নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট একটা কাজ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৬

রবির একটা এ্যাড দেখা যাচ্ছে আজকাল--ছোট্ট একটা কাজ, যদি করে দেখাও আজ। বেশ আশাপ্রদ কথা, আশাপ্রদ বিজ্ঞাপন। ছোট একটা কাজ দিয়েই শুরু হোক। আমাদের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করে যে ছোট কোন কিছু আসলে কোন কিছইু না। ছোট ভালো কাজও তেমন ভালো কিছু না, আবার ছোট খারাপ কাজও তেমন খারপ কিছু না। এই ভুলটা ভাঙা জরুরি। কারণ এখানে প্যারাডক্সটা হলো, ছোট্ট ভালো কাজটা তেমন ভালো কিছু না বলে আমরা সেই ভাল কাজটা করি না, আর ছোট খারাপ কাজটা করে ফেলি কারণ সেটা তেমন খারাপ কিছু না! গ্যাসের চুলাটা সারাদিন জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজন না থাকলে চুলাটা বন্ধ করা যে একটা ভালো কাজ, আমরা সেভাবে তা ফিল করি না। আবার কারও ফোনের এসএমএস গোপনে পড়ে ফেলা বা ফুটপাথে মোটর সাইকেল উঠিয়ে দিয়ে আবার ক্রমাগত হর্ণ বাজিয়ে পথচারীর কাছ থেকে জোরপূর্বক সাইড আদায় করার মতো কাজগুলিকে তেমন কোন খারাপ কাজের মধ্যে না ফেলে আমরা করে ফেলি।



’আসুনা কথায় কথা বাড়াই’-এর যুগে এধরনের একটা বিজ্ঞাপন একজন মানুষকেও একটা ছোট ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে তাহলেও বলতে হবে দেশের স্বাভাবিক ভালো কাজের চেয়ে একটা ভালো কাজ বেশী হলো। মহৎ লোকেরা ভালো কাজের প্রচারণায় বিশ্বাসী নন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এধরনের প্রচারণায় বিশ্বাসী। কেননা প্রচারেই প্রসার। তা ভালো হোক, মন্দ হোক। বাস্তববাদী লোকজন আজকাল বলতে শিখে গেছে ’নিজের ঢোল নিজেকেই পেটাতে হবে।’ পরে যদিও একটা পাঞ্চলাইন থাকে-- 'অন্যকে পেটাতে দিলে তারা ঢোলটা ফাটিয়ে ফেলতে পারে।’ তাই আমি বলি নিজের ঢোল নিজেই পেটান না, যদি একজনও অনুপ্রাণিত হয়? মানুষ অনুকরণ করতে পছন্দ করে। তাই হোক না ভালো কাজের প্রচার। ’বাড়ি তো যেতেই পারব, কিন্তু বাচ্চাটা যদি হারিয়ে যেত?’ যদি একজনকেও উদ্বুদ্ধ করে!



বছর তিন-চারেক আগেও আমাদের আড্ডায় ক্লাব ফুটবলের তেমন কাটতি ছিল না। কিন্তু ওই দুই-তিন জনের আলোচনা আলোচনাতেই দু-এক জনের আগ্রহ তৈরি হতে লাগল। ’মেসি কোন দলে খেলে’, ’ফার্গুসন কোন দলের কোচ’, ’চেলসির মালিকের নাম কী যেন’ করতে করতেই লীগ ফুটবল এখন আমাদের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।



ফুটবল, ক্রিকেট, হিন্দি সিনেমার আইটেম সং আর অনন্ত জলিল করে আড্ডা গরম করে তুললেও আড্ডার পোলাপান নিয়মিত ব্লাড ডোনেট করে। দিপু-সোহাগের-বরকতদের নয়-দশবার করে দেয়া হয়ে গেছে; বাকিরাও চার-পাঁচ বার করে দিয়েছে। ওদের সাথে কথায় অংশ গ্রহণ করার জন্যে হলেও দু-এক বার আমার রক্ত দেয়া প্রয়োজন এই চিন্তাতেই প্রথমবার দেওয়া। এখন আমারও চারবার হয়ে গেছে!



পেপার-পত্রিকা বা এদের দিয়ে খুব একটা ভরসা পাই না কারন এরা আর কত করবে? সচেতনাতার নামে হঠাৎ একটা আওয়াজ তোলে, তারপর চুপ। কয় দিন চলে এসিড বিরোধী আওয়াজ, কয়দিন চললো ইভ টিজিং-সারা দেশে কে কোথায় ইভ টিজিং এর শিকার হলো, কে প্রতিবাদ করলো, কার জরিমানা হলো, কে প্রতিবাদ করতে যেয়ে নিহত হলো এসবের বিশদ আলোচনা-সমালোচনা; অথচ অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দেশে এখন কোন ইভ টিজিং নেই। তেমনি কিছু দিন চললো ইয়াবা নিয়ে। ঘরে ইয়াবা, বাইরে ইয়াবা, তার পর ইয়াবাও চুপ। তারপর ধর্ষণ, তারপর খুন, তারপর গুম, ক্রস ফায়ার, ব্যাংক জালিয়াতি। আমাদের দেশেতো ইস্যুর অভাব নেই। তাই একটা নিয়ে ইচ্ছা থাকলেও বেশী দিন লেগে থাকা যায় না।



