নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিশান-ই-পাকিস্তান

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৮

গোলাম আযমের রায়ের পর আমার কাছে রায় যথেষ্টই মনে হয়েছিল। আড্ডায় এ কথা তুলতেই পোলাপান হুঙ্কার ছাড়ল। আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলার চেষ্টা করলাম, লোকটার বয়সতো অনেক হয়েছে, দেখলে মায়া লাগে। পোলাপান গোলাম আযমের নামের সাথে মায়া শব্দটা শুনে আরও তেতে উঠলো।



আমাকে বোঝাতে শুরু করলো যখন হত্যা, ধর্ষণ, লুঠতরাজ করেছে, এগুলোর পরিকল্পনা করেছে, যখন হানাদার বাহিনীকে সর্বাত্বক সহায়তা করেছে তখন তো তার মায়া লাগেনি, বুক কাপেনি। গোলাম আযমের হাতে, তার বাহিনীর হাতে নিহত-নির্যাতিতের মধ্যে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এই বয়সী বৃদ্ধ ছিল, শিশু ছিল, নারী ছিল। গোলাম আযমের প্রতি মায়া লাগার যৌক্তিকতা ওরা একেবারে উড়িয়ে দিল।



যুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের জন্মে বিশ্বাস আনেনি, বরং সাধ্যমতো এর বিরোধিতা করেছে আমি কেবল এই অপরাধে তাদের কখনও অপরাধী করতে পারিনি। আজ যদি চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে যেতে চায় আমরা অপরাপর বাংলাদেশীরাতো বটেই এমনকি অনেক ’চাটগাইয়া’ও এর বিরোধীতা করবে। এবং সেই বিরোধীতাকেই আমরা বৃহত্তর বাংলাদেশীরা স্বাভাবিক চোখে দেখব, প্রশংসার চোখে দেখব, কেননা সে চায় অখন্ড বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশের মানুষ তাকে যতই শ্রদ্ধার চোখে দেখি না কেন, যতই দেশপ্রেমিক বলি না কেন সাধারণ চট্টগ্রামবাসীর কাছে সে চির বিশ্বাসঘাতক, রাষ্ট্রদ্রোহীই হবে। এবং পৃথিবীর যে কোন দেশে, যে কোন কালে, যে কোন সমাজে রাষ্ট্রদ্রোহীতার একমাত্র শাস্তি মৃত্যদন্ড। যারা একটা অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছেন আর এজন্যই বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন, ভালো কথা, আমি ব্যাক্তগতভাবে বরং তাদের শুভবোধের প্রসংশাই করবো। পাকিস্তান টিকে গেলে তারা নূর-ই-পাকিস্তান, নিশান-ই-পাকিস্তান, নিশান-ই-হায়দার , মন্ত্রী, মিনিস্টার অনেক কিছুই হতেন, এটাও খুবই সম্ভব ছিল। সাথে তাদেরকে তো এটাও মানতে হবে যে, পাকিস্তানকে হটিয়ে যদি ’বিদ্রোহী’রা জিতে যায়, যদি নতুন সূর্যোদয় হয়, সেই নতুন দিনে, সেই নতুন দেশে পাকিস্তানের বেস্ট-ফ্রেন্ড হিসেবে তাদের মৃত্যুদন্ডই একমাত্র প্রাপ্য। আমাদের জাতীয় বীরেরা এই সহজ সত্যকেই প্রমাণ করে গেছেন তাদের জীবন দিয়ে। ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রিতিলতা, ভগত সিং, তিতুমীরেরা বিদ্রোহী হিসেবেই জীবন দিয়ে গেছেন, মৃত্যুর পরও বহুদিন বয়ে বেড়িয়েছেন সন্ত্রাসী-রাষ্ট্রদ্রোহীর তকমা।



কিন্তু আমরা বাংলাদেশীরা এক্ষেত্রে এতদিন ছিলাম এক ঐতিহাসিক ব্যাতিক্রম। যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা, যারা আমাদের জন্মসারথীদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে, লাঞ্ছিত করেছে, লুন্ঠিত করেছে, তাদের গাড়িতে আমরা দিয়েছি আমাদের জাতীয় পতাকা, তারা সসম্মানে গেছেন স্মৃতিসৌধ, তারা বসেছেন সংসদে। রাজাকারের রাষ্ট্রীয় গাড়ি আর এদেশে মুক্তিযোদ্ধা রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়, রাজাকারের সরকারি বাড়ি, অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন গৃহহীন। Really Seleucus, what an amazing country is this!



