নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবকিছুরই একটা রেডিমেড সল্যুশন থাকে। থার্টি ফার্স্ট, পহেলা বৈশাখ, ভ্যালেন্টাইন, ফ্রেন্ডশীপ ডে, ঈদ, জন্মদিন সব কিছুর, সব কিছুরই। শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হবে, হয়তো অতটা শুভ ইচ্ছা নেই, সমস্যা নেই, রেডি এসএমএস আছে, ফরওয়ার্ড করলেই হলো। একই অকেশনে একই এসএমএস একাধিক জনের কাছ থেকে পেয়েছি বা পরের বছর সেই জিনিস অন্য আরেকজনের কাছ থেকে পেয়েছি এমন অহরহ হয়েছে। জন্মদিনের একটা কমন এসএমএস ছিল, "When you born, it was raining. But it was not the rain; it was the tear drop of the sky. The Sky was crying losing its brightest star.” বা এই ধরণের কিছু একটা। ফরওয়ার্ডেড মেসেজ, তাই তার মধ্যে কোন ব্যক্তিত্য টের পেতাম না। কিন্তু আজকের এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দিনে মেসেজটার কিছুটা ব্যাক্তিত্য মনে উকি দিল। উজ্জলতম নক্ষত্রকে হারিয়ে আকাশের কাঁদা কি একদমই অসম্ভব?
ভেবেছিলাম টিভি সংবাদ বা সংবাদপত্রটত্র এই কয়দিন একটু এড়িয়ে যাবো। গত তিন দিনের সংবাদপত্র না পড়ে মাথার কাছে জমিয়ে রেখেছি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা। সকালে নাস্তা করতে করতেই টেবিলে রাখা সংবাদপত্রের দিকে চোখ গেল, এবং একটা লাইন পড়েই ফেললাম, ’পাপকে ঘৃণা করি, পাপীকে নয়।’ অফিসে স্যারের টেবিলে রাখা সংবাদপত্রের কান্না বিজড়িত ছবিটার দিকেও চোখ আটকে গেল। স্যারও বোধহয় পড়ছিলেন সংবাদটা। হেডিংটা না পড়েও পারলাম না-- Tears earn sympathy for Ashraful than hate.
এই জন্যই এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম এসব সংবাদ। আমরা আবেগী জাতি। আবেগ সব কিছুই ভাসিয়ে নিতে যায়, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়। আর চোখের জল হলেতো কথাই নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র। আশরাফুলের চোখের জল আমাদের অনেককেই ঘায়েল করে ফেলেছে। এই চোখের জল দেখেই একবার আমার এও মনে হয়েছিল যে, যদি ক্ষমতা থাকত আমি এরশাদ শিকদারকে ক্ষমা করে দিতাম! সেই তুলনায় আশরাফুলের অপরাধকে লঘুই বলা যায়। যে দেশে আড়াই হাজার-তিন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ’তেমন বড় কিছু না’ সে দেশে সাত লাখ, দশ লাখ, পঁচিশ-ত্রিশ লাখ টাকার দুর্নীতি আসলেই বড় কিছু না। তবুও একটা কথা থেকেই যায়।
আর যে কোন ক্ষেত্রেই চোখের জলের ব্যবহার আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগে। এটা এমন একটা আবেদন, মঞ্জুর না করেও উপায় থাকে না। আর এই বাধ্যতামূলক আবেদন মঞ্জুর করিয়ে নেয়াটা কারও দুর্বলতার সুযোগ নেয়ার মতো মনে হয় আমার কাছে। এজন্য পিস্তল ঠেকিয়ে পয়সা নেয়া, ফাইল আটকে ঘুষ নেয়া আর চোখের জলে সহানুভূতি পাওয়া আমার কাছে সমান অপরাধ মনে হয়।
আশরাফুলের চোখের জলে আহত অনেকেই সত্যি সত্যিই যুক্তি তর্ক দিয়ে আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের উদাহরণ টেনে প্রমাণ করে দিচ্ছেন আশরাফুল তাদের চেয়ে ভালো। তাদের কথা শুনে আমারও ভালো লাগে, কারন তারা আমার এই প্রিয় খেলোয়াড়টিকে আমার চেয়েও অনেক বেশী ভালোবাসেন। আমরা কেউই শতভাগ শুদ্ধ নই। একজন মানুষ শতভাগ শুদ্ধ বলে সে ভালো মানুষ, ভালোমানুষী অনেক সময়ই এভাবে নির্ধারিত হয়না। বরংতা নির্ধারণ হয় একজন মানুষ কতখানি কম অভালো তার ভিত্তিতে। অনেক স্মার্ট মানুষই আছে জীবনে ভালোমতো একটা দান মেরেই চুপ। কে আর কার খবর রাখে। কিন্তু আশরাফুলের এই স্মার্টনেসটাও দেখাতে পারল না। পাঁচ-দশ কোটি টাকা হলেও তাও মনকে সান্তনা দেয়া যেত, সে বড় কিছু একটা করতে পেরেছে। কিন্তু এই ছিচকে ফিক্সিং-এ সে সান্তনাও পাবার যো নেই। আর সবচেয়ে কম অ-ভালোর ভিত্তিতে যে ভালমানুষতা নির্ধরণ করা হয়, তা মূলত করা হয় সব খবাপ মানুষের মাঝ থেকে কাউকে বেছে নিতে হলে। কিন্তু যখন সব ভালো মানুষের মাঝ থেকে কাউকে সামান্য অ-ভালোতার জন্যও আলাদা করা হয় তখন তা সত্যিই দু:খ জনক।
