নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এ্যলার্মটা বন্ধ করতে সেটটা হাতে নিয়েই দেখলাম একটা এসএমএস এসেছে। সেন্ডার--মুনিম ।
জীবনে আর কী পেয়েছি না পেয়েছি সে হিসেব থাক, তবে রক্ত পেয়েছি মাশাআল্লাহ, যাকে বলে রীতিমতো ব্লু ব্লাড। পকেটে টাকা যাই থাক, শরীরে রক্ত বি নেগেটিভ। ওই সুত্রেই বাধন বাহিনীর আমার স্বরণাপন্ন হওয়া।
যাই হোক, এর আগেও কয়েকবার রক্ত দিয়েছি। কিন্তু জীবনে রক্ত দিয়ে কখনও এতটা গর্বিত, সম্মানিত এবং ভালবাসিত হইনি।
মুনিমের বাবার সাথে প্রথমে দেখা হলো। হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা টাইপ একটা অভিব্যক্তি। হাসপাতালের বেডে দেখা করতে গেলাম রোগির সাথে। ভদ্রমহিলা আর দশটা রোগাক্রান্তর মতই কোনঠাসা, দ্বিধগ্রস্থ, এবং প্রচন্ড জীবনতৃষিত। মুনিমের মা আমার হাত ধরে কেদে ফেললেন । আমি মোটামুটি শক্ত একজন ছেলে। কিন্তু আরেক বার প্রমাণ হলো চোখের জল টিয়ার সেল বা পেপার ¯েপ্রর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালি।
এমনিতেই হাসপাতালে-টাতালে গেলে মনটা নরম হয়ে যায়। ভদ্র মহিলা আমার নরম মনটাকে একেবাবে দ্রবিভূত করে দিলেন। আমি মুনিমের বড় ভাই হয়ে গেলাম এবং মা আমাকে বারবার বারবার বললেন আমার এই ত্যাগ তিনি কখনই ভুলবেন না এবং আমাকেও ভুলতে দেবেন না। তিনি সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরলে আমাকেও অবশ্যই একবার যেতে হবে। তিনিও আমাদের বাসায় আসবেন। আমাদের বাসার সবাইকেও তাদের গ্রামে যেতে হবে। এরকম আরও অজস্র দাবি এবং প্রতিশ্রুতি।
এমন সময় বাসা থেকে ফোন- কোথায় তুমি?
কিছুটা সঙ্কোচের সাথে জানালাম- রক্ত দিতে এসেছি।
শনিবারের অর্ধবেলা অফিস হওয়ায় বিকেলের মধ্যে বাসায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু রাত নয়টাতেও বাসায় না ফেরায় সঙ্কোচ বোধ করলে তাতে সঙ্কোচের কিছু নেই। বাসায় না ফেরার ঝাজটা গেল রক্ত দানের উপর দিয়ে। তোমার রক্ত দেয়ার কী দরকার। দুনিয়ায় আর মানুষ নাই?
বুঝলাম রক্তদানের মহিমা সবাই বোঝেনা।
ভদ্রমহিলা আমার হাত ধরে আর ছাড়তেই চান না। মুনিমকে ইশারায় বললেন ফল কেটে দেয়ার জন্য। আমার শত বাধা উপেক্ষা করেও মুনিম ফল কাটতে লাগল। কোন কাটার না থাকায় সে টেবিল চামচ দিয়েই অপারেশন চালাতে লাগল। অনভ্যস্ত হাতে ফল কাটতে কাটতে সেই ফল রীতিমতো জুস হয়ে ঝরে পড়তে লাগলো। ভালবাসার ফল খেলাম। নিচে যেয়ে নাস্তা করতে হলো, রক্ত দেয়ার পর একটু খারাপ লাগায় বেড-এ শুয়ে ছিলাম, মুনিম আমার মোজা খুলে পা ম্যাসাজ করে দিলো, রক্ত দেয়া শেষে বাবা-ছেলে এসে আমাকে সিএনজিতে উঠিয়ে জোর করে ভাড়াও দিয়ে দিল। আমি বাসায় ঠিকমতো পৌছেছি কিনা সে খবরও নিল। পরদিন অফিসে পৌছার পর হাতে ব্যথা আছে কিনা সেই খবরও নিয়েছে। আমাকে বেদানা খাওয়ানোর আন্তরিকতাতেই আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। এরপর পা ম্যাসাজ করা এবং সিএনজির ভাড়া দিয়ে দেয়াতে আমি খানিকটা অস্বস্তিতেই পড়লাম। কারণ পরবর্তিতে না অন্য কারো বেলায় সমাদর এর চেয়ে কম হলে আমি আবার মাইন্ড করে বসি!
এত আন্তরিকতার কথা শুনে আম্মুও মুনিমের মা’র সাথে কথা বলার ব্যপারে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেন তার শারিরিক অবস্থা। আমি ভালবাসার ভার কিছুটা লাঘবের জন্যই দুপক্ষের মধ্যে সরাসরি সংযোগ করে দিলাম।
দুএকবার কথা বলে আম্মু আরও খুশি। মহিলা নাকি বেশ ভালো। এবং মাত্র একবার রক্তের বিনিময়ে তিনি আম্মুকে রতœগর্ভার স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন। বুঝলাম আম্মুর খুশির কারণ। বাবা-মাকে খুশি করতে পারাটা একটা বিশেষ আনন্দের। অন্য সবাইকে খুিশ করার মধ্যে থাকে ত্যাগের মহিমা। আর বাবা-মা কে খুশি করার মধ্যে প্রাধানত থাকে বিজয়ের গৌরব। আম্মুর খুশি দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এরকম খুশি করার সুযোগ ভবিষ্যতে সহজে হাতছাড়া করব না। এ বিজয়ধারা ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে হবে। কোন পজেটিভ কাজের স্বীকৃতি থাকা জরুরি। মহৎ লোকেরা স্বীকৃতির আশায় কাজ করেন না। কিন্তু আমরা যারা অ-মহৎ বা অল্প-মহৎ, এবং বোকা-সোকা স্বীকৃতি আমাদের কাছে অনেক কিছু।
মুনিমের মা সুস্থ হয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। তবু ওরা মাঝে মাঝেই ফোন করে খোজ খবর নেয়। ভাবলাম তেমন কোন রুটিন কোয়েরি। মেসেজে সহজ ইংরেজিতে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন একটা বাক্য লেখা--My mother is dead.
মুনিমকে কি বলে সান্তনা দেব খুজে পেলাম না। আমার শুধু মনে হলো বিধাতা সবার আতœদান কবুল করেন না। অনেক ত্যাগই ইতিহাস মনে রাখে না। অনেক রক্তদানই বৃথা যায়। মিছিলে আরেকটি নাম যোগ হলো।
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
সোহাগ সকাল বলেছেন: অনিরুদ্ধ!
আপনি খুব ভালো লেখেন।
৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪৬
অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: সুফিয়া,আমি দু:খিত। তবু আপনি এবং সোহাগ সকাল ভাল থাকুন।
৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮
নীল-দর্পণ বলেছেন: এত সুন্দের একটা লেখা পড়ছিলাম.....ভাবতেই পারিনি শেষে এসে এরকম.....
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪
সুফিয়া বলেছেন: মা মা-ই। সে যেখানেই থাকুক যেভাবেই থাকুক।
আমার মাও নেই।
Click This Link