![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সহজ সরল, সত্য স্বীকারোক্তিতে বিশ্বাসী। বর্তমানে আনন্দ খুঁজে নিয়ে সামনের দিনে এগিয়ে যাই।
রাতে ঘুম হয়না মেঘলার ঠিক মত। বাসা থেকে ১৫ মিনিটের রাস্তা রিকশা করে তার অফিস। তবুও প্রায় দিন অফিস পৌঁছতে৩মিনিট/৫মিনিট দেরি হয়ে যায় মেঘলার। যদিও তার বস কখনো তাকে এসব নিয়ে কিছু বলেনা। এর পেছনে পর্যাপ্ত কারণও রয়েছে।
প্রায় দু’ বছর হচ্ছে এখানে চাকরিরত আছে মেঘলা। প্রথম ৫/৬ মাস নিজের স্বভাবমত গুটিয়ে থাকলেও এখন অনেকটা সে সবার সাথে মিশেছে। অফিসের এমডি স্যারো মেঘলার কাজ, ডেডিকেশন, সততা এসবের জন্য পছন্দ করেন তাকে। ভীষণ পছন্দ মেঘলার এই অফিস। বাসা থেকে সে এখানেই বেশি আরাম বোধ করে। ফ্যামিলির মতই তার এই জায়গা, এখানের প্রতিটা মানুষ। রাতের ৮/৯টা অব্দি সে কাজ করে এখানে একা, বাসায় তার যেন দম বন্ধ লাগে, আরো বেশি একা লাগে নিজেকে।
হাতের কাজ শেষ, নতুন কাজের জন্য ব্রিফ লাগবে। আর রঞ্জন এখনো আসেনি সাইট থেকে। সে আসলে তবে কাজের ব্রিফ পাবে। কাজ ছেড়ে উঠে এখন কিছু ভাল লাগছেনা, কেমন ঘুম ঘুম লাগছে। কিচেন যেয়ে একটা ব্ল্যাক কফি বানিয়ে লবিতে গিয়ে বসল সে। বাইরে আজ মেঘলা করে বাতাস আছে।
অফিসের এই জায়গাটুকুন এত ভাল লাগে মেঘলার! বাইরে চারপাশে গাছ, একটা কৃষ্ণচুড়াও রয়েছে। বাতাসে গাছের পাতার শনশন শব্দ সাথে ইজি চেয়ারে দোল খেতে অন্যরকম শান্তি লাগে তার। এখানে বসলে কখনো মেঘলার মন ভাল হয়ে যায় আবার কখনো বিষণ্ণ।
এই যেমন এখন এজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিতেই মেঘলার কেমন শরীর জুড়ে কান্না পেল। ৩০ বছর ছুঁই ছুঁই কিন্তু জীবনে কতটুকুন কি পেল? কতটা উপভোগ করল জীবন? এত এত দায়িত্ব, দিন রাত মিলিয়ে কাজ এসবের মাঝে জীবনের এত সময় চলে গেল কিন্তু নিজের বলে কিছু আর পাওয়া হল না।
হঠাৎ ই ওপাশ থেকে ইরা তার কাছে আসতে আসতে বলল, “এই মেঘলা আপু, এখানে এমন চুপচাপ বসে আছো কেন? শরীর খারাপ নাকি? “
ইরার কণ্ঠ শুনেই ঝটপট চোখ মুছে নিল মেঘলা। টেবিলে রাখা কফির মগ দেখে ইরা একটু অবাক হয়ে বলে, “একি! তুমি এই দুপুর বেলাতে কফি খাচ্ছ? ভাত খাবে কখন?”
মেঘলা হেসে বলল, “ভাত ”কি আমি এত তাড়াতাড়ি খাই? কি করো? বস একটু, আমার ভাল লাগছেনা।“
ইরা ওপর পাশের ইজি চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “কি হয়েছে আবার তোমার? কি নিয়ে ভাব এত?”
মেঘলা বাইরে কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়ে বলল আমরা মানুষ আমাদের জীবন চলে যায় একে ওকে নিয়ে। জীবনের খুব কম সময় আমরা নিজের জন্য বাঁচি , তাইনা আপু?”
ইরা তার ওড়নার সুতো টেনে ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল, “কটা মানুষ নিজের জন্য বাঁচতে জানে আপু? জীবনকে টেনে নিতে হবে বলেই মানুষ বেঁচে থাকে, দিনের পর দিন অভিনয় করে চলে। কখনো নিজের সাথেও অভিনয় করে মানুষ।
বাদ দেও এসব, তোমার ভদ্রলোক কই আজ?”
অভিমানি স্বরে মেঘলা উত্তর দিল, “জানিনা, তার জন্যই তো বসে আছি। কাল বলল আজ সকালে এসেই নাকি ব্রিফ দেবে, দেখো দুপুর শেষ হয়ে যাচ্ছে এখনো খবর নেই, তারপর রাত অব্দি বসে থাকা…”
কথা শেষ না হতেই সব সময়ের মত খুব দ্রুত ভাবে দরজা খুলে রঞ্জন ঢুকল অফিসে, বরাবর না তাকিয়ে বামে তার ডেস্কের দিকে তাকালো, হাতে তার ছোট্ট কালো ব্যাগটি। কথা শেষ না করে লবি থেকে তাকিয়ে আছে মেঘলা রঞ্জনের দিকে। রঞ্জন যখন অফিস ঢোকে কেন যেন মেঘলার তখন তাকে দেখতে খুব ভাল লাগে…
চলবে....
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত অফিসে কাজ করা স্বাস্থ্যকর না। এখন ভালো লাগলেও দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা হবে।
অনেকে নিজের জন্য না বেঁচে অন্যের জন্য বাঁচতে ভালোবাসে। এটা দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। তবে প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য থাকা উচিত। প্রত্যেকের অন্তত একটা শখ থাকা উচিত।