে।

যখন বাস থেকে নামিয়ে দিলো স্যারের বাসার সামনে তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। আমি স্যার ও আমার বন্ধুদের কাছে বিদায় নিয়ে স্বপ্না আপু কাছে যাচ্ছিলাম, তখনই আপু আমায় বললো ভাইয়া আমার সাথে একটু বাসায় চলোনা, আমি একা আছি।

আমি কোনো কিছুই না বলে রাজী হয়ে গেলাম। হাটা পথে ৫ মিনিটের রাস্তা, তবুও রিকশা নিলো।

পরেরদিন পড়া ছিলো না, ছুটি।
তারপরের দিন পড়তে গেলাম। আমার যেতে সেদিন দেরিই হয়েছিলো। আমি পাশে বসেই স্যার কে সব পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। পাশ থেকে স্বপ্না আপু জিজ্ঞেস করলো তোমার হাত কমেছে, লিখতে পারবা তো?

আমার হাত যে সেদিন ছিলে গেছিলো আমারই খেয়াল নেই। তার কথায় মনে পড়ে গেল। বললাম হাত ঠিক হয়ে গেছে এই যে।

তারপর সময়চক্রে গ্রীষ্মের ছুটি এলো, আমার ও স্বপ্না আপুর স্কুল একমাসের জন্য বন্ধ। স্যারের কাছে পড়া শেষে আপুর বাসা গিয়েছি। ক্যারাম খেলতে খেলতে কখন অনেক বেলা হয়েছে খেয়াল নাই। আমি বাসায় কিছু বলে আসিনি, চিন্তার সাথে সাথে একটু ভয়ও লাগছিলো। বললাম আপু আমি বাসা যাবো। আম্মুকে কিছু বলে আসিনি।

আপুতো নাছোড়বান্দা, কিছুতেই ছাড়বে না। দুপুরে একসাথে খেয়েই তবেই ছেড়েছিলো সেদিন আমায়।

এভাবেই যাচ্ছিলো দিন। গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রাইভেট পড়া শেষে আপুর বাসা মাঝে মাঝেই যেতাম। আপু ঘুরে ঘুরে তার বাগান দেখাতো, আপুদের পারিবারিক ফটো এ্যালবাম দেখাতো আমায়, ক্যারাম খেলতো। আমায় গান শোনাতো, খুব ভালো গলা ছিলো গানের। আর আমার সাইকেলটা দেখে খুব করে বলতো আমায় সাইকেল চালানো শেখাবে? এমনি করেই তাদের পরিবারের একজন হয়ে গেলাম, কখনোই মনে হতোনা যে এরা আমার বাইরের কেউ।

স্বপ্না আপুরা ছিলো ২ বোন, স্বপ্না আপু ছিলো ছোট। বড় বোন রিনার বিয়ে হয়ে গেছে। আমায় ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করতেন। আমায় তখন বলতো আমাকে আর আপনি করে বলবে না, তুমি করে বলবে ঠিক আছে। আমি বলতাম হ্যাঁ ঠিক আছে।



দেখতে দেখতে ঈদ চলে আসলো, আমায় বললো ঈদের দিন আসবে কিন্ত আমাদের বাসা। ঘুরতে যাবো। রিনা আপু আসবে।
আমি বললাম আমি যে মেহেরপুর ঈদ করিনা, গ্রামে দাদাদাদীর সাথে ঈদ করতে হয়।

এবার নাহয় আমাদের সাথে করো ঈদ।

আমি লাজুক লাজুক চোখে তাকিয়ে থাকি, কিছু বলতে পারিনা।

নীরবতা ভেঙ্গে আপুই বলে তাহলে ঈদের পরেরদিন মেহেরপুর এসে আমাদের বাসা আসবে হ্য?

তারপর অনেকদিন হয়ে গেলো।
আগামী বছর আপুর এসএসসি পরীক্ষা, তাই টেস্ট পরীক্ষা দেবার পর দশম শ্রেনীর সবাইকে নিয়ে আলাদা একটা ব্যাচ করেন সুমন স্যার। আগে আপুদের ব্যাচ। আপুদের ব্যাচে পড়ানো হলেই আমাদের পড়াতো। তাই তখন থেকে আর সেভাবে কথা হতনা, তবুও দেখা হতো প্রতিদিন।

তারপর মার্চ মাস থেকে পরীক্ষা, পড়তে আসাও বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর থেকে আর দেখা নাই। প্রথম পরীক্ষার পরেরদিন স্যারের কাছে পড়া শেষ করে গেলাম আপুর বাসা, দেখা করে আসলাম।

পরীক্ষা শেষ করার পর আপু নানাবাড়ি চলে গিয়েছিলো। তারপর আর দেখা হয়নি। প্রায় ২-৩ মাস। যথা সময়ে রেজাল্ট, স্কুলে ক্লাশে থাকা অবস্থায় বন্ধুদের মুখেই শুনলাম আজ এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে। আমাদের স্যারেরা তখন স্কুলের রেজাল্ট নিয়েই ব্যাস্ত। তখনো জানিনা স্বপ্না আপুর রেজাল্ট কি এসেছে।

পরেরদিন সকালে সুমন স্যারের কাছে পড়তে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম স্বপ্না আপুর কি রেজাল্ট?

