নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসা

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪

অফিসের কিবরিয়া ভাই বলছিলেন কোন ভালো মুভি আছে কিনা আমার কাছে।

আমি পুরনো কথাটাই বললাম, আছে বেশ কিছু। কিন্তু মজা পাবেন না।

কেন কেন?

কারন এগুলা অতি উচ্চমার্গীয়।

কিবরিয়া ভাই আস্বস্ত করলেন-কোন সমস্যা নাই। আধঘন্ট পর গাছের একটা পাতা পড়লো এমন ছবি দেখেও তার অভ্যাস আছে।

আমি খুশিই হলাম। কারন আমি বুদ্ধিজীবী টাইপ লোক তাই আমি মজা পাই আর আপনারা আমজনতা, তাই এসব মুভি দেখে মজা পাবেন না এধরনের কোন বার্তা দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যাদেরকে এইসব মুভি দেখতে দিয়েছি পরবর্তীতে তারা জাানতে ভোলেনি আগে জানলে তারা মুভিগুলো নিত না। কারন মুভিগুলো প্রথাগত তো নয়ই বরং অনেক সময় পরিচালক যেন ইচ্ছাকৃত ভাবেই চান যাতে দর্শক একবার দেখে আর না দেখে মুভিটা। দেড়ঘন্টা ’কষ্ট’ করে মুভিটা শেষ করার পরও আপনি হয়তো বুঝলেন না পরিচালক কী বোঝাতে চেয়েছেন। বোঝার জন্য যে আরেকবার দেখবেন সে সাহসও পাবেন না, কারন কেই বা হাতে ধরে বাতের ঔষধ খেতে চায়? উইকিপিডিয়ার সাহায্য নিয়ে যে বুঝতে চাইবেন তাতেও বন্ধুরা আপনাকে উইকিপিডিয়া-বুদ্ধিজীবী নাম দিয়ে দেবে।

নহয় নাম দিলই উইকিপিডিয়া-বুদ্ধিজীবী, কিন্তু ব্যপারটা ঠিক সুস্থ মানুষের ঔষধ খাওয়ার মতো না হলেও স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য পছন্দের খাবার মেন্যু থেকে বাদ দেওয়ার মতো বলা যায়।



শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেই শিক্ষককে আমরা মনে রাখি তা সাধারণত অ-শিক্ষাগত কারণেই। ভার্সিটিতে ছিলেন অধ্যাপক গোলাম মওলা। প্রচন্ড মেধাবী একজন শিক্ষক। এবং মেধাবীদের যে সীমাবদ্ধতা, কোন কিছুর মাঝামাঝি বলে কোন কিছুতে বিশ্বাস নেই, সেটা স্যারেরও ছিল। হয় এসপার নয় ওসপার । অন্তবর্তী কিছু নেই। নিজস্ব বিশ্বাস এবং আদর্শ নিয়ে আমাদের এমবিএর মাঝামাঝি সরকারের নিষধাজ্ঞা নিয়ে জেলে গেলেন। সেগুলো তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমাদের তিনি কিছু জীবনমুখী দর্শন দিয়ে গেছেন।

স্যারের দর্শন ছিলো নিজের লেভেলটা সবসময় অন্যদের চেয়ে একটু উপরে রাখতে হবে। স্যার উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। তেমন কঠিন কিছু নয়। আমি যেই লেভেলে আছি হয়তো ওই লেভেলে লোকজন তেমন একটা খবরের কাগজ পড়ে না। সেখানে সামান্য খবরের কাগজও একজনের লেভেল আপ করতে পারে। যেখানে সবাই হিন্দী সিনেমা দেখছে সেখানে হলিউডি সিনেমা, হলিউডি সিনেমার লেভেলে দুচারট ইতালিয়ান, জাপানিজ বা রাশিয়ান সিনেমা, মাইকেল জ্যাকসনের লেভেলে একটু বিটলস, অথবা ক্রিকেট ফুটবলের লেভেলে একটু টেনিস বা গলফ।

এনিয়ে অবশ্য দ্বিমতও আছে। ভিন্নমতাবলম্বীরা বলে যতই আমি লেভেল আপ করতে থাকব ততই আমি নি:সঙ্গ হতে থাকব। যদি আমার দশজন বন্ধু থাকে এবং আমি লেভেল আপ করতে থাকি একদিন দেখা যাবে আমি আমার বন্ধু-পরিজনকে ফেলে অনেক উচ্চ এক আসনে একা বসে আছি। তাই তারা সবাইকে নিয়ে মধ্য বা নিম্ন লেভেলেই সুখি হতে চায়।

