নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ রহমান

[email protected]

অনিরুদ্ধ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচনী উপহার ও কিছু আত্মাভিমান

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২

আমরা সবাই আজকাল বেশ রাজনীতি সচেতন। আমাদের পাবলিক বাস, আমাদের চায়ের স্টল, আমাদের অফিস, আমাদের ক্যাম্পাস, সব যায়গায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমাদের কাজের বুয়া তার এক উজ্জল উদাহরণ। বুয়া বলছিল নির্বাচনের আগে এবার গরুর দাম কম হবে। ঈদ এখনও দিন তিনেক বাকি, নিশ্চিত করে কিছূ বলা যাচ্ছে না। তবে বাজারের যা গতি তাতে বলা যায় গরু এখন পর্যন্ত পানির দামে যাচ্ছে। বুদ্ধিজীবীরা যার নাম দিয়েছেন নির্বাচনী গরু।



নির্বাচন সামনে রেখে সরকার জনগণকে উপহার দেওয়া শুরু করেছে। ফ্লাইওভার উদ্ধোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন এটা জনগণের জন্য ঈদের উপহার। গত মাস ছয়েক যাবৎই উনি নিরলস উব্ধোধন করে চলেছেন। একের পর এক উদ্ধোধন দেখে বোঝা যায় সরকার দেশবাসীকে ঈদের উপহার দেবার জন্য আন্তরিকভাবে কতটা ব্যাকুল। নির্বাচন সামনে রেখে দেশবাসীকে এই উপহার দেবার প্রানান্ত চেষ্টা দেশবাসীকে ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে!



সেই ব্যাকুলতার অংশ হিসেবেই চলছে ব্যাক্তি শ্রেণীর কর কাঠামো রিভাইজ করা, মহার্ঘভাতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, রপ্তানি বন্ধ করে দেশবাসীকে ইলিশ খাওয়ানো, রেকর্ড পরিমান গরু ভারত থেকে আমদানি করে একটা হাসি-খুশিময় ঈদ করানো ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্তত কিছু একটাতো করছে সরকার এখানেই আমাদের সান্তনা। কিন্তু সরকার হয়তো জানেনা ”আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু ছোট লোক নই।” আপনি খাওয়ালে আমরা খাবো, কিন্তু অধিকাংশই বেলা শেষে ভোট যাকে দেবার তাকেই দেব।



তবে সরকার যতগুলো উদ্যো নিয়েছে আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে রপ্তানি নিষিদ্ধ করে জনগণকে ইলিশ খাওয়ানোর উদ্যোগ। আমি নিশ্চত নই ইলিশ রপ্তানি করে আমাদের বার্ষিক কত টাকা আয় হয়। কিন্তু এবার হাতে নাতে দেখলাম, ইলিশ রপ্তানি না করে আমাদের কত লাভ হয়। ইলিশ খাওয়ানোর উদ্যোগ ভালো লাগার আরও বড় একটা কারন আছে।



ভালো লাগার বড় কারনটা অবশ্য পুরোপুরি অহিংস হয়। যদিও সহিংসও নয়, তবে কিছুটা হিংসতো বটেই। এই হিংসা ’দাদাদের’ নিয়ে। দাদাদের আমরা কিছুই দিতে পারিনা। কেবল দাদাদের মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকি। ইলিশ আমাদের সেই মুখরক্ষাটা করেছে। অন্তত এই একটা দিকে দাদারা আমাদের মুখাপেক্ষী। দাদাদের পাহাড় থেকে যে জল নেমে এসে আমাদের নদী হয়ে সাগরে চলে যায়, দাদারা উপর থেকে সেই জল আটকে আমাদের অপদস্ত করতে পারেন, কিন্তু বিধাতার অশেষ মেহেরবান, নিচ থেকে যেই ইলিশ সাতরে উপরে যাবে তাদেরকে আমরা এপারেই আটকে দিতে পারছি। ”কলকাতার বাতাসে ভাসে পদ্মার ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ”--পদ্মপাড়ের জেলেদেরে নিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই আক্ষেপ এখন আমাদের এক গোপন তৃপ্তি।



