নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরবতা হিরন্ময়

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:১৭

চারিদিকে যখন শোনা যায় কেবল নাই আর নাই তখন এরই মাঝে অন্তত একটা যায়গা আছে যেখানে কেবল আছে আর আছে। সেটা হলো অনুভূতি।

ব্যপারটা এখন এমন দাড়িয়েছে যেন আমাদের অতিত নাই, ভবিষ্যৎ নাই, কেবল অনুভূতি আছে। আমাদের চাকরি নাই, ব্যবসা নাই, অনুভূতি আছে। আমাদের পানি নাই, বিদ্যুৎ নাই, অনুভূতি আছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ধর্মীয় অনুভূতি।

আমাদের ভালোবাসার অনুভূতি আছে কিনা আমি নিশ্চত নই, আমাদের মানবিক অনুভূতি আছে কিনা আমি নিশ্চত নই, তবে আমাদের ধর্মীয় অনুভুতি যে প্রবলভাবে আছে সে ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। আামদের দেশে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে কাজি অফিস পর্যন্ত যেয়ে এসিড মারার নজির আছে, আমরা বিচলিত হই না, আমাদের অনুভুতিতে আঘাত লাগে না; আমাদের দেশে দিনে দুপুরে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, আমদের যতটা বিচলিত হওয়ার কথা ততটা বিচলিত হইনা, আমাদের অনুভূতিতে ততটা আঘাত লাগেনা; আট-দশ বছরের কিশোরি ধর্ষিত হয়, আমাদের অনুভুতিতে আঘাত লাগে না; নিরিহ মানুষকে পাশের দেশের সীমান্তরক্ষীরা নির্বিচারে হত্যা করে, আমাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগেনা; আমাদের অনুভূতিতে প্রচন্ড আঘাত লাগে যখন ধর্ম নিয়ে, বিষেশত ইসলাম নিয়ে কেউ কোন কথা বলতে চায়। কারন শুধু ধর্মীয় ব্যপারে যদি অনুভূতিতে আঘাত লাগত তবে প্রতিমা ভাংচুর এবং বৌদ্ধমন্দিরে অগ্নি সংযোগেও আমাদের প্রচন্ড আহত হবার কথা ছিল।

পরিহাস এই যে, আমরা আর্থ-সামাজিক বিষয়াদির দেখভালের দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে ধর্মের দেখভালের দায়িত্ব নিজেরা নিয়েছি! ব্যাপারটা এমন যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পারস্পারিক সহমর্মিতা, সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা এই সব বিষয়াদির দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার আর ধর্মের হেফাজতের দায়িত্ব মানুষের।

যাই হোক সেই মহান দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার আজকাল আমাদের দেশের পক্ষে বিরল এক গুণ--দায়িত্বশীলতা, তারই পরিচয় দিচ্ছেন। ’দায়িত্বশীলতা আমাদের দেশের পক্ষে বিরল গুণ’ বলতে আমারও বাধে, কিন্তু আমাদের দেশে পুলিশের উপস্থিতিতে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা মোটেই বিরল কিছূ না, চিকিৎসকের ধর্মঘট বিরল কিছু না, জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার সময় রাজনৈতিক দলের হরতাল বিরল কিছূ না। যেখানে যেকোন প্রকার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ভুবি ভুরি উদাহরণ দেয়া যায সেখানে কোন প্রকার দায়ীত্বশীলতাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আরও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ সেই বিশেষ গুণের প্রথম শিকার ’মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র মুক্তিযোদ্ধারা--ব্লগার রা।