দেশের বিজ্ঞাপন নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা সন্দেহ কাজ করে সবসময়। একবার জয়া আহসান হারিয়ে গেল, সংবাদ পত্রে নিউজ দেখলাম। আশিয়ান সিটির নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাতে গিয়ে কত লোকের ঘুম হারাম। ’রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র দশ মিনিটের পথ’ হলো নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর। তাই কোন প্রকার ভালো কথা শুনলেই আমরা খোজার চেষ্টা করি কোথাও একটা কিন্তু আছে। যতই রাহুল গান্ধী রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ছাড়া কৃষকের মাঝে মিশে যাক, যতই আহমাদিনেজাদ একটা মোটর সাইকেল নিয়ে সরকারি বাসভবন ত্যাগ করুক আমরা ঠিক মতো খুশি হতে পারিনা। আমাদের পোড় খাওয়া মন ঠিকই আমতা আমতা করে। বুঝি এসব দুটা ভালো কথা বলে মানুষের ’নেক নজর’ পাওয়ার ধান্দা ছাড়া আর কিছু নয়, তবুও বলতে হয় ’আসুন কথায় কথা বাড়াই’ এর মতো কথা না বলে যদি কেউ বলে 'ছোট্ট একটা কাজ যদি করে দেখাও আজ’ এবং টাকা কামাতে চায়, তা ভালোতো, ভালো না?



আমাদের সমাজে বর্তমানে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের যে ক্রান্তিকাল চলছে তাতে এসব ছোটখাট ভালো কাজের যথাযথ স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা সন্তান কে মেরে ফেলছে পরকীয়ার জেরে, মেয়ে বাবা-মা কে মেরে ফেলছে নেশার করে, ভাই ভাই কে মেরে ফেলছে। এসব তো গেল চুড়ান্ত হিসাবের কথা। এছাড়াও আরও কত আছে। শিক্ষকের শখ ছাত্রীর ’মিউজিক ভিডিও’ বানানো, গার্মেন্টস মালিকের শখ জালিয়াতির অঙ্ককে হাজার কোটি টাকার কোটায় নিয়ে যাওয়া, মন্ত্রীর শখ পারসেন্টেজ...



যে উদাহরণগুলো দেয়া হলো তা অবশ্যই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবুও একজন নিরাশাবাদী এখানেই থেমে যাবে। আর একজন আশাবাদী বলবে, রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে। আর সংশয়বাদীরা ভাবতে থাকে এসব সন্ধ্যার আলামত নাকি শেষ রাতের।



এ বিষয়ে সরকারের প্রতি আমার একটা প্রস্তাবনা আছে। নতুন আরেকটা মিনিস্ট্রি খোলা হোক--মিনিস্ট্র অব ভ্যালুজ এন্ড এথিকস্। যারা কাজ করবে ন্যাশনাল মরালিটি লেভেল নিয়ে। বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচারণা, পুরস্কার-সম্মাননা ইত্যাদির মাধ্যমে ভালো কাজ, ভালো দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আরও দৃশ্যমান করে তোলা। ন্যাশনার মরালিটি ডে, জাতীয় চেতনা পদক, জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো জাতীয় শুভ্রতা-পত্র, যেই পত্র দিয়ে আবার ভিআইপি-সিআইপিদের মতো কিছু অগ্রাধিকারমূলক কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে, মুক্তিযোদ্ধা এবং হাজারো কোটার ভিরে না হয় আরও একটা কোটা যুক্ত হবে... ইত্যাদি ইত্যাদি। না হয় আওয়ামী লীগ আসলে নাম হলো বঙ্গবন্ধু মূল্যবোধ পদক আর বিএনপি আসলে হলো শহীদ জিয়া নৈতিকতা পুরস্কার। কর্পোরেট হাউজগুলোকেও উদ্ধদ্ধ করা হবে তাদের কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটির একটা নির্দিষ্ট অংশ এই কাজে ব্যায় করতে। বিদ্যালয়ের শিশুশ্রেণী থেকে চালু হবে বাধ্যতামূলক নীতি শিক্ষা।



আর তাছাড়া এভাবে প্রমোশন করা গেলে সমস্যা কোথায়? রবি ছাড়াও প্রথম আলোর ’বদলে যাও, বদলে দাও’, কিংবা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রচারণাগুলোতো অবশ্যই শতভাগ সফল। তাই সব কিছু মিলে একটা ইনটিগ্রেটেড এথিক্যাল এ্যাপ্রোচ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন, স্কুলে ভর্তি হবার একটা যোগ্যতা হবে কমপক্ষে দশটা গাছ লাগানোর অভিজ্ঞতা, সিআইপি নির্বাচন করা হবে কে পরিবেশের কোন ক্ষতি করল না তার উপর ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।



সিগারেট থেকে শুরু শেষকালে হেরোইন। তেমনি একটা গাছ লাগানো থেকে শুরু করে শেষ কালে হয়তো আন্তার্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশবিদ। ছোট একটা কাজ দিয়েই শুরু হোক। আর কাজের নাম এখনই।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩১

ডরোথী সুমী বলেছেন: সহমত। আসুন কাজে নামি।

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৯

অনিরুদ্ধ রহমান বলেছেন: ;)

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৯

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: দারুন ভাই , দারুণ বলতে বলেত সবই দেখি বলে ফেলেন , ধুতিতে কিছু রাখবেন ত !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.