দাদারা, বিশেষত কলকাতাই দাদারা, আরও নির্দিষ্ট করে বললে কলকাতার দিদিটার কথা বলতে হয়। দিদির হাতে যতটুকু ক্ষমতা আছে, তার পুরোটাই দিদি আমাদের পেছনে খরচ করেন। আমাদের কিছু দেবার কথা উঠলেই দিদির মাথায় আগুন ধরে যায়। কবির সুমনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা আমাদের মেয়েটাকে পর্যন্ত দিদির দলের নেতার সাথে বিয়ে দিলাম, অথচ দিদি আমাদের কিচ্ছু দিতে চান না। দিদি একটা জিনিসই আমদেও অকৃপণ হাতে দিতে চান, তা হলো বাশ। জানিনা বাংলাদেশের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতে এর ফলন ভালো কিনা। বাশের বাইরে তারা আর যে জিনিসটা দিতে চান তা হলো লাশ। আমাদের নিয়মিতই দিচ্ছেন।



টিপাইমুখ, তিস্তার পানি, আমাদের সিনেমা ও টিভি চ্যানেলের ওপার প্রবেশ, আমাদের স্থল-সীমানার স্বীকৃতি কিছুই তারা দিতে চান না। এমনকি তাদের ক্রিকেট টিমকে আমাদের দেশে সফরে পাঠাতে চায় না। অথচ আমরা ভালোবেসে সব দিয়ে রেখেছি। গরিবের বউ সবার ভাবি হয় শুনেছি। আজ দেখছি আমরা আমেরিকার ভাবি, আমরা ভারতের ভাবি, চীনের ভাবি, রাশিয়ার ভাবি, সবার ভাবি। ভারত আমাদের ভাবি করে রেখেছে এতেই আমরা খুশি। কিন্তু আমরা খেয়াল করি না, ভাবি ভাবি করলেও আমাদের সামান্য যা সম্পদ, তাদের চোখ ঠিক সেখানেই। তাই সময়ে সময়ে আমাদের উচিৎ কাপড় আরেকটু টেনে বসা ।



তবে মনের আবেগে যত যাই বলি না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক যে কোন ভাবেই ভারত আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মিত্র। অকৃত্রিম বন্ধু না বলে প্রয়োজনীয় বন্ধু বলাটাই আমার কাছে উপযুক্ত মনে হয়। আর সেই প্রয়োজনীয় বন্ধুটির সাথেই আমরা কখনও আমাদের সম্পর্কের সরূপ নির্ধারণ করতে পারলাম না। বিরোধী দলে থাকার সময় দুই দলই সুন্দর চিঠি লিখে রাখে কিন্তু নির্বচিত হবার পর আর তাদের সেই সুন্দর চিঠিটা পোষ্ট করা হয় না। বিএনপি ওদের ঘরেই ঢুকতে দিতে চায় না অন্যদিকে আওয়ামীলীগ আবার শোবার ঘর প্রবেশাধিকার দিয়ে রাখে। আওয়ামীলীগের কাছে ভারত থেকে কী পেলাম সেটা বড় কথা নয়, বরং ’শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো’ ধরনের একটা মনোভাব।



যাই হোক, সেই ভালোবাসার ছিটেফোটাও যে জনগণকে দিলে জনগন একটু হাসিমুখে মরতে পারে ইদানিং তার একটা প্রচেষ্টা এবং প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। আমরা এতেই খুমি। গরিবের খুশিতো এই কয়দিনই। নির্বাচনের আগের তিনমাস। কারন এই তিন মাসই সব হবার মাস। দাদাদের ইলিশ নিয়ে যেমন দেখিয়ে দেবার একটা আগ্রহ, তেমনি আওয়ামীলীগ-বিএনপি কেও এই তিন মাসেই এক হাত নেবার এক দুর্লভ সুযোগ আমাদের সামনে। আমরা হাতা গুটিয়ে অপেক্ষায় আছি।



নেক্সট বেস্ট যদি বেস্ট-এর মতনই বা এর কাছাকাছি ভালো হয় তবে তা জগতের একটা ভয়াবহ সঙ্কট তৈরী করে। একজনকে বেছে নেওয়াটা তখন জগতের সবচেয়ে দুরহ কাজ হয়ে দাড়ায়। খেলায় দল সাজানো, সিনেমায় কাস্টিং, চাকুরিতে নিয়োগ থেকে শুরু করে আমাদের ব্যাক্তিগত, দাম্পত্য, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রেই এই সঙ্কট প্রত্যক্ষ করি।



তবে আমি নিশ্চত করেই বলতে পারি, চ্যাম্পিয়ন বাজে এবং রানার-আপ বাজেও যদি বেস্ট-নেক্সট বেস্ট এর মতন কাছাকাছি হয় তবে সে সঙ্কট প্রথমটির চেয়েও গুরুতর। আওয়ামীলীগ-বিএনপি আজ আমাদের সেই অবস্থাতে দাড় করিয়ে দিয়েছে।

.

.

.

১৫.১০.২০১৩

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.