স্যার বললেন হুম পাশ করেছে, কাল বিকেলে এসেছিলো। স্বপ্না তোকে দেখা করতে বলেছে।

স্যারের কাছে ৮ টার সময় পড়া শেষ করে গেলাম আপুর বাসা। আমায় মিষ্টি খেতে দিলো, পরীক্ষায় পাশ করার মিষ্টি। ১০ টায় ক্লাশ আমার, খুব বেশি সময় পাইনি সেদিন। অল্প সময়েই অনেক কথা হলো, আমায় বললো আমি যশোরে ভর্তি হবো ভাইয়া, নানুবাড়ীতেই থাকবো। একটু মন খারাপ করে চলে আসলাম। সেদিনই শেষ দেখা হবে এটা বুঝিনি।

এরপর অনেকদিন পর একবার তাদের বাসা গিয়ে দেখি অন্য ভাড়াটিয়া। সেখানেই শুনলাম তার বাবার চাকুরী বদলী হয়ে গেছে নড়াইলে। এরপর আর খোজ করিনি, খোজ পাইনিও। আর পাবো বলে তখন আর মনে হয়েছিলো না।

আমি বললাম তুমি এখানে কি করছো?

খুলনা যাবো। ঐ যে আমার মেয়ে বলেই ডাক দিলেন রুপা এদিকে আসো মামনী।

ঢাকা এসেছিলে ক্যানো?

রিনা আপুর অসুখ তাই এসেছিলাম।

গাড়ী কখন?

বললেন ৯.৩০ এ।

ঘড়ির দিকে তাকালাম, দেখি ৯.১৫ বাজে।

রুপা এসে দাঁড়াতেই আমায় সালাম দিলো।

আমি মাথায় হাত বুলিয়েই তাকে একটু কোলে নিয়েছি।

তখনোই সুপারভাইজার ডেকে উঠলেন খুলনার যাত্রী উঠে পড়ুন। অগত্যা ব্যাগ নিয়ে বাসের দিকে এগিয়ে গেলো। হেল্পার কে ব্যাগ বুঝিয়ে দিয়ে আমার ফোন নাম্বার নিলেন, আমায় তার নাম্বারটাও দিলেন। ফোন দিও ফোনে কথা হবে। আচ্ছা আসি।

বাসে উঠার কিছুক্ষন পরেই বাস ছেড়ে দিলো। আমি বাসটার দিকে চেয়ে রইলাম। এতদিন পর দেখা অনেক কিছুই জানার ছিলো অথচ কিছু বোঝার আগেই সময় দ্রুত শেষ হয়ে গেলো।

জীবনে অনেক অপরিচিত, বা রক্তের বন্ধন না থাকা সত্ত্বেও অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি, পাচ্ছিও। তাদের ভালোবাসায় কখনো সিক্ত হয়েছি, কখনো হয়েছি আপ্লূত। সময়ের কারনে এমন অনেক সম্পর্ক অকালেই হারিয়ে গেছে, হারিয়ে ফেলার পর মনে মনে খুজে ফিরেছি সেই মানুষগুলো কে। তারপর খুজে না পেয়ে কোন একদিন তাকে হয়তো ভূলেই গেছি। এমন কত ভালোবাসা ও স্নেহমাখা মানুষ পেয়েছি তবুও হয়তো এই সময়ে এসে কারোরই নাম বলতে পারবো না, ঠিক মনে করে বলতে পারবো না কতজন এভাবে পরিবারের মত করে আমায় টেনে নিয়েছিলো বা আমি নিয়েছিলাম। এমন ভালোবাসার মানুষগুলো যখন সময়ের কাছে বা যোগাযোগের অভাবে কিংবা তাল মিলাতে না পেরে হারিয়ে যায় তখন জীবনের বিরাট একটা অংশ হারিয়ে যায়, সেই ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়, কখনোই নয়।

আবার দেখা হবে বলা মানুষের সাথে বহুকাল দেখা হয়না। তাদের সাথে একদিন দেখা হবে এমন আশায় থাকতে থাকতে এক সময় ঝাপসা হয়ে আসে তার নাম, তার মুখ। শুধু নিউরনে নিউরনে দাপিয়ে বেড়ায় চমৎকার কিছু সময়, চমৎকার কিছু জীবন।

ভালো থেকো স্বপ্না আপু।
ভালো থাকুক সকল ভালোবাসার সম্পর্কগুলো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৬:৩০

তপোবণ বলেছেন: খুব ভালো লাগল, নিজের কৈশোরের সাথে অনেক খানি মিলে গেল বলে ভালো লাগছে। যিনি আমাকে মমতার বাঁধনে বেধেছিলেন বিয়ের পর তিনি চলে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১৩

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: ধন্যবাদ।
সেই আপুর কি খোজ পেয়েছিলেন?

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:২০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এক সময় এমন করেই ঝাপসা হয়ে আসে তার নাম, তার মুখ। শুধু নিউরনে নিউরনে দাপিয়ে বেড়ায় চমৎকার কিছু সময়, চমৎকার কিছু জীবন।

হুম। সত্যিই তাই।

ছুঁয়ে যাওয়া স্মৃতিকথা - - -

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১৩

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: ভালো লাগলো।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১৩

একজন গাঙ্গচিল বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.