আরেক দল আবার বলে ভালো লাগাটাই বড় কথা। যদি আমি হিন্দী ছবিতেই বেশী মজা পাই দরকার নেই আমার লেভেল আপ করার জন্য সাবটাইটেল দিয়ে একটা জার্মান মুভি দেখার।

এদের কথাতেও কিন্তু যথেষ্ট যুক্তি আছে। তাই আমি যুক্তিতে যেতে চাই না। বলি না যত উপরেই যাও যে বন্ধু পাবার সে পাবেই। আমি যদি বন্ধু হারানোর ভয়ে স্কুল থেকে নিজের লেভেলটাকে কলেজে নিয়ে না যেতাম তবেতো কলেজের ব›ধুদের পেতাম না, কলেজের বন্ধুদের নিয়ে খুশি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের পেতাম না। কিংবা দ্বিতীয় যুক্তি অনযায়ী বলা যায় যদি আমি নতুন কিছু চেষ্টাই না করি তবে বুঝবো কিভাবে নতুন কিছুতে আরও বেশি মজা আছে কিনা। নিশ্চিত ভাবেই আজ যার হিন্দী ছবি ভালো লাগছে একদিন তার বাংলাদেশী সিনেমাই ভালো লাগতো। একদিন সে নতুন কিছু চেষ্টা করেই হিন্দী সিনেমার নতুন টেস্ট ধরতে পেরেছে। যুক্তি এড়িয়ে তাই বলি-- দর্শন তো আর বিজ্ঞানের সূত্র নয়। দর্শন এমনই। যে বিশ্বাস করলো সে হয়তো কিছু পেল। কিন্তু যে বিশ্বাস করলো না সে যে কিছু হারালো তাও নয়।

হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম উপন্যাসেই বোধহয় হিমু একটু পর পর একটা করে কবিতা ছাড়ে। উপন্যাসের শেষ দিকে মারিয়ার বাবা হিমুকে বেশ কিছু কবিতার বই উপহার দেয়। কারন হিসেবে হিমুর কবিতা প্রেমের কথা উল্লেখ করেন। তখন হিমু তাকে সহজ সত্যটা জানায়। হিমু জানায় তার আসলে ততটা কবিতা প্রেম নেই। সে কঠিন দেখে কিছু কবিতা মুখস্ত করে রাখে যায়গামতো ছাড়ার জন্য।

এই উপন্যাস পড়ে আমি এতই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম যে এরপর আমিও কঠিন দেখে কিছু কবিতা মুখস্ত করেছিলাম এবং কিছু স্বীকৃতিও পেয়েছিলাম!

গোলাম স্যারের দর্শনে মুগ্ধ হয়ে আমি আমার লেভেল উন্নয়নে মন দিলাম। সবাই যখন হলিউড-বলিউড নিয়ে মেতে আছে তখন আমি রেস্ট অব দ্যা ওয়ার্ল্ড নিয়ে পড়লাম। অস্কারে প্রতি বছর একটা পুরস্কার থাকে বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম। ওগুলো নামিয়ে দেখা শুরু করলাম। ইরান, আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি, স্পেন--অদ্ভুদ সব মুভি। হয়তো এন্টারটেইনিং না কিন্তু বিষয়বস্তু, চিত্রনাট্য, পরিচালনা, দর্শন সবই অভুতপূর্ব। নেট ঘেটে এসব তালিকা নামাই, মুভি নামাই, দেখি, লেভেল আপ করার চেষ্টা করি। কিংবা পেপারে মাঝে মাঝে আসে দেখে নিন বিশ্বের সেরা দশটি ছবি অথবা ইঙ্গমার বার্গম্যান বা ফেদেরিকো ফেলিনিদের নিয়ে কিছু পেলে পড়ার চেষ্টা করি। রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের লিস্ট দেখে ডাউনলোড করলাম জঝ ৫০০ এৎবধঃবংঃ ঝড়হমং ড়ভ অষষ ঞরসব, শুনলাম। নিজেকে সমৃদ্ধ করলাম। আমি এখন বিটলস্, বব ডিলাম, মার্লেদের নিয়ে দুএকটা কথা বলতে পারি। তারচেয়ে বড় কথা অন্তত নাম দেখে চিনিতো! আর যাকে একবার নামে চিনি তার সম্পর্কিত কিছু পরবর্তীতে পেলে তার প্রতিও একটা চেনা ভালোবাসা থাকে।