সরকার মুখে বলবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা আর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করবে স্বাধীন মত প্রকাশকদের, এতে যদি কেউ অবাক হয় তবে তাকে বাহবা দিতে হয়, কারণ এখনও তার অবাক হবার ক্ষমতা যথেষ্ট ভালো। যে দেশে লাইভ খুনের দৃশ্য দেখা যায়, দেশে যখন শুক্রবারেও হরতাল দেখা যায় তখনও সেই দেশে এত সহজেই অবাক হতে পারাটা আসলেই বড় ব্যাপার। সরাকারের এই কার্যক্রমে আসলেই অবাক হবার কিছু নেই কারণ বাংলাদেশ সরকারই যে এই কাজ প্রথম করল তা নয়। এক্ষেত্রে বরং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের একটা কাজ করল। আন্তর্জাতিক মানের, কারন ইউরোপ-আমেরিকাওতো একই কাজ করে। স্বাধীন মত প্রকাশের তীর্থভূমি বরে পরিচিত আমেরিকা জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াচ্ছে বাংলা ’একঘরে’ কথাটার আক্ষরিক অর্থ। তারাই আবার মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে নকুলা বাসিলকে প্রশ্রয় দেয়।

এই দ্বৈতনীতি, এই দ্বিমুখিতাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। কারণ এতে বোঝা যায় না কার হাত পরম নির্ভরতায় ধরতে হবে, এবং শত প্রলভনেও কার থেকে দূরে থাকতে হবে। মাঝে মাঝে তো হিটলারকেও অনেকের চেয়ে ভালো মনে হয় কারণ সে তো অন্তত নিশ্চিতভাবেই গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেই জেনেও এর নামে কোন দেশ আক্রমণ করেনি। আক্রমণ করতে ইচ্ছে হয়েছে, আক্রমণ করেছে। এটাও ভালো, কারণ আপনি নিজেকে এর পক্ষে বা বিপক্ষে স্পষ্টভাবে দাড় করাতে পারবেন। আর যখন নিজের কাছে নিজেকে স্পষ্ট করতে পারবেন তখন ফলাফল যাই হোক না কেন আপনিই জয়ী। তাই আপনাকে আটকানোর হাজার বছরের পুরনো কৌশল হলো আপনাকে স্পষ্ট হতে না দেয়া, বিভ্রান্ত করে রাখা।

এই একটা যায়গায় তারা সবাই এক। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, আমেরিকা, প্রথম আলো-- সবাই এক। এদেশে প্রথম আলো নিজেদেরকে স্বাধীন মত প্রকাশের অন্যতম মুখপাত্র বলে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। তবুও এই তালিকায় প্রথম আলোকেও যুক্ত করতে হলো কারণ কিছুদিন আগে আবার একটা ব্লগ তারা প্রকাশ করেনি। বলাবাহুল্য, এতে আমার ’অনুভূতিতে’ আঘাত লেগেছে। কিন্তু কিই বা এসে যায়, এটাতো ছিল অহংবোধের অনুভূতি, ধর্মীয় অনুভূতি ছিল না। জানিনা এতে স্বাধীন মত প্রকাশের সংজ্ঞার বাইরে কিছু ছিল কিনা। স্বাধীন মতামতের কোন সংজ্ঞা আছে কিনা আমি জানি না। থাকাটা জরুরী। এবং সেই লেখায় কোন কোন বিষয় সংজ্ঞা-লঙ্ঘণ করেছে তা জানতে পারলে উপকৃত হতাম। ভবিষ্যতে সাবধান থাকতে পারতাম। প্রথম আলো ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ রইল। Silence Is Gold, নিরবতা হিরন্ময়, কথাটার নিগূঢ় অর্থটা ইদানিং ধরতে পারলাম। এতদিন কথাটার শুধু রোমান্টিক ব্যাখ্যাই দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর একটা রিয়েলিস্টিক ব্যাখ্যাও দেয়া যায়। যেই ব্লগাররা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা যদি লেখালেখি না করে চুপ করে বসে থাকত, সাইলেন্ট থাকত তাহলেই পেত এই হিরন্ময়তা। মুরুব্বিরা বলেন সংসারে সুখের মুলমন্ত্র হলো চুপ করে থাকতে পারাটা। কারণ কথা বললেই তা অপরের অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে। কী দরকার ভাই ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়ানোর? খুন, এ্যসিড, ধর্ষণ, অপহরণ এসবেতো আর তেমন অনুভূতি জাগে না। বাকি গুলোও একটু চেপে যান, আর একটু নিরব থাকুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.