আমার তো মনে হয় যারা তাদের ভোট দেয় তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। কিন্তু বিচারের আওতায় আনবে কে? কে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে সে কখনও এই গোলাম আযম এন্ড কোং-এর আশীর্বাদ গ্রহণ করেনি? আওয়ামী লীগ? বিএনপি? কেউ পারবে না। সবাই গোলাম আযমের আশীর্বাদধন্য হয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেখা গেছে বাংলাদেশে শুধু নানান ধর্ম-বর্ণ আর শ্রেণীপেশার মানুষেরই সহাবস্থান নয় বরং দেশ প্রেমিক আর দেশদ্রোহীদেরও সহাবস্থান। আমাদের গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা কি তখন বলতে পারতেন না, রাষ্ট্রদ্রোহীর সাহায্য নেবার চেয়ে আরও এক দশক স্বৈরাচারিত হওয়া ভালো? না, আমাদের গণতান্ত্রিকেরা কেউই একথা বলতে পারেন না, কেননা তারা বিশ্বাস করেন যাকেই আকড়ে ধরে ক্ষমতা পাবার কোন সম্ভবান তৈরী হয়, তিনিই হালাল।



আর আমার করুণা হয় আমাদের বয়সী যেসব ছেলেরা গোলাম আযমকে তাদের নেতা মানেন, তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন, তার দলে ভিরে যান, তার রায়ের প্রতিবাদে হরতালের ডাক দেন। করুণা হয় কারণ তারা কী করছে ঠিকমতো জানেই না। মানুষ ক্রিকেট বা ফুটবলে দল বেছে নিতে যেয়ে যদি জানতে পারে উক্ত দলটির ফিক্সিং বা অন্যকোন কেলেঙ্কারির ইতিহাস আছে তারা অন্য দল বেছে নেয়, স্কুল-কলেজ বা চাকরি বাকরি বা বিয়ে-সাদির ক্ষেত্রেও যে প্রতিষ্ঠানের বা পরিবারের চৌদ্দগোষ্ঠীতে কোন ’ঘটনা’ থাকে তা এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। কারণ কখনও কোন কথা উঠলে কে এর জবাব দেবে? কে এই গ্লানি বয়ে নিয়ে বেড়াবে? যদি এমন হয় দেশে আর কোন পাত্র বা পাত্রী নেই, তাই বিয়ে করলাম, অণ্য কোন পথ খোলা নেই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে গেলাম সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু জামায়াতে ইসলাম তো আর পিতা-মাতা নয় যে তা ডিফল্ট চয়েজ, এটা দেশ নয়, সন্তান নয় যে ভালা-মন্দ, গরীব-দু:খী, সুন্দর-অসুন্দর যাই হোক তাই নিয়তি। তাই যখন সকল পথ খোলা থাকা স্বত্তেও তরুণ সমাজ কোন করঙ্কিত দলে নাম লেখায় তখন তাদের জন্য করুণা হয় বৈকি। কবি আবদুল হাকিমের ভাষায় বলতে হয়, ”সেসব কাহার জন্ম নির্নয় ন জানি।”



যে উদ্দেশেই হোক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে প্রক্রিয়া শুরূ হয়েছে তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। কেননা যদিও কিছুটু গুঞ্জন আছে যে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর যুদ্ধাপরাধীদেরই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, তবুও আশার কথা এই যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে সংস্কৃতি শুরু হলো তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। এবং যেই দলই ক্ষমতায় আশুক না কেন, তারা যদি শুধু বিরোধীদলীয় যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করে তাহলেও বাই রোটেশন একদিন না একদিন সকল যুদ্ধাপরাধীরই বিচার হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.