এই সবই যে আমার আপন ভালোবাসার তা নয়। কিন্তু নিজেকে সমৃদ্ধ করতে যেহেতু প্রায় দেড়যুগ প্রচন্ড অনীহা নিয়ে একাডেমিক পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পেরেছি সেই তুলনায় এই সমৃদ্ধকরণ তো অনেক কম কষ্টের। নাটোরের মহারাজাই বোধহয় একবার বলেছিলেন, মহারাজা হওয়াও অনেক কষ্টের। সেই তুলনায় লেভেল আপ করাতো অনেক কম কষ্টেরই।

বই পড়াটা আমার নিজস্ব ভালোবাসা। বাকি যা কিছু আছে সবই শেখা ভালোবাসা। বাকি সব কিছু আমার আগন্তুুক আগ্রহ। ভার্সিটিতে পোলাপানদের দেখলাম ওরা ক্লাব ফুটবল নিয়ে এমনকি ঝগড়াও করে। মন না দিলেও ক্লাব ফুটবলে মাথা দিলাম। এলাকার পোলাপানের টেনিসে আগ্রহ আমাকেও টেনে নিয়ে গেল টেনিস পর্যন্ত। অবশ্য আগ্রহটা ধরে রাখায় সানিয়া মির্জ-মারিয়া শারাপোভার অবদানও খাটো করে দেখলে চলবে না। তবে এখন কিন্তু আমি ক্লাব ফুটবল, টেনিস ভালোওবাসি। লেভেল আপ করার পাশাপাশি আমি জানলাম ওসবে মজাও মোটেই কম নয়। বরং এখন রজার ফেদেরারের কোন খেলা আমি ক্রিকেট বাদ দিয়েও দেখতে প্রস্তুত।

এই যে অন্যদের আগ্রহে আগ্রহী হয়ে পড়ছি, অন্যদের দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি এতে আমি কিন্তু নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবি না। বরং দর্শন ধার করার এই দর্শনে আমি সুখিই। এখন আমার জীবন দর্শনই হলো কোন একটা বিষয় নিয়ে লোকজন কথা বলে যাচ্ছে অথচ আমি ন্যুনতম অংশগ্রহণ করতে পারছি না এমন যেন না হয়। হয়তো আমি প্রথম দিন নিরব শ্রোতা, দ্বিতীয় দিনও, তার পরের দিনও। কিন্তু আজীবন নয়, বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন--ব্যাংকের ফরেন ট্রেড, ফরাসি শিল্পকলা, ভারতবর্ষের ইতিহাস, চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবল, রোলিং স্টোন, একাডেমি এ্যাওয়ার্ডস, কিংবা বনফুল-যাযাবর।

মনে ভালোবাসা কম তো কি হয়েছে মাথার ভিতরে তো অফুরন্ত ভালোবাসা।

আর বুদ্ধিজীবীরা বলেন...গুড টিচার টিচেস, বেস্ট টিচার ইনস্পায়ার। যতজনের কাছ থেকে ইনস্পায়ার্ড হয়েছি সবাই সে হিসেবে বেস্ট টিচার। বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৪১

গ্রাম্যবালিকা বলেছেন: আমি যদি বন্ধু হারানোর ভয়ে স্কুল থেকে নিজের লেভেলটাকে কলেজে নিয়ে না যেতাম তবেতো কলেজের ব›ধুদের পেতাম না, কলেজের বন্ধুদের নিয়ে খুশি থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের পেতাম না


নাটোরের মহারাজাই বোধহয় একবার বলেছিলেন, মহারাজা হওয়াও অনেক কষ্টের। সেই তুলনায় লেভেল আপ করাতো অনেক কম কষ্টেরই।

গুড টিচার টিচেস, বেস্ট টিচার ইনস্পায়ার। যতজনের কাছ থেকে ইনস্পায়ার্ড হয়েছি সবাই সে হিসেবে বেস্ট টিচার। বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর...

চমৎকার ইন্সপায়ারিং একটা পোষ্ট পড়ার পড় ভাবছি আপনিও আমার একজন বেষ্ট টিচার! :)


২| ১০ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৩

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: বালিকাদের প্রশংসাই সবচেয়ে বড় ইন্সপায়রেশন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.