যারা বলে ’দেশের আর সব মানুষ দুর্নীতি করতে পারলে খেলোয়াড়রা কী দোষ করলো? আর সবাই যদি রক্ত-মাংসের মানুষ হয় আশরাফুল কি দেবতা নাকি?’ তাদের কি করে বোঝাব আর দশজন মানুষের ঘুষ খাওয়া আর আমার বাবার ঘুষ খাওয়া এক নয়, আর দশটা যুবকের সন্ত্রাসী-–চাদাবাজ হওয়া আর আমার ভাই-বন্ধুর সন্ত্রাসী হওয়া এক নয়, আর দশটা মেয়ের চারিত্রিক দুর্বলতা আর আমার প্রেয়সীর চারিত্রিক দুর্বলতা এক নয়। আর সকল দুর্নীতির প্রতিকার চাই আমি মস্তিষ্কের সচেতনতা থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে, আর এক্ষেত্রে বিচার চাই অন্তরের কষ্ট থেকে, গ্লানি থেকে। আশরাফুল রক্ত মাংশের মানুষ। মানুষের ভুল হয়। কিন্তু ভুল হলে তা একবার হয়, দুই বার হয়। কিন্তু ভুলেরতো আর এক দশকের ক্যারিয়ার (২০০৪-২০১৩) হতে পারে না।
আশরাফুলকে ভালোবাসতে পারেনি এমন ক্রিকেট সমঝদার বাংলাদেশে আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। উৎপল শুভ্র যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেয়া সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যটসম্যান। হুমায়ূন আহমেদও বিম্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন এই দ্বিধাবিভক্ত দেশে এই তরুণ কিভাবে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পুরো জাতিকে ভেদাভেদ, দু:খ-হতাশা-অপ্রাপ্তি ভুুলে কিভাবে একটা সার্বজনীন আনন্দে ভাসাতে পারেন। আশরাফুলের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক প্রথম এসেছিল। তার হাত ধরেই এদেশের ক্রিকেটে আরেকটা প্রথম আসলো। আশরাফুল ছিল আমাদের প্রথম প্রকৃত সুপারস্টার। আশরাফুলই প্রথম প্রকৃত ভিলেন।
তবে যে বড় ভাই ছোটভাইকে নীতিবাক্য শেখানোর বদলে বুকির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যে লোক গার্মেন্টস মালিক হবার জন্যে জন্মগ্রহণ করে হঠাৎ একদিন ঢাকা গ্ল্যাডিয়রস নামের একটা ক্রিকেট দলের ফ্রঞ্চাইজর হয়ে যায় এবং বিগত বছরের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করার নামে গার্মেন্টস মালিক স্টাইলে অন্যয্য প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তাঁদের শাস্তি না হলে ’এই আশরাফুলদের’ উৎপাদন বন্ধ হবে না।
বাংলাদেশ দলে বর্তমানে আরও অনেক প্রতিভা আছে, তাই আশরাফুলের অভাব তেমন একটা বোঝা যাবেনা বলে যারা আশরাফুলের শাস্তি চান, আমি তাদের সাথেও একমত নই। যতই হাজারো প্রতিভা থাক, আশরাফুল আশরাফুলই। এর পরও আমি চাইব এর একটা দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হোক। হ্যানসি ক্রনিয়ে তৎকালিন দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ঢের বেশি অপরিহার্য ছিলেন, তবুও তার পরিণতি বাকিদের জন্য শিক্ষা হবার কথা ছিল। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, তা আবারও প্রমাণিত হলো।
দন্ডিতের সাথে
দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।
জাতি কাঁদুক আশরাফুলের জন্য। আশরাফুলের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে আমার তাতে অসমর্থন থাকবে না। কারণ আমি চাইনা ব্যাক্তি আশরাফুলের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা সামষ্টিক বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি আমার ভালোবাসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করুক।
২| ১১ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:১০
অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
দন্ডিতের সাথে
দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।